somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটু দেখেন,ভালকিছু জানবেন?

০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সালাত আরবী শব্দ। যার আভিধানিক অর্থ হলো- কারো দিকে মুখ করা, অগ্রসর হওয়া, দো’য়া করা, নিকটবর্তি হওয়া, পবিত্রতা বর্ণনা করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা। তবে সালাত নামায হিসেবেই আমাদের কাছে বেশী পরিচিত।নামায ফারসী শব্দ। কোরআনের পরিভাষায় নামাযের অর্থ হলো আল্লাহর দিকে মনোযোগ দেওয়া, তাঁর দিকে অগ্রসর হওয়া, তাঁর কাছে যাওয়া, তাঁর একেবারে নিকটবর্তি হওয়া। এই সালাতের হুকুম দেয়া হয়েছে ইকামত শব্দের মাধ্যমে। ইসলামের ৫টি মৌল ভিত্তির মধ্যে সালাত দ্বিতীয়

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এরশাদ করেছেন- "সালাত হচ্ছে মুমিনের জন্য মিরাজস্বরূপ।”

ইসলামের ৫টি মৌল ভিত্তির মধ্যে সালাত দ্বিতীয়

আল্লাহ আল-কোরাআনে বিভিন্ন জাগায় বলেছেন:-

সূরা আনআমের ১৬২নং আয়াতে ঘোষণা করেন- ''নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কোরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবকিছু বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।”

সূরা যারিয়াতের ৫৬নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- ''আমি জ্বিন ও মানবজাতিকে কেবল আমার ইবাদত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেনি।”

সূরা আনআমের ৭৯নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- ''আমি নিষ্ঠার সাথে সেই মহান সার্বভৌম মালিকের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি যিনি এই আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, আমি মুশরিকদের দলভুক্ত নই।”

সূরা মুমিনুন-এর ১-২নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- ''নিশ্চিতভাবে সফলকাম হয়েছে মুমিনরা, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়াবনত হয়।” সূরা মুমিনুন-এ আল্লাহ মুমিনদের ৭টি গুণের কথা উল্লেখ করেছেন।”

সূরা আলাকের ১৯নং আয়াতে বলা হয়েছে ''সিজদা কর ও আল্লাহর নিকটবর্তী হও।”

সূরা বাকারার ৪৩ ও ৪৫নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-''নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান করএবং যারা আমার সামনে অবনত হচ্ছে তাদের সাথে তোমরাও অবনত হও। সবর ও নামায সহকারে সাহায্য চাও। নিঃসন্দেহে নামায বড়ই কঠিন কাজ, কিন্তু সেসব অনুগত বান্দাদের জন্য নয় যারা মনে করে, সবশেষে মিলতে হবে তাদের রবের সাথে এবং তারই দিকে ফিরে যেতে হবে।”

সূরা আল কালাম এর ৪২-৪৩নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- ''যেদিন কঠিন সময় এসে পড়বে এবং সেজদা করার জন্য লোকদেরকে ডাকা হবে কিন্তু তারা সেজদা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি হবে অবনত। হীনতা ও অপমানবোধ তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। এর আগে যখন তারা সম্পর্ণ সুস্থ ছিল তখন সিজদার জন্য তাদের ডাকা হলে তারা অস্বীকৃতি জানাতো।”

এটা আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিমকে (স.) জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন- তুমি এভাবে নামায আদায় করবে যেন তুমি স্বয়ং আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ, আর যদি তোমার পক্ষে তা সম্ভব না হয়, তবে তুমি অবশ্যই মনে করে নিবে যে, আল্লাহ তোমাকে সর্বক্ষণ দেখছেন (মুসলিম শরীফ)”।

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)বলেছেন- কেয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্য থেকে যে আমলটির হিসাব সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হবে সেটিই হলো নামায। যদি এ হিসাবটি নির্ভুল পাওয়া যায় তাহলে সে সফলকাম হবে ও নিজের লক্ষে পৌঁছে যাবে। আর যদি এ হিসাবটিতে ভুল দেখা যায় তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি তার ফরযগুলোর মধ্যে কোন কমতি থাকে তাহলে মহান ও পরাক্রমশালী -

অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগত নয় এবং আখেরাতে বিশ্বাস করে না, তার জন্য নিয়মিত নামায পড়া একটি আপদের শামিল। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সানন্দে আল্লাহর আনুগত্যের নিজেকে সোপর্দ করেছে এবং যে ব্যক্তি মৃত্যুর পর তার মহান প্রভুর সামনে হাযির হবার কথা চিন্তা করে, তার জন্য নামায ত্যাগ করাই কঠিন।


নিশ্চয়ই নামায মন্দ ও অশ্লীল কাজ থেকে নামাযীকে ফিরিয়ে রাখে:-

সূরা আনকাবুতের ৪৫নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- ''তোমার প্রতি অহির মাধ্যমে যে কিতাব পাঠনো হয়েছে তা তেলাওয়াত করো এবং নামায কায়েম করো, নিশ্চয়ই নামায মন্দ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।”

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আল্লাহতায়ালা নিশ্চয়তা দিয়েই কথাটি বলেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ নামায কায়েমের মাধ্যমে সমাজ থেকে অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কাজগুলো বন্ধ করতে চান।

