somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাভলী - বিভৎস যৌনতার শিকার এক হতভাগিনী কিশোরী

০১ লা অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিকৃত যৌনতার বিশেষ স্বাদ আছে , সেই স্বাদ পেতে বিকৃত মানুষেরা বেছে নেয় বিচিত্র রকম পথ। সেই পথে হাটতে গিয়ে মাড়িয়ে যায় হাজার তাজা ফুল, পেছনে পড়ে থাকে স্বজন হারানোদের বুকফাটা আহাজারী। অকালে ঝরে যাওয়ার পথে এমনই এক ফুল লাভলী যার উপর দিয়ে বয়ে গেছে নানামুখী অত্যাচার । বলছি -একই সাথে বেশ কয়েকটি জটিল সামাজিক সমিকরণ মোকাবেলা করা সেই অদ্ভুদ কাহিনী।
লাভলীর বাবা গ্রামের বাজারে পিঁয়াজু, চানাচুর, বাদাম বিক্রি করেন। বাদামের দোকান এবং দোকানের মালিকের বর্ণনা দেবার আগেই নিশ্চয় কল্পনায় ভেসে উঠেছে ছেঁড়া কাপড় পরা জীর্ণদেহি এক সহজ সরল মানুষের ছবি। লাভলীর বাবা তাই-ই। নিজের বাড়িতে থাকার জায়গা নেই, তাই আট-নয় বছর বয়সী লাভলীর থাকার ব্যবস্থা করেছেন পাশের বাড়িতে । গৃহপতি সম্পর্কে লাভলীর বড়আব্বা। সুতরাং নিশ্চিন্তেই ছিলেন মেয়ের বাবা। কিন্ত এই নিশ্চয়তার বেড়াজালে যে লুকিয়ে ছিল অশান্তির কালো বাঘ তা তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি।
পরের ঘটনা সংক্ষেপ এরকম-
শিশু লাভলীর উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে যৌনদস্যু গৃহপতি আবুল হোসেনের, সম্পর্কে ভাতিজি হলেও নিজের কামনা ধরে রাখতে পারেননি। প্রথম দিকে নানা প্রসাধনি সামগ্রি কিনে দিয়ে শিশুর সরল হৃদয়কে কব্জা করে ফেলেন তিনি। এরপর শুরু হয় অবুঝ শিশুর সাথে আদিম লীলা। সুন্দর চেহারার লাভলী পশুভারে মলিন হয় ,দিনে দিনে হতে থাকে হাড্ডিসার।
ঘটনা এখানেই থেমে নেই। আবুলের আপন ভাগিনা সুমন(ছদ্মনাম) অনেকবার চেষ্টা করেও যখন লাভলীর কাছ থেকে বারবার প্রত্যাখাত হতে থাকে তখন তার মাথায় চাঁড়া দিয়ে ওঠে পেছনের রহস্য উদ্ঘাটনের। সুমন সফলও হয়ে যায় অচিরেই,আপত্তিজনক অবস্থায় দেখতে পার লাভলী আর আবুলকে । নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা সুমন, যে মামাকে এত শ্রদ্ধা ভক্তি করত সে, সেই মামাই এতখানি পিশাচ হতে পারে ? মামার প্রতি প্রবল অশ্রদ্ধা আর প্রত্যাখাত হওয়ার বেদনায় রাগে ক্ষোভে সে লাভলীর মা বাবাকে বলে দেয়সব ঘটনা । ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু না, নির্মমতার বাঁকি আছে আরো অনেক।
সবকিছু জেনেও দরিদ্র পিতার সামর্থ্য হয়নি এই অন্যায় বন্ধ করতে।দিনের পর দিন নিজের মেয়েকে ধর্ষিতা হতে দেখেও মানসন্মানের ভয়ে প্রভাবশালী আবুলের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করার সাহস পাননি তিনি। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলতে থাকেন লাভলীর মা। কালক্রমে ঘটনা জেনে যায় আবুলের স্ত্রী রহিমা। সে আরো একধাপ এগিয়ে। বদমেজাজী এবং সাংঘাতিক কুটিল হৃদয়ের রহিমা শুরু করে স্ত্রীবুদ্ধির চাল। প্রথমে লাভলীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর স্বামীর সাথে শুরু হয় রহিমার অশান্তি। কিন্তু জজকোর্টের উকিলের মুহুরী চতুর আবুল এক নতুন চাল চালেন। তার অর্জিত সব টাকা এবং জমিজমা নিজের নামে লিখে দেওয়ার চুক্তিতে আবুলের কর্মকান্ডে মৌন সন্মতি জ্ঞাপন করেন রহিমা । সম্পদ পেয়েও তৃপ্ত হতে পারেননি রহিমা, নিজের স্বামী অন্যের কাছে যাবে তা মানা যায় না। শান্তিচুক্তি অনুযায়ী স্বামীকে কিছু বলতে না পারলেও,পাশাপাশি বাড়িতে থাকায় লাভলীর উপর দিনে রাতে চলে মানসিক নির্যাতন।উপরন্তু রহিমা আঁটলেন নতুন এক ফন্দি। নিয়ে আসলেন লাভলীর বিয়ের ঘর। লাভলীর মা-বাবাও খুঁজছিলেন মুক্তির পথ।রাতের আঁধারে তড়িঘড়ি করে অপ্রাপ্তবয়স্ক ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া লাভলীকে বিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করে দেওয়া হয়।
