somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মমতার বাঁধন...

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছুটির দিনে সকাল বেলা নামাজ পড়ে ঘুমানোর অভ্যাস মামুন সাহেবের অনেক দিনের।সপ্তাহে বাকী দিন গুলো সকালে না ঘুমালেও একদিন তিনি ঘুমাবেন যেভাবেই হোক।কিন্তু ইদানিং তিনি শুক্রবারেও সকালে ঘুমাতে পারছেন না,তার কারন হলো তার সাড়ে চার বছরের মেয়ে নদী।নদীর আম্মু যখন ঘুম থেকে উঠে তখনই নদীর ঘুম ভাঙ্গে আর তাই প্রতিদিন বাবাকে ঘুম থেকে উঠানোর কাজটা নদীই করে।সেটা শুক্রবার হোক আর রবিবারই হোক ইঞ্জিনিয়ার বাবাকে প্রতিদিন সকাল সকাল নদীর ঘুম থেকে উঠানো চাই।আজকেও তার ব্যাতিক্রম হলোনা,যথারীতি বাবার কানের কাছে যেয়ে প্রথমে ফিস ফিস করে বলতে লাগল,
--ভোর হলো দোর খোল/বাবা তুমি উঠোরে,ও বাবা শুনতেছ?
কিন্তু নাহ,বাবা আজকে শুনছে না,নদী আবার ডাকে,
--ও বাবা,শুনছ?,ভোর হল দোর খোল/বাবা তুমি উঠোরে...
মামুন সাহেব একবার ঘুমের ঘোরে 'হু'বলে আবার পাশ ফিরে শুলেন,এবার নদীও উঠে ঐ পাশে যেয়ে বাবার মাথার কাছে বসল
সেটা বুঝতে পেরে মামুন সাহেব আবার ওপাশ ফিরলেন সাথে সাথে নদীও ওপাশে যেয়ে ফিস ফিস করতে লাগল,এভাবে কিছুক্ষন বাপ-মেয়ে এপাশ ওপাশ খেলল,নাস্তা টেবিলে রেখে মিলি ঘরে এসে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন বাপ-মেয়ের এপাশ ওপাশ খেলা দেখল অন্যদিন এ সময় নদীকে খাইয়ে দু'জনেই দু'জনের কাজে বেরিয়ে যায়,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আটটার বেশি বাজে এত বেলা পর্যন্ত নদীর না খেয়ে থাকার মানে নেই,কিন্তু বাবা না উঠা পর্যন্ত তো সে খাবেও না,অতএব মিলি নদীর দিকে তাকিয়ে বলল,
--নদী,বাবার কানের কাছে জোরে জোরে নতুন শেখা কাঠবিড়ালী ছড়াটা বলত...
মামুন সাহেব এই ফাঁকে এক চোখ খুলে মিলির দিকে তাকিয়ে দেখলেন,নদী মাথা ঘুরাতেই আবার চোখ বন্ধ করে ফেললেন। এবার নদী লক্ষী মেয়ের মতো বাবার কানের কাছে জোরে জোরে বলতে লাগল,
--বাবা শোন,''কাঠবিড়ালী কাঠবিড়ালী পেয়ারা তুমি খাও
গুড় মুড়ি খাও
বাতাবী লেবু লাউ...''
মামুন সাহেব এবার উঠে বসলেন,মিলির দিকে চোখ ছোট করে তাকাতেই মিলি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেল,এবার পাশে বসা নদীকে কোলে নিয়ে তিনি বললেন,
--রাজকুমারী,আপনি কি আজকে দাঁত ব্রাশ করেছেন?
নদী মিটমিট করে হাসতে লাগল,
--তারমানে আমার রাজকুমারী এখনো দাঁত ব্রাশ করেনি,ভেরি ব্যাড,চল চল,আমরা দু'জন এখন দাঁত ব্রাশ করব,চল।
মেয়েকে কোলে নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকলেন মামুন সাহেব,রান্না ঘর থেকে মিলি বলতে লাগল,
--এই শোন,নদী কিন্তু পেষ্ট খেয়ে ফেলে খেয়াল রেখো,ওকে দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিয়ে তারপর তুমি করো বুঝেছ...
