somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মরমী সাধক কবি :: সৈয়দ শাহনুর

১৭ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সৈয়দ শাহনূর ( জন্মঃ১৭৩০ খ্রিঃ- মৃত্যু; ১৮৫৪) একজন বাংলাদেশী মরমী কবি ও সাহিত্যিক । তিনি সাধক কবি ও পীর হিসেবে সমধিক পরিচিত। সৈয়দ শাহনূর বিরচিত আধ্যাত্মিক গান বাংলাদেশের মরমী ভুবনকে সমৃদ্ধ করেছে। সিলেটের মরমী সাহিত্যে সৈয়দ শাহ নুরকে সকলের উর্ধে স্থান দেয়া হয়। এছাড়া তত্বসংগীত রচনায় বাংলার বিখ্যাত কবি লাল সাহের পুর্বসুরী হিসেবে সৈয়দ শাহনুর অনুমিত হন। চৌধুরী গোলাম আকবর সাহিত্যভুষণ সহ গবেষকদের মতে সৈয়দ শাহনুরের রচিত আধ্যাত্মিক গান ভাববাদী মানুষকে আধ্যাতিক জগতের সন্ধান দিতে সহায়ক। বাংলা সাহিত্যের প্রথমিক যুগে সৈয়দ শাহনুর রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ নুর নছিয়ত। যা ছিল সিলেটের স্বতন্ত্র নাগরী লিপিতে লিখা অমুদ্রিত সুফী শাস্ত্র গ্রন্থ। রচনার সময় কাল ১২২৬ বাংলা মুতাবেক ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ । ৩০২ পৃষ্ঠায় রচিত এ গ্রন্থে ১০৮ টি গান, ৪১ ধাঁধা রয়েছে। এছাড়া রাগনূর, নূরের বাগান, সাত কন্যার বাখান ও মণিহার নামে আরও চারটি বই তিনি লিখেছেন।


পরিচিতি
শাহ জালালের সঙ্গীয় দরবেশ সৈয়দ শাহ আলাউদ্দিনের পুত্র সৈয়দ শাহ রোকন উদ্দিনের অধঃস্থন পুরুষ সৈয়দ শাহনুর। তাঁর পিতা সৈয়দ মোহাম্মদ নূর, মাতা কলসী বিবি। সৈয়দ শাহনুর কোথায় জন্ম গ্রহন করেছেন এ নিয়ে গবেষকগণ ভিন্ন মত ব্যক্ত করেন। প্রখ্যাত গবেষক আসদ্দর আলীর মতে মৌলভীবাজার জেলায় কুলাউরা উপজেলার ঘরগাও গ্রামে তাঁর জন্ম হয়।

পারিবারিক জীবন
সৈয়দ শাহনূর দুটি বিয়ে করেন বলে ঐতিহাসিক ও গবেষকরা লিখেন। তিনি প্রথম বিয়ে করেন রাজনগর উপজেলার কদমহাটা গ্রামের মুহাম্মদ দরছ মিয়া চৌধুরীর কন্যা হামিদা খাতুনকে। পরে তিনি সুনামগঞ্জ জেলায় জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে বসবাস করেন এবং সেখানে বিয়ে করেন সামিনা বানুকে। সৈয়দপুরে কয়েক বছর বসবাসের পর শাহনূর আবার কদমহাটায় স্ত্রীসহ চলে আসেন এবং কদম হাটার নিকটে বিনেছিরিতে বসবাস করেন। বিনেছিরি উল্লেখ্য সৈয়দ শাহ নুরের রচিত একটি গানে পাওয়া যায়ঃ

"কদম হাটা বিনিছিরি -- শাহনুরে বানাইল বাড়ী
শাহনুর থাকইন ছাড়ার পাড়াল মাঝে"


উল্লেখিত বিনিছিরি মৌভীবাজার জেলার কদমহাটা গ্রামে নিকট অবস্থিত এবং ছাড়াল পাড়া মুলত সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের ছোট একটি পাড়া বলে ঐতিহাসি আসদ্দর আলী সহ অনেকের ধারনা। সৈয়দ শাহনুরের মাজার হবীগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলাধীন জালালসাপ গ্রামে অবস্থিত। সৈয়দ শাহনুরের দুই ছেলে মঞ্জুর আলী ও তবারক আলী থেকে তাঁর বংশবৃদ্ধি হয়ে জালাসাপ, বিনিছিরি ও সৈয়দপুরে বসবাস করছেন ।

পীরের সিল সিলা

সৈয়দ শাহনুরের পীর (মুর্শীদ) সৈয়দ অজি উল্লাহ, তাঁর পীর কেরামত আলী জৈপুরী, তাঁর পীর সাইয়্যেদ আহমদ বেরেলী, তাঁর পীর মাওলানা শায়েখ আব্দুল আযিয, তাঁর পীর ভারত বিখ্যাত সুফী মাওলানা অলীউল্লাহ দেহলভী।

