somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেশা লাগিল রে বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিল রে

১১ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯২২ সালটি ছিল হাছন রাজার মৃত্যুর বছর। তার মানে, আজ আমরা তাঁর যেসব গান শুনছি, তা সবই ১৯২২ সালের আগে রচিত। কি আশ্চর্য! আশ্চর্য হওয়ার কারণ- হাছন রাজার গান শুনলে মনে হয় যেন এই মরমী সাধক গানগুলি আজই রচনা করেছেন । বাংলায় ‘আবহমান’ বলে একটা কথা আছে না? হাছন রাজার গানের কথা ভাবলে আবহমান বাংলার কথাও উঠে আসে যেন । হাছন রাজা আবহমান বাংলার অতি শুদ্ধ এক মরমী কবি।
হাছন রাজার গান ছন্দময় এবং সুরেলা তো বটেই, সেই সঙ্গে প্রকাশভঙ্গি অত্যন্ত সহজ অথচ গভীর অর্থপূর্ণ । এই যেমন :

নেশা লাগিল রে বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিল রে
হাছন রাজা পিয়ারির প্রেমে মজিল রে।


কিন্তু কে পিয়ারি? আমরা কৌতূহলী হয়ে উঠি। পিয়ারির সঙ্গে হাছন রাজার কি সম্পর্ক? হাছন রাজা পিয়ারির প্রেমে কেনই-বা মজলেন? কি তার প্রেক্ষাপট? কেনই-বা হাছন রাজার বাঁকা দু নয়নে নেশা লাগল? একি নিছক মানবমানবীর প্রেম? না অন্য কিছু? এই নেশার প্রকৃত অর্থই-বা কি? এসব প্রশ্নে আমরা কৌতূহলী হয়ে উঠি।
জীবনভর হাছন রাজা কি খুঁজেছিলেন তা আমরা জানি। জীবনভর হাছন রাজা যাকে খুঁজেছিলেন জীবদ্দশায় তাকে খুঁজে পেয়েছিলেন বলে আমাদের মনে হয়। নইলে তিনি কেন গাইবেন-

ছটফট করে হাছন দেখিয়া চাঁনমুখ
হাছনজান- এর মুখ দেখি জন্মের গেল দুখ।


(হাছন+জান=হাছনজান=পিয়ারি?আরেকটু তলিয়ে দেখা যেতে পারে। জান=অন্তর। যেখানে বাউলের প্রাণের মানুষ বাস করেন। কাজেই হাছনজান পিয়ারিকে প্রাণের (বা মনের ) মানুষের মূর্ত রূপ ভাবতে পারি কি? আবার হাছনের জান কে হাছনের কলবও ভাবা যায়। )


কিন্তু হাছন রাজার মতো একজন বিষয়-অনাসক্ত আল্লাহভক্ত মানুষের প্রেম তো আর আর আট/দশজনের মতো নিছক প্রেম নয়। হাছন রাজার প্রেম মোর দ্যান দ্যাট। হাছন রাজার প্রেম হল ইশক! কাজেই পিয়ারির প্রকৃত স্বরূপের প্রতি আমরা মনোনিবেশ করতে পারি। মনে হয় পিয়ারি আধ্যাত্মিক কোনও সত্তার প্রতিরূপ। মর্তের কেউ নয়। উপরন্ত, পিয়ারি অত্যন্ত খুবসুরত নারী। অর্থাৎ চাঁদের মতো সুন্দরী নারী। কেননা,

ছটফট করে হাছন দেখিয়া চাঁনমুখ



কিন্তু সে সৌন্দর্য কেবলি নারীর দেহজ রূপের মধ্যে সীমিত কি? নিশ্চয় না। তাহলে? সে রূপ আরও দূরবর্তী মায়াবী পর্দার অন্তরালের অপার্থিব কিছুর ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু, কি সেই ইঙ্গিত? আমাদের মনে হয়, কেউ একজন পিয়ারির রূপ ধরেছে। কে সে? সে-যাকে হাছন রাজা খুঁজেছিলেন জীবনভর। যাকে দেখে-

