somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আফ্রিকার লোককাহিনী : বশ

১০ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক অনেক দিন আগের কথা। আফ্রিকার ছোট একটি গাঁ। সে গাঁয়ে বাস করত অল্প বয়েসি এক দম্পতি । তাদের বিয়েটা কিন্তু বেশি দিন হয়নি। অথচ এরই মধ্যে বিবাহিত জীবনের সব আনন্দ যেন স্বামীটির মন থেকে মুছে গেছে। স্ত্রীর মুখ অসহ্য ঠেকে। ফসলের মাঠ থেকে দেরি করে ঘরে ফিরে। তার স্ত্রী অবশ্য তার স্বামীকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু, মেয়েটিও ধীরে ধীরে কেমন বিষন্ন বোধ করতে থাকে। স্বামীর খিটখিটে মেজাজে মেয়েটিও হতাশ ।
মেয়েটি নিরূপায় হয়ে গ্রামবুড়োর কাছে গেল।
গ্রামবুড়োর অনেক বয়েস। থুত্থুরে। অবশ্যি নানারকম তুকতাক জানে বুড়ো। এই যেমন কারও ওপর অপদেবতা ভর করছে ঝাড়ফুঁক করে সারিয়ে তোলে। এমন কী বশীকরণ মন্ত্রও জানে। তো, মেয়েটির মুখে সাংসারিক অশান্তির বিস্তারিত শুনে গ্রামবুড়ো গভীর দুঃখ পেল। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতে লাগল: আজকাল কী হল। মানুষ সুখি হচ্ছে না। অথচ আমাদের সময়ে আমরা কত সুখি ছিল। অথচ এই মেয়েটির বিয়ে দু’ বছরও হয়নি। বিয়ের সময় তো মনে হয়েছিল এরা সুখিই হবে। অথচ ... এসব ভেবে বুড়ো বিষন্ন হল। তারপর বলল, তুমি তোমার স্বামীকে ছেড়ে দিতে চাও? তুমি তোমার স্বামীকে ছেড়ে দিতে চাইলে আমি ব্যবস্থা করতে পারি। তুমি আবার বিয়ে করতে পারবে।
মেয়েটি চুপ করে থাকে।
সত্যিই কি তুমি তাই চাও? গ্রামবুড়ো জানতে চাইল।
মেয়েটি কান্নাভেজা কন্ঠে বলল, না, আমি আমার স্বামীকে ছেড়ে দিতে চাই না।
তাহলে?
আমি চাই আমার স্বামী আমায় ভালোবাসুক।
বুড়ো গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। এখন কি করা যায়। একবার পুরুষের মন উঠে গেলে তা ফের থিতু করানো তো মুশকিল। এই মেয়েটির স্বামী কি আবার একে ভালোবাসবে? এ সমস্ত ভেবে গ্রামবুড়ো বলল, দেখি কী করা যায়। মনে হচ্ছে তোমার স্বামীকে বশ করতে হবে। তার জন্য চাই বশীকরণ মন্ত্রের সব উপকরণ ।
যা করার জলদি কর। এসব আমার আর ভাল লাগছে না। বলে মেয়েটি ডুকরে কেঁদে উঠল।
বুড়ো বলল, কিন্তু, বশীকরণ মন্ত্রের জন্য আমার যে একটা জিনিস চাই ।
কি জিনিস?
বলছি। আমি বুড়ো হয়েছি। আমার পক্ষে গ্রামের বাইরে যেয়ে জিনিসটা যোগার করা সম্ভব না। তুমি কি জিনিসটা আমাকে এনে দিতে পারবে?
কি জিনিস বল ? তুমি যা চাও তাই এনে দেব বুড়ো। যে ভাবেই হোক। মেয়েটি চোখ মুছতে মুছতে বলল।
হুমম। আমার চাই সিংহের গোঁফ। মৃত সিংহের গোঁফ হলে চলবে না। গোঁফ জীবন্ত সিংহের হতে হবে।
বিনা মেঘে বজ্রপাত হল। সেই প্রচন্ড শব্দে মেয়েটি ভয়ানক চমকে উঠল। জীবন্ত সিংহের গোঁফ। কিন্তু তা কি করে সম্ভব? তারপরও মেয়েটি বলল, ঠিক আছে। এনে দেব।
