somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদালতে আল্লামা সাঈদীর বক্তব্য : একটি পর্যালোচনা রাফীক বিন সাঈদী

১৪ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আদালতে আল্লামা সাঈদীর বক্তব্য : একটি পর্যালোচনা

রাফীক বিন সাঈদী

০৩ অক্টোবর ২০১১, সোমবার। ইতোপূর্বে জানানো হয়েছিল এ দিনেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমার পরম শ্রদ্ধেয় আব্বা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে। যথাসময়ে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে দেখলাম ডিফেন্স ও প্রসিকিউশন দু’পক্ষের আইনজীবীগণ, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়ার সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের উপচে পড়া ভীড়। সকলেই অপেক্ষায় ছিলেন আদালতের কার্যক্রম কখন শুরু হবে এবং আমার আব্বাকে কখন আনা হবে। অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো, আব্বাকে আদালত কক্ষে হাজির করা হলো। তিনি উপস্থিত সকলকে সালাম জানিয়ে আদালতের নিয়ম অনুসারে পেছনের কাঠগড়ায় আসন গ্রহণ করলেন। এরপর মাননীয় বিচারপতি অভিযোগ গঠন সম্পর্কিত আদেশ দেয়া শুরু করলেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী তিনি লিখিত আদেশ পড়ে শোনালেন এবং ২০টি অভিযোগের ভিত্তিতে চার্জ গঠন করলেন।

বুদ্ধির বিকাশের পর থেকেই যাকে দেখে আসছি সত্য কথন ও প্রচারে একনিষ্ঠ, নিক্ষিপ্ত বোমা ও গুলির মাঝেও মুখে অমলিন হাসি নিয়ে অসীম সাহসী বীরের ভূমিকায় এবং মিথ্যার প্রতি প্রবল অবিমিশ্র ঘৃণা পোষণকারী হিসেবে-সেই বীর পুরুষের চেহারায় আজ কোনো রূপান্তর ঘটেছে কিনা তা দেখার জন্যে আমি আমার আব্বার চেহারার দিকে পূর্ণদৃষ্টি মেলে তাকালাম। আজ তার বিরুদ্ধে কথিত অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। না, কোনো পরিবর্তনই লক্ষ্য করলাম না বরং মহান মালিক আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি অসীম নির্ভরতার দ্যুতি তার মুখাবয়ব জুড়ে অমলিন রয়েছে। সুদর্শন চেহারায় স্বভাবসিদ্ধ স্নিগ্ধ মৃদু হাসি ঢেউ তুলছে।

আদেশ পড়া শেষে আদালতের নিয়মানুসারে আব্বা সাক্ষীর কাঠগড়ার দিকে অকম্পিত দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে গেলেন। কাঠগড়ায় তাকে চেয়ারে বসতে দেয়া হলো। মাননীয় বিচারপতি আব্বাকে লক্ষ্য করে বললেন, “আমি অর্ডার ইংরেজিতে দিয়েছি এখন আপনার সুবিধার্থে বাংলায় বলবো। আপনি দোষী না নির্দোষ তা বলবেন”। বিচারপতিকে লক্ষ্য করে তিনি বললেন, “বাংলায় দেয়ার প্রয়োজন নেই, আপনার ইংরেজি অর্ডার আমি বুঝতে পেরেছি”। আব্বার মুখ থেকে এ কথা শুনে আমার মনে পড়লো তুরস্কের সেই অকুতোভয় ইসলাম প্রচারক আল্লামা সাঈদ বদিউজ্জামান নুরসীর কথা। আজ থেকে ছয় দশক আগে সত্য কথন ও ইসলাম প্রচারের কারণে কল্পিত অভিযোগে আমার আব্বার মতো তাকেও গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল। বিচারক ইংরেজি ভাষায় অর্ডার দিয়ে তুর্কী ভাষায় বলেছিলেন, “এবার আমি আপনার বুঝার সুবিধার্থে তুর্কী ভাষায় অর্ডার দিচ্ছি”। আল্লামা নুরসী হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “কোনো প্রয়োজন নেই, আমি আপনার ইংরেজি ভাষা বুঝেছি”। এ যেন সেই পুরনো ইতিহাসের কাকতালীয় পুনরাবৃত্তি। এরপর আব্বা আদালতের অনুমতি নিয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে অত্যন্ত সংক্ষেপে প্রতিবাদের ভাষায় বক্তব্য উপস্থাপন করলেন। বক্তব্যের শুরুতে সকলের প্রতি সালাম ও মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং নবী করীম (সা.)- এর প্রতি দরূদ পেশ করে তিনি বললেনÑ

