somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুই বড় স্বার্থপর

০৮ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- তুই বাবা একটু সিরিয়াস হ। বুচ্ছিস? তুই যে মনে করে বসে আছিস আমি তোর প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে বসে আছি এটা সম্পূর্ণ তোর ভুল ধারণা। তোর মত ভবঘুড়ে টাইপ ছেলে ফ্রেন্ড হিসেবে অনেক ভালো এটা আমি স্বীকার করি। কিন্তু জীবনটা তো আর খামখেয়ালীপনা না। ৫টা বছরতো চায়ের টংয়ে রাজা-উজিড় মেরেই কাটিয়ে দিলি। রেজাল্ট তো যা করেছিস, মামা-চাচার লিংক ছাড়া চাকরি বাকরি কিছু পাবিনা। তুই যে বললি ধুম করে আমাকে বিয়ে করে ফেলবি, খাওয়াবিটা কি শুনি? একটু সিরিয়াস হ লাইফে। এসব করে আর কদিন? মদ-গাজা খেয়ে শরীরের যা অবস্থা করেছিস, কদিন বেচে থাকবি সেটাতো আল্লা মালুম। আমাকে মাফ কর। আমি সরি। আমি তোকে ভালবাসিনা, কখনো ভালবাসিনি। তোকে আমি অনেক ভাল বন্ধুই ভাবি। দ্যাটস অল।
- কিন্তু আমি তোকে ছাড়া বাচবনা। প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর। তোকে ছাড়া আমি অনেক অসহায়। আমাকে প্লিজ ফিরিয়ে দিস না। তুই নিজেওতো জানিস তোকে আমি কত ভালবাসি। ক্যাম্পাস লাইফে তোর জন্য আমি কি করিনি বল।
- শোন শান্ত, আমি আমার কোয়ালিটি অনুযায়ী তোর চাইতে অনেক ভাল একটা হাসবেন্ড ডিজার্ভ করি। তুই প্লিজ আর কোন কথা বলিস না। আমি চলি। ভাল থাকিস। আর তুই আমার জন্য যা করেছিস তার জন্য আমি অনেক কৃতজ্ঞ তোর কাছে। গুডবাই।

