somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম প্রেমপত্র স্যারের হাতে পড়া এবং স্যারের কাছে গণধোলই খাওয়া। পাড়াতো বড় ভাইয়ের প্ররোচনার ফল।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাত্রই ৮ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। ৮ম শ্রেণিতে আমি ফাস্ট বয় ছিলাম। নবম শ্রেণিতে উঠার সময় আমার রোল হলো ২য়।মাত্রই আমার মধ্যে মেয়েদের প্রতি ভাললাগার সৃস্টি হচ্ছে। সব কিছু বুঝে উঠার আগেই লক্ষ্য করলাম আমার প্রতি মেয়েদের কু-দৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।সুন্দর চেহারা আর একাডেমিকভাবে ভাল ছাত্র হওয়াই আমার কাল হয়ে দাড়াল। শেষ পর্যন্ত মাহবুবা নামের একটি মেয়ের পাতা ফাঁদে আমি পা বাড়াতে বাধ্য হলাম। আমাদের গ্রামের হাই স্কুলটি ছিল কম্বাইন্ড।ক্লাস রুমে পাতা দুই সারির বেঞ্জের মধ্যে ছেলেরা বসত এক সারিতে আর মেয়েরা অন্য সারিতে। ভাল ছাত্র হওয়ার সুবাদে বরাবরই আমার সিট পড়ত ফাস্ট বেঞ্ছে মেয়েদের বেঞ্চের কাছাকাছি। তাই মাহবুবার দৃষ্টিকে পর্যবেক্ষণ করতে আমার তেমন কোন প্রবলেম হত না। আমি মোটামুটি দুই তিন মাস ধরে মাহবুবাকে দৃষ্টিকে নিয়ে গবেষণা করতে থাকি। গবেষণার ফলাফল শূণ্য হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পাড়াত এক বড় ভাইয়ের সরণাপন্ন হলাম, বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। বড় ভাইটি সকল ঘটনা শুনার পর যে সিদ্ধান্তে উপনিত হলো তা তার ভাষায় শুনুন। সে বলল, এই মেয়ে অবশ্যই তোকে ভালবাসে। ভাল না বাসলে কোন মেয়ে কোন ছেলের দিকে এভাবে তাকায় না। মনে হয় যেন সে তার তাকানো দেখে ফেলেছে।সে বলে, মেয়েরা যাকে ভালবাসে তার দিকে এভাবেই তাকিয়ে থাকে। তারা তাদের দৃষ্টি দিয়েই তাদের ভাললাগা প্রকাশ করে। কারণ মেয়েরা সবসময় অবোলা হয়। তাদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। আমিও এমন ভাবে বলা কথাগুলো অবিশ্বাস করতে পারলাম না।বড় ভাই আমাকে ইম্প্রেস করার জন্য মেয়ে মানুষ সর্ম্পেকে তার জানা সকল অভিঙ্গতাই আমার কাছে বর্ণনা করল। যেমন সে আমাকে বলল দেখ, যখন তুই ওই মেয়ের দিকে তাকাস তখন সে হেসে দেয়।তাই না?? আমি বললাম হ্যাঁ।তখন বড় ভাই নিশ্চিত হয়ে বলল, তাহলে অবশ্যই ওই মেয়ে তোর প্রেমে পড়েছে।

বড় ভাইয়ের বিভিন্ন যুক্তিমূলক কথা আমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করল মাহবুবা আমাকে ভালবাসে।এমতাবস্থায় আমার কি করা উচিত এমন কোন প্রশ্ন করার আগেই বড়ভাই আমাকে বলে দিল এখন কি করতে হবে।শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো বড়ভাই আমাকে একটা চিঠি লিখে দিবে আর সেই চিঠি আবার আমার নিজ হাতে কপি করে যেভাবেই হোক মাহবুবার হাতে পৌঁছাতে হবে।
এর মধ্যে আমি স্কুলে গিয়ে পিয়ন খোজার কাজ শুরু করে দিলাম। শেষে শামীমকে খুজে পেলাম যে কিনা এর আগেও অনেকের চিঠি সাপলাই করেছে কৃতিত্তের সাথে। সেক্ষেত্রে শামীমকে খুশি করার কাজটি আমাকে আগে সারতে হলো।