গ্রামটির অদূরেই নদী। সে নদীতে একটি সিংহ রোজ পানি খেতে আসে। মেয়েটি পরের দিন মাংসের বড় একটি টুকরো নিয়ে নদীর ধারে গেল। মাংসের টুকরো নদীর ধারে রেখে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। এরপর ঘন্টার পর ঘন্টা গেল। সিংহ তো এল না। মেয়েটি ধৈর্য্য হারাল না। এক সময় একটা সিংহ এল। মাংস খেল। মাংস খাওয়া শেষ হলে কেশরশুদ্ধ বড় মাথা ঘুরিয়ে একবার পিছন দিকে চাইল। মনে হল মেয়েটির উপস্থিতি টের পেয়েছে। তারপর চোখের পলকে পিছনের জঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে গেল।
পরের দিন। মেয়েটি মাংসের বড় একটি টুকরো নিয়ে নদীর পাড়ে এল। আজ অবশ্য সিংহ জলদি জলদিই এল। মাংস খেল। তারপর মেয়েটির দিকে একবার তাকিয়ে হেলেদুলে চলে গেল।
এভাবে বেশ কিছু দিন কাটল।
প্রতিদিনই মেয়েটি অল্প অল্প করে সিংহের কাছাকাছি আসতে থাকে।
চার সপ্তাহ পর। নদীর ধারে সিংহ মাংস খাচ্ছিল। মেয়েটি সাহস করে সিংহের কাছে এসে বসল। মেয়েটির হাত ভীষণই কাঁপছিল। তারপরও হাত বাড়িয়ে সিংহের মুখ থেকে একটা গোঁফ তুলে নিল। তারপর সিংহ চলে না যাওয়া পর্যন্ত স্তব্দ হয়ে বসে থাকল। সিংহ চলে গেলে মেয়েটি দৌড়াতে দৌড়াতে গ্রামবুড়োর কাছে গেল। সিংহের গোঁফ দেখিয়ে চেঁচিয়ে বলল, এই যে, এই যে!
বুড়ো সব শুনল। তারপর হাসল। বলল, তোমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনার জন্য বশীকরণ মন্ত্রের আর দরকার নেই। তুমি এতই সাহসী যে তুমি জীবন্ত সিংহের মুখ থেকে গোঁফ তুলে এনেছ। তুমি যা করেছ সে জন্য প্রচন্ড সাহস ও প্রখর বুদ্ধির দরকার। তুমি যে রকম ধৈর্য্য দেখিয়েছ সেরকম ধৈর্য্য তুমি তোমার স্বামীর সঙ্গেও দেখাও না কেন ?
কিন্তু ... কিন্তু বশীকরণমন্ত্রের কি হবে? বশীকরণ মন্ত্র কি কাজ করবে না? মেয়েটি মরিয়া হয়ে জিগ্যেস করল।
গ্রামবুড়ো বলল, করবে। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। এরচে প্রতিদিন তুমি তোমার স্বামীকে দেখাও যে তুমি তাকে ভালোবাস। সেই সঙ্গে তুমি তোমার স্বামীর সমস্যাগুলি বোঝার চেষ্টা কর। সে যেন তোমার কাছে এলে স্বস্তি পায়। সে যেন তোমাকে চায়। তুমি তোমার স্বামীকে বদলে যাওয়ার জন্য সময় দাও। তারপর দেখ কি হয়।
মেয়েটি আশ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। বুড়োর কথামতো কাজ করতে থাকে। ধীরে ধীরে মেয়েটির স্বামীকে গ্রামের অন্যান্য পুরুষদের সঙ্গে ফসলের মাঠ থেকে ফিরতে দেখা গেল। মনে হল আজকাল সে তার বউকে দেখে খুশি। বছরখানেকের মধ্যে গ্রামের লোকেরা ওদের সুখি দেখতে পেল ...

অনুবাদ উৎস:

http://africa.mrdonn.org/lion.html
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×