হাছনজান-এর রূপটা দেখে ফালদি ফালদি ওঠে
চিরাবারা হাছন রাজার বুকের মধ্যে ফোটে।

(‘চিরাবারা’ শব্দটির মানে কিন্তু বোধ গম্য হল না। তাতে অবশ্য গানটির স্বরূপ উদঘাটনে বিন্দুমাত্র বিঘ্ন ঘটেনি। বাউল গানের কিছু শব্দ উহ্যই থাকুক না কেন। কিন্তু‘চিরাবারা’ কি কোনও ফুলের নাম? পদ্ম? সুনামগঞ্জের ভাষায় কোনও ফুলের নাম? যা বুকের মধ্যে ফোটে? ... লালন ও হাছনের প্রতি ভক্তির নিদর্শন স্বরূপ আমাদের কুষ্ঠিয়া এবং সুনামগঞ্জের ভাষা শেখা উচিত। ভবিষ্যতে সেরকমই ঘটবে আশা করি।)


হাছনজান (পিয়ারি) কে দেখে সংশয়ী হাছন রাজার সংশয় ঘুচে গিয়েছিল বলে ভাবতে ভালো লাগছে। জীবনের কোনও এক পর্যায়ে মরমী হাছন পিয়ারিকে দেখে আনন্দে লাফিয়ে উঠেছিলেন। বুকের ভিতরে স্বর্গীয় প্রেমের অভিঘাত/কম্পন টের পেয়েছিলেন। পিয়ারির চাঁদমুখ বলে দেয় যে এ জীবন অর্থহীন নয়। জীবনের মানে আছে, এবং সে মানে অত্যন্ত গূঢ় এবং গভীর। জীবন-মৃত্যুর ওপারে এক লোকোত্তর সত্তা রয়েছে- যার কথা ভাবতে বসলে নেশা ধরে যায়; সংসারে বৈরাগ্য আসে, ভবের হাটের বিকিকিনি তুচ্ছ মনে হয়। সেই নামহীন সত্তার অস্তিত্ব সর্ম্পকে এতকাল সংশয় ছিল হাছনের । আজ পিয়ারিকে দেখে, প্রকারন্তরে এক অপরূপা নারীর রূপমাধুর্য দেখে সব সংশয় ঘুচে গেল। এক মায়াবী নারী যোগবলে হাছনকে এলমে তাসাউফ-এর পথ (সুফিবাদের পথ) দেখাল। এভাবে সমস্ত সংশয় ঘোচার আনন্দে হাছন রাজা গান ধরলেন:

নেশা লাগিল রে বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিল রে
হাছন রাজা পিয়ারির প্রেমে মজিল রে।


আজ থেকে শত বছর আগে হাছন রাজার চোখে নেশা লেগেছিল।
সে নেশা আজও আমরা অনুভব করি যেন ...


উৎসর্গ: হাসান সাইমুম ওয়াহাব (সিমু)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:৩৪
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফিলিস্তিনিদের আত্মদান ধর্মযুদ্ধ নয়; এটি স্বাধীকারের যুদ্ধ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৬ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৬

বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা যেকোন বিষয়কে ধর্মীয় ফ্লেভার দিয়ে উপস্থাপন করে৷ ইসলামের সাথে কতটুকু সম্পৃক্ততা তার ভিত্তিতে কনভারজেন্স নির্ধারিত হয়৷ বাঙালি মুসলমানরা এক্ষেত্রে এক কাঠি ওপরে৷ পক্ষ বিপক্ষ বেছে নেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

--যে পাখি ফুল দিয়ে বাসা সাজায়, যে মাছ সমুদ্রের নীচে বালিতে ডিজাইন করে--

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৬ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৮

মানুষ ছাড়া প্রকৃতিতে এক ধরনের পাখি আছে- যারা ফুল দিয়ে ঘর সাজায়। এদের বাওয়ার বার্ড নামে ডাকা হয়। এদের মধ্যে ২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। নিউ গিনির জঙ্গলের ধারে একই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন

লিখেছেন মীর সাখওয়াত হোসেন, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

নজদী ওহাবীদের সম্পর্কে আলােচনা করার পূর্বে নজদ দেশ সম্পর্কে আলােকপাত করতে চাই। আরবের মক্কা নগরীর সােজা পূর্ব দিকের একটি প্রদেশের নাম নজদ । এখন উক্ত নজদ দেশটি সৌদি আরবের রাজধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×