somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাচেলর লাইফ এবং মেস লাইফ -পার্ট ০২

১৮ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পড়াশোনার কারনে পরিবার ছেড়ে ঢাকায় থাকি। আমার মত এরকম হাজার হাজার ছেলে মেয়ে ঢাকায় থাকে। যাদের বেশীরভাগেরই বাসস্থান ব্যাচেলর মেস। ব্যাচেলর জীবন নিয়ে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা লিখবো।

বুয়া

মেসে থাকলেই এই কথাটি আপনার মানতেই হবে “বুয়ার অস্তিত্বহীনতা আপনার পেট আর পিঠ সমান করে দিবে” একবেলা বুয়া নাইতো পেটের উপর ষ্টিম রোলার চলবে। আর বুয়ারও যেন সব বুঝে মাঝে মাঝে উদাও হয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়। হুমম এবারের বিষয় বুয়া।

বাংলাদেশের সকল মেসে সকল বুয়াদের প্রধান বৈশিষ্ট হল উনারা খাবারে তৈল প্রয়োগ বেশী করিয়া খাবারের মান কমাইয়্যা বাজার খরচ বাড়াইয়্যা দ্যান।বুয়াবিহীন এক দুই বেলা এদিক ওদিক কাটানো যায়, তবে এর অধিক হইলে পেট এবং পকেট উভয়ের আউটগোয়িং বেড়ে যায়। তাই মেস লাইফে বুয়ার প্রভাব বাঙালীর জীবনে পলাশীর যুদ্ধের প্রভাবের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। আসুন বুয়ার সাথে পরিচিত হই।

নাম : বুয়া। এছাড়া খালা,চাচী নামেও উনাকে ডাকা হয়।
বেতন : মেস মেম্বরের সংখ্যা এবং রান্না ছাড়া বোতলে পানি ভরা, ঝাড়ু দেয়ার উপরে নির্ভর করে।
কাজের সময় : সাধারণত দুই বেলা (দুপুর এবং রাতে)।

বুয়াদের ৩০দিনের একটা হাইলাটস দেখুন


মাসে অন্তত ৭ দিনের মত বুয়ারা কাজে আসেন না।(২ দিন অসুস্থ থাকেন, ৩দিন অসুখের ভানে অসুস্থ থাকেন, বাকি দুদিন অন্য কাজে আসেন না) তখন ব্যাচেলরদের ১ দিনে এক মাস যায়।

মাসে অন্তত দশদিন মাছ থেকে সমুদ্রের পানির , মুরগীর মাংশ থেকে মুরগীর আর গরুর মাংশ থেকে গরুর গন্ধ পাওয়া যায়। (আরে বাবা গরুর মাংশ থেকে কি হরিনের গন্ধ পাবা?)

মাসে অন্তত ১২ দিন মাছ, মাংশ, সবজি তেলের উপর ভাসে।চাইলে সে তেলে সাঁতার কাটা যায়।
মাসে দুইদিন অদ্ভুত ভাবে সু-স্বাদু রান্না করেন।

কার্যকলাপ
আমাদের এক বুয়া ছিল যে প্রতিদিন একবার দাবী করতেন “আমার বাপের ময়মনসিং একটা কেকের ফ্যাক্টরি আছে, তুমরা কি ভাবতাছ পেটের দায়ে কাম করতাছি? পেটের দায়ে না বাপের লগে ঝগড়া কইরা আইছি” এই কথাটা উনি ঠিক তখন ডেলিভারী দিতেন যখন উনাকে বলা হত “তরকারীতে এত তেল দ্যান কেন? এতে উনি বুঝাতে চাইতেন যে উনারা কম তেল দিয়ে খেতে পারেন না। এই বুয়ার শাক ভাজি সম্পর্কে আমার এক বড় ভাই মন্তব্য করছিলেন “ বুয়ার শাকভাজি পুরা ঘাসের মত মনে হয়, নিজেরে গরু গরু লাগে” উনার আরও কিছু বৈশিষ্ট ছিল। যদি দুপুরে উনি তরকারীতে লবন কম দেন রাতে যদি বলা হয় যে “বুয়া দুপুরে তরকারীতে লবন কম হইছে” তবে রাতে উনি তরকারীটাকে কক্সবাজার সী-বিচের পানি বানিয়ে দিবেন।আবার বেশী হলে উল্টাটা। তরকারীতে ঝোল রাখতে বললে বঙ্গপোসাগর বানিয়ে দিবেন। এ বিষয়ে কথা বললেই উনি শুরু করে দ্যান ““আমার বাপের ময়মনসিং একটা কেকের ফ্যাক্টরি আছে, তুমরা কি ভাবতাছ পেটের দায়ে কাম করতাছি? পেটের দায়ে না বাপের লগে ঝগড়া কইরা আইছি”

