somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্টিভ জবস: এই মৃত্যু কষ্টের!

০৮ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ মনটা খুব খারাপ। অনেক আগে থেকেই জানতাম যে স্টিভ জবস ক্যান্সারে ভুগছেন। তার সময় যে আস্তে আস্তে ফুরিয়ে আসছে তা আঁচ করতে পারছিল সবাই। আমিও জানতাম এই দানবীয় জরা তাকে নিঃশেষ করছে খুব দ্রুত। এত জানা-জানি, এত নিশ্চিত একটা ঘটনা, তারপর ও কেউ যেন মেনে নিতে পারছে না এই অকালমৃত্যুকে। আমার মনে হচ্ছে আমার খুব আপন কেউ মারা গেছে।

যারা আমাকে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন থেকে চেনে তারা আমার এই লেখা দেখে যারপরনাই অবাক হবে। এই পোলার সাথে স্টিভ জবসের তো দূরতম সম্পর্কও থাকার কথা না। ছাত্রজীবনে আমি ছিলাম একজন আপাদমস্তক টেকনো-বিদ্বেষী অভদ্রলোক। আমার এবং আমার অনেক বন্ধুর ধারনা ছিল টেকনোলজির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা আমাদের এই মানবজাতির জন্য ভয়াবহ পরিনতি ডেকে আনবে। টেকনোলজি মানুষের নান্দনিকতা, মূল্যবোধ এবং নৈতিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এর অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষকে অন্য মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আমরা আরও বিশ্বাস করতাম এমন একদিন আসবে যখন টেকনোলজি মানুষকে নিয়ন্ত্রন করবে। আমাদের প্রিয় পৃথিবী করায়ত্ত্ব করবে কিছু মেশিন। ফলে টেকনোলজি থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। বোধকরি সায়েঞ্চফিকশন ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল আমাদের চিন্তা চেতনায়। এখন অবশ্য এইজাতীয় একধরনের দর্শন ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে ‘সিংগুলারিটি’ নামে। যাই হোক, সেই সময় আমার নগর পরিকল্মনার পাঠ্যসূচীতে প্রচুর কম্পিউটার-ল্যাব নির্ভর কোর্স ছিল। আমার কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় জায়গা ছিল কম্পিউটার-ল্যাব। নিতান্ত পাশ করতে যতোটুকু কম্পিউটার ব্যবহার করতে হত আমি তারচেয়েও কম করতাম। ফলে জিআইএস এর কোন কোন কোর্স পাশ করেছি দু-তিন বার এক্সাম রিটেক নিয়ে। এই কারনেই যখন নব্বই-ভাগ নগর পরিকল্পনাবিদ জিআইএস এবং অন্যসব সফটওয়্যারে দক্ষ আমি যে শুধু অদক্ষ তা-ই নয়, আমি একজন নখদন্তহীন পরিকল্পনাবিদ। এই জন্য আমি পরিকল্পনাবিদের রাস্তা ছেড়েছি অনেক আগেই। এরপর যখন মোবাইল খুব জনপ্রিয় হয়েছে আমি শেষমেশ না পেরে সবার চাপে একটা মোবাইল কিনলাম। নিতান্ত বেসিক। তখন নোকিয়া এন সিরিজ এর জোয়ার। সামর্থ্য থাকলেও কোনদিন ইচ্ছে হয়নি ওইসব ফোন ছুয়ে দেখি। বরং একধরনের আত্মপ্রসাদ লাভ করতাম এই ভেবে যে টেকনোলজি আমাকে এখনও কাবু করতে পারেনি। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমনের আগপর্যন্ত আমি অফিসের কম্পিউটার এ মাইক্রোসফট অফিস আর পকেটে আমার সামসং সি ৬০ নিয়েই দিব্বি সুখে কাটিয়ে দিয়েছি।

আমি দেশ ছেড়েছি এখন চার বছর পেরিয়েছে। এই চার বছরে পৃথিবীতে চারশ বছরের পরিবর্তন হয়েছে। আমেরিকায় একজন কালো লোক প্রেসিডেন্ট হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মন্দার প্রভাবে পরাশক্তিগুলোর এখন নাজেহাল অবস্থা। মধ্যপ্রাচ্য জ্বলছে। লাদেন মারা গেছেন। রাজনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত ঘটনার শেষ নেই। স্টিভ জবস নামের এক ভদ্রলোক এই চার বছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করেছেন এবং এই চার বছরে একের পর চমকে দিয়েছেন পৃথিবীকে। বছর বছর আইফোন, আইপেড, ম্যাকবুক, আইওএস, অ্যাপ্লিকেশান। কখনও মনেই হয়নি এই লোকটি একটি ঘাতক ব্যাধির সাথে ক্রমাগত যুদ্ধের আঘাতে ক্লান্ত। বরং মনে হয়েছে প্রতিটি উৎসবে তিনি নতুনভাবে উজ্জীবিত।

এই চার বছরে আমারও পরিবর্তন হয়েছে। আমি কবি থেকে শ্রমিক হয়েছি। তত্ত্বগতভাবে মার্কসবাদ ছেড়েছি। আরও অনেক পরিবর্তন। একটা পরিবর্তনের কথা একটু আলাদা ভাবে বলা প্রয়োজন। আর তা হচ্ছে আমার হাতে এসেছে একটা আইফোন। গত বছরখানেক আগে এই ফোনটা কেনার পর থেকে আমি ধীরে ধীরে আমার টেকনো-বিদ্বেষ ভুলতে শুরু করেছি। কিভাবে একটা ফোন মানুষের এত কাছাকাছি থাকতে পারে ভেবে আমি খুবই আনন্দিত বোধ করি। আমি কি না করি? টর্চ লাইট থেকে শুরু করে ইয়েল লেকচার। মাঝে মাঝে কাজে যাওয়ার সময় ট্রেনে ছবি আঁকি, নোট করি। কতো ছোটো ছোটো চিন্তাকে আমি বৃক্ষে রুপান্তর করেছি আমি আমার আইফোনে তার ইয়ত্তা নেই। শুধু আই ফোনের জন্য আমি স্টিভ জবস এর ভক্ত ব্যাপারটা সেরকম নয়। এই লোকটির স্বপ্ন আমাকে বিমহিত করে। বারাক ওবামা বলেছেন এই লোকটি স্বপ্ন দেখেছেন, সাহস নিয়ে স্বপ্নকে তাড়া করেছেন, এবং তার সক্ষমতা দিয়ে সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেছেন। আমার মতো অনেকে আছেন যারা খুব স্বপ্ন দেখেন কিন্তু কখনই তাড়া করেন না সাহসের অভাবে। আমি যেখানে সীমাবদ্ধ, ঠিক সেইজায়গাতেই আমি স্রদ্ধাবনত। এই জন্যই জবসকে আমি প্রানভরে শ্রদ্ধা করি। এই একই কারনে আমার বুক ফেটে যায়, মনে হয় আমার অতি পরিচিত কোন বন্ধু যে আমার চেয়ে অনেক বেশি সাহসী, অকালে মারা গেছেন।

এই মৃত্যু কষ্টের!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×