somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ওস্তাদ ডাইনে লন, বায়ে আবুল (গর্ত) আছে’

২১ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুরসালিন হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: যখন কোনও দেশের সাধারণ একজন বাস হেল্পার তার গাড়ী চালককে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে ‘ওস্তাদ ডাইনে লন, বায়ে আবুল (গর্ত ) আছে’ তখন ওই দেশের সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বের কাছে মাথা হেট করতে হয়।

আর তাই দেশ হতে সকল ধরণের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের অপসারণসহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী-জনতার আন্দোলন চলবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী-জনতা আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি তারিক আলি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সর্বদাই কামনা করি এই সরকার এ দেশকে আরও ১০-২০ বছর পরিচালনা করুক। সরকারের অনেক ভাল কাজ অনেক পচা বস্তু, কতিপয় গোষ্ঠির কারণে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। আর তাই আমরা চাই সরকারের ভেতরে থাকা সকল ছেড়াকাথা বর্জন করতে হবে।’

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য কমরেড বিমল বিশ্বাস বলেন, ‘অনেকে বলে থাকেন আমাদের দল সরকারের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করছে। আমি বলতে চাই আমরা সরকারের অন্তর্ভুক্ত নই, আমরা সরকারের সহায়তাকারী। ভালো কাজ করে সরকার ক্ষমতায় থাকুক এটাই আমাদের কাম্য। তবে ক্ষমতায় থাকার সকল দায়-দায়িত্ব মহাজোটের প্রধান দলের। প্রধান ওই দলটির ভূমিকা এবং কর্মকা-ই ক্ষমতায় থাকার বিষয়টিকে নিশ্চিত করবে।’

তিনি আরও বলেন, তবে আমি বলতে চাই এ দেশে কোনদিন ঘাতক-দুর্নীতিবাজদের সাথে আপোস করে শেষ রক্ষা হয় নাই এবং ভবিষ্যতেও হবে না। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বন্ধু এবং শত্রু চিনতে পারেন না। তারা বন্ধুকে শত্রুর স্থানে এবং শত্রুকে বন্ধুর স্থানে অনায়াসে নিয়ে যেতে পারেন। যোগাযোগ মন্ত্রীর পদত্যাগসহ সাতদফা দাবির বাস্তবায়ন অত্যন্ত যৌক্তিক। তবে দেশের আপামর জনগণকে এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।

প্রকৌশলী ড. এনামুল হক বলেন, বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রীকে রক্ষার জন্য স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন। আমার শুধু যোগাযোগমন্ত্রীর অপসারণ নয়, নিরাপদ জীবনযাপনের নিশ্চয়তাও চাই। ভোটের আগে বড় বড় কথা বলে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ৪০ বছরে দেশের রাজনীতিবিদরা দেশটাকে আবর্জনায় পরিণত করেছেন। তাদের সাফল্যের হুঙ্কারের কমতি নেই। ক্ষমতায় এসে বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করেন, সেইসাথে বড় বড় দুর্নীতি করেন। এসব করে তারা মনে করেন কিছুদিন জনতা চিৎকার করবে তারপর সব চুপ। আজকের এই সমাবেশ হতে ঘোষণা দিতে চাই আমরা কিছুটা বিশ্রাম নিতে পারি তবে জনতার এই আন্দোলন থামবার নয়। স্বাভবিক জীবনের গ্যারান্টির জন্য জনতা এবং লক্ষ্য পৌঁছাতে অবিচল থাকবে।

মাদারীপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রীর গ্রাম শরীয়তপুরের কালকিনির প্রতিটি সড়কের আজ বেহাল অবস্থা। একই অবস্থা ওই জেলারও। আবার বাস মালিক-শ্রমিকদের জন্য যিনি অন্তপ্রাণ সেই নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের জেলা মাদারীপুরের অবস্থাও একই। যারা নিজের জেলাকে উন্নত করতে পারেনা তারা সম্পূর্ণ দেশকে কিভাবে পরিচালিত করবে জনতার মনে আজ সেই প্রশ্ন।

কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, দেশের একের পর এক ঘটনা-দুর্ঘটনা আজ আমাদের সাধারণ মানুষকে রাজপথে নামতে বাধ্য করেছে। আজ রাজপথ ছাড়া আমাদের কোন গতি নাই। দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে এত কিছু হয়ে গেল তারপরও একজন মন্ত্রী কিভাবে দাযিত্ব পালন করেন।

প্রিন্স আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। যোগাযোগমন্ত্রী কতবড় দুর্নীতিবাজ হলে বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান তার লেনদেন হতে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে।

