somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্টিভ জবসের ১০ ‘বিপ্লব’

০৭ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তথ্যপ্রকৌশলে স্টিভ জবসের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তার পরও যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানায় থাকা প্রায় ৩০০ প্রযুক্তি পেটেন্টের উদ্ভাবক অথবা সহ-উদ্ভাবক হিসেবে জবসের নাম জড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি উপকরণের উদ্ভাবক ও এগুলোর তৈরির আগে প্রাথমিক ভাবনার নিয়ামক হওয়ার কারণে অনেকেই এই প্রযুক্তিবিদকে আধুনিক পৃথিবীর ‘লেওনার্দো দ্য ভিঞ্চি’ হিসেবে অভিহিত করেন। প্রিয় পাঠক, আসুন দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিই, তথ্যপ্রযুক্তি জগেক বদলে দেওয়া স্টিভ জবসের ১০টি যুগান্তকারী কাজের ওপর।

১. অ্যাপল-১ (১৯৭৬):



এটি ছিল অ্যাপল কম্পিউটারের উদ্ভাবিত প্রথম পণ্য। মূলত শখের কম্পিউটার ব্যবহারকারী ও প্রকৌশলীদের কথা মাথায় রেখে এটি তৈরি হয়েছিল। অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজিয়ানিকের ডিজাইন করা এই অ্যাপল-১ কম্পিউটারের অর্থায়ন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্টিভ জবসের নাম। এই অ্যাপল-১ বদলে দিয়েছিল ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ধারণা।

২.অ্যাপল-২ (১৯৭৭):


অ্যাপল-১-এর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে পরের সংস্করণটি তৈরি করে অ্যাপল কম্পিউটার। অ্যাপল-১ খুব অল্প কয়েকটি তৈরি হলেও অ্যাপল-২-এর ক্ষেত্রে গণ-উত্পাদনের ব্যবস্থা করা হয়। এটি বিপুলভাবে জনপ্রিয় হয় ব্যক্তিগত কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে। পরের প্রায় ১৪-১৫ বছর ধরে এই অ্যাপল-২ কম্পিউটারের বাজারে টিকে ছিল। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি উন্নত সংস্করণও বাজারে ছাড়া হয়। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বিশ্ববাজারে এটি অ্যাপল-২ নামেই টিকে ছিল।

৩. লিসা (১৯৮৩):


লিসা ছিল একটি বাণিজ্যিক কম্পিউটার। মূলত বাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই এটি তৈরি করা হয়। এতেই প্রথমবারের মতো আইকন, মাউস-নিয়ন্ত্রিত কারসর ও গ্রাফিক্যাল ইউজারস ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়। বর্তমান সময়ে আমরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করি, সেটার ধারণা এই লিসা থেকেই উত্সারিত।

৪. ম্যাকিনটোশ (১৯৮৪):


এটিও গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস ব্যবহার করে তৈরি। লিসার চেয়েও ম্যাকিনটোশ ছিল সস্তা ও দ্রুতগতির। ব্যাপক বিপণন ও প্রচারণার মধ্য দিয়ে ম্যাকিনটোশ পৃথিবীময় বাজারজাত করা হয়। ম্যাকিনটোশ বাজারে আসার পরপরই ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারে, বিভিন্ন অলংকরণের জন্য গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস কতটা জরুরি। ডেস্কটপ প্রকাশনার জগতেও নতুন বিপ্লব ঘটায় এই ম্যাকিনটোশ।

৫. ‘নেক্সট’ কম্পিউটার (১৯৮৯):


স্টিভ জবস ততদিনে অ্যাপল ছেড়ে দিয়েছেন অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন নেক্সট কম্পিউটার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যারা তৈরি করা শুরু করল বিভিন্ন কম্পিউটার প্ল্যাটফর্ম। সেই সময়ই তৈরি হয় এই ‘নেক্সট কম্পিউটার।’ এতে প্রথম সংযোজিত হয় ওয়েব ব্রাউজিংয়ের সুবিধা। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা www এর আবিষ্কার এই টিম বার্নারস লি এই নেক্সট কম্পিউটারটি পৃথিবীর প্রথম ইন্টারনেট সার্ভার হিসেবে ব্যাবহার করেন বর্তমান কালের বহুল আলোচিত প্রতিষ্ঠান CERN এর কার্যালায়ে! তবে নেক্সট কম্পিউটার কখনোই তেমন অধিক পরিমাণে বিক্রি হয়নি। কিন্তু একে বলা হয়, আজকের আইফোনের অপারেটিং সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত। একে আইফোনের জনকও বলা যেতে পারে।