সৈয়দ পুরের ছাড়াল পাড়ার (মতান্তরে চাড়াল পাড়া) অলৌকিক ঘটনা

জগন্নাথপুর উপজেলার খ্যাতনামা সৈয়দপুর গ্রাম। এ গ্রামটিতে সৈয়দ শাহনুর বসবাস করেছেন অনেক দিন। এছাড়া এখানে তিনি বিয়ে করেছেন সামিনা বানুকে। এ গ্রামে ছিল তাঁর মুর্শীদ পীর সুফী শাহ সৈয়দ অজি উল্লাহ'র বাসস্থান। সর্বদিক বিশ্লেষনে পাওয়া যায়, সৈয়দপুর গ্রাম-এর সাথে সৈয়দ শাহনুরের সম্পর্ক ছিল গভির। এতদ্ব সত্যে সৈয়দ পুরের ছাড়াল পাড়া সাথে সৈয়দ শাহনুরের আধ্যাত্মিক ভাবে একটি সম্পর্কের উল্লেখ এ অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত । আজ থেকে প্রায় তিন শত বত্সর পূর্বে সৈয়দ শাহনুরকে নিয়ে এই গ্রামে ঘটিত এক অলৌকিক কাহিনী যা আজও সিলেট বিভাগে বহুল প্রচার হচ্ছে। সে কাহিনী উল্লেখিত ছাড়াল পাড়ার হিন্দু দুপার বাড়ী নিয়ে । সৈয়দ পুরের থাকা কালে এক শুক্রবার দিবসে গ্রামবাসী মুসল্লীদের ছাপে পরে সৈয়দ শাহনুরকে নামাজ আদায়ে মসজিদে যেতে হয়। ইসলামিক রেওয়াজ মতে ইমামের পিছনে মুসল্লীরা যখন এক কাতারে (সারিতে) জামাতবদ্ধ হয়ে নামাজ শুরু করেন। সৈয়দ শাহনুরও অন্য মুসল্লীদের মতই সারিতে জামাতবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করছেন ঠিক কিছুক্ষন পরেই সৈয়দ শাহনুর উত্তর দহ্মিণ পুর্ব প্রশ্চিম চার দিকে চার সজিদাহ দিয়ে ইমাম সহ অন্য সবার নামাজ শেষ করার পুর্বেই তাঁর নামাজ শেষ করে তিনি মসজিদ থেকে বাহির হলেন । যা ছিল ইসলামের আঈন পরিপন্থি একটি অপরাদ জনিত কাজ। নামজ শেষে মসদিরে মুসল্লীরা গ্রামের মাতেব্বরদের একত্রিত করে সৈয়দ শাহনুরের ইসলাম পরিপন্থি এ ধরণের কাজ করার জন্য তাঁকে দণ্ডিত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। গ্রাম মাতেব্বরা সৈয়দ শাহনুরকে ডেকে এনে এ ধরণের কর্মে জন্য তাঁর মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে, সৈয়দ শাহনুর বলেন, মসজিদের ইমাম শহরে গিয়ে ফেরত আসার সময় নিজ ছাতা হারান। যা নিয়ে তিনি নামজের মধ্যে সজিদাহ আদায় কালে দুরচিন্তায় ভুগছেন। যে নামাজ আল্লাহ'র ধ্যায়ান ব্যতিত সাংসারিক বিষয়ের চিন্তা নিয়ে আদায় করা হয়, সে নামাজ আমার কোন কাজের ? মাতব্বরা ইমামকে ডেকে বিষয়টি জেনে বুঝতে পারলেন সৈয়দ শাহনুর আধ্যাত্মিক ভাবে প্রবল । তাঁর কাছে গোপন বিষয়ও প্রকাশিত । এরপরেও মাতব্বরগণের বাড়াবাড়ির আর শেষ ছিল না। অবশেষে শুকনা মাঠ দিয়ে নৌকা চালিয়ে সৈয়দ শাহনুরকে সৈয়দপুর ত্যাগ করে আসতে হয় । সৈয়দ শাহনুরের উক্ত ঘটনাটি বিভিন্ন কবি বাউলদের ছন্দে আজও সিলেট বিভাগের জেলায় জেলায় ধ্বনিত হচ্ছে এ ভাবে;
"ইশারাতে কাঠের তরী শুকনায় চলে মাঠে
ভক্ত যারা, পার হতে চায় সে তরীতে উঠে "

সৈয়দ শাহনুরের তত্বসংগীতের আংশিক

"আমি, না চিনিলামরে সঙ্গে আইলাম কার
আখিঁ মুঞ্জিলে ঘর হইব অন্ধকার
তিনে জুড়িয়াছে চাইরে কইল মূল
বসতি নাই কোথায় শুনি বোল"
|-
"পাক পানি চিয়া নাও বাইও-রে
ওরে আমার আ'উশের নাইয়া
ও ভাই-রে পাক পানি চিনিয়া নাও বাইও
আড়ি কোনায় কইল সাঁজ, ঈশানিয়া বাও
দখিনাল বাতাসে মাইলো ময়ুর পঙ্খী নাও-রে""

(উইকিপিডিয়া থেকে)
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×