somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোটা-দর্পণ

১৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহে মাথায় বারবার শরৎচন্দ্রের বিলাসীর কয়েকটা লাইন ঘুরঘুর করছে। ”আট ক্রোশ পথ হাটা বিদ্যা যে সকল ছেলের পেটে তারাইতো একদিন বড় হইয়া গ্রামের মাথা হয়। দেবী বিণাপাণির বরে সংকীর্ণতা ইহাদের মধ্যে আসিবে কী করিয়া?”
আমাদের পিএসসিরও ওই দশা। ’আট ক্রোশ পথ হাটা’রাই আজ পিএসসি’র মাথা হইয়াছেন। অতএব তাহাদের মধ্যেও কোন সংকীর্ণতা নাই। পারলে তারা শতভাগই কোটায় পুরে দেন। এবং শতভাগ কোটার নজির যে একদম নেই তাও কিন্তু জোর গলায় বলা যাবে না। ৩২তম বিসিএস তো পুরোটাই গেল কোটায় কোটায়।
এর কারনও আছে। আজ কোটার একটা চারা রোপন করে গেলে তা একদিন কোটার মহীরুহ হয়ে ফল দেবে। কেউ একজন স্বয়ং কোটায় সুযোগ পেয়ে উচ্চপদস্ত হয়ে চালু করে যাবেন সন্তান-কোটা। সেই সন্তান যখন নীতি নির্ধারক হবেন তিনি চালু করে যাবেন নাতি-নাতনি কোটা। সেই নাতি-নাতনির দায়িত্ব হবে পুর্ব পুরুষের ঐতিহ্য রক্ষা। এভাবে এক সময় আবির্ভাব হবে একটি জাতীয় কোটা গোষ্ঠীর । আর কোটার এই জাল ছিড়ে বের হতে পারবে না আমার সন্তান, তার সন্তান, তার সন্তান।
অনেকেই বলতে পারেন সরকার দিতে চায়, একটা দিলেইতো হলো। যে মোটে পায় না তার আবার কাড়া আর আকাড়া। যে স্বাভাবিক ভাবে কোন চাকরিই পায় না, সে তো একটা পেলেই খূশি। সরকার এতই চাইলে একটা সেকেন্ড ক্লাস চাকরি ধরে দিলেইতো হলো। কিন্তু এখানেই আমাদের সরকারের মহত্ব নিহিত। এখানেই উদারতা। দেবই যখন, শ্রেষ্ঠ পদটিই দেব। যার মেধা আছে সে এখানে না পেলেও অন্য কোথাও ঠিকই একটা ভালো চাকরি জুটিয়ে নেবে। কিন্তু যার কোটাই ভরসা, এই চাকরি না পেলে তাকে পথে বসতে হবে।
এবং সরকারের এই যুক্তি আপনি সহজেই উড়িয়ে দিতে পারবেন না।
কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়। দেশটা চালাতে তো হবে। ৫৫ শতাংশ যদি অপুষ্ট লোক নেয়া হয়, তাহলে যে কয়জন সুস্থ্য লোক থাকে তাদেরকেতো ওই কোটাজনিত অপুষ্টির ঘাটতি পোষাতেই দিন যাবে। বাড়তি কিছু করবে কবে? পত্রিকা পড়ে জানলাম কোটা না থাকলে আপনি দুইলাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২২৬ তম হয়েও চাকরি নাও পেতে পারেন। আর কোটা থাকলে সাত হাজার তম হয়েও চাকরি পেতে পারেন। সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আপনি আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ মনে মনে চাইতেই পারেন, যে যুদ্ধে আপনি আপনার বাবার মতো ভুল আর করবেন না। কিংবা ভাবতেই পারেন আপনার সন্তান নাহয় আদিবাসীই হয়ে যাক।
যে শাহবাগ মাসের পর মাস শুভ বুদ্ধির উপাসকদের আগলে রেখেছে, সেই শাহবাগে বিসিএস পরীক্ষার্থীরা জড়ো হবার চেষ্টা করা মাত্রই গ্রেফতার হচ্ছেন। তার মানে হলো আমাদের শূভ বোধের চর্চা এখন নি®প্রয়োজন। কেননা তা সরকারের স্বার্থের সাথে যায় না।
