somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরজমিন পাসপোর্ট অফিস: ২০০ দালাল সক্রয়-- মানবজমিন প্রতিবেদন

১১ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০১১
তোহর আহমদ: রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস ঘিরে প্রায় ২০০ দালাল সক্রিয়। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ জন নারী। এছাড়া, দায়িত্বপালনরত পুলিশ ও আনসার সদস্যরাও দালালির কাজ করছেন। গতকাল সরজমিন পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে অবস্থান করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের পেছনে গড়ে উঠেছে আরেক অফিসপাড়া। সেখানে যারা কাজ করছেন তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই। শ’ শ’ পাসপোর্টের কাজ করছেন তারা। এসব অফিস ‘দালাল অফিস’ হিসেবে পরিচিত। শেরেবাংলা নগর থানার সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে তৈরী শতাধিক দোকানঘর এখন দালালদের অফিস। এখানে বসেই পাসপোর্টের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন দালালরা। ছবি সত্যায়িত করা, পাসপোর্ট নবায়ন, নতুন পাসপোর্ট, সংশোধনী কোন কাজের জন্যই মূল পাসপোর্ট অফিসে না গেলেও চলবে। চাহিদামতো টাকা দিতে পারলে দালাল অফিস থেকেই মিলবে সবকিছু। বরং কাগজপত্রে ভুল ত্রুটির নামে হয়রানি, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দেয়া, ফরম পূরণ, সত্যায়ন সব কিছু হয়ে যাবে অনায়াসে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হাতে এসে যাবে পাসপোর্ট। মেশিন রিডেবল (এমআরপি) নতুন পাসপোর্ট ১৫ দিনে নিতে চাইলে দিতে হবে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর ১ মাসে নিতে চাইলে দিতে হবে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট নিতে চাইলে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। নবায়নের জন্য ২ হাজার টাকা, সংশোধনের জন্য ৩ হাজার টাকা। এছাড়া শুধুমাত্র ফরম পূরণ ও কাগজপত্র দেখিয়ে নিতে দিতে হয় ৭শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। সত্যায়িত করে কাগজপত্র ফাইল করে নিতে দিতে হবে ৫শ’ টাকা। প্রকাশ্যেই দীর্ঘদিন ধরে দালালদের এসব অফিস চললেও পুলিশ নির্বিকার। পাসপোর্টের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পাসপোর্ট অফিস দালালমুক্ত। নতুন পাসপোর্টের সরকারি ফি ১৫ দিনের জন্য ৬ হাজার এবং ১ মাসের জন্য ৩ হাজার টাকা। অতিরিক্ত টাকা দালালদের সার্ভিস চার্জ। অবশ্য দালালদের বক্তব্য অতিরিক্ত এ টাকার সামান্য অংশই তারা পান। এর মধ্য থেকে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের দিতে হয় মোটা একটা অঙ্ক। ভাগ নেয় পুলিশ, আনসার আর স্থানীয় মাস্তানরা। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পাসপোর্ট অফিসকে দালালমুক্ত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। তখন বহিরাগত দালালদের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কথা বলা বা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। তদবির বাণিজ্য বন্ধ করতে পাসপোর্ট ভবনের সবগুলো দরজায় অফিস চলাকালে তালা লাগানো থাকতো। এছাড়া, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে নির্ধারিত সরকারি ফি দিয়ে ১ ঘণ্টায় পাসপোর্ট সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এতে পাসপোর্ট অফিস যেমন দালালমুক্ত হয়েছিল। তেমনি পাসপোর্ট প্রত্যাশী জনসাধারণের ভোগান্তিও লাঘব হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার অরাজক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। পাসপোর্ট অফিস পরিণত হয়েছে দালালদের স্বর্গরাজ্যে। কর্মকর্তারাও দালালদের ব্যবহার করে ঘুষ বাণিজ্য শুরু করেছেন। গতকাল সরজমিন আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করে দালালদের তৎপরতার নানাচিত্র দেখা যায়। পাসপোর্টের ফরম নিয়ে দালালদের কর্মকর্তাদের কক্ষে অবাধে ঢুকতে দেখা গেছে। পাসপোর্ট অফিসের পেশাদার দালালদের পাশাপাশি দায়িত্বরত আনসার ও পুলিশ সদস্যকেও দালালের ভূমিকায় দেখা গেছে। শেরেবাংলা নগর থানার এসআই আবদুল করিমকে প্রকাশ্যে টাকা ও পাসপোর্টের কাগজ নিয়ে কর্মকর্তাদের কক্ষে ছুটে বেড়াতে দেখা গেছে। এছাড়া কনস্টেবল রহিম, আনসার সদস্য গোলাম হোসেন, রেজাউল করিম, আনিস, মনজু শাহ, হেলাল, মনির ও ফরিদকে পাসপোর্টের কাগজপত্র নিয়ে কর্মকর্তাদের কক্ষে ছুটোছুটি করতে দেখা গেছে। আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট অফিসে দালালি করার অভিযোগ অনেক পুরনো। সূত্র জানিয়েছে, পাসপোর্ট অফিস ঘিরে এখন প্রায় দু’ শতাধিক দালাল সক্রিয়। