সব ধর্মের সম্পর্কেই একজন মানুষ হিসেবে ধারণা থাকা উচিত। আমি এবং আমরা যারা বাংলাদেশের শিক্ষা বোর্ডের বইগুলো পড়ে পাস করে এসেছি, তারা বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা রাখি। কারণ আমাদের সিলেবাসে সব ধর্ম নিয়ে অল্প অল্প কথা ছিল। কিন্তু এখন মনে হয়, ধর্ম তো অনেক জটিল অনেক কঠিন আর বিশাল বিষয়। এ ধর্ম নিয়ে কত হানাহানি, সংঘাত। তাই গীতা পড়ে দেখলাম। কি আছে এতে? ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর তার সখা অর্জুনের কথা এখানে রয়েছে। পুরো গীতা পড়ে যে বাক্যগুলো আমার ভাল লেগেছে বা আমার মনে হয়েছে আমার ফেসবুক বন্ধুদের জানানো দরকার। তাদের জন্য কোটেশন হিসেবে টুকে নিলাম। আশা করি সবার পড়ে ভাল লাগবে।
তাসকিনা ইয়াসমিন।
পবিত্র গীতা পাঠ
অহঙ্কারবশত তুমি এই যে মনে করিতেছ আমি যুদ্ধ করিব না। তোমার এই সংকল্প মিথ্যা, প্রকৃতিই তোমাকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করিবে - শ্রীকৃষ্ণ
অর্জুন বিষোদগার
ক্স আপনজনের সাথে বিবাদে কুলক্ষয় হয় এবং মনে দু:খ আসে, কোথাও শান্তি পাওয়া যায় না। ৩৭-৩৮
ক্স অধর্ম অত্যধিক বৃদ্ধি পাইলে কুলস্ত্রীগণ দূষিত হন, স্ত্রীলোকগণ দূষিত হইলে বর্ণসঙ্কর উৎপন্ন হয়, ফলে জলপিন্ডের অভাবে পিতৃপুরুষগণ নরকে পতিত হন । ৩৯-৪০
সাংখ্যযোগ
ক্স জ্ঞানী ব্যক্তিগণ কখনও মৃত বা জীবিতের জন্য শোক করেন না। ৯-১২
ক্স আতœার জন্ম নাই, মৃত্যু নাই, ক্ষয় নাই, বৃদ্ধি নাই। শরীর নষ্ট হইলেও আতœার কখনও বিনাশ হয় না। আতœা অবিনাশী যে ব্যক্তি আতœাকে অবিনাশী বলিয়া জানে, সে ব্যক্তি কাহাকেও হত্যা করিতে বা করাইতে পারে না। ২১-২২
ক্স জীবগণ জন্মের আগে কি ছিল এবং মৃত্যুর পর কি হইবে জানে না। ২৬-২৮
ক্স দুষ্ট দুরাচার ব্যক্তিরাই ক্রোধান্ধ হইয়া থাকে। ৬২-৬৩
ক্স ক্রোধে মোহ জন্মে এবং মোহ হইতে মতিভ্রম হয়, মতিভ্রম হইলে বুদ্ধিনাশ এবং বুদ্ধিনাশ হইলে মানবের বিনাশ ঘটে। ৬৪-৬৫
ক্স যে ব্যক্তির মন ¯ি’র ও চিত্ত প্রসন্ন, সেই ব্যক্তির সকল দু:খের নিবৃত্তি ঘটে। প্রসন্ন চিত্ত ব্যক্তির বৃদ্ধি শীঘ্রই প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬৬
ক্স অসংযত বুদ্ধিহীনেরা কখনই শান্ত নয় তারা সদাই অশান্ত ও অসুখী। তাদের সুখ শান্তি লাভ হয় না। ৬৭
ক্স নদী বক্ষে বাতাস যেমন নৌকা ডুবাইয়া দেয়, সেইরূপ ইন্দ্রিয়গণও অসংযত ব্যক্তিগণের মন হরণ করিয়া থাকে। ৬৮
ক্স ইন্দ্রিয়গুলি সর্বপ্রকার বিষয় হইতে নিবৃত্তি হইলে মন ¯ি’র হয়। ৬৯ ৎ
ক্স আতœনিষ্ট ব্যক্তি যাহাতে জাগ্রত থাকেন, বিষয়ী ব্যক্তি তখন নিদ্রিত থাকে। বিষয়ী ব্যক্তি যাহাতে নিদ্রিত থাকে, আতœনিষ্ট ব্যক্তি তাহাতে জাগ্রত থাকেন। ৭০-৭১
