somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা আসলে জাতি হিসেবে কেমন ? আমি বাংলাদেশি বলে কি আমার গর্ব হওয়া উচিত নাকি লজ্জা হওয়া উচিত ?

১১ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘটনা ১ ঃ

২ সপ্তাহ আগের কথা, পরীক্ষা সামনে, আমি সকাল সকাল চলে গেলাম কাছের লাইব্রেরীতে। সকাল সকাল গভীর মনোযোগে পড়া শুরু করলাম, কিছুক্ষণ পর সামনে এসে বসল কয়েকদিন আগে পরিচয় হওয়া একজন কলম্বিয়ান মধ্যবয়স্ক নারী, আমার পাশে একজন বাংলাদেশি ভদ্রলোক, এবং এর ২ ঘন্টা পরে আমাদের টেবিলের চতুর্থ চেয়ারটাতে এসে বসল মেক্সিকান এক মেয়ে। সবাই নিজের নিজের কাজ করতে লাগল। আমার সাথে বাংলাদেশ ভদ্রলোকের কিছু কথা হল, এখানে অনেক বাংলাদেশি, তাও কারো সাথে কথা বললেই মনটা ভাল লাগে। কেন জানি আলাদা একটা টান , হয়ত সব প্রবাসীর ক্ষেত্রেই তাই, কিন্তু আমার মনে হয় যেন আমার ক্ষেত্রে একটু বেশি। যাই হোক, দুপুরের দিকে কথা বলে বাংলাদেশি ভদ্রলোক চলে যাওয়ার সময় ঐ কলম্বিয়ান ভদ্রমহিলা ঐ বাংলাদেশি কে জিজ্ঞাসা করলেন , " ওহ, তোমরা একি দেশের মানুষ ? আমি তোমাকে দেখে ইটালিয়ান ভেবেছিলাম, "। উনি গর্ব ভরে জানালেন যে উনার কর্মস্থলে উনাকে অনেকেই ভুল করে ইটালিয়ান বলে মনে করে, এবং এতে তাকে খুব ই খুশি মনে হল, মুহূর্তে র জন্য আমার মনে হল, উনি বাংলাদেশি হওয়ার চেয়ে ইটালীয় হলেই অনেক বেশি খুশি হতেন। বিকালের দিকে কথা প্রসঙ্গে মেক্সিকান ডাক্তার মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞাসা করল, " তোমরা তো তোমাদের ভাষা ছাড়াও উর্দু হিন্দীতে কথা বলতে পার, " আমি বললাম , "না ত, আমরা তো উর্দুতে কথা বলি না । সত্যি কথা বলতে আমরা উর্দু কে প্রচন্ডভাবে অপছন্দ করি।" তখন সে বলল "দুঃখিত , হ্যাঁ , আসলে আমি শুনছি, পাকিস্তান ? উর্দু ? বাংলা ?"আমি বলি, "হ্যাঁ।" মুহূর্তে র জন্য আমার বাংলাদেশি হিসেবে গর্ব হয় যে কতদূরের একজন মানুষ, সেও বাংলাদেশিদের ইতিহাস কিছুটা হলেও জানে। আমার মনে পড়ে আমাদের বাসায় ভাড়া থাকা গগন দার কথা। উনি দক্ষিণ আফ্রিকা বা ইংল্যান্ডে একবার বাংলাদেশ কে নিয়ে কটুক্তি করার প্রতিবাদ করায় পাকিস্তানি ৩/৪ জন তাকে জবাই করে। আমার তখন কেন জানি গগন দার কথা মনে হচ্ছিল।



