ছিনতাই
মারুফ রেহমান
“আপনি আমার মোবাইলটা নেবেনতো? এই নিন। সিমটাও রাখুন। ২০০ টাকা ব্যালেন্স আছে”। কথাগুলি তামান্না তার সামনে দাড়ান লম্বা চুলের ছেলেটাকে বলছিল। ছেলেটাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তামান্না মোবাইলটা তার হাতে দিয়ে হন হন করে হাটা দিল। তামান্নার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। কেন তার সাথেই এমন হয়? এর আগে তিন বার তার মোবাইল ছিনতাই হয়েছে। আজও কোচিং থেকে বের হওয়া মাত্র লম্বা চুলের লম্বা এক ছেলে খাম্বার মত তার সামনে এসে দাড়ায়। ছেলেটা খুব বিনয়ের সাথে তাকে বলল-ম্যাডাম একটু শুনবেন, প্লিজ? তামান্নার কোন কিছু শোনার দরকার হয়নি। এর আগের তিনবারও ঠিক এভাবেই খুব আন্তরিক ভাবেই তার মোবাইল ছিনতাই হয়েছিল।
তামান্না যে কোচিং সেন্টারে পড়ে সেটা একটু গলির ভেতর। গলির মাঝে তামান্নার দেয়া মোবাইল সেটটা হাতে নিয়ে অপু হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে। তিন বছর কানাডা থাকার পর অপু গত সপ্তাহে দেশে ফেরে। এই কোচিং সেন্টারে অপু পড়ত। তখন অবশ্য নাম ভিন্ন ছিল। এটা সেই আগের কোচিং কিনা জানার জন্য অপু তামান্নাকে ডাক দিয়েছিল। একটা অপরিচিত মেয়ে তার সাথে কেন এমন করল অপু কিছুই বুঝল না। এমন সময় তামান্নার বান্ধবি নিপা ফোন করল। অপু ফোন ধরে হ্যালো বলা মাত্র নিপা ফোন কেটে দিল। অপু সেই নম্বরে আবার ডায়াল করল। ওপাশ থেকে নিপা বলল- হ্যালো তামান্না? অপু জবাব দিল- ম্যাডাম। আপনি যে নম্বরে ফোন করেছিলেন সেটা কি তামান্নার নম্বর?
আসলে আমার বান্ধবি আমাকে এই নম্বরটাই দিয়েছিল। আর আমি বোধ হয় ভুল নম্বর সেভ করেছি। স্যরি। ভুলে আপনার নম্বরে ডায়াল করেছি। এই কথা বলেই নিপা আবার ফোন কেটে দিল। অপু আবার ডায়াল করল।
ম্যাডাম, একটু শুনুন প্লিজ। এটা আমার নম্বর না। এটা আপনার বান্ধবিরই নম্বর। সেটটা এই মুহুর্তে আমার কাছে।
ও আচ্ছা, তামান্না কোথায়?
জ্বি, আসলে আমিও সেটাই জানতে চাচ্ছিলাম ওনাকে কোথায় পাওয়া যাবে?
মানে? আপনি ওর কি হন?
আমি ওনার কিছুই হই না, কিন্তু ওনার সেটটা এখন আমার কাছে। আমিই ওনাকে খুজছি।
আচ্ছা, আচ্ছা, তামান্না বোধ হয় সেট হারিয়েছে। এর আগেও এমন হয়েছি। যাক, এবার তাও আপনি পেয়েছেন, আপনাকে থ্যাঙ্কস।
ম্যাডাম আমি এখন ধানমন্ডি এক নম্বরে। আমি কিভাবে এটা ফেরত দিতে পারি?
ভাই, আমি আপনাকে এই নম্বরে জানাব। আপনার নামটা জানতে পারি?
জ্বিম, আমার নাম অপু।
তামান্না বাসায় ফিরল মন খারাপ করে। কলেজে ওঠার পর তিনটা সেট হারিয়েছে। এই সেটটা কিনেছিল নিজের টাকায়। বাজারে খুব কম দামি চাইনিজ সেই পাওয়া যাচ্ছে। তারই একটা কিনেছিল এখন ভুটানি সেট কেনার মত টাকাও হাতে নেই। প্রচন্ড মনকষ্ট নিয়ে বাসায় টি এন্ড টি থেকে নিপাকে ফোন করল। হ্যালো নিপা? জানিস আমার না নতুন সেটটাও ছিনতাই হয়েছে।
হ্যা, আর একটু আগেই তোর ছিনতাইকারির সাথে কথা বললাম। তামান্না সব শুনে বলল
লোকটা তাহলে সেট ফেরত দিতে চাচ্ছে?
তাইতো বলল। তুই এককার ফোন করে লেখবি?
তামান্না নিজের মোবাইলে কল দিল। ওপাশ থেকে অপু বলল-হ্যালো তামান্না?
আপনি বুঝলেন কিভাবে এটা আমি?
আপনার সেটে “হোম” লেখা উঠল, আর একটু আগে আপনার বান্ধবির কাছ থেকে আপনার নাম জানলাম।
আচ্ছা, আপনি সেট ফেরত দিতে চাচ্ছেন কেন?
কারণ আমি কখনোই সেট নিতে চাইনি। আমি কেন আপনার সেট নেব?
কেন, সেট বিক্রি করে গাজা খাবেন তাই।
সেট বেঁচে গাজা খেতে চাইলে আমারটাই বেচতাম, তাতে মনে হয় গাজা একটু বেশিই পাওয়া যেত। আপনার ঠিকানা বলুন। আমি সেট পৌছে দিচ্ছি।
তামান্না ঠিকানা দিল। ফোন রাখার আগে তামান্না বলল- আচ্ছা আগামী পরশু আপনি এই জায়গায় আসতে পারবেন?
আচ্ছা. তাইলে পরশু দেখা হচ্ছে, ওকে?
পরশু দিন নিপাকে সাথে নিয়ে তামান্না আসল। অনেক্ষন অপেক্ষা করার পরও কেউ আসল না। নিপার নম্বর থেকে কল দিয়ে দেখা গেল ফোন বন্ধ। এক মাস পর তামান্নার নামে ডি,এইচ,এলের একটা প্যাকেট আসে। সেখানে ঐঞঈ মডেলের একটা পকেট পিসি। আর একটা চিঠি। সেখানে লেখা ঃ
“আপনার সাথে কথা হবার পর দিনই আমাকে ইন্ডিয়া যেতে হয়। সেখান থেকে কানাডা। কেন, সেটা পরে জানাব, আপনার সেট আমি নিজের হাতে ফেরত দিতে চাই। এই কয়দিন কষ্ট করে এটা ব্যবহার করুন। আমার কানাডার নম্বর দিলাম। আপনি এসএমএস করলে আমি কল ব্যাক করব। এসএমএস এর অপেক্ষায় থাকলাম”।
বিনীত
ছিনতাইকারী
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:৩৮