আরেকজন বুয়া আমাদের বাসায় এসেছিল। কাজে জয়েন করার দিন উনার স্লোগান ছিল এরকম “আমি কিন্তু তরকারীর লবন দেখি না” আমরা বললাম “তাহলে কেমনে হবে? উনি বললেন “সমস্যা হবে না” কাজের প্রথম বেলা কোন সমস্যা হলনা। বহুত বাহবা পেলেন।২য় বেলায় দেখালেন ভেল্কি। মাছ দিয়ে তরকারী রান্না করলেন না। লবন দিয়ে মাছ রান্না করলেন। এভাবে চলল দুতিন দিন। একবেলা উনাকে খেতে বললাম আমারদের সাথে। অদ্ভুতভাবে সে বেলা লবন নিয়ে কোন সমস্যাই হল না। খাবারও হল সুস্বাদু। এরপর যতবেলা উনি আমাদের সাথে খেয়েছেন কোন বেলা লবন নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি।

বেশীর ভাগ বুয়ার আরেকটি কমন প্রভলেম হল চুরি। উনারা আবুলদের মত বড় চুরি করে না। বেশীর ভাগ সময় তেল, মসলা মাছের পিস চুরি করে থাকেন (অনেক বুয়া অবশ্যই মূল্যবান জিনিসও চুরি করেন, সেগুলা কেবল বুয়া না সব পেশার মানুষই করে)। একবার আমাদের এক বুয়াকে মাছ চুরি করতে দেখছিলাম। কেন জানি কিছুই বলিনি, শুধু ভাবলাম দুই পিস মাছইতো। একদিন বুয়াকে বললাম “আজকে আমাদের এখানে খেয়ে যান, বুয়া বলল “আমার খাওয়ার শখ নাই আমার পোলাডা মাছ মাংশ খাইতে চায়”
এরপর বুয়াকে চুরি করতে দেখি নাই, তবে আমাদেরকে বলে ছেলের জন্য খাবার নিয়ে যেত।


প্রায় সব বুয়ার রান্না খেলে চোখে মায়ের মুখ ভেসে উঠে, খাবার ভিতরে যেতে চায় না। আমার এক বন্ধু যে কোনদিন মেসে থাকেনি সে একদিন বুয়ার ঐতিহাসিক রান্না খেয়ে বলেছিল “ আন্টি যদি এই খাবার কখনো খায় তোর আর ঢাকায় আসতে দিবে না” কিন্তু এর ব্যাতিক্রমও আছে। আমাদের বর্তমান বুয়া। উনার আলুভাজি রীতিমত ক্লাসিক, মুরগীও অসাধারণ রান্না করে। তবে গরুর মাংশটা রান্না করলে বুঝা যায় যে এটা গরুরই মাংশ কারন গরু গরু গন্ধ আসে। এই বুয়াকে আমরা খালা ডাকি। উনি আমাদের মাসের শেষের দেক বড় ধরনের সারপ্রাইজ দ্যান। ভয়ংকর সাতদিন সাধারণত মিলে টাকা থাকেনা। আমরা জানি কালকের বাজার নাই। তাই ঘুমাই। ঘুম থেকে উঠে দেখি মুরগীর মাংশ। ক্যামনে? বুয়া মাসের সব মুরগী থেকে এক পিস এক পিস সরিয়ে রেখে মাসের শেষে সারপ্রাইজ দেয়।উল্লেখ্যযে আমার পাশের বাসার ফ্রিজ ব্যবহার করি। শুধু তাই নয় যখন আমাদের কাছে টাকা থাকে না তখন নিজের টাকায় বাজার করে নিয়ে আসে।শুক্রবার নামাজে না গেলে বকাবকিও করে। আমাদেরকে যথেষ্ট স্নেহ করেন আমরাও যথেষ্ট শ্রদ্ধ্যা করি। এরকম বুয়া পাওয়া সাত জনমের ভাগ্য।

ব্যাচেলর লাইফ এবং মেস লাইফ -পার্ট ০১, একটি মাসের হাইলাইট
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:২৭
২৫টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×