কিন্তু বিধি বাম, স্বামীর বাড়িতে গেলেও আবুলের প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি সে। এ জন্য সেখানেও পড়ে এক প্রতিকূল পরিবেশের। বয়সন্ধিকালের খামখেয়ালিপনা মেনে নেবার মত পরিস্থিতিও নেই অশিক্ষিত শ্বশুর-শ্বাশুড়ির। ভরদুপুরে তেঁতুল কুড়াতে যাওয়া কিংবা সমবয়সীদের সাথে হেসে কথা বলার মত অপরাধে সেখানেও চলতে থাকে শারিরীক এবং মানসিক শাস্তি। স্বামী তার রূপমুগ্ধ কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে অক্ষম, এ যেন নতুন হৈমন্তির কেচ্ছা। অভিমান করে লাভলী বাপের বাড়ি আসে,কিন্তু সুখ নেই ,আছে রহিমার রক্ত চক্ষু আর আবুলের কামনার আগুন।সকাল সন্ধ্যা শোনা যায় রহিমার ভর্ৎসনা আর সংসারের মারপ্যাঁচ অজ্ঞ লাভলীর কান্না।
স্বামী শ্বশুরও বসে থাকেনা। পুত্রবধুকে নেবার জন্য আসেন তাঁরা, কিন্তু আবুলের ফাঁদে আটকা লাভলী আর সে দোজখে যেতে চায় না। শুরু হয় গ্রাম্য শালিস , সে শালিসের প্রধান বিচারক হয় স্বয়ং আবুল। বিচিত্র সে বিচার-সব দোষ হয় লাভলীর। সে কাউকেই কিছু বোঝাতে পারেনা , ছোট্ট সে শরীর মনে বিশাল জোঁয়াল টানার কত বড় ক্ষত লুকিয়ে আছে!
লাভলী এখন সারাক্ষণ বিড়বিড় করে সবাইকে অভশাপ দেয়।সবাই সে অভিশাপের জবাব দেয় পাগলী কিংবা জ্বীনে ধরা বলে টিটকারীর মাধ্যমে। একসময় লাভলী সত্যিসত্যিই আংশিক মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।শুরু হয় কবিরাজি চিকিৎসা। একদিন দেখা গেল বেত দিয়ে পিটিয়ে লাভলীর পা ফুলে তুলেছেন কবিরাজ।
ট্রাজেডির শেষ ধাপ মৃত্যুকে অতিক্রম করেনি লাভলী, সুতরাং পত্রপত্রিকার সাংবাদিকের কাছে সেটা মামুলী ব্যাপার, কেউ সেটার খোঁজ রাখেনি। হয়তো লাভলী একদিন আত্নহত্যা করবে, কিংবা এভাবেই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়েই বাঁকি জীবন কাটাবে।
এখন মা-বাবাকে দেখেও তেড়ে মারতে যায় সে, আবুল হোসেন নিজের সোনাতে হাত বোলায় আর আহ উহ করে প্রেমিকার নধর দেহ বঞ্চিতের কথা জানান দেয়, আর রহিমা! মিশন সফলের অট্ট হাসিতে মাঝে মাঝে সে ফেটে পড়ে, কয়লা কালো সে চেহারা দিনে দিনে হয়ে ওঠে নূরানী।
লাভলী আমাকে খুব সন্মান করে, একদিন আমাকে বলল, “ভাই, সবাই মোক পাগলী কয়,তুই জান কসনা, মুই আসলে পাগলী নয়” এরপরে কথা শেষ হবার আগেই লাভলীর মা এসে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় তাকে।
আর কি কথা যে সে বলতে চায় জানা যায় না। সে অব্যক্ত কথা কানে কানে বলে যায় হৈমন্তি, বিলাসীরা, সে কথা প্রতিধ্বনি হয়ে ফেরে চতুর্দিকে “দুনিয়ার তামাম আবুলদের থামাও…থামাও......আমাদের বাঁচাও” । সে ডাকে আমার রক্ত গরম হয় কিন্তু আবুলদের সামনে গেলে আবার সেই রক্তই হয়ে যায় ভয়ে হিমশীতল। কারন আমি যে সমাজের আর আট-দশজনের মতই নপুংশক।
এফ এইচ রিগ্যান
১/১০/১১


১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×