--আচ্ছা
বলে নদীর দিকে তাকিয়ে দেখলেন দুষ্ট মেয়েটা ঠিকই ব্রাশ মুখে দিয়ে শুধু পেষ্ট খাচ্ছে,তার দিকে চোখ পড়তেই ফিক করে হেসে ফেলল,অগ্যাত কি আর করা,নদীর দাঁত ব্রাশ শেষ করে তারপর তিনি শুরু করলেন।
নাস্তা শেষ করে মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়ছেন মামুন সাহেব,পাশে বসে নদী আঁকিবুকি করছে,মিলি এসে বলল,
--এই শোন,পেপার পরে পড়,এখন বাজারে যাও,এ সপ্তাহের বাজারটা করে নিয়ে এসো...
মামুন সাহেবের মাথা তোলার খবর নেই,এমনটাই যে তিনি করবেন মিলি সেটা ভালো করেই বুঝেছে,
--এই যে জনাব,আপনাকে বাজারে যেতে বলছি,শুনতে পাচ্ছেন?
এই নদী তোর বাপকে বল,বাজারে যেতে না হলে কিন্তু আমি রেগে যাব...
মামুন সাহেব পেপারটা ভাঁজ করে নদীকে কোলে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললেন,
--আচ্ছা,রাজকুমারী,তোমাকে প্রতিদিন চকোলেট কিনে দেয় কে?
--মামুনি দেয়
--প্রতিদিন ভাত খাইয়ে দেয় কে?
--মামুনি
--প্রতিদিন রান্না করে কে?
--মামুনি করে
--তাহলে সব কাজ মামুনি করলে বাজারটা কেন আমি করব বলতো?
নদী মনে হল কথাটা ঠিক মতো বুঝেনি,হাসি মুখে তাকিয়ে রইল বাবার দিকে,মামুন সাহেব মিটমিট করে হেসে বললেন,
--রাজকুমারী,তোমার মামুনিকে বল,আজকের বাজারটা করে নিয়ে আসতে,বাবার যেতে ইচ্ছে করছে না...
মিলি কপাল কুঁচকে বললেন,
--নদী তোর বাবাকে বল,বাজার না করলে আজকে মামুনি রান্না করবে না,আর মামুনি বাজারে যাবেও না...
নদী একবার মায়ের দিকে আরেক বার বাবার দিকে তাকাল,তার পর বাবাকে ইশারা করল মাথাটা এগিয়ে দেয়ার জন্য,মামুন সাহেব মাথাটা এগিয়ে দিলেন,এবার নদী তার কানে ফিস ফিস করে বলল,
--বাবা আজকে তুমিই বাজারে যাও,দেখছনা,মামুনি কেমন করে তাকিয়ে আছে...
--কিন্তু মা,আমার তো আজকে যেতে ইচ্ছে করছে না
--যাও না বাবা,তুমি না কত ভাল,আমি তোমার জন্য এত্তগুলা চকোলেট রেখে দিচ্ছি তুমি এলে আমরা একসাথে খাব...
মামুন সাহেব নদীর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে খুব অসহায় একটা ভাব নিয়ে উঠে দাড়ালেন তারপর মিলির দিকে তাকিয়ে বললেন,
--কি আর করা,মহারানী আর রাজকুমারীর হুকুম তো মানতেই হবে,যাই বাজারে যাই...
বলতে বলতে ড্রয়িং রুম থেকে বেডরুমে গেলেন সেদিকে তাকিয়ে মিলি আর নদী একসাথে জোরে হেসে ফেলল।
বিকেলে বাবার সাথে ছাদে উঠেছে নদী,ওদের এপার্টমেন্টের ছাদটা খুব সুন্দর,খেলার জায়গা ও আছে,নদীকে বাচ্চাদের সাথে খেলতে দিয়ে,ছাদের এক কোণায় বসে বই পড়তে লাগলেন মামুন সাহেব।
মাঝে মাঝে চারপাশে চোখে বুলাতে লাগলেন।
কিছুটা আনমোনা হয়ে গেলেন তিনি,জীবন কত দ্রুত বদলে যায়,মনে হচ্ছে এই সেদিনের কথা,বিয়ে করে এখানে আসলেন তখন তার মা ও ছিলেন তাদের সাথে ছুটির দিনে মাকে নিয়ে ছাদে আসতেন,বিয়ের এক বছর পর মা চলে গেলেন তার প্রায় বছর খানেক পর নদী এলো,মায়ের কথা মনে পড়তেই মনটা কেঁদে উঠলো তার,এখনো ছুটির দিনে তিনি ছাদে আসেন তবে তার এই ছোট্ট মা কে নিয়ে...