মাননীয় আদালত, “আমার বিরুদ্ধে আনীত ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার। আমার বিরুদ্ধে রচনা করা ৪ সহস্রাধিক পৃষ্ঠার প্রতিটি পাতার, প্রতিটি লাইনের, প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি বর্ণ মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা। ২০টি অভিযোগের সব ক’টিই বানোয়াট। এর সাক্ষীও মিথ্যা। আমি ১৯৭১ সালে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস কিছুই ছিলাম না, কমান্ডার হওয়া তো অনেক দূরের কথা। পাক হানাদার বাহিনীর সাথে ১ মিনিটের জন্যেও কখনো কোনো বৈঠক হয়নি। তিনি বলেন, মাননীয় বিচারপতি, সেদিন আপনি প্রথম হজ্ব করে এসেছেন। আপনার মাথায় টুপি ছিল। তখনও আপনার চেহারা থেকে হজ্জের নূরানী আভা মলিন হয়নি। সেদিন আমাকে এখানে আনার পর একজন সম্মানিত প্রসিকিউটর আমার নাম বারবার বিকৃত করে বলছিলেন। আমি আশা করেছিলাম আমার নাম বিকৃত না করার জন্য আপনি প্রসিকিউটরকে নির্দেশ দিবেন। কিন্তু আপনি সেটা করেননি। বরং আপনিও আদেশ দেয়ার সময় প্রসিকিউটরের সুরে সুর মিলিয়ে একই বিকৃত নাম বলেছেন।” তিনি আরও বলেন, “আমার সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, পার্লামেন্ট কোথাও কি এ রকম বিকৃত নামের উল্লেখ আছে, যে নাম প্রসিকিউটর উল্লেখ করেছেন। আমি সেদিনই বুঝেছিলাম যে, আমি মারাত্মক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।” সূরা হুজুরাতের ১১ নং আয়াতের উল্লেখ করে আব্বা বলেন, “ওই সূরাতে নামের বিষয়ে বলা আছে, “কোন মানুষকে বিকৃত নামে ডেকো না।”

তিনি বলেন, মাননীয় বিচারপতি, আপনি একদিন এখানে বলেছিলেন, “আল্লাহ আমাকে একটি বিরাট দায়িত্ব দিয়েছেন। আসলেই তাই। বিচারপতির দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মহান। বুখারী, মুসলিম ও মেশকাতসহ সহীহ হাদিস গ্রন্থগুলোতে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আল্লাহর আরশের ছায়ায় সাত শ্রেণীর মানুষ আশ্রয় পাবে। তার মধ্যে ন্যায় বিচারকরা প্রথমেই রয়েছেন। আপনার (ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান) কাছে সেই ন্যায় বিচারই আশা করি। তিনি বলেন, “একজন বিচারপতির জবাবদিহিতা থাকে আল্লাহ তায়ালা এবং নিজ বিবেকের কাছে। এর বাইরে তৃতীয় কোনো স্থানে জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা থাকলে ন্যায় বিচার করা যায় না। বরং সেটা জুলুম হয়ে যায়। আর জুলুমের পরিণতি জাহান্নাম।

তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে আমি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী ছিলাম না। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এক যুগেরও বেশি সময় পর্যন্ত আমাকে নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি। ১৯৮০ সালে যখন জামায়াতে ইসলামী আমাকে মজলিসে শূরার সদস্য নির্বাচিত করে তখনই একটি শ্রেণী আমার বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে।

১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে সরকার গঠন হয় তখন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই আমি ২০ মিনিটের বক্তব্য দিয়ে বলেছিলাম, “আমি রাজাকার নই। কেবলমাত্র ভারতীয় রাজাকাররাই আমাকে রাজাকার বলতে পারে। মহান স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আমার সামান্যতম ভূমিকাও ছিল না।” আমার সেই ২০ মিনিটের বক্তব্যের একটি কথাও স্পিকার এক্সপাঞ্জ করেননি। সেই বক্তব্য আজও সংসদে সংরক্ষিত আছে। তিনি বলেন, আজ আমার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। অথচ আমি গত অর্ধশতাব্দী ধরে বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে মানবতার পক্ষে বক্তব্য রেখে এসেছি।”

তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার বাদী মিথ্যা, সাক্ষী মিথ্যা। যারা এই অভিযোগনামা রচনা করেছে, যারা মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছে, যারা বাদী হয়েছে তাদের মনে আল্লাহর ভয় ছিল না, হাশরের ময়দানে রাসূলের (সা.) শাফায়াতের আশা ছিল না। তাদের পক্ষে এ কারণেই এ ধরনের চরম মিথ্যাচার সম্ভব হয়েছে। আমাকে জনসম্মুখে হেনস্থা করা, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। এ সময় আব্বা পবিত্র কুরআনের সূরা ইব্রাহীমের ৪৬ ও ৪৭ নং আয়াত তেলাওয়াত করে বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “ওরা ভীষণ ষড়যন্ত্র করেছিল, কিন্তু তা আগেই আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ ছিল। আর ওদের সেই ষড়যন্ত্র এমন ছিল যে, তা বাস্তবায়িত হলে পর্বতসমূহ টলে পড়তো। সুতরাং এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা ভঙ্গ করবেন। বরং আল্লাহই বিজয়ী এবং চরম প্রতিশোধ গ্রহণকারী।”