ঘটনা ২ ঃ


প্রায় ১ যুগ আগের কথা, তখন বাংলাদেশ বিমান অনেক দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করে। বিমান আস্তে আস্তে শক্তিশালী হইয়ে উঠছিল। আমার মনে পড়ে বিমানে র বাংলাদেশি ক্রু এবং যাত্রীদের কথা। যাদের মাঝে এক ধরণের অহংকার ছিল, সদ্য স্বাধীন দেশের বেসামরিক বিমান ব্যবস্থা কয়েক বছরের ব্যবধানে কত উন্নত হয়ে যেতে পারে, সেসময় অনেক বিদেশী বাংলাদেশ বিমানের টিকেট কিনতেন।বর্তমান সময়ে দেখতে পাই, আমাদের দেশের মানুষেরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে , বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলার এয়ারপোর্ট এ কতটা হেনস্থার শিকার হয় , কত দেশে বাংলাদেশে প্লেন নামতে দেয় না। আমার নিজের একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা হল, একবার এমিরেটস এর একটা ফ্লাইটে দেশে ফিরছিলাম, তখনো আমি ঢাকা মেডিকেল এর ছাত্র, দেখতে পাই এমিরেটস এর এক এয়ারহোস্টেস তাকে খুব ধমক দিচ্ছে, এবং তাকে প্লেন থেকে নেমে যেতে বলছে, সে কিছুই বুঝতে পারছে না, বোকার হাসি হেসে তাকিয়ে আছে। কিছু কিছু বিদেশী কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে, অনেক বাংলাদেশি উদাসীন দৃষ্টি নিয়ে প্লেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, যেন কিছুতেই কিছু আসে যায় না, আমি পারলাম না, আমি গেলাম, বললাম ,

" কি হয়েছে ? আপনারা তো আপনাদের কাস্টমারের সাথে কথা এভাবে বলতে পারেন না এভাবে , উনি কি করেছেন যে আপনি উনাকে নেমে যেতে বলতেছেন, আর উনি তো আপনার কথা বুঝতে পারছেন না, উনি ইংরেজী জানেন না।"

সে বলল, "তোমার দেশের লোক তো বোর্ডিং পাস দেখাতে পারছে না। তাকে আমি উঠতে ই দিব না।" আমি তার সাথে কথা বলে বুঝলাম যে সে আগের ফ্লাইটের বোর্ডিং পাস এর জায়গায় এই ফ্লাইটের টা ভুল করে ফেলে দিছে। যাই হোক, তার কথা বুঝে ওই ফ্লাইটের লোকদের বুঝিয়ে দিলাম, যে এই ব্যাপার, ওরা আমাকে বলল, যে ওর পক্ষে কথা যেন আমি এখন প্লেন থেকে নেমে এয়ারপোর্টে গিয়ে বলি, আমি কিছুটা দ্বিধার সাথে বললাম , ঠিক আছে। এর মাঝেই আরেকজন এসে বলল, যে না ঠিক আছে, ওরা কম্পিউটার থেকে নিশ্চিত হইছে এই লোক প্লেনের যাত্রী। যাক, উনাকে সাহায্য করতে পেরে ভাল লাগছিল। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম, " সে আমাকে ধন্যবাদ বা কোন কিছুই বা বলে তার সীটে বসে অভদ্রের মত হাসতে লাগল, আর তার মত আরো কিছু লোক মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে এমিরেটস এর সুন্দরী এয়ারহোস্টেসের ছবি তুলতে লাগল, বারংবার নিষেধ সত্ত্বেও। আমি এবার আর দায়িত্ব নিলাম না, আমার দেশের মানুষের এ হেন আচরণে আমার মাথা হেঁট হয়ে আসছিল।

ঘটনা ৩ ঃ

আমি তখন বাংলাদেশে। ড ইউনুস নোবেল পেলেন, আনন্দের আতিশয্যে আমি রিক্সাওয়ালা ভাই এর সাথে এ নিয়ে গল্প শুরু করে দিলাম, দেখলাম উনি নোবেল এর ব্যাপারটা না বুঝলেও বাংলাদেশের একজন মানুষ অনেক বড় সম্মান পাইছেন দেখে খুশি খুব। এমন কি আমি যখন বিদেশে আসছি, তখনো , এমন কি আজ ও প্রায় শুনতে পাই, " ওহ, তোমরা বাংলাদেশী, তোমরা মুক্তিযুদ্ধ করছ, আর তোমরা ড ইউনুসের দেশের লোক, " এখানকার ভার্সিটিতে ১ বছর আগে উনি একটা লেকচার দিতে আসছিলেন, সেটা নিয়ে এখানকার ছাত্রছাত্রীদের সে কি উতসাহ, তারা তাঁকে অনেক বিষয়ে প্রশ্ন করল। অত্যন্ত চমৎকার ভাবে তিনি তার জবাব দিলেন তার সেই পরিচিত ড্রেস পড়ে। উনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য কিনা, আসলেই উনি গরীবের বন্ধু কিনা এ নিয়ে আমাদের দেশে অনেক তর্ক আছে, আমি নিজেও অনেক কিছু নিয়ে সন্দিহান, কিন্তু একজন বাংলাদেশি র লেকচার শোনার জন্য এত হাজার হাজার বিদেশি ছাত্র ছাত্রীদের আগ্রহ কৌতুহল আমাকে গর্বিত করে।