হঠাৎ কান্নার শব্দে আঁতকে উঠলেন তিনি,তাকিয়ে দেখেন সামনেই বাচ্চাদের ওখানে কেউ কাঁদছে,দৌড়ে গেলেন সেখানে গিয়ে দেখেন,দোলনা থেকে দাঁড়ানো অবস্থায় কারো ধাক্কায় নদী পরে গেছে এবং বেশ ব্যাথা পেয়েছে,মেয়েকে বুকে জড়িয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসলেন তিনি।মিলি মাথায় বরফ ঘষতে লাগল,কিন্তু নদীর কান্না থামেই না,অস্থির হয়ে গেলেন মামুন সাহেব,কিছুক্ষন পর নিজেই মেয়েকে কোলে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটে গেলেন,ডাক্তার তার কলেজ লাইফের বন্ধু,নদীকে ভালোভাবে দেখে কয়েকটা ঔষধ লিখে দিলেন,তারপর তার দিকে তাকিয়ে ডাক্তার বললেন,
--অস্থির হওয়ার কিছু নেই,ছোট মানুষ তো ব্যাথা সহ্য করতে পারছেনা,কিছুক্ষন পর এমনিই ঠিক হয়ে যাবে
--তুই ভালো করে চেক করেছিস তো,ভালো করে দেখ কোন সিরিয়াস চোট লাগেনিতো?
হেসে ফেললেন ডাক্তার,
--আরে বাবা মানুষ এতো অস্থির হলে হয় নাকি,এ বয়সে বাচ্চার তো একট ব্যাথা পাবেই,টেনশন নিস না।
বাসায় এসে বাবার কোলেই ঘুমিয়ে গেল নদী।মেয়ের নিষ্পাপ মুখটার দিকে কেন জানি কান্না পেল মামুন সাহেবের,তার নিজের বাবা মারা গেছেন জন্মের কিছুদিন পরেই,মা ই বড় করেছেন তাকে ছোট বেলায় যখন তিনি ব্যাথা পেতেন তখন তার মাও নিশ্চয়ই এভাবে অস্থির হয়ে যেতেন,...সময়ের আবর্তনে আজ তিনিও বাবা হয়েছেন,সন্তানের একটু ব্যাথা বাবা-মায়ের জন্য কতটা কষ্টের আজ তিনি বুঝতে পারছেন...কতটা অস্থির লাগে সন্তানের কাঁতর মুখখানা দেখলে আজ বুঝতে পারছেন,বুঝতে পারছেন সন্তান যখন তার কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমায় নিজে না ঘুমাতে পারলেও কতটা প্রশান্তি লাগে...একেই বোধহয় বলে বাবা-মায়ের ভালোবাসা...
হাজারো কাজের মাঝেও উন্মুখ হয়ে থাকেন ''বাবা'' ডাকটা শুনার জন্য,রাতে কয়েক বার ঘুম ভেঙ্গে দেখেন,তার রাজকুমারীটা ঠিক মতো ঘুমাচ্ছে কিনা...একেই বোধহয় বলে সন্তানের প্রতি মমতা...

ভালোবাসা আর মমতার বাঁধন যেন সব সময় ঘিরে থাকে এই দোয়া রইল...


[উৎসর্গঃআমার সব স্বপ্নবাজ বন্ধুদেরকে,যাদের মধ্যে একজনের স্বপ্ন হল,তার একটা ছোট্ট সংসার হবে,ছেলে বা মেয়ে হোক একটা ফুটফুটে বাবু থাকবে,সে প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় বাবুকে একটা চুমু খেয়ে যাবে,এবং ফেরার সময় অনেক চকোলেট কিনে নিয়ে আসবে,আর বাবুটা সব চকোলেট খেয়ে কেবল একটা চকলেট তাকে দিয়ে বলবে,মামুনি,আর তো চকোলেট নেই আজকে এটাই তুমি আর বাবা ভাগ করে খাও,কালকে সব গুলা দিব হ্যা?...!]
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:০৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×