somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বলতে মানা শুনতে মানা

০৬ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“যার বুকে বল নাই অর্থাৎ নৈতিক সাহস নাই, হাতে-পায়ে জোর নাই, মাথায় প্রখর বুদ্ধি নাই—তার একমাত্র সম্বল মুখ। পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছাড়া, যে কেউ মুখের সদ্ব্যবহার করতে পারে। শত্রু হোক, প্রতিপক্ষ হোক, অপছন্দের মানুষ হোক—তার নিন্দা করা বা তার সম্পর্কে সত্য-মিথ্যা সাজিয়ে দশ কথা বলা পৃথিবীর সহজতম কাজগুলোর একটি।

আমার বাবা কোন এক সংস্কৃত শাস্ত্রে একটি শ্লোক দেখতে পেয়েছিলেন। কথাটি তাঁর খুব পছন্দ হয়েছিল। শুধু কাজের লোকদের নয়, অন্য কাউকেও উল্টাপাল্টা কাজ করতে দেখলে ওই প্রবচনটি প্রায়ই বলতেন। শ্লোকটির বাংলা তর্জমা: ‘মূর্খের অশেষ বুদ্ধি’। এর বিশিষ্টার্থ হল: যার বুদ্ধি কম, সে কি করবে না করবে, তা ঠাওর করতে পারে না। নানা রকম বুদ্ধি আঁটে। কিন্তু যে বুদ্ধিমান, সে একটি বুদ্ধি প্রয়োগ করেই কাজ সারতে পারে।
জগতে যত জটিল বিষয় আছে, তার মধ্যে রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার কাজটি অতি জটিল। প্রখর বুদ্ধিমান ছাড়া ওই ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন অসম্ভব। মোটা বুদ্ধির মানুষ মূর্খেরই শামিল। তারা নানা রকম অশুভ বুদ্ধির আশ্রয় নিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত অন্যের বিপদ শুধু নয়—নিজেদের বিপর্যয়ও ডেকে আনে। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব জীবনের গভীরতম বিষয়গুলো অতি সহজ-সরল ভাষায় শিষ্যদের বোঝাতেন। কোথাও পড়েছি, তিনি তাঁর শিষ্যদের বলছেন, ‘বুদ্ধিমান হও, চালাক হইয়ো না।’ জীবনের কোন ক্ষেত্রেই অসাধু না হওয়ার তাগিদ তো দিতেনই। তাঁর বিখ্যাত উক্তি: সাধু সেজো না, সাধু হও।“

উপরেল্লিখত কথাগুলি বেশ দারুণ করে লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলছিলেন উনার একটি লিখা দিয়ে পাঠকের উদ্দেশ্যে। সাধারণত শুভ কথা আর শুভ কাজের তো ধরন এমনই হবে, একইরকম। বুদ্ধিমান হও, চালাক হইয়ো না অথবা সাধু সেজো না, সাধু হও। এই সব প্রবাদ নিশ্চয়ই যে কেউই গ্রহণ করবেন। এ তো স্বাভাবিক। চৈনিক প্রবাদ আছে: যখন তুমি অন্যের দিকে একটি আঙুল তাক করো, আর চারটি তাক হয় তোমার দিকে। অন্যের একটা ক্ষতি করতে গেলে নিজের চার গুণ ক্ষতি হতে পারে। ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পরে কার কারণে তা হল, সে গবেষণা কেউ করতে যায় না।

শুধু অস্বাভাবিক অথবা ব্যতিক্রমী ব্যক্তি মাত্রই এই সব ভালো কথাগুলো গ্রহণ করবেন কি শুধু? অবশ্যই না। আমাদের এ দেশটার অনেক সময়ের সাক্ষী অথবা জলজ্ব্যান্ত ইতিহাস যদি লেখক আবুল মকসুদ কে বলা হয়। খুব বেশি ভুল হবে না। শুনেছি এবং দেখেছি উনি এই গত হয়ে যাওয়া ঈদের সারাটা দুপুর শহিদ মিনারে কাটিয়েছিলেন সাধারণ জনতার সাথে। বেশ আশাব্যাঞ্জক আসলেই। তবে উনাকে আন্না হাজারির সাথে তুলনা করবো না। উনি আন্না হাজারির চেয়েও অনেক বেশি সম্মানীয়, যার মুলে উনার সরলতাময় ও কৃত্রিমতাহীন আবেদন অথবা আহবান এর ধরন সাধারণ মানুষের জন্য।

এই তো বেশ কিছুদিন আগে ফেসবুক এর মাধ্যমে বিশাল এক বিপ্লব ঘটে গেলো। আমাদের দেশে না অবশ্য মিশরে! পত্রিকায় পড়েছি ব্লগার বন্ধুদের কাছ থেকেও জেনেছি। হোসনি মোবারকের পতন হলে সে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে, এই স্বপ্নে বিভোর এক গাদা বেকুব এর বেকুবির ফল আজ মিশরের সমসাময়িক অবস্থা। পৃথিবীর কেউ কি আমাকে এই মুহূর্তে দেখাতে পারবেন- মিশর এ আজ গণতন্ত্রের ছিটে ফোটাও আছে কি না? দেখাতে পারবেন না আমি নিশ্চিত।

