somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামঃ মধ্যযুগীয় বর্বর যুদ্ধবাজ রাজনীতির অপরনাম

০১ লা অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোরায়েশ বংশের দুই শাখায় নবী মুহাম্মদ ও হজরত ওসমানের জন্ম। তাঁদের দুজনরেই পূর্বপুরুষ আবদে মনাফ। আবদে মনাফের দুই পুত্র ছিলেন : আবদে শামস ও আবদে হাশিম। আবদে শামসের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র উমাইয়া নেতৃত্বের দাবি করায় চাচা আবদে হাশিমের সাথে বিবাদ বাঁধে। এই বিবাদে কোরায়েশ বংশ দুই দলে বা গোত্রে বিভক্ত হয়ে যায়; হাশিমি গোত্র ও উমাইয়া গোত্র। বিবাদের মূল কারণ সম্পদ।

শেষ পর্যন্ত নেতৃত্ব ভাগাভাগি করা হয় এইভাবে "কাবা" ঘরের স্বত্বাধিকার ও তত্ত্বাবধান এবং হজ (দেব-দেবী দর্শন) মৌসুমে আয়কৃত অর্থের মালিকানা থাকবে হাশিমি গোত্রের হাতে। আর দেশ প্রতিরক্ষা-প্রশাসন ও যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মালিকানা উমাইয়া দলের হাতে।

হযরত মোহাম্মদের মৃত্যুর পরে খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে উসমানের শাসনামলেই ইসলামী শাসন ব্যাবস্থা সর্বাধিক বিস্তৃতি লাভ করে । উস্‌মানীয় সাম্রাজ্য (ইংরেজি: Ottoman Empire) তুরস্ক-ভিত্তিক উসমানীয় বংশ কর্তৃক ১৪শ শতকে প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য। শৌর্যের শীর্ষে সাম্রাজ্যটি পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার এক বিরাট অঞ্চলব্যাপী বিস্তৃত ছিল।
কিন্তু রোমান এবং পার্সিয়ানদের যুগযুগ ধরে চলে আসা জাতিগত যুদ্ধপ্রবন দুই অঞ্চলের একিভুত করা অতোটা সহজ ছিলোনা, যার খেসারত দিতে হয়েছে নবীর বংশ নির্মমভাবে বিলীন করে দিয়ে ।

তাঁর খেলাফতের সময় হযরত আবু বকর (রাঃ) এর কৃত সংকলন থেকে পবিত্র কুরানের কতিপয় প্রামাণ্য নকল প্রস্তত করা হয় এবং তা রাষ্ট্রের সকল প্রদেশে প্রেরণ করা হয়। এটা অবশ্যই তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আজ আমরা যে পবিত্র কুরআন দেখতে পাই ,তা তাঁর খিলাফতকালে তাঁর সরাসরি তত্ত্বাবধানে সংকলিত হয়েছিল। তাঁর খেলাফতের শেষ ছয় বছর, আব্দুল্লাহ বিন সাবাহ (এক ইহুদী, যে ইসলামী রাষ্ট্রকে দুর্বল করার দূরভিসন্ধিতে ইসলাম গ্রহণ করেছিল) সহ কতিপয় গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের কারণে, বিশৃংখলা ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতে অতিক্রান্ত হয়।

হযরত উসমান (রাঃ) কে তাঁর ৮২ বছর বয়সে ১৭ই জুন ৬৫৬ খ্রীস্টাব্দে, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা অবস্থায় শহীদ করা হয়।

তৃতীয় খলিফা হযরত উসমানের (রাঃ) শহীদ হওয়ার পর মদিনাতে একটি সর্বব্যাপী বিশৃংখলা এবং নৈরাজ্য বিরাজ করছিল। পাঁচ দিন যাবত রাজনৈতিক ডামাডোলের পর, মিসরীয় বিদ্রোহীদের নেতা, ইবনে সাবা, হযরত আলী (রাঃ)-এর পক্ষে এই বলে রায় দেয় যে, তিনিই একমাত্র খলিফা হওয়ার অধিকারী কারণ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যার সপক্ষে একটি ওসিয়্যত করেছিলেন।

তাঁর নির্বাচনের পরপরই তিনি জনগণের বিশেষ করে মহানবী (সাঃ) এর প্রভাবশালী সাহাবী যেমন হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ) এর উত্থাপিত ‘হযরত উসমান(রাঃ)-এর হত্যাকারীদের যথাশীঘ্র শাস্তির জনপ্রিয় দাবীর সম্মুখিন হন।

