somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়ছে তালাক ভাঙছে ঘর

০১ লা অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজধানীতে পারিবারিক জীবনে সংসার ভাঙার ঘটনা অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে। এর বেশিরভাগই হচ্ছে মেয়েদের পক্ষ থেকে। স্ত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বামীকে তালাক দিচ্ছেন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) হিসাব অনুযায়ী মোট তালাকের ৭৫ ভাগই দিচ্ছেন নারীরা। বছরে নগরীতে পাঁচ হাজারের বেশি বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটনা ঘটছে। দিন দিন এর মাত্রা বাড়ছে বলে ডিসিসির তথ্যে জানা গেছে। সমাজ বিজ্ঞানী অধ্যাপক মেহতাব খানম বলেন, দুটি কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে। প্রথমত, মেয়েরা আগের চেয়ে বেশি শিক্ষিত হচ্ছে। তারা এখন অনেক সচেতন। মুখ বুজে নির্যাতন সহ্য না করে ডিভোর্সের পথ বেছে নিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, মোবাইল কোম্পানিগুলোর নানা অফার, ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, ফেসবুক এবং পর্নোগ্রাফির মতো সহজলভ্য উপাদান থেকে আকৃষ্ট হয়ে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা হারাচ্ছেন। ফলে বিয়ের মতো সুদৃঢ় সম্পর্ক এবং নৈতিক বিষয়টি ছিন্ন করতে একটুও দ্বিধা করছেন না তারা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিয়ে বিচ্ছেদের বেশির ভাগ ঘটনা ঘটছে উচ্চবিত্তদের ক্ষেত্রে। পরকীয়া, পরনারী আসক্তি, যৌতুক ও শারীরিক নির্যাতন, মাদকাসক্তসহ নানা বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা বাড়ছে। ডিসিসির সালিশি কার্যক্রম ফলপ্রসূ না হওয়াকেও কারণ হিসেবে মনে করছেন অনেকে। নোটিসের তিন মাসের মধ্যে উভয়পক্ষকে উপস্থিত করে মীমাংসার চেষ্টা করার নিয়ম থাকলেও তা হচ্ছে না। নামমাত্র চিঠি দিয়েই তিন মাস পরে তালাক কার্যকর করেন। ডিসিসির ১০টি অঞ্চলের হিসাব মতে, ২০০৫ সালের বিয়ে বিচ্ছেদের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৫২৫টি, ২০০৬ সালে তা বেড়ে ৬ হাজার ১২০টি, ২০০৭ সালে এ সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ২০০, ২০০৮ সালে এর পরিমাণ কিছুটা কমে আসে, এ বছরে বিয়ে বিচ্ছেদের সংখ্যা ৭ হাজার ৭৮টি, ২০০৯ সালে তা আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৭০৪টি, ২০১০ সালে এর সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৯০৫টিতে। ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত আবেদন জমা পড়েছে ৫ হাজার ৫৫৫টি। এ বিষয়ে মনস্তত্ত্ববিদ, সমাজ বিশ্লেষক, গবেষক, নারী নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের এটা নিয়ে রয়েছে বিচিত্র বিশ্লেষণ। তবে সবাই বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জানতে চাইলে ডিসিসির আইন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম বলেন, বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা প্রতি বছরই বাড়ছে। পুরুষের চেয়ে মেয়েরাই বেশি তালাক দিচ্ছেন। মেয়েদের পক্ষ থেকে ৭৫ ভাগ বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কেস স্টাডি-১

তানজিনা শবনম (৪৫)। বাসা গুলশান মডেল টাউন। মিডিয়া কর্মী। স্বামী ব্যবসায়ী। ১ ছেলে ও ১ মেয়ের মা। দেবর ডা. মনজুর হোসেনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। ২০০৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে ডা. মনজুরকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছু দিন পর মনজুরের স্ত্রী ঘটনাটি জেনে তীব্র প্রতিবাদ করেন। এ কারণে মনজুর আগের স্ত্রীকে তালাক দেন। একমাত্র মেয়ে মিতুল লন্ডনে এমবিবিএস পড়ছিল। বাবার এ কাজে হতাশাগ্রস্ত হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে ঢাকায় ফিরে আসেন। মায়ের সঙ্গে এখন সে গুলশানে বসবাস করছেন। ডিসিসির (গুলশান) অঞ্চল-৯ এ দুটো তালাক কার্যকর করেছেন।

