৩ হাজার বছর পুরোনো শহর লেপটিস মাগনার ধ্বংসাবশেষের সামনে দাঁড়িয়ে বাবা আমাকে বললেন, এটা ছিল এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাজার। কায়রো থেকে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল ধরে ব্যবসায়ীরা আসতেন এখানে। আমাকে বোঝানোর জন্য বাবা বললেন, মুসরাতার সুক-তালাতার চেয়েও বড় বাজার ছিল এটি। সুক-তালাতা, আমাদের বাড়ির কাছের একটি বিশাল ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। তবে ওখানে আগোরা বা মীনা বাজারের মতো অতো ভিড় নেই। কর্মী সংখ্যাও কম। তিউনিশিয়ার পিচ্চি পিচ্চি মেয়েরা কাজ করতো। কাউন্টারে মিশরীয়রা। এদিক-ওদিক ফাঁকা দেখে একবার এক প্যাকেট সিগারেট চুরি করেছিল এক বাংলাদেশী শ্রমিক। সিসিটিভিতে ধরা খেয়ে ১ বছরের জেল হয়েছিল তার। যে প্রযুক্তি এখন ঢাকাকে আধুনিক করছে, ৩০ বছর আগেই তা আমি দেখে এসেছি মুসরাতায়।
লেপটিস ম্যাগনা এখন পতিত শহর। পাশেই গড়ে উঠেছে খোমস। একটি ছিমছাম আধুনিক শহর। এই শহরেই আমি জীবনে প্রথম খাল দেখি। সাগরের পানি লবনমুক্ত করে চলতো একটি সেচপ্রকল্প। সেই প্রকল্পেই খালের মতো নালা। ভূম্ধ্যসাগরীয় ফল আর শাকশবজির আবাদ হতো মাইলের পর মাইল ক্ষেতজুড়ে। ভারতীয় আর বাংলাদেশীরাই মূলত এই ক্ষেতগুলোতে কাজ করতো।
জাহিদ আংকেল একটি শিপিং ফার্মে কাজ করতেন। তার কাজ ছিল, সাগরের মাঝে জাল ফেলা আর ওঠানো। তবে যন্ত্রের বদৌলতে কায়িক শ্রম অতোটা ছিল না। মাসের পর মাস তাকে ভূমধ্যসাগরেই থাকতে হতো। যা হোক, নিজিকে একটি শিপিং কোম্পানির ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে বিক্রমপুরের এক বনেদি পরিবারে বিয়ে করলেন। নিজে ইন্টারমিডিয়েট পাস হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ পাস করা মেয়েকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পরই ফাঁপড়ে পড়লেন তিনি। বউ লিবিয়ায় আসতে চায়। তারও বউ আনার সুযোগ আছে। তবে সমস্যা অন্যখানে। বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা বউটি জেনে যাবেন, তার স্বামী নিতান্তই এক জেলে।