কথিত আছে হযরত আলী কুফায় এক ধনাঢ্য মহীলাকে বিয়ে করেন, এবং এই ধনাঢ্য সুন্দরী মহিলা হযরত আলীর জীবনে প্রচন্ড প্রভাব ফেলতে সক্ষম হন যার দরুন খেলাফতের নির্বাচনের পরপরই তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী, মদীনা থেকে ইরাকের কুফায় সরিয়ে নেন, যা ছিল অধিকতর কেন্দ্রীয় এবং সমৃদ্ধশালী একটি স্থান।

চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর মোট ৮জন স্ত্রী ছিল। তিনি চাচাত ভাই হযরত মোহাম্মদ কন্যা ফাতিমাকে বিয়ে করেন। আবার তিনি হযরত মোহাম্মদের বড় মেয়ে জয়নবের মেয়ে উমামা কেও বিয়ে করেন, অর্থাৎ তিনি চাচাতো ভাই মোহাম্মদের নাতনীকেও বিয়ে করেন। যদিও মহানবীর জীবদ্দশায় তার অনুরোধে অন্য কাউকে বিয়ে করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলো ।

হযরত আলী(রাঃ) ঘোষণা করেন যে, তাঁর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার রাষ্ট্রে শান্তি- শৃংখলা পুনঃস্থাপন করা এবং কেবল তারপরই তিনি হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যাকারীদের বিচারের সম্মুখিন করতে পারবেন। কিন্তু হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ), হযরত আলী(রাঃ) এর এই সিদ্ধান্তে রাজী হননি; তারা সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করা শুরু করেন। হযরত আয়েশা (রাঃ), তিনিও হযরত উসমানের হত্যাকারীদের শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ) এর সাথে যোগ দেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, তাঁর এবং হযরত আয়েশা (রাঃ) এর সৈন্যবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়, যদিও, হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবায়ের (রাঃ) যুদ্ধের পূর্বেই সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং অন্য কোন শত্রুর দ্বারা নিহত হন। হযরত আয়েশার (রাঃ) সৈন্যরা পরাজিত হয় কিন্তু হযরত আলী (রাঃ) তাঁকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন এবং তাঁর নিরাপত্তার খেয়াল রাখেন।

উটের যুদ্ধের পর হযরত আলী (রাঃ), হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) কে, যিনি তখনও তাঁর হাতে বয়’আত গ্রহণ করেননি, ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁর নিকট আত্বসমর্পণ করার আহ্বান জানান। কিন্তু হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এই অজুহাতে তাঁর নিকট নিজেকে সমর্পণ করেনি যে, হযরত উসমান(রাঃ) যিনি উমাইয়া বংশোদ্ভূত ছিলেন, তার রক্তের প্রতিশোধ প্রথমে নিতে হবে।

আমীর মুয়াবিয়া (রাঃ), আমর বিন আস (রাঃ) এর সহায়তায়, সৈন্য প্রস্তত করা শুরু করে। হযরত আলী (রাঃ), অন্য কোন বিকল্প না পেয়ে, মুয়াবিয়ার সাথে লড়ার জন্য সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হতে হয়। ৫৬৭ খ্রীস্টাব্দের জুলাই এ দুই সৈন্য বাহিনী ‘সিফফিনে’ যুদ্ধে উপনীত হয়। দু’পক্ষেই ব্যাপক হতাহত হয়; কিন্তু যুদ্ধ এই মতৈক্যে শেষ হয় যে, বিষয়টি একটি মধ্যস্থতা কমিটিতে নিষ্পত্তি হবে। এই কমিটিতে হযরত আলী (রাঃ) এর পক্ষে আবু মুসা আল আসরি (রাঃ) এবং আমীর মুয়াবিয়ার পক্ষে আমর বিন আস (রাঃ) প্রতিনিধিত্ব করে। দুর্ভাগ্যবশতঃ এই মধ্যস্থতা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, কারণ আমর বিন আস (রাঃ) আবু মুসা আল আসরি (রাঃ)-এর সাথে গ্রহীত সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাড়াঁয়।