দুর্নীতিবাজদের রক্ষা মানেই জনতার অনিরাপদ জীবনযাপন। এই আন্দোলনে আমাদের জয়ী হতে হবেই। যদি জয়ী হতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় বড় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব হবে।

ভাস্কর রাশা বলেন, যে দেশে সরকার জনতার দাবীর প্রতি দৃষ্টিপাত করে না, জনতার দাবি যে সরকার পূরণ করতে পারে না সেই সরকার অগণতান্ত্রিক সরকার। বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক প্রহসন চলছে।

সরকার প্রধান একজন স্বৈরাচারকে সাথে নিয়ে বলছেন গনতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবেন আর প্রধান বিরোধীদল রাজাকারকে সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন। দেশের জনগণ এ ধরণের রাজনৈতিক প্রহসন আর দেখতে চায় না।

কৃষক সমিতির সভাপতি মানবেন্দ্র দেব বলেন, শোকার্ত মানুষের মিছিল আর দীর্ঘায়িত করবেন না। তাহলে কখন আপনার মসনদ কেঁপে উঠবে আপনি টের পাবেন না। সেই সময় আপনার শুভাকাঙ্খীরাও আপনাকে রক্ষা করতে পারবেনা।

কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মন্ডলীর সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, বর্তমান সরকার তার নীতির কারণেই বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। একটি বুর্জোয়া সরকারও দেশের জনগণের কল্যাণে কিছু কাজ করে থাকে। ন্যূনতম সেই নীতিটুকুও এই সরকার নিচ্ছেন না। লুটেরা ধনীদের কাছে আজ দেশ-সমাজ জিম্মি। আর তাই দেশের জনগণকে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, বর্তমানে দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় কোনও ধরণের জবাবদিহিতা নেই। তাই আজ রাষ্ট্রব্যবস্থায় আজ এই দুর্বলতা। শাসনব্যবস্থায় তিনিই পদত্যাগ করেন যিনি পদের মর্যাদা বোঝেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ যোগাযোগমন্ত্রীর কারণে আপনার সাথে জনতার দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। আর তাই দ্রুত তাকে অপসারণ করুন।

মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন বলেন, বর্তমান প্রশাসনে যারা মন্ত্রীত্ব করছেন তারা কি তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত নাকি নিজের শ্রমিক সংগঠন নিয়ে ব্যস্ত তা আমি বুঝতে পারছি না। যারা মন্ত্রীত্ব করবেন তারা অবশ্যই জনগণের জন্য কাজ করার দায়িত্ব নিয়েই মন্ত্রী হিসেবে কেবিনেটে থাকবেন বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগত ভাবে আমি প্রস্তাব করছি, চলতি সংসদ অধিবেশনেই বিগত বাজেটে সড়ক মেরামতের জন্য কতটাকা বাজেট ধার্য করা হয়েছে, মেরামত কাজে কত খরচ হয়েছে এবং কতটাকা দুর্নীতি হয়েছে সে ব্যাপারে জানার দাবি পেশ করুন।

সভাপতির বক্তব্যে বিশিস্ট কলামিস্ট আবুল মকসুদ বলেন, ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী-জনতা তাদের প্রতিনিধিত্ব করে যারা রাষ্ট্রের প্রধান চার নীতিতে বিশ্বাস করে। রাষ্ট্রের সব মানুষের নিরাপত্তার জন্যই এই আন্দোলন। এই আন্দোলন কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি, মন্ত্রী, এমপির বিরুদ্ধে নয়। বর্তমানে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আমার বিগত ৬০ বছরে কখনই দেখি নি।

তিনি আরও বলেন, দেশের এই বেহাল সড়কব্যবস্থার কারণে অর্থনৈতিকভাবে দেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি অকালে ঝরে পড়ছে হাজারো জীবন। এই ব্যবস্থার জন্য কোনও একটি প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই দায়ভার বহন করতে হবে। আর তাই যোগাযোগ মন্ত্রীসহ ওই মন্ত্রণালয়ের সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের সকলের অপসারণ চাই।

নাগরিক সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বিবর্তন নামে ছাত্রদের একটি সাইক্লিং সংগঠন, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল, দেশপ্রেমিক তরুণ প্রজন্মসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।

এছাড়াও সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিকান্দার হায়াত, তানভীর সিদ্দিকী, এস.এম. মামুন, জীবনানন্দ জয়ন্ত, অধ্যাপক মো. ফারুক প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১১

পুরাটাই এখান থেকে কপি করা।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×