তবে আশার কথা, এখন নির্বাচনের বছর। সরকারের সবকিছু হবে নির্বচন কেন্দ্রিক। বিচার হবে নির্বাচন কেন্দ্রিক, চাকরি হবে নির্বচন কেন্দ্রিক, আন্দোলন হবে নির্বচন কেন্দ্রিক, আইন হবে নির্বচন কেন্দ্রিক, সব সব হবে। যেই লিমন এতগুলো দিন অপরাধী হিসেবে কাটালো হঠাৎ এক নাইস সানি মর্নিং-এ সে নির্দোষ। যে শ্রম আইন নিয়ে এত টানাপোড়েন তা হঠাৎই শ্রমিকবান্ধব হয়ে উঠবে। যে ইউনুস কে নিয়ে সরকারের এত শক্তি ক্ষয়, সরকার হঠাৎই একদিন তার ভুল বুঝতে পারবে। এমন অনেক কিছুই হবে যা কেউ ভাবেনি আগে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হবে আমাদের দেশে যদি প্রতিবছর নির্বাচন হতো কতই না ভালো হতো।
কারণ নির্বাচনের বছর না হলে এত সহজে আরেকটা রিভাইজ্ড রেজাল্ট আমরা পেতাম কিনা সন্দেহ। তাও ভালো, যে কারণেই হোক শুভ বোধের উদয় হয়েছে এটাই বড় কথা।
আমাদের চাকরিতে শতকরা ৪৫ ভাগ মেধা আর ৫৫ ভাগ কোটা। যার মধ্যে আছে ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ ভাগ নারী, ১০ ভাগ জেলা আর ৫ ভাগ উপজাতি। যদিও সারাদিন সমঅধিকার সমঅধিকার করে গলা ফাটিয়েও কিছু নারী আছেন যারা বাসে, সংসদে বা অন্য যে কোন কিউতে সংরক্ষিত নারী কোটাকে জন্মগত স্বাভাবিক অধিকার মনে করেন, তবুও এরই মাঝেই অধিকাংশ আতœমর্যাদাসম্পন্ন নারীরই এই সংরক্ষিত আসনে খুশী হবার কথা নয়। কোন পাবলিক পরীক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোন চাকরির বেলায় এই নারী কোটা আছে কিনা আমি জানি না। অথচ এর প্রতিটা ক্ষেত্রেই নারীর সগর্ব উপস্থিতি। বরং কিছু কিছূ ক্ষেত্রে তারা তাদের বাকি অংশ থেকে খানিকটা এগিয়েও।
বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা রিক্সা চালিয়ে দিন যাপন করেন, সরকারের ভ্রক্ষেপ নেই। ভিক্ষা করেন, ইউপি চেয়ারম্যানের হাতে লঞ্ছিত হন, কোন খবর নেই। আর চাকরির বেলায় ৩০ শতাংশ কোটা। এখানে প্রথম কথা হচ্ছে, যে মুক্তিযোদ্ধা রিক্সা চালান, ভিক্ষা করেন তারা তো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছেলে-মেয়েকে ওইসব চাকরির প্রাথমিক যোগ্যতার পর্যায়েই নিতে পারেন না। কোটার কী ফল তার কাছে? আর যিনি ওই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন, তিনি আরও দু-একধাপও নাহয় নিয়ে গেলেন। আর তাছাড়া ঘুরে ফিরে একটা কথাই মনে হয়, দিতে চান, দিন না, আরও তো কত পদ আছে, কত চাকরি আছে। একদন গোল্ড মেডেলটাই দিতে হবে?
আর জেলা ও উপজাতি কোটার ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন হলো, কোন বিশেষ জনপদ বা গোষ্ঠিকে অনগ্রসর রেখে তার জন্য কয়েকটা সংরক্ষিত পদ না রেখে সেই বিশেষ অঞ্চল বা গোষ্ঠীর অগ্রসরতার জন্য কোন কিছু করাই কি বেশী স্বাস্থ্য-সম্মত নয়? এখানে উত্তর আসবে, এক দিন না একদিন তাই হবে। সেই উত্তরের প্রেক্ষিতে আমার আবার প্রশ্ন, যা নয়-এ হয় না তা নব্বইতে হয়না; তাহলে যা চল্লিশে হয় না তা কততে হবে?
তাই যে মেধাবী ২২৬ তম হয়ে চাকরি পাবে না এবং চোখের সামনে দেখবে পাঁচ হাজার-সাত হাজারতম কোন কোটাবান-কোটাবতীকে চাকরি পেতে সে বরাবরই তাদেরকে শত্র“পক্ষ হিসেবেই দেখবে, কখনই শ্রদ্ধার চোখে দেখতে পারবে না, তা সে যেই হোক না কেন, উপজাতি, নারী কিংবা মুকিযোদ্ধা।
অতএব ’মহোদয়ের’ নিকট আকুল আবেদন, উপরোক্ত অবস্থা বিবেচনায় জাতিকে মেধাবদ্ধ করুন, কোটাবিভক্ত করবেন না।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×