যারা মধ্যস্থতার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ছিল, হযরত আলী (রাঃ) থেকে সরে গিয়ে তাদের জন্য এক নতুন আমীর নির্বাচিত করে নেয়।এই দলটিকে ‘খারেজী’ অর্থাৎ ‘ব্যতান্ত্রিক’ বলা হয়ে থাকে। সর্বপ্রথম, হযরত আলী (রাঃ) তাদেরকে বুঝিয়ে রাজি করেনোর চেষ্টা করেন, কিন্তু তা নিস্ফল হয়; যা ভয়াবহ যুদ্ধে মোড় নিলে প্রচুর খারেজী নিহত হয়।

এই বিপর্যস্ত পরাজয়ের পর খারেজীরা হযরত আলী (রাঃ), হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এবং আমর বিন আস (রাঃ) কে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তী দু’জন হত্যা প্রচেষ্টা হতে বেঁচে যেতে সক্ষম হলেও হযরত আলী (রাঃ) ফযরের নামাজের জন্য মসজিদে যাবার সময় আক্রমণকারীর দ্বারা গুরুতর আহত হন। দু’দিন পর এই অমিত সাহসী এবং ধর্মপ্রাণ খলীফা ৪০ হিজরীর ২০ রমযানে পরলোক গমন করেন ।সর্বোপরি হযরত আলী একজন অদক্ষ খলিফা হিসেবেই প্রকাশ পায়, যার সময়কালেই ইসলামী রাষ্ট্রে চরম বিশৃঙ্খলা, অদূরদর্শিতা, একগুঁয়েমি, বাতসল্যপ্রীতি, মদীনা থেকে কুফার প্রতি আকর্ষণ, কুটনীতিক ব্যর্থতা, অপরিকল্পিত যুদ্ধে নির্মম পরাজয় এবং নবী বংশের হাত থেকে খেলাফতের ক্ষমতা হারায় ।

৬৬১ খৃস্টাব্দে ইমাম হাসানকে খিলাফতের ন্যায্য অধিকার হতে বঞ্চিত করে মুয়াবিয়া ইসলামী সাম্রাজ্য তথা দামেস্কের সিংহাসনে আরোহন করেন এবং ইসলামের ইতিহাসে প্রথম বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। রাজতন্ত্রের সূচনাও তিনিই করেন। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক মূইর বলেন, ‘‘মুয়াবিয়া দামেস্কের সিংহাসনে আরোহন খিলাফতের সমাপ্তি এবং রাজতন্ত্রের সূচনা করে।’’ তবে যে পন্থাই অবলম্বন করে থাকুক না কেন, মুয়াবিয়াকে অভিজ্ঞ শাসন, সুনিপুণ কূটনীতিবিদ, নির্ভীক যোদ্ধা হিসেবে উপযুক্ত মর্যাদা দিতে হবে।

" গণীমতের মাল তকসীমের ক্ষেত্রেও হযরত মুয়াবিয়া ( রাঃ ) কুর’আন সুন্নাহর সরাসরি বিরুদ্ধাচরণ করেছেন । শরীয়তের নির্দেশ মুতাবেক মালে গণীমতের এক পঞ্চমাংশ জমা হবে বাইতুল মালে এবং অবশিষ্ট মাল তকসীম হবে মুজাহিদদের মাঝে। কিন্তু হযরত মুয়াবিয়া গণীমতলব্ধ সোনা-চাঁদি তার জন্য পৃথক রেখে অবশিষ্ট মাল শরীয়ত মুতাবেক তকসীম করার নির্দেশ জারী করলেন। ”

৬৮৯ খৃস্টাব্দে মুয়াবিয়া তদীয় পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করে খেলাফতে রাশেদার যুগের পরিবর্তে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেন। ইয়াজিদকে মনোনীত করার পর মুয়াবিয়া ৬৮০ খৃস্টাব্দে মৃত্যুমুখে পতিত হন।

ইয়াজিদ তার তিন বছর নয় মাসের অবৈধ শাসনামলে অন্তত: তিনটি মহাপাপ ও অপরাধযজ্ঞের জন্য ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত ও ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে। এই তিনটি মহাপাপের মধ্যে প্রথমটি হল ৬১ হিজরিতে কারবালায় বিশ্বনবী (সা.)এর প্রিয় নাতী হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)ও তাঁর ছয় মাসের শিশুপুত্র হযরত আলী আসগরসহ নবী (দরুদ) বংশের ১৮ জন সদস্যকে নৃশংসভাবে পিপাসার্ত অবস্থায় শহীদ করা। কারবালায় ইমামের আরো প্রায় ৬০ জন সমর্থকও বীরের মত লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন।