অপলক চোখে চলে যাওয়া রিকশাটার দিকে তাকিয়ে থাকে শান্ত। চোখে সামান্য অবিশ্বাস, বেদনা আর হতাশা। স্বর্ণা যে এভাবে তার মুখের উপর এতগুলি কথা বলতে পারবে তা শান্ত কখনোই ভাবেনি। ৫টা বছর হয়ে গেল ক্যাম্পাসে, কেউ এখন পর্যন্ত তার মুখের উপর এভাবে কথা বলেনি। অনেক কঠিন সময়েও এটা ভেবে সে স্থির ছিল যে আর কেউ থাকুক বা না থাকুক স্বর্ণা তার পাশে থাকবে। কিন্ত আজ কি শুনল সে?
দোস্ত, বাদ দে। মাইয়া মানুষগুলা এমনই। দরকারের সময় তো পিছনে পিছনে ঘুরসে। এথন দরকার শেষ তোর কামও শেষ। নে বিড়ি খা একটা। হলে চল। রাত্রে পানির ব্যবস্থা করতাসি। মাথাটা ঠান্ডা রাখ।
হিমেলের বাড়িয়ে দেয়া সিগারেটটা ফিরিয়ে দিয়ে একটা রিকশা ডাক দেয় শান্ত।
- মামা, কই যাইবেন?
- তোমার যেদিকে খুশি যাও।
- না মামা, এমনে যামুনা। পরে টেকা পয়সা নিয়া ঝামেলা ভাল লাগেনা। কই যাইবেন কন?
- হারামজাদা, তুই প্যাডেলে চাপ দিবি? নাকি মারব কানে গালে মিলিয়ে?
শান্তর ভয়ংকর মুর্তি দেখে রিকশাওয়ালা আর উচ্চবাচ্য না করে প্যাডেলে চাপ দেয়। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আকাশে দুএকটা তারা দেখা যাচ্ছে। শান্ত উপরের দিকে তাকিয়ে আকাশের তারা গুনতে থাকে। কানে বাজতে থাকে স্বর্ণার শেষ কথাগুলো। এমনটা শান্ত আশা করেনি। স্বর্ণা খুব ভালমতই জানে কথনো কিছু না বললেও শান্ত তার প্রতি কতটা উইক। ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে এক সিনিয়র স্বর্ণাকে টিজ করায় তাকে স্ট্যাম্প দিয়ে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছিলো শান্ত। পরে নিজের পিঠ বাচাতে ঢুকে পড়তে হয় ক্যাম্পাসের নোংরা পলিটিক্সে। সেই যে পা বাড়ানো আর কখনোই পা ফেড়াতে পারেনি শান্ত। স্বর্ণাকে কেউ কোনদিন আর কেউ টিজ করেনি। আড় চোখে তাকায়নি। ক্লাসের আতেল ফার্স্টবয়কে বলা ছিল সব নোট স্বর্ণাকে দিতে। আর পরীক্ষার হলে খাতা খোলা রাখতে। না হলে হাত-পা ভেঙে তাকে নিজ দায়িত্বে হাসপাতালে ভর্তি করাবে এ নিশ্চয়তা দিয়ে দিয়েছিলো শান্ত। নিজের জন্যও শান্ত কখনো এতটা ভাবেনি যতটা ভেবেছে স্বর্ণার জন্য। সেই স্বর্ণা আজ তার সব অবদান ভুলে গিয়ে তাকে এতগুলো কথা বলবে তা ভাবতেই দুচোখে জল আসে শান্তর। আসলেই, মেয়েরা বোধহয় এমন ই। চিৎকার করে স্বর্ণাকে বলতে ইচ্ছা করছে, “ভাব দেখাস? কিসের ভাব দেখাস তুই? ক্লাসের সেকেন্ড গার্ল হবার ভাব দেখাস? কার জন্য এতদুর যেতে পেরেছিস?”- শান্তর ইচ্ছে করছে আশ্রাফ ভাইয়ের মত এসিড মেরে স্বর্ণাকে ঝলসে দিতে। ক্ষোভের আগুন জ্বলছে মাথায়। প্রতিশোধ। স্বার্থপর মেয়ে মানুষ কোথাকার। পুরো ক্যাম্পাস লাইফটা আমাকে ইউজ করলি আর এখন স্ট্যাটাস দেখাস? তোর স্ট্যাটাসরে আমি ****। "এই রিকশা, থাম"। রিকশাওয়ালাকে দাড়াতে বলে রাস্তা পার হয়ে একটা সিগারেট কিনে জ্বলন্ত সিগারেটটা মুখে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হতে যায় শান্ত। মাথা প্রচন্ড গরম। ডিভাইডারটা পার হবার সময় হঠাৎ পা ফসকে পেছনে পড়ে যায় শান্ত আর তখনি একটা মিনিবাস এসে ধাক্কা মারে শান্তকে।


