somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহিত্যে তিস্তা-ট্রানজিট সিনড্রম

০১ লা অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শারদীয় ‘দেশ’ এখন বাজারে। ঈদ সংখ্যার বাজার থিতু হয়েছে বেশি দিন হয়নি। আমাদের সব জাতীয় দৈনিক এখন ঈদ সংখ্যা প্রসব করে। সেই তুলনায় ‘শারদীয়’ সংখ্যা খুব বেশি চোখে পড়ে না। দেশ, আনন্দবাজার, আজকাল। আরো দু’একটা নাম যোগ হতে পারে, কিন্তু ঈদ সংখ্যার তুলনায় বেশি হবে না।

সংখ্যা নয়, প্রশ্নটা মান নিয়ে। লেখার মান এবং ‘মান’-সম্মানবোধ- দুই’ই।

লেখার মান নিয়ে সব কূল বাঁচিয়ে একটা মন্তব্য করা সহজ। দুই বাংলাতেই মানসম্পন্ন লেখা রয়েছে। ঈদ সংখ্যা, শারদীয় সংখ্যা- সবখানেই ভাল লেখা আছে। দুর্বল লেখাও আছে। কথাটাতে সত্য আছে, লুকোছাপাও আছে। কিন্তু লুকোছাপা নয়, আরেকটু গভীর আত্মবিশ্লেষণের জন্যই এ লেখা।

আমাদের ঈদ সংখ্যাগুলোর মধ্যে ‘কাটতি’ বাড়ানোর প্রবণতা প্রকট। প্রবণতাটা দোষের নয়। দোষ হলো কাটতির প্রেমে গুণগণ মানকে কোরবানি করা। ‘জনপ্রিয়’ লেখকদের ‘কিছু একটা’ না থাকলে আমাদের সম্পাদক প্রকাশকরা স্বস্তি পান না। প্রত্যেক ‘জনপ্রিয়’কেই ঈদ মরসুমে কম করে হলেও হাফ ডজন লেখা প্রসব করতে হয়। পাঠক হিসেবে ক্লাসিফিকেশন করলে একজন লেখকের একটি বা কালেভদ্রে দুটি লেখাকে বিষয়-আঙ্গিকে পরিশ্রমলব্ধ সাহিত্যকর্ম হিসেবে চেনা যায়। বাকিগুলো লেখকদের অভিজ্ঞ কলমে চড়ে পার পেতে চায়, কিন্তু গা থেকে শেষমেষ ‘অনুরোধের’ ঘ্রাণটা যায় না। সচেতন পাঠক সেটা ভালমতোই ধরতে পারেন। সম্পাদকদের জন্য দুঃসংবাদ এই সচেতনদের সংখ্যা বাড়ছে।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত শারদীয়দেরকেও কি এই কাতারে ফেলবো? আমি এত স্বাচ্ছন্দ্যে ফেলতে পারছি না। সম্পাদকীয় অনুরোধে ওপার বাংলার লেখকদেরকেও ঢেকি গিলতে হয়, সত্যি। কিন্তু আটপৌড়ে ছাপ নিয়ে লেখাগুলো ঠিক তলিয়ে যাচ্ছে না। ওখানে ওলাওঠার মতো পেটমোটা শারদীয় সংখ্যায় ফুটপাত ঢাকছে না- এটা একটা কারণ হতে পারে। লেখকদেরকেও হয়তো গোটা তিনেকের বেশি চাপ নিতে হচ্ছে না। কলকাতার বাংলা সড়কগুলোতে হেঁটে চলে দেখতে পারছি না বলেই শুধুমাত্র ঢাকায় দৃশ্যমান শারদীয়দের বিবেচনায় নিয়ে এই ‘হতে পারে’র উপর দিয়ে বিষয়টা ছাড়তে হচ্ছে।

ব্যতিক্রম আছে। কোন ‘বিশেষ’ সংখ্যাকে বিবেচনায় না নিয়ে নিজের মতো করে লিখছেন, রীতিমতো গবেষণা করছেন- এমন লেখকও আছেন। তাদের লেখাও একাধিক হয়, কিন্তু ত্রয়োধিক খুব একটা হয় না। এই প্রজাতি আমাদের কম।

‘জাতে ওঠা’র আরেকটি প্রবণতা বছর কয় হলো দৃশ্যমান হয়েছে। ওপার বাংলার দু-একটি গল্প উপন্যাস না থাকলে আমাদের ঈদ সংখ্যাগুলো হীনমন্যতায় ভুগে। এই রোগের ভাল নাম উদারতা। আমরা অন্যদের ধারণ করছি। বিনিময় বাড়ছে। প্রবন্ধের বক্তব্য হিসেবে কথাগুলো বেশ ভালোই। কিন্তু বাস্তবে সেটা দেখা যাচ্ছে না। ওপার বাংলায় শারদীয়দের উদারতা-ফ্লু নেই। বিনিময়ও অতএব অনুপস্থিত। শুধুমাত্র দিতেই তারা সিদ্ধহস্ত। নিতে নয়। সবখানেই তিস্তা-ট্রানজিট সমীকরণ।

ওপার বাংলার এই সিম্পটমের একটা অর্থনৈতিক কারণ অবশ্য আমরা গত এক দশকে আত্মস্থ করেছি। এখন কলকাতায় জন্মনেয়া একাধিক কাগজের বাংলাদেশ সংস্করণ আছে। অনেক লেখকের বই যুগপৎ দুই বাংলার স্থানীয় মুদ্রনযন্ত্র থেকে অবমুক্ত হচ্ছে। বস্তুত ইংরেজি আর হিন্দির দ্বিমুখী চাপে বাংলা পান্ডুলিপিগুলি কলকাতার সীমিত কিছু চিপাগলিতে আটকা পড়েছে। পড়ছে এখনও। বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিতে অতএব বাংলাদেশে নাক গলিয়ে দিতে হচ্ছে।

বিনিময় ছাড়া শিল্প-সাহিত্যের ক্রমবিকাশ নেই। বিনিময় কখনও থামানোও যাবে না। কিন্তু এর বাণিজ্যিক দিকটি বিবেচনায় নিয়ে ওপার বাংলা যতটা সক্রিয় হয়েছে, আমরা ততটা হইনি। নিজেদের উজানবাসী ভেবে জলটুকু শুধু ভাটিতেই গড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। আমরা মমতাদের জেদে উল্টা জোয়ার জাগাতে পারছি না। নিজেদের উঠোনেই তিস্তা মিছিল করছি কেবল।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×