ক্স সমুদ্রে যত নদীই প্রবেশ করুক না কেন, সমুদ্র ¯ি’রই থাকে। ৭০-৭১
ক্স কামনাসক্ত ব্যক্তি কিছুতেই ¯ি’র থাকিতে পারে না। ৭০-৭১
ক্স যে ব্যক্তি সমস্ত কামনা পরিত্যাগ করিয়া মমতাশূন্য এবং অহংকার রহিত ও নি:স্পৃহ হইয়া বিচরণ করেন, তিনিই শান্তি প্রাপ্ত হন। ৭০-৭১
কর্মযোগ
ক্স নিষ্ঠা দুই প্রকারের। জ্ঞানীর জ্ঞানযোগ ও কর্মীদের কর্মযোগ। ৩
ক্স দেবগণের পুজা করিলে তাঁরা আশীর্বাদ করেন, আর যারা দেবগণের পুজা করে না তারা চোরের তুল্য।১০-১২
ক্স মেঘ হইতে বৃষ্টি এবং বৃষ্টি হইতে অন্ন জন্মে, অন্ন থেকে জীব। আবার যজ্ঞ হইতে মেঘ জন্মায় এবং কর্ম হইতেই যজ্ঞের সৃষ্টি। ১৩
ক্স মহৎ ব্যক্তিগণ যাহা করেন, সাধারণ লোকেরা তাহা অনুসরণ করে। ২১-২২
ক্স যে প্রকৃত গুণ ও কর্মের বিভাগ জানে, সে জ্ঞাত আছে যে সকল গুণই গুণাশ্রয়ে থাকে। অতএব আমি করি বলিয়া মনে করে না। ২৮
ক্স দোষযুক্ত হইলেও নিজধর্ম, পরধর্ম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। স্বধর্ম রক্ষায় মৃত্যুও শ্রেয়। ৩৩-৩৫
ক্স ধুম যেমন অগ্নিকে, ময়লা যেমন দর্পণকে সেইরূপ জরায়ু গর্ভকে ঢাকিয়া রাখে, কামও সেইরূপ জ্ঞানকে আ”ছন্ন করিয়া রাখে। ৩৮
ক্স কাম জ্ঞানীর পরম শত্রু। ইহা জ্ঞানীর জ্ঞানকে ঢাকিয়া রাখে। ৩৯
জ্ঞানযোগ
ক্স দ্রব্যযজ্ঞ হতে জ্ঞানযজ্ঞ অনেক বড়, অতএব, সমস্ত কর্মই জ্ঞানের বিকাশে শেষ হয়। ৩৩
ক্স তুমি মহাপাপীরও প্রধান হও, তবুও জ্ঞানরূপ তরীর সাহায্যে পাপরূপ সমুদ্র পার হইবে। ৩৬
অক্ষর ব্রক্ষ্মযোগ
ক্স এক হাজার যুগে ব্রক্ষ্মার এক দিন এক রাত্রি। যিনি ইহা জ্ঞাত আছেন, তিনিই দিন ও রাত্রি বিষয়ে প্রকৃত জ্ঞানী। ১৭
ক্স বৎসরে ছয় মাস উত্তরায়ণ। ইহা শুকপক্ষ। জ্যোতির্ময়, অগ্নি, দিন ও পক্ষ। ২৪
ক্স দক্ষিণ অয়ন ছয় মাস। ধুম্রাবত রাত্রি ইহা কৃষœপক্ষ স্বরূপ। ২৫
ক্স তুমি এ অনিত্য সংসারের মায়া ত্যাগ করিয়া একমাত্র আমার অর্চনা কর, তোমার মনপ্রাণ আমাতে নিবেদন কর তা’হলে তুমি অন্তিমকালে আমার নিকট ¯’ান লাভ করিবে। ৩৪
বিভুতি যোগ
ক্স জ্ঞান, বুদ্ধি, সত্য-ক্ষমা, শম, দম, জন্ম, মৃত্যু, সুখ-দু:খ, নিন্দা, যশ, অহিংসা, সমতা, তুষ্টি, তপ:, দান, ভয়-এই কয়টি জীবের ভাব। ৪-৫
গুণত্রয় বিভাগযোগ
ক্স এই জ্ঞান লাভ করিয়া মুনিগণ আমার স্বরূপ জানিতে পারেন অর্থাৎ ত্রিগুণাতীত অব¯’া প্রাপ্ত হন। তাহারা সৃষ্টি ও প্রলয়কালেও দু:খভোগ করেন না। ২
ক্স মহদ্রব্রক্ষ্মই (প্রকৃতিই) আমার গর্ভাধান ¯’ান। আমি তাহাতে গর্ভাধান করি, তাহা হইতেই বিশ্বে সর্বভূতের উৎপত্তি হয়। ৩