ইমাম শিবিরের জন্য কয়েকদিন ধরে পানি সরবরাহ নিষিদ্ধকারী ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হুসাইন (আ.)এর পবিত্র লাশসহ নবী-পরিবারের সদস্যদের লাশের ওপর ঘোড়া ছুটিয়ে লাশগুলো দলিত-মথিত করেছিল এবং তাঁদের মস্তক ছিন্ন করে বর্শার আগায় বিদ্ধ করেছিল। তারা কারবালায় ইমাম শিবিরের তাঁবুগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে লুটপাট চালিয়েছিল। এ ছাড়াও নবী-বংশের নারী ও শিশুদেরকেও টেনে হিঁচড়ে শিকল পরিয়ে বন্দী অবস্থায় কুফার গভর্নরের দরবারে ও দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে নিয়ে গিয়েছিল খোদাদ্রোহী ইয়াজিদ বাহিনী।

ইয়াজিদের দ্বিতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মদীনা শহরে হামলা এবং মসজিদে নববীর অবমাননা ও তিন দিন ধরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে মদীনায় লুট-পাট আর গণহত্যা চালানোসহ গণ-ধর্ষণের অনুমতি দেয়া। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম মাওলানা শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলাভী-র. প্রণীত 'কারবালার পর পবিত্র মক্কা ও মদীনায় ইয়াজিদি তাণ্ডবলীলা'শীর্ষক প্রবন্ধ)

ইয়াজিদের তৃতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মক্কার কাবা ঘরে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয়া। পাষণ্ড ইয়াজিদের বর্বর সেনারা (কারবালার মহাঅপরাধযজ্ঞ সম্পাদনের তিন বছর পর) পবিত্র মক্কা অবরোধ করে। তারা মহান আল্লাহর ঘরে তথা পবিত্র কাবায় জ্বলন্ত ন্যাপথালিনযুক্ত অগ্নি-গোলা নিক্ষেপ করে কাবা ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ফলে মক্কার বিশিষ্ট সাহাবীদের কাছে ইয়াজিদের খোদাদ্রোহী চরিত্রের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়।

ইসলাম গ্রহনের পূর্বে “উহুদের যুদ্ধের দিন হযরত মুয়াবিয়ার বাবা আবূ সূফীয়ানের স্ত্রী হিন্দা, হযরত হামযাহ্‌ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বুক মুবারক চিড়ে কলিজা টুকরো টুকরো করে চিবিয়ে খেয়েছিলো।

উমাইয়া খলিফাগণের দুঃশাসন, কুশাসন ও স্বৈরাচারী কার্যকলাপে সমগ্র মুসলিম জাহান আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তাদের দ্বারা এমন সব জঘন্য কাজ সম্পাদিত হয়েছিল যা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। তাদের নিষ্ঠুর কার্যকলাপ কেবল নাগরিকদের ধন-সম্পদ ও জীবনের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয়নি, নারী জাতির মান-সমমান ও সতীত্বও ধূলায় ধূসরিত হয়ে গিয়েছিল।

মহানবীর আদর্শ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে শুধু ভুলুষ্ঠিতই করা হয়নি; চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.)-এর নামে রীতিমতো জুমার নামাজে প্রকাশ্য মিম্বরে দাঁড়িয়ে অভিশাপ বর্ষণ করা হতো। খিলাফতের স্থান দখল করেছিল রাজতন্ত্র। অত্যাচারের মূর্ত প্রতীক, যুগের অভিশাপ ও কলঙ্ক ইয়াযিদ ইবনে যিয়াদ ও হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নিষ্ঠুর তরবারির আঘাতে সামান্য কথার জন্য হাজার হাজার মুসলমানের মস্তক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। লৌহদণ্ডের প্রতাপে উমাইয়া বংশীয় খলিফাগণ এমন সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল যেখানে কোনো প্রতিবাদ তো দূরের কথা কোনো প্রকার সংশোধনের কথা মুখে উচ্চারণ করাই ছিল নিজের মৃত্যু ডেকে আনা।

উমাইয়া খিলাফতকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে আল-আন্দালুসে উমাইয়া খিলাফত উৎখাত করা যায়নি। আব্বাসীয় খিলাফত নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরদের কর্তৃক ৭৫০ সালে কুফায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭৬২ সালে বাগদাদে রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয়।

