somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিটলারের শেষ দিন

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অস্ট্রিয়ার ব্যাভেরিয়ার মাঝামাঝি ব্রানাউ নগরীতে ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল হিটলার এক দরিদ্র পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। হিটলার ছিলেন তার বাবার তৃতীয় স্ত্রীর তৃতীয় সন্তান। ছোটবেলা থেকেই হিটলার ছিলেন একগুঁয়ে, জেদী ও রগচটা। সামান্য ব্যাপারেই তিনি রেগে উঠতেন এবং অকারণে শিক্ষকদের সঙ্গে তর্ক করতেন। পড়াশোনার চেয়ে তিনি ছবি আঁকতে বেশি পছন্দ করতেন। প্রথম জীবনে স্কুলে ভর্তি হলেও অর্থাভাবে শেষ পর্যন্ত তার পড়াশোনা করা হয়নি। মা মারা গেলে সংসারের সব বন্ধন ছিন্ন করে হিটলার চলে যান ভিয়েনায়। সেখানে তিনি প্রথমে মজুরের কাজ শুরু করেন। ভিয়েনায় থাকাকালীন তার মনের মধ্যে প্রথম জেগে ওঠে ইহুদিবিদ্বেষ।

১৯১২ সালে তিনি ভিয়েনা ছেড়ে চলে আসেন মিউনিখে। এখানে অনেক দুঃখ কষ্টের মধ্যে দু’বছর পার করলেন। ১৯১৪ সালে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে হিটলার সৈনিক হিসেবে যুদ্ধে যোগ দেন। এরপর তিনি যোগ দেন লেবার পার্টিতে। এক বছরের মধ্যেই তিনি এ পার্টির প্রধান হন। পার্টির নাম পরিবর্তন করে রাখেন ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি। পরবর্তী সময়ে এ দলকেই বলা হতো ন্যাৎসী পার্টি। ধীরে ধীরে এ পার্টির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। হিটলার চেয়েছিলেন জার্মানিতে যেন আর কোনও রাজনৈতিক দল না থাকে। কিন্তু তার এ ষড়যন্ত্র ধরা পড়লে এক বছর বন্দি জীবনযাপন করেন। জেল থেকে বের হয়ে কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি পুরো জার্মানি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। এসময় তিনি জার্মানদের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষের বীজ রোপণ করেন। হিটলার চেয়েছিলেন এভাবে দেশ থেকে ইহুদিদের বিতাড়িত করবেন। ১৯৩৪ সালে হিটলার রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে নিজেকে জার্মানির ফুয়েরার হিসেবে ঘোষণা করেন এবং অল্পদিনের মধ্যেই নিজেকে দেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৩৫ সালে তিনি নতুন আইন চালু করলেন। আইনের মাধ্যমে তিনি দেশের নাগরিকদের দুটি ভাগে বিভক্ত করলেন। এ আইনে ইহুদিরা জার্মানিতে বসবাসের অধিকার পেলেও নাগরিকত্ব হারান। হিটলার তার সব ক্ষমতা নিয়োগ করলেন সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে। বিশ্বজয়ের স্বপ্নে মত্ত হয়ে ১৯৩৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর জার্মান বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমণ করে। এদিন থেকেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বিশ্বজুড়ে গণহত্যার মধ্য দিয়ে একের পর এক দেশ দখল করতে থাকলেন হিটলার। তিন বছরে হিটলার প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন। ফ্রান্সের পতনের পর ১৯৪১ সালের ২২ জুন হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করেন। প্রথমদিকে জার্মান বাহিনী সর্বত্র জয়লাভ শুরু করলেও মিত্রশক্তি যখন সম্মলিত হয়ে অগ্রসর হতে শুরু করে তখন হিটলার বাহিনী ধীরে ধীরে পিছু হটতে থাকে। নিশ্চিত পরাজয়ের কথা জেনে হিটলার ক্রমশই সঙ্গী-সাথীদের কাছ থেকে দূরে সরতে থাকেন। সবার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। তখন তিনি বেশিরভাগ সময় বাংকারে কাটাতেন। সেখান থেকেই তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। এ সময় তার একমাত্র সঙ্গী ছিল প্রেমিকা ইভা ব্রাউন। ইভা হিটলারকে গভীরভাবে ভালবাসতেন। নিশ্চিত মৃত্যুর কথা জেনেও হিটলারের কাছ থেকে এক মুহূর্তের জন্য দূরে সরেননি।

১৯৪৫ সালের ২৯ এপ্রিল হিটলারের শেষ ভরসা স্টেইনের সৈন্যবাহিনী ধ্বংস হয়ে যায়। হিটলার তখন বুঝতে পারেন তার স্বপ্ন চিরদিনের মতোই শেষ। বার্লিনের শেষপ্রান্তে রুশ বাহিনীর কামানের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে হিটলার তার সঙ্গীনী ইভাকে বার্লিন ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইভা তা গ্রহণ করেননি। ২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে বাঙ্কারের মধ্যেই ছোটখাটো আয়োজনের মধ্য দিয়ে হিটলার ইভাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর হিটলার তার সঙ্গীদের সঙ্গে শ্যাম্পেন পান করলেন। তারপর তিনি দুটি চিঠি লিখলেন। একটিতে সবকিছুর জন্য ইহুদিদের দায়ী করলেন এবং অন্যটিতে নিজের সব সম্পত্তি পার্টিকে দান করে দিলেন। ৩০ এপ্রিল ১৯৪৫ সাল। বার্নিলের চারদিক অবরোধ করে ফেলেছে লালফৌজ। হিটলার বুঝতে পারেন যে কোনও মুহূর্তে তিনি লালফৌজ বাহিনীর হাতে বন্দি হতে পারেন। এদিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি বাঙ্কার থেকে ৫০০ মিটার দূরে গিয়ে তার সহযোগীদের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করে এলেন। এ সময় তিনি তার সহযোগীদের বললেন, তার মৃত্যুর পর যেন তার লাশ এমনভাবে পোড়ানো হয় যে তার দেহের কোনও অংশের চিহ্ন না থাকে। এর কিছুক্ষণ পরই গুলির শব্দ শোনা গেল। হিটলার নিজের পিস্তল দিয়েই আত্মহত্যা করলেন। আর এর আগেই তার সদ্য বিবাহিত বউ ইভা বিষপানে আত্মহত্যা করেন। চারদিক থেকে এসে গোলা পড়ছে। তখন হিটলারের দুই সৈন্য তার মৃতদেহ কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে বাগানে নিয়ে এল। সেই অবস্থাতেই তাতে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হল। গোটা বিশ্ব ধ্বংসের খেলায় মেতে অবশেষে নিজেই ধ্বংস হলেন হিটলার


হিটলারের ছোটবেলার ছবি


হিটলার


হিটলারের স্বাক্ষর
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাইনারি চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি: পূর্ণাঙ্গ তুলনার ধারণা এবং এর গুরুত্ব

লিখেছেন মি. বিকেল, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩০



সাধারণত নির্দিষ্ট কোন বস্তু যা শুধুমাত্র পৃথিবীতে একটি বিদ্যমান তার তুলনা কারো সাথে করা যায় না। সেটিকে তুলনা করে বলা যায় না যে, এটা খারাপ বা ভালো। তুলনা তখন আসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×