অবশেষে বড়ভাইয়ের রাফ করে লিখা চিঠির একটা কপি বড়ভাই আমাকে দিয়ে বলল এই চিঠিটা খুব ধীরে সুস্থে সুন্দর করে লিখতে হবে। আমি বন্ধুর কাছ থেকে প্যাড সংগ্রহ করে দুই তিন পাতা নষ্ট করার পর সুন্দর একটা প্রেমপত্র লিখতে সমর্থ হলাম। প্রথমে কালোকালি দ্বারা লিখে সেই লেখার উপর লাল কালির কলমের হাত ঘুরানোর ফলে সত্যিই চিঠিটি অন্যরকম সৌন্দর্য্য ধারণ করল।
আমার মা অশিক্ষিত হওয়ায় মাকে চিঠিটি দেখালাম আর বললাম যে আমার হাতের লেখা কেমন সুন্দর হইছে। মার এককথায় বাহ জবাব দিল।বলল, তোর হাতের লেখা তো অনেক সুন্দর ।মায়ের প্রসংশায় আমার খুব ভাল লাগলো।
আমি ঠিক বুধবারে আমার লেখা চিঠিটা শামীমের হাতে দিলাম, মাহবুবাকে দেওয়ার জন্য। আমি শামীমকে বললাম , সে যেন বৃহস্প্রতিবার চিঠিটা ছাপলাই করে।কারণ আমি বৃহস্প্রতিবার স্কুলে আসব না।তারপর আমি ঠিক বৃহস্প্রতিবার স্কুলে গেলাম না।কিন্তু এর মধ্যে শামীম করছে কি? আমার ক্লাসে পড়া শামীমের পাড়ায় যারা আছে তাদের সবাইকে আমার লেখা চিঠিটা দেখাইছে। এর ফলে সে বৃহস্প্রতিবার চিঠিটা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। তারপর শনিবার আমি যখন স্কুলে গেলাম, আমাকে কিছু না বলে শামীম ঠিক টিফিনের আগ দিয়ে চিঠিটা মাহবুবার হাতে পৌছে দেয়। মাহবুবা চিঠি পাঠ করার পর শামীমের মাধ্যমে আমাকে ডেকে পাঠায়। শামীম এসে আমাকে বলল যে সে আজ চিঠিটা মাহবুবার কাছে পৌছে দিয়েছে, এবং মাহবুবা স্কুলের পিছনে তার সাথে দেখা করার জন্য আমাকে ডাকছে।এর আগে আমি শামীমকে জিৎগাসা করেছিলাম সে চিঠিটা দিয়েছে কিনা এবং ফলাফলই বা কি? কতক্ষণ পর কাওসার এসে আবার বলল যে মাহবুবা আমাকে স্কুলের পিছনে ডাকছে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। মাহবুবা যখন দেখল আমি আসছিনা তখন সে চিঠিটা হেডস্যারের কাছে দিল। কতক্ষণ পর দপ্তরি এসে আমাকে এবং শামীমকে ডেকে স্যারদের অফিস রুমে নিয়ে গেল। আমাকে কয়েকবার স্যারেরা জিৎগেস করল ওই চিঠি কার লেখা। আমি প্রত্যেকবার বললাম আমার লেখা না। আর আমি জানি না। পরে স্যার শামীমকে জিৎগাসা করল সে কোথা পেল এই চিঠি। শামীম এককথায় বলে দিল আমি দিছি এই চিঠি। হেডস্যার দৌড় দিয়ে একটা বেত হাতে নিল এবং আমাকে পিটাতে শুরু করল। আমি ভয় পেয়ে ঞ্জান হারিয়ে ফেললাম। এর মধ্যে একবার শুনতে পেলাম মাহবুবা স্যারকে বলছে স্যার আর মাইরেন না। স্যার এই কথা শুনে আরো বিগরে গেল এবং আমাকে আরো বেশি পিটালো। ইতিমধ্যে অন্য এক স্যার এসে হেডস্যারকে থামিয়ে দিল।তারপর স্যার আবার শামীমকে পিটাতে শুরু করল। কতক্ষণ পিটানোর পর স্যার আমাদেরকে অফিস থেকে বের করে দিল। আমি সরাসরি ক্লাসে গেলাম এবং বই খাতা গুছিয়ে বাড়ীতে চলে গেলাম। বাড়ী ফিরার পর আমার মা মুখ দেখে বুঝতে পারল কিছু একটা হইছে। আমি কিছুই বলতে পারলাম না মাকে। দুপুরে কিছু না খেয়ে পাশের বাড়ির এক বন্ধুকে নিয়ে অনেক দূরে ঘুরতে গেলাম।