১৩১ হিজরিতে উমাইয়া শাসনের অবসান ঘটলে আব্বাসীয় খিলাফতের সূচনা হয়। আব্বাসীয়গণ ইতিপূর্বে আহলে বাইয়াতদের পক্ষে আন্দোলন করলেও, ক্ষমতা লাভের পর আহলে বাইয়াতদের প্রতি খড়গহস্ত হয়ে ওঠেন এবং ধর্মীয় নেতাদের প্রতি নিষ্ঠুর ও অমানবিক নির্যাতন চালাতে শুরু করেন। আব্বাসীয়গণ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী উমাইয়া বংশীয়দের প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এমন কি উমাইয়া খলিফাদের কবর খুঁড়ে তাঁদের অস্থি পাঁজর তুলে এনে জ্বালিয়ে ফেলেছিল। আব্বাসীয় বংশীয় খলিফা মনসুর সিংহাসনে বসে আহলে বাইয়াত ও আলেম সমাজের প্রতি অত্যাচারের স্টিম রোলার চালান।

হযরত মোহাম্মদের মক্কা বিজয়ের এক শতকের মধ্যেই, খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে দিগ্বিজয়ী মুসলিম অশ্বারোহী বাহিনী দক্ষিন দিকে উত্তর আফ্রিকা, পশ্চিম দিকে আটলান্টিক উপকুলে ফ্রান্সের পিরেনিস পর্বতমালা , উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর আর পূর্বদিকে ভারতের সিন্দু নদ পরযন্ত পদানত করে । এই অর্জন একজন মুসলিম হিসেবে যে কাউকে গর্বিত করতে পারলেও একজন মুক্তিকামী সাধারন মানুষ হিসেবে আমাকে ভাবিয়ে তুলে । আব্বাসীয় বা উমাইয়া বা হাশেমি গোত্রযুদ্ধ মুলত ইসলাম বনাম ইসলাম, মুসলিম বনাম মুসলিম, কাক বনাম কাকের লড়াই, যারা নিজেদের মাংশ নিজেরা ছিড়ে খেয়েছিলো । কোরাইশদের দখলে থাকা দেবদেবীর মূর্তির প্রাচীন যাদুঘর কাবার বখরা আয়ের ভাগবাটোয়ারা করতিত্ব নিয়ে সংঘাত, যেটা শুরু হয়েছিলো মুহাম্মদের জন্মের আগে থেকেই ।

এই দিগ্বিজয়ের মুলে ছিলো, ক্ষমতা-দখল, যুদ্ধলদ্ধ গনিমতের ভাগবাটোয়ারা, হজ্ব মৌসুমের অর্থ ভাগাভাগি, বহুবিবাহের সুযোগপ্রাপ্তি আর এই কায়েমী স্বার্থ হাসিলে এই এক শতকেই বিশ্ব দেখেছে তরবারির ভয়ংকর ঝনঝনানি, অশ্বের হ্রেষাধ্বনি, রক্তপাত আর লক্ষ লক্ষ জীবনহানি, এক হাতে কোরান আর অন্য হাতে উদ্যত তরবারি তলে মানবতার কাঁতর প্রান । আমি এই খেলাফত বা আগ্রাসনে ঈশ্বরের প্রেরনা বা তার প্রেরিতকে খুঁজে পাইনি, ধর্মের নামে যুদ্ধবাজ আরবদের মধ্যযুগীয় বর্বর ইতর রাজনীতির অপর নাম ইসলাম, যাকে মুসলিমরা শান্তির ধর্ম নামে বিশ্বজুরে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যে-ই বিভ্রান্ত শান্তির অন্তরালে নারকীয় গনহত্যার ইতিহাস চাপা পড়ে আছে গত ১৪০০ বছর ধরেই ।

উল্লেখ্য যে, হযরত উসমান, হযরত আলী, হযরত মুয়াবিয়া, হাসান,হোসাইন জীবদ্দশায়ই বেহেস্তপ্রাপ্তির সুসংবাদ পেয়েছিলেন, কিন্তু বিভ্রান্ত শান্তির ছায়াতলে হয়তো আস্থা ধরে রাখতে পারেন নাই।

(বিঃ দ্রুঃ- তথ্যসুত্র উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন ব্লগ, মোহাম্মদিয়া বা আহমদিয়াসহ বিভিন্ন ইসলামী প্রকাশনা থেকে নেয়া )
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×