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনকে একটি রচনা ছাড়া আর কিছুই নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটি মিথ্যা রচনার ভিত্তিতে বিচার নামক নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। এমন মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে আমার প্রতি বিনা অপরাধে আক্রোশমূলকভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত অবিচার করা হলে আল্লাহর আরশ কাঁপবে। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে যারা এমন মিথ্যা প্রতিবেদন রচনা করেছে তাদের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে। আমি সেই লানত দেখার অপেক্ষায় থাকবো।”

বক্তব্যের উপসংহারে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা। আমি নির্দোষ। আমাকে এসব অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেয়া হোক।” এই বলে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।

পিনপতন নীরবতার মধ্যে দিয়ে আদালত আসনে উপবিষ্ট মাননীয় বিচারপতিগণ, আইনজীবীগণ উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যবৃন্দ ও পর্যবেক্ষকগণ তন্ময় হয়ে আমার আব্বার বক্তব্য শুনলেন, যেভাবে তাফসীর মাহফিলে আগত অগণিত জনতা আব্বার বক্তব্য শুনে থাকেন। আমি লক্ষ্য করলাম, আব্বার বক্তব্য শুনে স্থান কাল পরিবেশের কারণে মুখে কেউ মনের ভাব প্রকাশ করতে অসমর্থ হলেও অনেকের চোখই অশ্রু সজল হয়ে উঠেছিল। পত্রিকায় আমার আব্বার বক্তব্য যারা পড়েছেন, এমন বহু সংখ্যক পাঠক আমার কাছে ফোন করে কেউ কেউ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন, কেউ বা আব্বার জন্য দোয়া করেছেন, সাহসিকতাপূর্ণ সত্য উচ্চারণের প্রশংসা করেছেন। আবার কেউ কেউ আব্বার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ গঠন সম্পর্কে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।

অপরাধীরা যে কোনো অবস্থাতেই নৈতিক দিক থেকে দুর্বল থাকে। এ কথা অপরাধ বিশেষজ্ঞগণ, সমাজ সচেতন ও বিবেকবান সকলেরই জানা রয়েছে। অপরাধীর কণ্ঠ শত সহস্র ঝঙ্কারে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হলেও কণ্ঠস্বর ও কথনে দুর্বলতা অপ্রকাশিত থাকে না, কোনো কালেও থাকেনি। পার্লামেন্টে আমার আব্বার প্রতি রাজাকার বিশেষণ প্রয়োগ করার কারণে আব্বাকে যেভাবে সিংহের মতো গর্জন করতে দেখেছিলাম, সেদিন আদালতে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও তাকে একইভাবে প্রতিবাদী হতে দেখেছি। আমার বর্তমান বয়স পর্যন্ত কখনো আব্বাকে সামান্যতম মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করা দূরে থাক, সত্যকে ধুম্রজালে আড়াল করার জন্যে কোনো কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করতেও দেখিনি। আমার এ কথার সাক্ষী দেশ-বিদেশের অগণিত মানুষ-যারা তাকে কাছ থেকে চেনা ও জানার সুযোগ পেয়েছেন। পরিবেশ পরিস্থিতি প্রতিকূল না থাকলে হয়তো আজ এ বিষয়ে অপরিপক্ব হাতে আমাকে কলম ধরতে হতো না বরং আব্বার বক্তব্য সম্পর্কে খ্যাতনামা কলামিস্টগণ যেমন নানা ধরনের পর্যালোচনা জাতিকে উপহার দিতেন তেমনি টক-শোতেও অনেকেই আব্বার বক্তব্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতেন।

হীন রাজনৈতিক কৌশল, প্রতিহিংসা ও আদর্শিক বিদ্বেষ মুক্ত মন-মানসিকতা সহকারে আদালতে প্রদত্ত আমার আব্বার বক্তব্য অনুধাবন করার জন্যে আমি সত্যানুসন্ধানীদের বিবেকের দুয়ারে করুণ স্বরে মিনতি ও করাঘাত করছি। অনুগ্রহ করে বিবেকের দ্বার উন্মুক্ত রাখুন। কারণ বিবেক কখনো অসত্য কিছুই বলে না। এ কারণেই বলা হয়, ‘এ পৃথিবীতে বিবেকই হলো সব থেকে বড় আদালত’। দৃষ্টির সম্মুখে কোনো অপরাধ সংঘটিত হতে দেখে, অকারণে নির্দোষকে অভিযুক্ত বা দণ্ডিত হতে দেখে বা কাউকে বিদ্বেষ তাড়িত শিকারে পরিণত হতে দেখেও বিবেকবান সচেতন ব্যক্তিবর্গ যদি নিজ বিবেকের দুয়ারে অর্গল তুলে দেন, তাহলে জাতীয় জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে বাধ্য। আর বিপর্যয় যখন নেমে আসে তখন এর ভয়াবহ ধ্বংসকারিতা থেকে বিবেকবানগণও মুক্ত থাকেন না। তারাও সকলের সাথে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ইতিহাসই এর সাক্ষী।