বন্ধুর কাছে সবকিছু শেয়ার করলাম। বিকেলে বাড়ী ফিরার আগেই মা সব কিছু আমার চাচাত ভাই যে ওই স্কুলের স্যার তার কাছ থেকে শুনে ফেলেছে। বাড়ী ফিরার পর আমার মা আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল । আমিও আর থাকতে পারলাম না। আমার আব্বা গ্রামের অন্যতম ধনি এবং প্রভাবশালী ব্যাক্তি ছিলেন। আমার আব্বা সবকিছু শুনার পর আমাকে আদেশ দিলেন আমি যেন, আমার বন্ধুদের কে নিয়ে রাস্তায় ওই মেয়কে ধরে মার দেই। কিন্তু আমি তা করতে পারলাম না।এদিকে আমি আর কিছুতেই স্কুলে যেতে পারতেছিনা। আমার অনেক লজ্জা পাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় দুই তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেল। আমার সকল স্যারেরা আমার আব্বার কাছে খবর পাঠতে শুরু করল আমি যেন আবার স্কুলে ফিরে যাই।
কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যা হওয়ার হইছে আমি আর ওই স্কুলে ফিরে যাব না। আমি গ্রাম ছেরে শহরের কোন স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করব। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমার চাচাত ভাই যে ওই স্কুলর টিচার সে বলল যে আমি অন্য কোন স্কুলে গিয়ে পড়াশুনা করতে পারব না। কারণ এস.এস.সি পরীক্ষার আগে যে রেজিস্টেশান করতে হয়, তা আমি এই স্কুলে করে ফেলেছি। এর মধ্যে আমার স্যারেরা সিদ্ধান্ত নিল যে,আমার জীবন যেন কোন ভাবেই নষ্ট হয়ে না যায় । কারণ আমি অনেক ভালছাত্র।তারা আমার আব্বাকে ডেকে বোঝানো শুরু করল যেন আমি খুব তারাতারি স্কুলে আসি। তারা আরো সিদ্ধান্ত নিল যে আমার ক্লাসের সকল ছেলেমেয়েদের কে আমাদের বাড়ীতে পাঠাবে আমাকে স্কুলে নিয়ে আসতে। ঠিক তাই হলো আমার সকল ক্লাস মেটরা আমাদের বাড়ীতে আসল আমাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি স্কুলে ফিরে আসতে বাধ্য হলাম। কিন্তু আমার আগের মত পড়তে আর ভাললাগে না। আমি ধীরে ধীরে ড্যাম হয়ে যেতে লাগলাম। এর মধ্যে মাহবুবা তার ভূল বুঝতে পারল এবং আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ঘুরতে লাগল। কিন্তু আমি আর তার সাথে দেখা করলাম না। শেষপর্যন্ত আমি এস. এস. সি পাস করলাম মোটামুটি ভাল রেজাল্ট করেই।কিন্তু মাহবুবা ফেল করল। আমার জানা মতে সে এস.এস. সি তে তিনবার ফেল করেছিল। আমি এবছরই পদার্থ বিঞ্গানে অনার্স শেষ করলাম।আমি মনে মনে মাহবুবাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছিলাম।একবছর আগে শুনলাম ওর বিয়ে হয়ে গেছে। এই ঘটনার পর থেকে মেয়ে মানুষ ভীতি আমার এখনও কাটে নাই।আমি ২য় বার আর কোন চিঠি লিখতে পারি নাই আজ পর্যন্ত। ইন্টার, অনার্সে আমার কিছু বান্ধবীকে ভাল লাগা সত্তেও কাউকেই আমার ভালবাসার কথা বলতে পারি নাই। জানিনা ভবিসৎতে বলতে পারব কিনা।


(আমার লেখা উপন্যাস '' যুদ্ধ'' ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হবে কিছু দিন পর)

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:১০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×