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ জনের মতো নারী। গতকাল সালেহা নামের এক নারী দালালের কাছে পাসপোর্ট করে দেয়ার কথা বললে তিনি বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে নেবেন, না ৩০ দিনের মধ্যে? কোনটার জন্য কত টাকা লাগবে জানতে চাইলে সালেহা বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট নিতে চাইলে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। ৩০ দিনের মধ্যে নিলে ১৫ হাজার টাকা। পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া কিভাবে পাসপোর্ট দেবেন এমন প্রশ্ন করা হলে নারী দালাল সালেহা বলেন, এটা নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। আমাদের পুলিশের সঙ্গে খাতির আছে। সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তাছাড়া, উপরে স্যারেরা আছেন। তারাই ব্যবস্থা করবেন। তিনি বলেন, ১০ বছর ধরে পাসপোর্ট অফিসে কাজ করছি। কোনদিন কোন অসুবিধা হয়নি। নাসিমা, রাশিদা, মরিয়ম, মোর্শেদা, সাহেরা সহ বেশ কয়েকজন নারী দালালের নাম বলেন তিনি- যারা তার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দালালির কাজ করছেন। এক দালাল জানালেন, তারা বাইরে থেকে পাসপোর্টের কাজ সংগ্রহ করেন। এরপর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের এক উপ-পরিচালককে দিয়ে আসেন। তিনি ১ ঘণ্টার মধ্যেই ডেলিভারির তারিখ দিয়ে দেন। তার অধীনে ৪ জন দালাল কাজ করে। প্রতিদিন তিনি ২০-২৫টি পাসপোর্টের কাজ করেন বলে জানিয়েছেন ওই দালাল। এছাড়া, দালালদের কাছ থেকে সপ্তাহে ৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে স্থানীয় কয়েকজন পুলিশের সোর্স। আনিস, টিপু, শাহ আলম, মলিন ওরফে কসাই মলিন, মালেক পুলিশের হয়ে দালালদের কাছ থেকে চাঁদা তোলে। এ কারণে পুলিশ দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় না। আগারগাঁও কম্পিউটার গলিতে কুষ্টিয়ার রবি ও শুক্কুর সাদা পাসপোর্ট বইয়ের ব্যবসা করেন। শুক্কুর বগুড়া থেকে সাদা বই এনে বিক্রি করে। গত মাসে র‌্যাব-২ সদস্যরা তাকে ১০০ পাসপোর্ট সহ গ্রেপ্তার করে। সমপ্রতি জামিনে বেরিয়ে আবার দালালি শুরু করেছে সে। আগে পাসপোর্ট অফিসের দালালি নিয়ন্ত্রণ করতো আক্কাস। এখন সে পলাতক। এখন দালালি নিয়ন্ত্রণ করছে লিটন, ফারুক, রফিক, নুরুল, খায়ের, রাসেল, মালেক, শহিদ, আসাবুল, জসিম, স্বপন, তুহিন, রাইফেল মজিবুর, রেজাউল। এদের মধ্যে অনেকেই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তবে দালালি, কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ কেউ স্বীকার করেনি। বক্তব্য জানতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল মাবুদের কক্ষে গেলে সেখান থেকে বলা হয় তিনি মন্ত্রণালয়ে আছেন। পরিচালক সিরাজউদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সিরাজউদ্দীন বলেন, আমাদের কাছে লোকজন এসে বলে এখন কোন দালাল নেই। সব ক্লিন হয়ে গেছে। আমরা নিজেরাও দালাল দেখতে পাই না। আপনারা কিভাবে দেখতে পাচ্ছেন বুঝতে পারছি না। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে হাতে লেখা পাসপোর্ট ১ ঘণ্টায় দেয়া যেতো। কিন্তু এখন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ১ ঘণ্টায় দেয়া সম্ভব নয়। তাই সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের কক্ষে দালালদের অবাধ বিচরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সবাই সবার কাছে যাবে এটাই স্বাভাবিক। এতে জনগণেরই লাভ হয়। আনসার সদস্যদের দালালিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ সম্পর্কে আনসার কমান্ডার আজাদ বলেন, কোন আনসার সদস্য যদি নিজের দায়িত্ব বাদ দিয়ে দালালি করে তবে তা গুরুতর অন্যায়। এরকম কারও নাম পাওয়া গেলে উপরস্থ কর্মকর্তাদের জানানো হবে। যোগাযোগ করা হলে শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জিয়াউজ্জামান বলেন, দালালদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা প্রায়ই দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। কয়েকদিন আগে ১০-১২ জনকে ধরে চালান দেয়া হয়েছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×