৬. আই-ম্যাক (১৯৯৮):



বিল গেটসের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট করপোরেশনের ‘উইন্ডোজ’ অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে তখন মেতে আছে গোটা পৃথিবী। তখন ব্যক্তিগত কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম বলতেই মানুষ বোঝে উইন্ডোজের কথা। ১৯৯৬ সালে স্টিভ জবস ফিরে এসেছেন অ্যাপলে। সে সময় তাঁর প্রচ্ছন্ন উত্সাহ ও ভাবনার ফল ছিল এই আই-ম্যাক। নব্বই দশকের শেষ দিকে রং-বেরঙের বাহারি আই-ম্যাকের কথা নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যায়নি। পুরো কম্পিউটার ও মনিটরটি ছিল একটি প্লাস্টিক বাবলের ভেতর। সেই সঙ্গে ছিল একটি মাউস। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য দারুণ উপযোগী ছিল সেই আই-ম্যাক। কম্পিউটার ব্যবহারকারীরাও পেয়েছিল উইন্ডোজের বাইরে গিয়ে পছন্দের কম্পিউটারটি কেনার সুযোগ।

৭. আইপড (২০০১):


আইপড হার্ডড্রাইভ-সমৃদ্ধ একটি ডিজিটাল মিউজিক প্লেয়ার। যদিও এটি পৃথিবীতে উদ্ভাবিত প্রথম ডিজিটাল মিউজিক প্লেয়ার নয়, তার পরও সফলতার দিক দিয়ে এটিকে শীর্ষে রাখতেই হবে। এটি সংগীতপ্রিয়দের এনে দেয় একসঙ্গে কয়েক হাজার পছন্দের গান একটি ছোট্ট ডিভাইসে স্টোর করে রাখার অনন্য সুযোগ। গান শোনার ক্ষেত্রেও এটি তৈরি যোগ করে নতুন এক মাত্রা।

৮. আই-টিউন স্টোর (২০০৩):


এই দশকের শুরুর দিকে পাইরেসি ও ডিজিটাল চুরি ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছিল বিশ্বের সংগীতশিল্প। ব্যবসায়িকভাবেও মার খাচ্ছিল তারা। জবস এই সমস্যা সমাধানে ২০০৩ সালে নিয়ে এলেন আই-টিউন স্টোর নিয়ে। এটি হয়ে উঠল সংগীতের এক বিরাট সংগ্রহ। সংগীতশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও খুঁজে পেলেন ডিজিটাল যুগে আদর্শ পরিবেশক-মাধ্যম। ২০০৮ সালে এটি যুক্তরাষ্ট্রে হয়ে ওঠে সংগীতের সবচেয়ে বড় খুচরা ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র।

৯. আইফোন (২০০৭):


মোবাইল ফোন আইফোন আসার আগে ছিল কথা বলার মাধ্যম। একই সঙ্গে সেটাতে ইন্টারনেট ব্যবহারেরও সুযোগ ছিল। কিন্তু আইফোন নিয়ে এল স্পর্শের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের অনন্য সুযোগ-সুবিধা। ম্যাকিনটোশ যেমন ব্যক্তিগত কম্পিউটারের বিপ্লব ছিল, ঠিক তেমনি আইফোন হলো মোবাইল ফোনে একধরনের বিপ্লব। আইফোন বাজারে নিয়ে আসার পর খুব দ্রুতই অ্যাপল পরিণত হয় মোবাইল ফোন বাজারের শীর্ষ খেলোয়াড়ে।

১০. আইপ্যাড (২০১০):


আইপ্যাড কিন্তু প্রথম ট্যাবলেট পিসি নয়। এর আগে অ্যাপলসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই ট্যাবলেট পিসি বানানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। আইপ্যাড ২০১০ সালে এসে বদলে দেয় ট্যাবলেট পিসির ধারণা। ল্যাপটপের পর কম্পিউটার কী চেহারার হবে, এটি প্রথম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় অ্যাপলের আইপ্যাড।

তথ্যসূত্র ও মূল আর্টিকেল
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×