somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে এক মুরগা আমার সকালের আরামের ঘুম বাচায় দেল

০১ লা অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম থেইকা উইঠাই মেজাজ খানা খারাপ হয়া গেসিল। বান্দা আগেই আইসা পরসে। হালার এত তেল কুই থেকে যে পায়। আবার মজাক কইরা জিগায় - 'ভাইজান সইলটা ভালা!!'। একটা ভেংচি মাইরা দাত মাজতে গেসিলাম গা।

মেস-এ থাকি গত এক বছর। মেস এর নিয়মে প্রতি সপ্তায় একবার কইরা বাজার করা লাগবো। প্রথম প্রথম কিসু বাজার করসি, কিন্তু জিনিসের দাম আর মান নিয়া আমার যে জ্ঞান, অচিরেই অন্য মেম্বারদের গালাগালি খাইয়া অস্থির। কেমনে কেমনে জানি আমারে আর কেউ বাজার করতে কয় নাই আর। আমিও আগ বাড়ায়া কিছু কই নাই।

গত মাসে নতুন মেম্বার আইছে। বয়সে বড় তাই সবে তারে বস মানে। আমার আরাম হালার সহ্য হইলো না। অন্যের আরাম দেখলে নাকি ওর গা জ্বলে। গেল হপ্তায় রাতের খাওয়ার পর কথা নাই বার্তা নাই ধাম কইরা কয় আমারেও বাজার করন লাগবো। হালা কান চুলকাইতে চুলকাইতে যেমনে কইল মনে হইল ঘুরাই একটা থাবড়া লাগাই। হালা আমার লেন্জা ধইরা টান দিবি ভালা কথা... কান চুলকাইবি কেন!!

আমার ভালা বন্ধুরা কইলো আমারে দিয়া বাজার করানির চেয়ে বান্দর দিয়া করানি ভাল। আমিও মাথা নাড়াইলাম। কথা সত্য। আমি মাছের বাজারে গেলে দম বন্ধ কইরা থাকি। গন্ধটা আমি সহ্যই করতে পারি না। একদমে যা কিনা যাই ওইটাই কিনি। লাস্টেরবার যখন বাজার করসি, কিনসিলাম হেব্বি একখান ইলিস। ব্যাগ খুইলা পরে বাইর হইসে ইন্ডিয়ান রুই (সত্য ঘটনা)। এইবার কন দেহি, আমারে দিয়া বাজার করানি কি ঠিক?

যাই হোক, হেতে মানবো না। হেতে আমারে দিয়া বাজার করাবই। দরকারে আমারে আগে বাজার করা শিখাইবো। এর লাইগা সেইদিন সাত সকালে বইসা রইসে। আমারে নিয়া বাজারে যাইবো।নাস্তা করবার টাইম দিল না। কয় বাজার থেইকা আইসা খাইতে। কি আর করা, গালি দেতে দেতে বাজারের ব্যাগ খানা হাতে নিলাম।

বাজার মানে কাঁচা বাজার। কাঁচা বাজার মানে পুরাই কাঁচা বাজার। মফস্বলের কাঁচা বাজার কিন্তু গ্রামের বাজার থেকেও খারাপ অবস্থা। শীতকালেও কাদা হইয়া থাকে। বুঝি না। শুরুতেই হালা এক কুমড়া লইয়া লদকা লদকি শুরু করসে। কুমড়ালা কয় ৭০ ট্যাকা, বসে কয় ৬০ ট্যাকা। আমি চিন্তা করি হালার ১০ ট্যাকা লইয়া এত চিল্লানির কি আসে!! আমি কইতেই বসে কয় চুপচাপ দেখ, বহুত শিখতে পারবি। যাউকগা শেষে ১০ ট্যাকার চিল্লাচিল্লি কইরা ৬৫ ট্যাকা দিয়া কুমড়া নিল। আমারে কয় ভাইডি কিরুম কুমড়া কিনলাম দেখসো... আমি কইলাম দেখসি। কয় এইবার তুই কিন। আমি একটু সামনে আরেকটা কুমড়ালারে জিগাইলাম কত। বসে দিল গালি, আবার কুমড়া কিনস কেন! একটাতো কিনসি। কুমড়াওলা তখন বুমা ফুটাইলো, কয় স্যার নিয়া যান, ভালা কুমড়া, ৬০ ট্যাকা পিস। আমি কিছু কইলাম না আর। যাওকগা, আমারে সবজি সব কিনা শেষে যা বুঝলাম সেইটা হইল, দাম ব্যাপার না, কিন্তু যা কইব তার থেকে ১০ ট্যাকা কমাইতে হইব।

সবজির দোকান ছাইরা বসে এইবার মুরগীর দুকানে ঢুকলো। মুরগী ঠ্যাং ধইরা উল্টাইয়া পেটের উপর দুইখান চাপ মারে। মুরগী কক কক কইরা উঠে আর ওই মিয়া মাথা নাড়ে। আমারে কয়, বুঝলা ভাইডি, সব মুরগীরে ভুসি খাওয়াইয়া ওজন বাড়ায় রাখসে। নেও, চাপ দিয়া দেখ। আমি হাতে নিয়া চাপ দিতেই অবলা মুরগী এমন ঝাপটা দিল যে আমি মা বাপরে স্বরণ কইরা উহারে ঢিল মারিয়া বাজারের মইধ্যে ছাইড়া দিলাম। এরপর শুরু হইল মজা। মুরগীর মালিক আর বসে দিল মুরগীর পিছে দৌড়। আরো কিসু জনদরদী তাদের সাথে যোগদান করিল। সুটো মুরগী এই ফাক সেই ফাক দিয়া দৌড়ায়, আর বেটাগুলা এর ডিমের ডালি আর ওর আলুর বস্তা উল্টায় ফেলায়। আমি বেকুবের মত দাড়ায় থাকি। ঘুরিতে ঘুরিতে মোরগা আবার আমার দিকে আসলো। সবাই কয় ধর ধর... মোরগা দিল লাফ... আমি দিলাম ঝাপ। আর যায় কই, পিসলা খাইয়া মুরগীর পুরা বস্তা লইয়া পড়লাম। সব মোরগা ছুইট্টা গেল। বেশির ভাগ মোরগা মদন গোত্রের। পইরা খালি এইদিক ওইদিক চায়। দুই চাইরটা দিল দৌড়। লংকা না গিয়া লংকাকান্ড দেইখা ফেল্লাম।

এখন আমি আর বাজারে যাই না। বসেও আর কিসু কয় না।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×