যে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আল্লাহ নামায ফরয করেছেন, মুসলমানদের ব্যক্তি ও সমাজে বর্তমানে নামায সে উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হচ্ছে।সালাতের গুরুত্ব:হযরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর সমস্ত গভর্ণরদের কাছে এই মর্মে নির্দেশ জারি করেনযে- ”তোমাদের যাবতীয় দায়-দায়িত্বের মধ্যে নামাযই আমার নিকট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” ইসলামী জীবন বিধানে নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল ।


প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর ওপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে:-

পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার আদেশ মহান আল্লাহ তার প্রিয় নবীকে আরশে আযীমে ডেকে নিয়ে সরাসরি দিয়েছিলেন কিন্তু অন্য সকল কাজের আদেশ জীব্রাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন। পবিত্র কুরআন মজিদে ৮২ বার নামাযের কথা বলা হয়েছে। সন্তানদের বয়স যখন সাত বছর হয় তখন নামায শিক্ষা দেয়া এবং দশ বছর বয়সে নামায পড়তে বাধ্য করার জন্য পিতা-মাতার প্রতি নির্দেশ রয়েছে।

নামায ফরয হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তা অবশ্য পালনীয়। মহিলাদের বিশেষ অবস্থা, অজ্ঞান ও পাগল হওয়া ছাড়া নামায থেকে বিরত থাকার কোন সুযোগ নেই। অসুস্থ অবস্থায় দাঁড়িয়ে নামায পড়তে ব্যর্থ হলে বসে, বসে পড়তে না পারলে শুয়ে শুয়ে এবং তাও না হলে ইশারায় নামায পড়ার বিধান রয়েছে। সফরে রোজার জন্য শিথিলতা থাকলেও নামায সংক্ষিপ্তাকারে পড়ার বিধান রয়েছে। এমনকি কোন অমুসলিম যদি আসরের সময় ইসলাম কবুল করে তবে ঐ দিন আসরের নামায থেকে তার ওপর নামায ফরয হয়ে যায়।


বিশ্বের সবাই আল্লাহর তসবীহ্ পাঠ করে:-

সূরা আন নূরের ৪১নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- ''তুমি কি দেখ না যে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সবাই এবং উড়ন্ত পাখিরা আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করছে। ওদের প্রত্যেকের জানা কিভাবে আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করতে হয়।”

গাছপালা পাহাড়-পর্বতসমূহ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, চতুর্দ জন্তুসমূহ অবনত হয়ে অর্থাৎ রুকুর হালতে, সরিসৃপ প্রাণীসমূহ বুকের উপর ভর দিয়ে অর্থাৎ সিজদার হালতে আর ব্যাঙ, কুকুর, বিড়াল, শিয়াল প্রভৃতি প্রাণীসমূহ তাশাহুদের সূরতে আল্লাহর তাসবীহ করছে। আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে মানুষ দাঁড়িয়ে, অবনত হয়ে, সিজদার হালতে ও তাশাহুদের সূরতে একমাত্র নামাযের মাধ্যমেই আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করতে সমর্থ হয়।

নামাযের মাধ্যমে কালেমার ওয়াদা পালনের অভ্যাস হয়:নামায এমন এক আমল যেখানে নামাযীর মন-মগজ, মুখ, হাত-পা, চোখ-কানথ সবই ব্যবহার করতে হয়।

নামাযের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবসময় সর্বাবস্থায় যা কিছু করা হয় বা বলা হয়, তা সবই আল্লাহতায়ালার হুকুম ও রাসুল (সা.)-এর তরীকা মতো করতে হয়। কোনো একটা কাজও নামাযীর নিজের ইচ্ছেমতো করা চলে না। এভাবে প্রতিদিন পাঁচবার নামাযে আল্লাহর হুকুম ও রাসুলের তরীকা মতো মন-মগজ ও শরীরের সব অঙ্গকে কাজে লাগিয়ে কালেমার ২ দফা ওয়াদা পালনের অভ্যাস হয়।


নামায আল্লাহকে ভুলতে দেয় না:
আল্লাহতায়ালা :-

সূরা তোয়াহার ১৪নং আয়াতে বলেন: ''আমাকে মনে রাখার জন্য নামায কায়েম কর।”নামায আমাদেরকে সবসময় মনে করিয়ে দেয় যে-আমরা সবসময়ই আল্লাহ যা অপছন্দ করেন তা আমরা করতে পারি না। এভাবেই পাঁচ ওয়াক্ত নামায যে মসজিদে আদায় করতে অভ্যাস করে নেয়, সে আল্লাহকে ভুলে থাকতে পারে না।

মুসলমানদের নামাজের ফল অর্জন না হওয়ার চারটি কারণ হলোঃ

নামাজের শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ না করা।
নামাজের সূরা, দোয়া তাসবিহর সঠিক উচ্চারণ বা কেরাত বিশুদ্ধ না হওয়া।
নামাজের গুরুত্বপূর্ণ নিময়কানুন বা মাসলা-মাসায়েল সম্পর্কে অজ্ঞতা।
নামাজে পাঠকৃত সূরা, দোয়া তাসবিহর অর্থ ও তাৎপর্য না জানা।

- NirzonAlo
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×