ক্স অজ্ঞানতা হইতেই তমোগুণের জন্ম। ইহা জীবকে প্রমাদ, আলস্য এবং মোহদ্বারা আবদ্ধ করিয়া রাখে। ৮
ক্স যখনই লোভ, ক্ষোভ ও অশান্তি দেখা দিবে, তখনই রজোগুণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়াছে জানিবে। ১২
পুরুষোত্তম যোগ
ক্স আমি বেদবিদ, বেদান্তের কর্তা, আমি সমস্ত জীবের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত আছি। আমা হতেই প্রাণিগণের স্মৃতি ও বেদান্তের কর্তা। ১৫
ক্স পুরুষ দুই প্রকার ক্ষর ও অক্ষর পুরুষ। ক্ষর পুরুষ সর্বজীবে একীভূতে আছেন। অক্ষর পুরুষ কূট¯’ ও নির্বিকার রূপে আছেন। ১৬
দৈবাসুর সম্পদ বিভাগ যোগ
ক্স ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন শুন সখা, ধনঞ্জয় ভয়শূন্যতা, সরলতা, শুদ্ধ জ্ঞান, তপস্যা, দম, দান, যজ্ঞাদি, ক্রিয়া, ইন্দ্রিয় দমন, বেদ পাঠ, অহিংসা সত্যবাদিতা, ক্রোধ, শুন্য, ধৈর্য্য, পরনিন্দা, পরচর্চা বর্জন, দয়া, লজ্জা, নিরভিমানিতা, তেজস্বী, ক্ষমাশীলতা শুচিতা, অবৈধতা এই সকল গুণ যাহার মধ্যে প্রকাশ পায়, তিনি সাত্ত্বিক গুণসম্পন্ন জানিবে। ১-৩
ক্স কাম, ক্রোধ. লোভ এই তিনটি নরকের দ্বার। ২১
ক্স যিনি নরকের এই তিনটি দ্বার হইতে মুক্ত, কেবলমাত্র সেই ব্যক্তি আতœার উন্নতি সাধন করিয়া মোক্ষ প্রাপ্ত হন। ২২
ক্স যে ব্যক্তি শাস্ত্রের বিধান না মানিয়া স্বে”ছাচারণ করে, সে কখনো সিদ্ধি, সুখ ও শ্রেষ্ঠগতি লাভ করিতে পারে না। ২৩
ষোড়শ অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত সার - সংসারে সাধারণত দুই প্রকৃতির লোক থাকে।
শ্রদ্ধাত্রয় বিভাগযোগ
ক্স যাহা রুচিকর, সুখকর ও স্নেহময় খাদ্য সেইসব আহার করিলে দেহে আয়ু বল বৃদ্ধি পায় এবং চিত্তপ্রসন্নতা ও প্রীতিকর রোধ এইরূপ আহার সাত্ত্বিকগণের প্রিয়। ৮
ক্স অতি কটু, অতি অম্ল, অতি লোনা ও ঝাল, অতি উষ্ণ এসব আহার দু:খ, রোগ ও শোক জন্মে, এইসব আহার রাজসিক ব্যক্তিগণের প্রিয়। ৯
মোক্ষযোগ
ক্স ত্যাগী, সাত্ত্বিক এবং মেধাবী সংশয়শূন্য ব্যক্তিগণ দু:খজনক কর্মে দু:খিত হন না এবং সুখকর কর্মের প্রীতি অনুভব করেন না। ১০
ক্স অহংকার এবং কর্মফলের আশা যার নাই তিনি জগতের সব কিছুকে বধ করিলেও পাপের ভাগী হন না। ১৭
ক্স তুমি বুদ্ধি দিয়া সর্বদা মনকে নির্মল ও সংযত করিবে। তবেই ভোগের বিষয় সকল দূর হইয়া যাইবে। ৫১
ক্স সর্বদা নিরিবিলি থাকিলে ও নিরামিষ ভোজনে শরীর ও মন সংযত হয়। ৫২
ক্স অহঙ্কার, বল-দর্প, কাম, ক্রোধ লোভ ত্যাগ করিতে পারিলে মন নির্মল হয়। ৫৩
ক্স অহঙ্কারবশত তুমি এই যে মনে করিতেছ আমি যুদ্ধ করিব না। তোমার এই সংকল্প মিথ্যা, প্রকৃতিই তোমাকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করিবে। ৫৯