somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শহরের এই ভিড়ে একা আমি

০৬ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগ লেখার কথা এর আগে অনেক শুনেছি। কিন্তু নিজের কখন ও আর লেখা হয়ে উঠেনি। তবে মানুষের ব্লগ পড়ে পড়ে অনেক কিছু শিখেছি।
জীবন,প্রযুক্তি,আনন্দ,প্রতিবাদ কত কিছু জানতে পেরেছি এই ব্লগ পড়ে পড়ে। সব ব্লগার বন্ধুদের ধন্যবাদ। গনিত,ফিজিক্স পড়তে পড়তে জীবন থেকে মনে হয় অনুভূতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। নিজের জীবনের কথা কাওকে বলার সাহস,সুযোগ হয়নি,তাই ভাবলাম এখানেই লিখি,হয়তবা না বলা কথা বললে মনটা হালকা হবে।

এখনকার সব নতুন যুগের ছেলেমেয়েদের সমস্যা প্রেম বিষয়ক ।আমার ও তাই ছিল । জীবনে ধাক্কা হোঁচট খেতে খেতে কত কিছুই না শিখলাম।
প্রথম প্রেম প্রথম ভাল লাগা ক্লাস টেন এ থাকতে। এতই ভাল লাগা কাজ করত যে বাবা মা কার ও কথা কানে ও তুলতাম না। সবসময় মোবাইল থাকত হাতে। পড়াশুনা সব মাথাই তুলে আমি ব্যস্ত থাকতাম আমার জগতে। যেই বাধা দিতে চাইত তাকেই শত্রু মনে হত। এই ভাল লাগা আমাকে পরাশুনা করতে দিত না। সবসময় মাথাই থাকত কিভাবে ক্লাস ফাকি দেয়া যায়,বাবা মা থেকে কিভাবে তাকা আদায় করা যায়,ফোন এর কার্ড কিনতে হবে না!! একদিন যথারীতি আর ১০ জনের মত আমার ও সামনে আসল জীবন ও বাস্তবতা। বুঝতে পারলাম কোন মরিচিকার পিছনে আমার সময় যাচ্ছে। যাকে এত ভালবাসি সে কিনা আমার জন্য কোন সময় ই বের করতে পারে না !! ঠিক মেট্রিক পরীক্ষা র সময় !! মনে হত আত্মহত্যা করি । কিন্তু না মা বাবা র যে আশা আমার ফলাফল নিয়ে তা দেখে হাত পা কেটেও অনেক কষ্টে মন দিলাম পড়াশুনাতে। আল্লাহ্‌ র রহমতএ রেজাল্ট ভাল হল । সময় এর সাথে সাথে ভুলেও গেলাম কষ্টের কথা। ভালবাসায় কষ্ট ১ জন ছেলে থেকে মনে হয় ১ জন মেয়ে ই বেশি পায়।

ভর্তি হলাম কলেজ এ। নতুন বন্ধু পেয়ে ভুলেই গেলাম ঠিক ৪ মাস আগেও কেমন পাগলামি করতাম । দ্বিতীয় বর্ষে পেলাম এক জন নতুন বন্ধু। বন্ধু থেকে কখন খুব কাছের মানুষ হয়ে গেল টের ই পেলাম না । গল্প আড্ডা খুব ভালই চলত তার সাথে। মনে হল নতুন করে আবার ভালবাসার সংজ্ঞা শিখছি।

ইন্টার পরীক্ষার পড় শুরু হল কোচিং এ যাওয়া । সব খানে সেই বন্ধু কে চাই ই চাই । দুর্ভাগ্য বশত ২ জন ভর্তি হলাম ২ জায়গায়।
এটাও ভালবাসার ফল। ২ জন ২ জন ক শুধুই মিস করতাম । পড়াশুনা বাদ দিয়ে চলত ফোনে কথা বলা ।

ভর্তির পর থেকে শুরু হল অন্য জীবন ।আর ও নতুন বন্ধু !!!

