somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পি ফর প্রক্সি

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়ে দেরি করে বাড়ি ফিরল। বাবা জিজ্ঞেস করল ‘কোথায় ছিলে?’
মেয়ে বলল : বন্ধুর বাসায়।
বাবা মেয়ের সামনেই তার ১০ জন বন্ধুকে ফোন দিল:
৪ জন বলল ‘ও তো এখানেই ছিল’!
২ জন বলল ‘ওহ আঙ্কেল: ও তো এইমাত্র বের হয়ে গেল’!
৩ জন বলল ‘ও তো আমার বাসায় পড়ছে। ওকে কি ফোনটা দেব?’!!
১ জন তো পুরাই উড়াধুরা। সে বলল: ‘হ্যাঁ, বাবা, বল!!!’
এ হল প্রক্সি। কলেজে পড়ার সময় খুব কম ছাত্রকে পাওয়া যাবে যে ক্লাসে হাজিরা ডাকার সময় প্রক্সি দেয়নি। আমার প্রক্সি দেয়ার জন্য আমার ক’টা সহপাঠী ছিল কলেজে, তারা আমার হয়ে প্রক্সি দিত আমি স্থানীয় ছেলে বলে। কিন্তু এক দুর্ঘটনার জন্য সেটা বন্ধ করতে হয়। দুর্ঘটনা হল : সবাই তো আর সব ক্লাস করে না এ জন্য মোট ৫ জনকে বলা ছিল হাজিরা দেয়ার জন্য। আর দুর্ঘটনার দিন সেই ক্লাসে ৫ জনই ছিল। আমার রোল ৫৬৯৬৪২ বলার সঙ্গে সঙ্গে ৫ জন ‘ইয়েস স্যার’ বলে। ব্যাস, আমাকে মাঠ থেকে ডিপার্টমেন্টে মামা ধরে নিয়ে যায় চেয়ারম্যানের রুমে। অনেক কিছু হতো শুধু একটা সংজ্ঞা মনে রাখার জন্য পার পেয়ে ছিলাম। (সংজ্ঞাটা মনে রেখেছিলাম আঁতেল টাইপের মুরুব্বিদের জন্য যারা ম্যানেজমেন্ট পড়ছি শুনে ম্যানেজমেন্টে সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করে।) ‘অন্যের দ্বারা সুদক্ষতার সহিত কাজ করিয়ে নেয়াকে ব্যবস্থাপনা বলে।’
একটা বহুল প্রচলিত কৌতুক বলি,
পথচারী : এই মিথ্যুক! তুমি তো অন্ধ নও। তুমি অন্ধ সেজে ভিক্ষা করছ কেন?
ভিক্ষুক : ঠিকই ধরেছেন স্যার। যে অন্ধ সে আজ ছুটি নিয়ে সিনেমা দেখতে গেছে। তার জায়গায় আমার ডিউটি পড়েছে। আসলে আমি বোবা।
এভাবে আমরা সবাই যখন যেখানে যা দরকার তাই হয়ে প্রক্সি দিয়ে যাচ্ছি। যেমন ধরেন, ছেলের রেজাল্ট কার্ডে বাবা টিপসই দিল ছেলে কারণ জিজ্ঞেস করলে বাবার উত্তর: তোর রেজাল্ট দেখে মনে হয় না বাড়িতে কোন শিক্ষিত কেও আছে।
এবার এক প্রকৌশলীর গল্প বলি। তিনি বদলি হয়ে গেলেন এক এলাকার দায়িত্বে। গিয়েই তিনি তার সহকারীকে আগের কয়েক বছরে কী কী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে, তার একটা রিপোর্ট করার নির্দেশ দিলেন। নির্দেশমতো তদন্ত করে সহকারী তাকে যথাসময়ে প্রতিবেদন দিলেন। তিনি ঘেঁটে দেখলেন, এলাকায় পানির সমস্যা নিরসনে একটি প্রশস্ত দীঘি খনন করার বাজেট দেয়া হয়েছিল এবং রিপোর্টে উল্লেখ আছে, সেই দীঘিটা যথাসময়ে খনন করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা দাঁড়াল, যখন অনেক খোঁজাখুজি করেও তিনি রিপোর্টে উল্লিখিত জায়গায় কোন দীঘি পেলেন না, তার আর বুঝতে বাকি রইল না আসলে কী ঘটেছে। তিনিও এর সুযোগ নিলেন, তিনি ওপরের মহলে রিপোর্ট করলেন যে এ এলাকার মানুষ দীঘি থেকে পানি পান করে বলে এখানে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি, তাই অচিরেই যেন এ দীঘি ভরাট করে এখানে নলকূপ স্থাপনের বাজেট দয়া হয়। যথাসময়ে বাজেট মিলল এবং ‘না কাটা’ দীঘি ভরাট হয়ে গেল; সেই সঙ্গে ওই প্রকৌশলী ও তার সহযোগীদের পকেটও ভরল।
প্রক্সি চলে পাবলিক পরীক্ষাতেও। যে কোন পালিক পরীক্ষার সময় দেখা যায় এক জনের হয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে অন্যজন ধরা। মাঝেমধ্যে সংবাদপত্রে দেখা যায় এক জনের হয়ে অন্যজন কোর কারণে হাজিরা দিতে হাজতে। এমন চলে আছে কালে কালে, যুগে যুগে। কমিউনিস্ট আমলের জোকস বলি শুনুন:
স্তালিনের চুরুট গেছে হারিয়ে। ঘটনা ঘটেছে সকালবেলায়। সন্ধ্যার মধ্যেই মিলিশিয়া গ্রেফতার করছে শ’খানেক লোককে। এরই মধ্যেই ক্রেমলিনের ঝাড়ুদার চুরুট খুঁজে পেয়েছে ডিভানের তলায় এবং স্তালিনের হাতে সেটা তুলেও দিয়েছে। স্তালিন তখন ফোন করলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আর কষ্ট করতে হবে না। চুরুট খুঁজে পাওয়া গেছে।
: কিন্তু স্যার আমরা কি করি এখন? যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই স্বীকার করেছে যে তারাই চুরুট চুরি করেছে ।