ভয়াবহ এই পরিস্থিতি ও পরিবেশ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যেই বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, “তোমাদের সম্মুখে কোনো অন্যায় সংঘটিত হতে দেখলে যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে তা হাত তথা শক্তি প্রয়োগে প্রতিরোধ করো। যদি সে শক্তি-সামর্থ না থাকে তাহলে মুখ দিয়ে অর্থাৎ প্রতিবাদের ভাষা প্রয়োগ করে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করো। যদি তা-ও না থাকে তাহলে হৃদয় দিয়ে অন্যায়কে ঘৃণা করো, আর এটি হলো ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর” (্সহীহ মুসলিম)। অর্থাৎ শেষেরটি হলো এমন দুর্বল ঈমান যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করে। হাদিস বিশারদগণ বলেছেন, হৃদয় দিয়ে ঘৃণা করার অর্থ হলো মিথ্যাচার ও অপরাধের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

সেদিন আদালতে আমার আব্বার প্রতিটি আচরণ,অকম্পিত সত্য কথন ও দৃঢ়তাই প্রমাণ করে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ দূরে থাক, মানব চুর আড়ালে কোনো ুদ্রতম অপরাধেও তিনি নিজেকে কখনো জড়িত করেননি। আমাদের গোটা পরিবার এর সাক্ষী। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, পবিত্র কুরআনের সৈনিকদের জুলুমের শিকারে পরিণত হতে দেখেও বিবেকবানগণ যখনই নীরবতা অবলম্বন করেছেন, তখন জাতীয় জীবনে নানাবিধ ধ্বংস ও বিপর্যয় বন্যার পানির মতোই ধেয়ে এসেছে। আমার আব্বা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পবিত্র কুরআনের অকুতোভয় নিবেদিতপ্রাণ খাদেম। এই কুরআনের জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। তার হৃদয়ের সবটুকু জুড়ে রয়েছে শাহাদাতের তামান্না। কিন্তু জঘন্য মিথ্যা অপবাদের বোঝা নিয়ে বিদায় নিতে হবে এটা তো তার নিজেরও কাম্য হতে পারে না। বুদ্ধির বিকাশের পর থেকেই তিনি মানুষকে মানবতার পক্ষে কুরআনের পথে আহ্বান জানিয়ে এসেছেন। জাতীয় জীবনে শান্তি, স্বস্তি, উন্নতি ও প্রগতির লক্ষ্যে তিনি কুরআনের শিক্ষা বিস্তার করে জনগণকে ইসলামী জীবন ধারায় অনুপ্রাণিত করেছেন। তার তাফসীর শুনে ও লেখনী পাঠ করে অগণিত মানুষ অসৎ প্রবৃত্তি পরিহার করেছেন। দেশে-বিদেশে তার হাতে হাত রেখে সহস্রাধিক অমুসলিম ইসলাম কবুল করেছেন।

নৈতিক অবক্ষয়, সামাজিক অস্থিরতা, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, সন্ত্রাস জাতীয় জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে কুরআনের শিক্ষার বিকল্প নেই। আর এ লক্ষ্যেই সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমার মিনতি, আল্লামা সাঈদীর মতো কুরআনের একনিষ্ঠ খাদেমকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে কুরআনের শিক্ষায় সমগ্র জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে সুখী-সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করুন। সমগ্র জাতি আজ অধীর আগ্রহে আল্লামা সাঈদীর ভুবনমোহন সুললিত কণ্ঠ নিসৃত কুরআনের অমীয় বাণী শোনার আশায় উন্মুখ হয়ে আছে। জাতির এ আকাক্সা পূরণে অনতিবিলম্বে সকল মিথ্যা অভিযোগ থেকে আমার আব্বাকে অব্যহতি দিন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সত্য অনুধাবনের তাওফীক দান করুন। আমিন।
-----লেখাটি আল্লামা সাঈদী সাহেবের বড় ছেলে রফিক সাঈদী'র------

।।।।।এই মহান মানুষটির প্রতি যা করা হচ্ছে, আমাদেরকে মুসলমান হিসেবে অবশ্যই এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। ক্ষমা চাইছি কায়মনোচিত্বে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে।।।। - এটি আমার প্রার্থনা।
১৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×