তার ও নতুন জীবন তাকে আঁকড়ে ধরল যেন। জুটল কিছু কুসঙ্গ ।গাঞ্জা,আর ও কত অদ্ভুত বেপারে তার জীবন আস্তে আস্তে জড়াতে লাগল। আমি টের পেয়েছিলাম অনেক আগেই । তাকে বাচাতে আমি নিজেই পড়াশুনা ক্লাস সব বাদ দিলাম। "তুমি এই ফ্রেন্ড দের সাথে মিশতে পারবা না , মিশলে আমি তোমার সাথে রিলেশান রাখব না "।
বাংলাদেশের ছেলে রা অনেক প্রভাব বিস্তার করে আনন্দ পায় তার গার্ল ফ্রেন্ড এর উপর !!! আর আমরা সব বোকা মেয়ে রা এই বয়স এ প্রেমে পড়ে তার অথবা তাদের সব কথাই মেনে নেই । আমিও এই ভুল টাই করলাম । সে যেটা বলে সেটাই ঠিক । আমি নিজে কি চাই সেটা যেন ভুলেই গেলাম ।
সে আমাকে বুঝাল সে আর এমন খারাপ পথে যাবে না। আমিও তাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করলাম। কোন দুর্বল মুহূর্তে বলার কারনেই মনে হয় তার সব কথা সত্যি মনে হল । কিন্তু আমার এই বিশ্বাসের পিছনে কত বড় ষড়যন্ত্র হল আমি জানি ও না । যেই মোবাইল দিয়ে আমি তাকে পাওয়ার এক মাত্র উপায় মনে করতাম সেই মোবাইল ই হল আমার জন্য কাল !! কিছু না জানা ছবি ।। আমি জানি না কখন তোলা।

সাধারণত এই সব করে ব্ল্যাক মেইল করা হয় । কিন্তু আমি হলাম অন্য রকম এক ব্ল্যাক মেইল এর শিকার। সে যাই করুক । গাঞ্জা মাদক যেটাই নিক না কেন আমাকে তার সাথে আগের মতই রিলেশান রাখতে হবে । তার ব্যবহার ভাল লাগুক না লাগুক আমাকে আগের মতই থাকতে হবে তার জন্য । আমিও ভয়ে তাই করতে লাগলাম।

কিন্তু মানুষের নিজের সত্তা বিবেক বলে একজন ভিতরে বাস করে। যে আগে হোক পরে হোক কখন ও না কখন ও জেগে উঠে। অসহ্য হয়ে উঠলাম জীবনের এই মোড়ে। আমি কোন পাপের ফল পাচ্ছি জানিনা ।। একদিন বলে দিলাম " তোমার যা করার কর আমি এই গোলামি করতে পারব না " ।

হাত পা কাটলাম ইচ্ছামত। মনে হচ্ছিল গায়ে আগুন ধরলে শান্তি পাওয়া যাবে। এমন মানুষ কে কেন সব কিছু না ভেবে চিন্তে দিয়ে দিলাম। কিন্তু আমার মত এই ভীতু মানুষ টা মরতে ভয় পাই। ফ্যান এ ওড়না লাগিয়ে দাড়ায়ে ছিলাম । মনে হচ্ছিল আমার অন্ধ বিশ্বাস আর ভুল এর জন্য আমি এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব।!!

যে মানুষ গুলোর কথা আমারা যেন ভুলেই যাই , তারা হল আমার এক মাত্র আশ্রয় । বাবা মা।

সব বলে দিলাম মা কে এক নিঃশ্বাসে । দেখি মা কিছুই বলে না !! অপেক্ষা করতে লাগলাম মা কি বলে কি করে। যা বলবে যা করবে সেটাই মানব । তবুও মরতে চাই না !! দেখি মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল " মা রে তুমি এক দম ভয় পাবা না । মা আছি কেন ?? ভুল করছ কিন্তু সেই ভুলের শাস্তি আত্মহত্যা না। !! "

জানি না আমার প্রতি কি আঘাত আনার চেষ্টা করবে আমার এতদিনের ভাল বাসার মানুষটা। আমি এখন তাকে অনেক অনেক ঘৃণা করি !! মাঝে মাঝে তার মৃত্যু কামনা ও করে ফেলি !! ১ টা ভুলের জন্য দেশ ছেড়ে চলে যাব বাইরে !!