: কী? এখনও একজন স্বীকার করেনি? তবে চালিয়ে যান তদন্ত!
অনেক জটিল-জটিল, ভারি-ভারি, বড়-বড় বিষয় নিয়ে মশকরা করা হয়েছে, এবার একটা সরল কৌতুক বলি।
ক্লাস টিচার মন্টুকে কিছু প্রশ্ন করলেন: মন্টু, বল তো আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নাম কী?
: জানি না স্যার।
: আচ্ছা বল তো তোমার বাবা কত স্পিডে মোটরসাইকেল চালান?
: জানি না স্যার।
: মন্টু বল তো মুরগি কী দেয়?
: জানি না স্যার।
: ঠিক আছে কাল বাড়ি থেকে প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে আসবে, টিচার বললেন।
বাড়ি গিয়ে মন্টু মাকে বলল, আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নাম কী? মা বলল, ওবামা। বাবাকে বলল, বাবা তুমি কত জোরে মোটরসাইকেল চালাও? বাবা বলল, ফুল গিয়ারে। মন্টু আপুকে বলল, আপু মুরগি কী দেয়? আপু বলল, ডিম দেয়।
পরদিন
শিক্ষক : মন্টু প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে এসেছ?
মন্টু : জি স্যার। উত্তরগুলো এক দমে বলি স্যার।
শিক্ষক : আচ্ছা বল।
মন্টু : ওবামা ফুল গিয়ারে ডিম পাড়ে।
এমন ভুল বোঝাবুঝি প্রায় আমাদের জীবনে ঘটে। যেমন ধরেন রাস্তায় দেখছেন কয়েকটা ছেলে রাস্তায় চিল্লাচিল্লি করছে, সমান তালে হাতাপাই করছে; কাছে গিয়ে দেখছে বন্ধুবান্ধব ইয়ারকি করছে। আবার কখনও দেখবে ২ বন্ধু হাসি হাসি মুখে এটিএম বুথে ঢুকছে। কিছুক্ষণ পর একজন বেরিয়ে চলে যাওয়ার পর আরেকজন বলে ছিনতাইকারী ছিল। এজন্য কখনও ভুল বোঝাবুঝি থেকে ‘ঘটনা’ হয়। আবার কখন ঘটনা ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়ে যায়। কখনও দোষী ‘ভুল বোঝা বুঝি’ তে পার পেয়ে যায়, এ জন্য অবশ্য থানা থেকে শুরু করে, গণমাধ্যমে বিবৃতি দিতে হয়। আবার কখনও ভুল বোঝাবুঝিতে কারও সর্বস্ব শেষ হয়ে যায়, এজন্য থানা থেকে শুরু করে, গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েও কিছু হয়। বুঝেছেন ব্যাপারটা?
বুঝতে পরেনি? না তাহলে একটা কৌতুক বলি শুনুন:
মা : কোথায় ছিলে বাবা?
ছেলে : পাশের বাসার আন্টি ডেকেছিল মা।
মা : ও ভালো ছেলেদের তো সবাই ডাকে।
তা কি বলল উনি?
ছেলে : আন্টি বলল,আর কখনও যদি তাদের আমগাছে ঢিল মারি। তাহলে উনি আমার হাত ভেঙে দেবেন।
বুঝলেন? বুঝেননি! তাহলে শুনুন:
লোক: এই যে, তুমি যে ভিক্ষা চাইছ, কীভাবে বুঝব যে তুমি কানা?
ভিক্ষুক: এই যে দূরে একটা গরু দেখতাছেন, ওইটা আমি দেখতাছি না।
একেরপর এক প্রক্সি দিতে দিতে আমরা ভুলে গেছি কখন দেখি, কখন দেখি না, কখন দেখলেও বুঝি না। কখনও বুঝেও বুঝি না। যেমন, একদিন এক পকেটমারকে হাতেনাতে ধরার পর ভদ্রলোকের কেন যেন খুব দয়া হল।
সে পকেটমার ছেলেটিকে বলল : তুমি যদি পকেট কাটা ছেড়ে দাও তাহলে তোমাকে আমি মাসে ১,০০০ টাকা করে দেব।
জবাবে পকেটমার ছেলেটি বলল : আপনি যদি আমার সঙ্গে পকেট মারেন তাহলে প্রতি মাসে আমি আপনাকে ৫,০০০ টাকা দেব।
অনেক প্রক্সি হল এবার সব শেষে একটা শেষ কৌতুক শোনায় :
দুপুরে বাসায় কেউ নেই। এক ভদ্রলোক কাপড় চোপড় খুলে গোসল করছেন। এমন সময় বাসার কলিং বেল বাজল। ভদ্রলোক ভাবল, এমন দুপুর বেলায় কারও আসার কথা নয়। নিশ্চয়ই ফকির এসেছে। শরীর ভিজিয়েছি আবার কাপড় পরব? আচ্ছা কাপড় ছাড়াই লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখি কে? যদি ফকির হয় তাহলে ভেতর থেকেই না করে দেব ভিক্ষা দেয়া যাবে না। ভদ্রলোক দরজার ফুটা দিয়ে দেখেন, ফকির নয়, এসেছে পাশের বাসার অন্ধ ছেলে বল্টু। ভদ্রলোক ভাবলেন, কাপড় গায়ে নেই, অন্ধ বল্টুর সঙ্গে দরজা খুলে কথা বললেও সমস্যা কি? ও তো আর দেখবে না আমি... । দরজা খুলে:
ভদ্রলোক : কি ব্যাপার বল্টু তুমি এই দুপুরবেলায়, আবার তোমার হাতে মিষ্টিও দেখছি?
অন্ধ বল্টু : জী খালুজান, এ মিষ্টিগুলো রাখেন, আম্মা পাঠিয়েছে।
ভদ্রলোক : কি কারণে মিষ্টি, বল্টু?
অন্ধ বল্টু : খালুজান, আমি আজ সকাল থেকে দেখতে পাচ্ছি।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্যতার কলঙ্ক ইজরাইল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৮

ইহুদিদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম তোরাহ। এটি ৫ টি পুস্তকের সমন্বয়ে গঠিত। ইহুদি এবং সকল একেশ্বরবাদীরা বিশ্বাস করে তোরাহ হচ্ছে প্রফেট Moses ( মুসা নবী ) এর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক থেকে ভালোবাসার পথে: আমার এবং মীমের গল্প

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ৩০ শে মে, ২০২৪ রাত ২:৩৭

## প্রথম অধ্যায়: অনলাইন থেকে অফলাইনে

ফেসবুকের পাতায় একটি সাধারণ দিন। আমি তখন নিউইয়র্কের ব্যস্ত শহরে বসে থাকি, চারপাশে মানুষের কোলাহল আর কাজের চাপ। হঠাৎ করেই ফেসবুকে একটি পোস্টে কমেন্ট করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে প্রায় প্রত্যেকেই স্ব স্ব স্হান থেকে সমস্যার সৃষ্টি করেন।

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩০ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮



শেখ সাহেব পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এসে ৩য় দিন ( ১/১২/১৯৭২) দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদটা তাজউদ্দিন সাহেব থেকে নিয়ে নিয়েছিলেন; ৯ মাস জেলের পর, উনার দরকার ছিলো কিছুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্যারিয়ার কথন: ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিং এবং সর্তকতা।

লিখেছেন জাদিদ, ৩০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৪

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং, পেশা হিসাবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্মানজনক সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ায় অনেকেই এই পেশায় যুক্ত হয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এছাড়া বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে একজন মানুষকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ মনটা কেমন যেন অনেক কিছু চিন্তা করছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



সকালের মৃদু আলোয় মোড়ানো একটি মনোরম দৃশ্য ধরা পড়েছে এই ছবিতে। এটি একটি খোলা জায়গা, যেখানে সবুজের সমারোহ এবং প্রকৃতির ছোঁয়া স্পষ্ট। ছবির বাম দিকে গাছের সারি এবং ডান... ...বাকিটুকু পড়ুন

×