কেস স্টাডি-২

তাজুল ইসলাম। উত্তরা মডেল টাউনের ১১ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা। বনিবনা না হওয়ার কারণ দেখিয়ে স্ত্রী তাহেরা বানুকে তালাক দেন। ২০০৮ সালের ৭ নভেম্বর এ আবেদন ডিসিসি মেয়রের দফতরে জমা হয়। স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য না হওয়ায় স্ত্রী বাবার বাড়ি মুন্সীগঞ্জে অবস্থান করছিল। তালাকের আবেদনে স্বামী-স্ত্রীর ঠিকানা ভুল দেওয়ায় ৯০ দিনে ৩টি নোটিস করে জবাব না পাওয়ায় ডিসিসি এ তালাক কার্যকর করে। এরপর ঘটনাটি স্ত্রী পক্ষ জেনে অনেক ছোটাছুটি করলেও কিছুই হয়নি। জানা যায়, আরেকটি বিয়ে করতে তাজুল এ ঘটনা ঘটান। ডিসিসির অঞ্চল-৯ এর নির্বাহী কর্মকর্তা রওনক মাহমুদ বলেন, সামাজিক অস্থিরতা, মাদকাসক্তের প্রভাব, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, পরস্পরকে ছাড় না দেওয়া ও শ্বশুর-শাশুড়ির কারণে ঘর ভাঙে। এ ছাড়াও ন্যায়বিচার পাওয়ার অনিশ্চয়তায় নারীরা বিবাহ বিচ্ছেদ করে বলে জানান তিনি। অভিযোগ রয়েছে, ডিসিসির সালিশি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে নামমাত্র। শুধু তালাকের সার্টিফিকেট ছাড়া আর কোনো কার্যক্রম নেই তাদের। দু'পক্ষকে ডেকে পারস্পরিক সমঝোতার কার্যক্রম একেবারেই হচ্ছে না। অঞ্চল-৪, ৬ ও ৭ এ কার্যক্রম নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। সালিশি কার্যক্রমের কোনো রেকর্ডই নেই। প্রতিমাসে মেয়রের কাছে প্রতিবেদন পাঠানোর নিয়ম থাকলেও তা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে মেয়রের ভূমিকাও নির্বিকার। ২০০৫ সাল থেকে অঞ্চল-৪ কোনো প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে না, ফলে আবেদন করলেই তালাক কার্যকর হয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসিসির মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পারিবারিক বন্ধন অটুট ও সালিশি কার্যক্রম ফলপ্রসূ করতে ১০ অঞ্চলে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। অঞ্চলগুলোর এ ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয়ের অভাবের ব্যাপারে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে কোনো সমস্যা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
বাংলাদেশ প্রতিদিন থেকে নেয়া।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টুইস্টেড মাইন্ড অফ আ সিরিয়াল কিলারঃ কবি কালিদাস স্পেশাল

লিখেছেন এইচ তালুকদার, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আমার আগ্রহ শুরু হয় এই ব্লগেরই একজন অসাধারন ব্লগার ''ডক্টর এক্স'' এর লেখা পড়তে যেয়ে। বাংলা ভাষায় সাইকোলজির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেলফ হেল্প ধরনের অসাধারন কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিলিস্তিনে কী শান্তি সম্ভব!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:২১

এক.
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আলজাজিরা দেখি৷ গাজার যুদ্ধ দেখি৷ রক্ত দেখি৷ লাল লাল৷ ছোপ ছোপ৷ সদ্য জন্মানো শিশুর৷ নারীর৷ কিশোর কিশোরীর৷ বৃদ্ধের৷ সারি সারি লাশ৷ সাদা কাফনে মোড়ানো৷ ভবনে চাপা পড়া৷... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রাকৃতিক দূর্যোগে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫

আমার জীবনে আমি সরাসরি প্রাকৃতিক দূর্যোগের ভেতরে পড়েছি বলে আমার মনে পড়ে না । ২০১৯ সালের ঘটনা। ঘূর্ণিঝড়ের নাম সেবার ছিল সম্ভবত বুলবুল ! সেটা যখন আসছিল তখন আমি ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

উপকূলের ভাই-বোনদের প্রতি গভীর সমবেদনা

লিখেছেন বিষাদ সময়, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৭




আমরা ঢাকার পাকা দালানে বসে যখন আয়েস করে চায়ে চুমুক দিয়ে বৃষ্টি বিলাসে বিভোর, ঠিক সেই সময় আমাদের উপকূেলের ভাই-বোনেরা হয়তো কেউ স্বজন, কেউ ঘর, কেউ ফসল, কেউবা গবাদী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: অশ্লীলতা কি পোশাক দিয়ে নির্ধারণ করা উচিৎ নাকি মানসিকতা ও চরিত্র দিয়ে?

লিখেছেন লেখার খাতা, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫২


ছবিটি -ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

কহিনুরের, ফ্লোরা ওরিয়েন্টাল বিউটি সোপ।১৯৭৮ সালের বিজ্ঞাপন। ছবিটি ফেসবুকে পেয়েছি। ব্লগার সোনাগাজী, ব্লগার কামাল ১৮ সহ যারা মুরুব্বি ব্লগার রয়েছেন তারা হয়তো এই বিজ্ঞাপনটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×