ঘটনা ৪ঃ


বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যখন বি এস এফ বাংলাদেশি দের চোরাচালানের অপরাধে বা অবৈধ ভাবে সীমান্ত পারাপারের দোষে মেরে ফেলে এবং তাতে কেউ কেউ যখন বলেন, ঠিক ই আছে, চোর দের মারবে না তো কি আদর করবে ? একিভাবে, সৌদীতে খুনী বাংলাদেশীর বিচার শিরোচ্ছেদ হবে না তো কি জামাই আদর হবে বলে যারা প্রশ্ন তোলেন, তাদের সবাইকে বলতে চাই, আমরা মানুষ, আমরা যেমন ভুল করব, তেমনি আমরা ভাল কাজ ও করব। অপরাধীর শাস্তি মেনে নিতে আমার দ্বিধা নাই, কিন্তু আমাদের দেশের নাগরিকেরা যেন অন্য দেশে যাওয়ার আগে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যান, আর আমাদের দেশ সম্পর্কে শুধুমাত্র নেতিবাচক খবর শুনে আমরা নিজেরা যেমন নেতিবাচক হয়ে গেছি, সারা বিশ্ব যদি আমাদের সম্বন্ধে নেতিবাচক হয়ে যায় , আমাদের খবর আছে। আজ সকালের খবর পদ্মা সেতু তৈরি স্থগিত হয়ে গেছে। অনেকেই বলবে, ঠিক আছে। ভাল করে ভেবে দেখুন দুনিয়ার বুকে বাংলাদেশ নামক দেশটা র কেমন পরিচিতি হতে যাচ্ছে বা হচ্ছে। আমরা নিজেদের মাঝে যাই আলোচলা করি না কেন, আমার অনুরোধ বিদেশীদের কাছে যেন আমরা নিজেদের ছোট না করি। অন্যায় অপরাধ সব দেশের নাগরিক করে। সেই অপরাধের শাস্তি ও হয়, কিন্তু আর কোন দেশের মানুষেরা জাতি সংঘের সামনে গিয়ে নিজেদের বদনাম করে না। আর কোন দেশ নিজেদের নাগরিক , হোক তারা অপরাধী , অন্য দেশের হাতে তাদের বিচারের নামে হত্যা, নির্যাতন এত সহজে মেনে নেয় না। ভারত বা সৌদী র কোন নাগরিক যদি আমাদের দেশে খুন ও করে, তারা ওর শাস্তি দিবে হয়ত ঠিক ই, কিন্তু সেটা নিজেদের দেশে, আমাদের কে করতে দিবে না। কেননা এখানে আসে নিজের দেশের সম্মান অসম্মানের ব্যাপার। আমরা জাতি হিসেবে আগামী পৃথিবীতে সম্মানের সাথে , গর্বের সাথে বেঁচে থাকব, নাকি একটা নীচ জাতি হিসেবে লজ্জিত হয়ে টিকে থাকব, তা নির্ভর করবে আমাদের ই উপরে। নিজেদের কে সেরকম জাতি হিসেবে তুলে ধরতে হলে কিন্তু আমাদের সত্যিকার ভাবে ই নিঃস্বার্থভাবে দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা ভাবতে হবে।অন্য দেশের মানুষের থেকে আমার দেশের মানুষকে বেশি মর্যাদা দেয়া শিখতে হবে। এবং সেভাবে কাজ করতে হবে, না হলে অচিরেই আমরা বাংলাদেশি হিসেবে আর গর্বিত হব না, হব লজ্জিত।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৮:২০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×