somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মতো ব্যক্তিত্ব তাঁর নাতির নাম রাখেন গাদ্দাফি!

২২ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘আমি একজন আন্তর্জাতিক নেতা, আরব শাসকদের প্রধান, আফ্রিকার রাজাদের রাজা ও মুসলিমদের ইমাম।’ ২০০৯ সালে আরব লিগের শীর্ষ সম্মেলনে এ কথা বলেছিলেন লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি। তাঁর এ ভাষণকে শুধুই বাগাড়ম্বর বলা যায় না, যখন দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মতো ব্যক্তিত্ব তাঁর নাতির নাম রাখেন গাদ্দাফি।

একজন বিপ্লবী হিসেবে গাদ্দাফি দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন বর্ণবাদবিরোধী লড়াইয়ে, অধিকার আদায়ের আন্দোলনে। কিন্তু নিজে টানা ৪২ বছর দেশের ক্ষমতা আঁকড়ে থেকে ভূলুণ্ঠিত করেছেন নিজের দেশের মানুষের অধিকার। তবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। তেলসম্পদ কাজে লাগিয়ে লিবিয়াকে তিনি গড়ে তুলেছিলেন একটি সচ্ছল দেশ হিসেবে। নিজের সীমান্তের বাইরে অনেক দেশের অধিকারকামী মানুষের আন্দোলনে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে তিনি আফ্রিকায় নিজের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছেন। আবার সেই একই পথে শত্রুও সৃষ্টি করেছিলেন অনেক।
সেই কর্নেল গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন গত বৃহস্পতিবার। লিবিয়ার বিদ্রোহীরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল্লাস করছে পথে পথে। রাজধানীসহ দেশের শহরগুলোর পথে পথে সাধারণ মানুষকেও আনন্দ করতে দেখা যাচ্ছে। স্বৈরশাসক গাদ্দাফির মৃত্যুতে তাঁর সমর্থকেরা বেদনাহত হলেও সংগত কারণেই তার বহিঃপ্রকাশ নেই।
১৯৬৯ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা নেন তরুণ সেনা কর্মকর্তা গাদ্দাফি। এরপর তিনি নিজেকে আরব বিশ্বের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নজর দেন আফ্রিকার দিকে। নিজেকে ঘোষণা করেন আফ্রিকার নেতা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো করে আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলোর জোট আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) গঠিত হয়েছে মূলত তাঁরই প্রচেষ্টায়। গাদ্দাফি স্বপ্ন দেখতেন আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য একক মুদ্রা, একক পাসপোর্টের।
আবার এই আফ্রিকা নিয়েই গাদ্দাফির বিভিন্ন উদ্যোগ ছিল স্ববিরোধী। একদিকে তিনি লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনের মতো দেশের বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করেছেন, অন্যদিকে উগান্ডার ইদি আমিনের মতো কুখ্যাত শাসককে সমর্থন দিয়েছেন। কিন্তু এত সব মনে রাখেননি আফ্রিকার নেতারা।
গত ফেব্রুয়ারিতে আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো লিবিয়ায়ও যখন গাদ্দাফির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয় উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইয়োরি মুসেভেনি তখন বলেছিলেন, ‘গাদ্দাফির ভুলত্রুটি যা-ই থাক, তিনি একজন প্রকৃত জাতীয়তাবাদী। বিদেশি স্বার্থের ক্রীড়নকদের চেয়ে আমি এমন জাতীয়তাবাদীদের বেশি পছন্দ করি। আমি মনে করি, লিবিয়ার জন্য তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। শুধু লিবিয়া নয়, আফ্রিকা ও বিশ্বের জন্যও।’

গাদ্দাফির মৃত্যুতে আফ্রিকার দেশগুলো বিশেষ করে লিবিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া সম্ভবত ধরা পড়েছে উগান্ডার একটি সংবাদপত্রের শিরোনামে। পত্রিকাটি শীর্ষ শিরোনাম দিয়েছে, ‘গাদ্দাফির পতন, কাম্পালা নীরব’। কাম্পালা উগান্ডার রাজধানী।

গাদ্দাফির মৃত্যুকে আফ্রিকা ও আফ্রিকান ইউনিয়নের জন্য ক্ষতি বলেই মনে করছেন সাউথ আফ্রিকান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের ক্যাথেরিন স্টুরম্যান। তিনি বলেন, ‘আফ্রিকান ইউনিয়নের একটি যুগের অবসান হলো। এইউর অন্যতম বড় আর্থিক দাতা ছিল লিবিয়া। এইউর বাজেটের ১৫ শতাংশই দিত দেশটি।’ এখন লিবিয়ার নতুন নেতৃত্ব এইউকে সেভাবে সমর্থন দেবে বলে মনে করেন না স্টুরম্যান। কেননা লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিরুদ্ধে ন্যাটোর অভিযানের বিরোধিতা করেছিল এইউ।

স্টুরম্যান বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠনের দৃঢ়সংকল্প ছিল গাদ্দাফির। কিন্তু সে তুলনায় এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সমন্বয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর কোনো উদ্যোগ ছিল না।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাও গত সপ্তাহে একই ধরনের কথা বলেছেন। জুমা বলেন, ‘আফ্রিকার জন্য একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার গঠনে গাদ্দাফি অনেক সময় ব্যয় করেছেন, যা আসলে অসম্ভব। কিন্তু এ নিয়ে তাঁর খুব তাড়া ছিল। সম্ভবত তিনি ওই রাষ্ট্রের প্রধান হতে চেয়েছিলেন।’
গাদ্দাফি নিজেকে আফ্রিকার ‘রাজাদের রাজা’ দাবি করতেন এবং সে কারণেই আফ্রিকার দেশগুলোতে পশ্চিমা হস্তক্ষেপের তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ করতেন তিনি। তাঁর প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর নাখোশ হওয়ার এটা অন্যতম কারণ। এখন গাদ্দাফির মৃত্যুতে সেই জায়গাটি শূন্য হয়ে গেল। আফ্রিকায় পশ্চিমাবিরোধী তীব্র কণ্ঠ আর তেমন রইল না।
মাহমুদ মামদানি নামের একজন বিশ্লেষক আল-জাজিরার ওয়েবসাইটে লিখেছেন, বিশ্ব শক্তিগুলো এখন আফ্রিকা নিয়ে অনেক আগ্রহী। এই মহাদেশে সম্ভবত আরও আগ্রাসন হতে পারে।
মামদানি লিখেছেন, ‘তিউনিসিয়ায় বেন আলী ও মিসরে হোসনি মোবারকের পতনে আমরা অভ্যন্তরীণ সামাজিক শক্তির বিষয়ে সজাগ হয়েছিলাম। কিন্তু গাদ্দাফির মৃত্যু সেই হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। এখন অভ্যন্তরীণ শক্তির সঙ্গে বহিঃশক্তিকে যোগ করতে হচ্ছে।’


অভ্যন্তরীণ শক্তির বিজয় হয়েছে ভেবে যারা আজ উল্লাস করছে এবং বহিঃশক্তির কাছে আমাদের হার হয়েছে বলে যারা এখন শোক করছে, উভয়ের কেউ-ই অস্বীকার করতে পারবে না যে এ দুইয়ের মিশ্রণ ছাড়া ত্রিপোলিতে এ পরিবর্তন সম্ভবত অসম্ভব ছিল।


Source: Prothom Alo
Click This Link
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×