কয়েক বছর পর
এই বাড়িতে উঠার তিন দিনের মাথায়ই পাশের বাড়ির লোকটার প্রতি তার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। হারামজাদাটা প্রতি রাতে পাড় মাতাল হয়ে চিৎকার চেচামেচি করে। শান্তর ইচ্ছা করে
পিটিয়ে শালার হাড্ডি গুড়া করে দিতে। কিন্তু এক্সিডেন্টটার পর থেকে আর কারো সাথে ঝামেলা করতে ইচ্ছা করেনা। জীবনের ফিলোসফিটাই চেন্জ হয়ে গেছে। আমেরিকায় নতুন এসেছে বলে পুলিশের কাছে কমপ্লেন করারও সাহস পায়না। ঝামেলা থেকে দুরে থাকাই ভাল। স্বর্ণার কোন খোজ সে আর রাখেনি। এইটুকু শুনেছে যে আমেরিকা প্রবাসী এক ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে। তবে স্বর্ণার কথাগুলো সে মনে রেখেছে। সুস্থ হবার পর অনেকটা জিদের বসেই মাস্টার্সে ভর্তি হয়। রেকর্ডসংখ্যক মার্কস পেয়ে প্রথম হবার পর আমেরিকায় পি.এইচ.ডির একটা স্কলারশিপ জোগাড় হয়ে যায়। তারপর চলে আসা এই দুরদেশে।
সারাসপ্তাহ ইউনিভার্সিটিতে খাটাখাটনি করে উইকএন্ডটা একটু ঘোরাঘুরি করে কাটিয়ে দেয়। আজ একটা নাইটক্লাবে যাবার প্ল্যান আছে। এদেশে আসার পর ড্রিংকস করেনি শুনে তার প্রফেসর তাকে ইনভাইট করেছে। প্রফেসরের হাতে ঈশ্বরের ক্ষমতা থাকা স্বত্ত্বেও লোকটা অনেক ভাল আর ফ্রেন্ডলি। তাই এক কথায় রাজী হয়ে গেছে শান্ত।
আমেরিকার নাইটক্লাবের শুধু গল্পই শুনেছে। আজ নিজের চোখে বেশ লজ্জায় পড়ে গেল। হালকা ড্রিংকস করতে করতে স্টেজে স্বল্পবসনা নারীদের নাচ দেখতে দেখতে মনে হল, জীবনটা তো মন্দ না। এক স্বর্ণার জন্য সারা জীবন এভাবে কাটানোর কোন মানে হয়না। টয়লেটে যাওয়া দরকার একটু। স্টেজের বামপাশে লাল সাইনবোর্ডটা দেখে এগিয়ে যায় শান্ত। টয়লেট সেরে সিটে ফিরে আসার সময় স্টেজের পেছনে একটু গোলমালের শব্দ শুনে কৌতুহল চাপতে না পেরে স্টেজের পেছনে একটু উকি দেয়। যা দেখতে পায় তার জন্য শান্ত প্রস্তুত ছিলনা। এটা কি করে সম্ভব? স্ট্রিপারের পোশাক পড়া স্বর্ণাকে জড়িয়ে ধরে আছে এক নিগ্রো মাতাল। স্বর্ণা আপ্রাণ চেষ্টা করছে ছাড়া পাবার কিন্তু বিশালদেহী এই পশুর কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া প্রায় অসম্ভব। বহুদিন পর যেন শান্তর ভিতরের সেই গুন্ডাটা জেগে উঠে। পাশে পড়ে থাকা একটা স্টিলের চেয়ার নিয়ে সজোড়ে বাড়ি মারে নিগ্রোর মাথার পেছনে। স্বর্ণা মুক্ত হয়ে শান্তকে দেখে আতংকে, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। পা দুটো টলে উঠে তার। শরীরটা মাটিতে পড়ে যায়।

-আমেরিকার রঙিন জীবনের লোভে তাকে বিয়ে করে চলে এসেছিলাম। কিন্তু লোকটা একটা সাধারণ ক্যাব ড্রাইভার। মদ খেয়ে টাকা উড়ায়। মাতাল অবস্থায় আমাকে প্রায়ই মারধর করে। আমাকে জোড় করে এখানে চাকরিতে ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমার ইনকাম করা টাকায় সে বাইরে ফুর্তি করে। তারপর....

-বাদ দে। আমার এসব শুনতে ভাল লাগছেনা। এতবছর পর তোর সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি কখনো। আমি যাই। ভাল থাকিস।

হসপিটালের বেডের পাশ থেকে উঠে সাদা পর্দাটার দিকে এগিয়ে যায় শান্ত।

- শান্ত দাড়া। প্লিজ আমাকে বাচা শান্ত। আমি এভাবে আর থাকতে পারছিনা। আমাকে বাচা প্লিজ। আমাকে তোর সাথে নিয়ে চল শান্ত।

পাথরের মত কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকে শান্ত। তারপর পেছন ফিরে অস্ফুট স্বরে বলে উঠে,
তোকে আমার সাথে নেবার জন্যই পাচ বছর আগে তোর দরজায় গিয়েছিলাম আমি। কিন্তু তুই বড় ছলনাময়ী, বড় স্বার্থপর। সেদিন দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলি মুখের উপর। কিন্তু আমি বোধহয় তোকে অনেক বেশীই ভালবাসিরে। তাই আমার দরজাটা এখনো খোলাই আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৪৬
৩৬টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×