বাহ্যিক কারন- পড়াশুনা ।

মূল কারন - অতীত থেকে বাঁচা ।

আমার জীবন এর এ ঘটনা !! অনেকে বলবেন - আমার সাথে অনেক খারাপ হল । হয়তবা !!
যা ঘটে গেল তার ভাল খারাপ জানিনা। কিন্তু এখন বিশ্বাস করি আমি অনেক ভাগ্য বতী - আল্লাহ্‌ আমাকে এতিম করে পৃথিবী তে পাঠাই নি। বাবা মা তোমরা কখন ও চাও নি আমি তোমাদের থেকে দূরে গিয়ে পড়াশুনা করি ।। কিন্তু এই অযোগ্য মেয়ে টা কে রক্ষা করতে এই কষ্ট টাও মেনে নিলে ।।

আমার এই লেখা র ১ টাই উদ্দেশ্য - জীবনে যত বাধা ই আসুক না কেন !! মন ছোট করবেন না !! ছেলে মেয়ে কিশোর কিশোরী সবার জন্য বললাম। আর আমরা কখন ও যেন ভুলে না যাই বাবা মা র প্রতি আমাদের কর্তব্য !! পৃথিবী তে কেউ যদি নিঃস্বার্থ ভাবে আমাদের ভাল বাসে তারা বাবা মা !!

আর প্রেমিক প্রেমিকা দের জন্য- বিশ্বাস করুন চোখ খোলা রেখে, চোখ বন্ধ করে নয় । নিজের অজান্তে কিসের শিকার হতে পারেন কেউ জানেন না ।।

আর আমার জীবনে র প্রথম ব্লগ টা উৎসর্গ করলাম সকল বাবা মা কে ।

আর একজন মানুষ এর ও যেন হৃদয় না ভাঙ্গে !! কেউ অন্যায় করলে কেউ চিট করলে তার শাস্তি নিজে নেবেন না !! অন্যায় আপনার না আপনি ও শাস্তি নিজে টেনে নেবেন না। জীবন এক টাই অনেক মূল্যবান !! যে আপনাকে বুঝবে না তাকে বুঝালে সে যদি না বুঝে সরে আসুন তার জীবন ও তার সঙ্গ থেকে। অন্তত অন্যের ভুলের যেন নিজে নিজের কাছে ছোট হবেন না। কেউ চলে গেল তার জন্য আমি কেন পরে থাকব অন্ধকারে ??? !!!! এখন কার সময় এ সম্পর্ক ব্যাপারটা খুব সস্তা হয়ে যাচ্ছে।। সিঙ্গেল জীবন যাপনে অসহ্য হয়ে সাথে সাথে কার ও সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরবেন না ।। সময় নিন, দেখুন জানুন। আপনার অনুভূতি অনেক মূল্যবান ।

পরিশেষে ,
আর একজন বাবা মা কেও যেন বৃদ্ধ নিবাসে যেতে না হয় । একজন মানুষ যেন প্রেমে হেরে যাওয়ার জন্য আত্মহত্যা না করে ।
জীবন অনেক কঠিন , জীবন অনেক আনন্দের, জীবন অ্যাডভেঞ্চারের !!! অতীত কে ভুলে যাওয়া সম্ভব না হলেও, অতীত কে পাশ কাটিয়ে নতুন রাস্তা খুজে পাওয়া সম্ভব।

সবার জীবন এর মঙ্গল কামনা করে শেষ করলাম। ভাল থাকবেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×