সে স্বপ্নের ছোঁয়ায় আমাদের দেশের কিছু আপাত: বুদ্ধিমান ইয়াং শ্রেণী অথবা তাদের কে স্বপ্নের ভেলায় ভুলভাবে পরিচালিত করা কিছু সুশীল শ্রেণী, বেশ বেকুবের মতনই ভেবে বসে- এ দেশেও তা ঘটবে। এ দেশেও গণতন্ত্রের নামে স্বপ্নিল সুশীল আন্দোলন ঘটালে মনে হয় অসাধারণ কিছু ঘটে যায়! তাই কি? ঘটলে কি হবে তা যার যার ভাবনার মধ্যেই থাক। এ দেশে ধর্মীয় লেবাস ধারিদের দৌরাত্ব আর তাদেরকে উৎসাহিত করে নিজ কার্য হাসিল করা দলগুলোও বেশ সক্রিয় হওয়ার পায়তারায় আছে সবসময়ই। মিশরের জনগণকে যেমন বেহুদা রাস্তায় থাকতে হচ্ছে এখন বিপ্লব পরবর্তী জ্বলুনিতে। সেরকম ক্ষমতার ছল আর প্রভাবের খারাপ প্রতিক্রিয়া নিশ্চয়ই কেউ চাইবেন না। কেউই চাইবেন না যে- আপনার না বলা কথাগুলো বলতে কেউ বাধা দিক। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি মনে হয় এই সরকারের আমলেই সবচেয়ে বেশি আছে- মানুষের বাক স্বাধীনতা। কিন্তু তার কি আমরা যথেষ্ট সদ্ব্যবহার করছি, নাকি করতে পারছি?

মার্কিন মুল্লুকের কয়েকটি অঙ্গরাজ্য বেশ কয়েকদিন আগেই অন্ধকারে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অন্ধকারে ছিল প্রায় দুদিন! যেখানে নাকি এক সেকেন্ড এর জন্যও যদি বিদ্যুৎ যায় খুব খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। দাবানল আর ঝড়ে অনেক জায়গায়ই প্রচণ্ড খারাপ অবস্থা হচ্ছে দেশটির। বন্যায় বেশ কিছু মানুষও মারা গিয়েছে এরই মধ্যে। সে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রও তাদের জনগণের নিরাপত্তার জন্য , তাদের দুর্দশা লাগবের জন্য খুবই দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ এখনও নিতে পারেনি!

লিবিয়ার গাদ্দাফি নিয়ে নাটকের মহড়া প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। যেখানে বেশ কিছুদিন আগেই বিশ্বের সবার কাছেই বিদ্রোহী গ্রুপ ঘোষণা দিয়েছিল- আমাদের জয় হয়েছে, গাদ্দাফির পতন হয়েছে। এরপর কি হাস্যকর একেকটি কাণ্ডই না ঘটছে স্থিতিশীল যদিও একনায়কতান্ত্রীক শাসন নির্ভর লিবিয়ায়!

পাকিস্তানে এখনও মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে অথবা মৃত মানুষের জানাজা পড়তে গিয়েও, মানুষ নিজেই বোমায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে লাশ হয়ে ফেরে স্বজনদের কাছে! তবুও সেখানে মানুষ কিছুই বলে না! কোথাও দেখলাম না যে কেউ প্রতিবাদ করে বলেছে নুন্যতম যে- এতজন মানুষকে ওরা মারছে! তাও আবার মসজিদ অথবা জানাজার স্থানকেও বাদ দিচ্ছে না!

আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ নিয়ে একটি সাক্ষাতকার এ বলেছিলেন- বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য খারাপ একটি বৃহৎ সময়কালীন গণতান্ত্রিক সরকার তারা পান না। সে কথাগুলি খুব মনে ধরেছিল। আসলেই তো আজ এই সরকার তো কাল ওই সরকার। আজ ইনারা ক্ষমতায় স্বেচ্ছাচারী তো আরেক জায়গায় উনারাই সাধু সাজার ভান করেন। যেহেতু সব জায়গায়ই জনগণের শুধু ভোটাধিকার প্রয়োগ ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। সেখানে নির্বাচিত হয়েই কেউ স্বেচ্ছাচারী হলে আবার আমাদের পাঁচ বছর অপেক্ষা করে থাকতে হয়। আজ যদি হয় আমার বয়স পঁচিশ, পাঁচ বছর পর আমার বয়স হয়ে যায় তিরিশ! আজ যখন আমি দৌড়াই, পাঁচ বছর পর হয়ত আমার হাটতেই কষ্ট হয়। কিন্তু যারা নীতিনির্ধারণ এ ভুল অথবা শুদ্ধ করার পক্রিয়ায় থাকেন রাজনীতিবিদ অথবা আমলা অথবা ধনী শ্রেণী। তাদের কিন্তু কিছুই যায় আসে না! তারা তাদের চিকিৎসা করান বিদেশে গিয়ে, সন্তানকে স্কুলে পড়ান মাসিক তিরিশ হাজার টাকা বেতনে, সমস্যা দেখলে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে গা ঢাকা দেন উন্নত কোন দেশে! আর আমাদের দেশেই একজন সৎ সাবেক প্রধান বিচারপতিকে শুনতে হয় সামান্য ন্যায্য চিকিৎসা ভাতা নেয়া নিয়ে, অপমানিত হতে হয় সে প্রধান বিচারপতিকে!

সে সময় সঠিক সুশীল গনও কিছুই বলেন নি! সুশীল-গন বাদই দিলাম সাংবাদিক গনও কি সঠিক ভূমিকাটি পালন করেছিলেন?

পত্রিকা খুললেই শুধু নেগেটিভ সংবাদ! দেশে কি কোণ পজিটিভ সংবাদ নেই?

ব্যপারটি যেন সে মোবাইল অপারেটর মতোই প্রোডাক্ট এর শ্লোগান এর মতন- এমন অনেক কিছুই হবে যা কেউ ভাবেনি আগে!

(চলবে………………………

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×