somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুটেনবার্গের মাইকেল এস. হার্ট: তোমার আত্মা চিরশান্তিতে থাকুক- বাংলা থেকে বলছি- তোমার কীর্তি যে অমর অজর!

০১ লা অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিনে পয়সায় বহু বইকে কয়েক কিলোবাইট-মেগাবাইটে আমাদের দোরগোড়ায় যিনি পৌঁছে দিচ্ছিলেন, প্রোজেক্ট গুটেনবার্গের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল এস. হার্ট চিরবিদায় নিয়েছেন সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখে। এই মানুষটির দেয়া সেবা গ্রহন করেছি অনেক; কিন্তু তার সম্বন্ধে তেমন কিছুই জানি না। ৩৬,০০০ ই-বুক সরাসরি পাওয়া যাবে এখানে বিভিন্ন ফর্মাটে। যেসব বই এর কপিরাইট আর নেই বা যেগুলো পাবলিক ডোমেন এসেছে সেগুলোই পাওয়া যাবে। এ কারণে ১৯২৩ সাল পূর্ব বই বেশী পাওয়া যাবে। আপনি চাইলে কোন ক্লাসিক বাঙলা বইকে সবার কাছে পৌছে দিতে পারেন। এর সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে ১,০০,০০০ এর বেশী বই পাওয়া যায়। গুটেনবার্গে প্রকাশিত শোকপাতাটি অনুবাদ করছি তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর আকুলতায়। অনুবাদে ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন, দয়া করে শুধরে দেবেন। তার প্রতিষ্ঠত সাইটটি হলো: http://www.gutenberg.org

মাইকেল এস. হার্ট (১৯৪৭-২০১১)

মাইকেল এস. হার্ট এর জন্য শোকগাথা

মাইকেল স্টার্ণ হার্ট এর জন্ম ওয়াশিংটনের টাকোমায়। ৮ মার্চ ১৯৪৭। ৬৪ বছর বয়সে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন ইলিনয়েসের আরবানায় তার নিজ বাড়ীতে। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১১। পেছনে রেখে গেছেন মা এবং এক ভাই। মাইকেল একজন ঈগল স্কাউট ছিলেন এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় কোরিয়ায় সেনাবাহিনীতে ছিলেন।

মাইকেল সবচে বেশী পরিচিত হয়েছিলেন ১৯৭১ সালে তার উদ্ভাবিত ইলেকট্রনিক বই বা ইবুক এর জন্য। তিনি প্রোজেক্ট গুটেনবার্গ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি অনলাইন জগতে সবচে প্রাচীন ও সবচে দীর্ঘজীবি প্রকল্পের অন্যতম। কিভাবে ইবুকের চিন্তা তার মাথায় এসেছিল সে গল্প তিনি বহুজনকে শুনিয়েছেন। একসময় ইলিনয়েস বিষ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার শক্তি ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিলেন। সেসময় ৪ জুলাই ১৯৭১ এ আমেরিকার U.S. Declaration of Independence এর একটি ফ্রি ছাপানো কপি পেয়ে তিনি সেটি নিজে টাইপ করে সেই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এ থাকা অন্যান্যদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তখনই শুরু হলো মানুষের কাছে বিনে পয়সায় বই পৌঁছে দেয়া। চলছে ৪০ বছর।

মাইকেল ছিলেন মনেপ্রাণে প্রযুক্তিবাদী ও ভবিষ্যদ্রষ্টা। উনি সবসময় হাতেকলমে সবকিছু শিখতেন- রেডিও, হাই-ফাই স্টেরিও, ভিডিও যন্ত্রপাতি এবং অবশ্যই কস্পিউটার। সবসময় ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন। অনেক প্রযুক্তির ব্যবহার সে প্রযুক্তির জন্মের আগে থেকেই অনুধাবন করতেন। উনি ভাবতেন, একদিন হবে যখন প্রত্যেকে প্রোজেক্ট গুটেনবার্গের সংগ্রহ নিজের কাছে রাখতে পারবে। এটি এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এজন্য ধন্যবাদ দিতে হয় সস্তা ডিস্ক ড্রাইভ আর পোর্টেবল ডিভাইসকে।

মাইকেল সেই বহু আহেই বলেছিলেন, একদিন এমনি এমনি অনুবাদ হবে সব ভাষার সবকিছু। সব ভাষার মানুষ যে কোন ভাষাতেই যে কোন কিছু পড়তে পারবে। এখনো সেই লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাইনি। তবে তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রোজেক্ট গুটেনবার্গ ৬০ ভাষাতে ইবুক প্রকাশ করেছে।

মাইকেল হার্ট তার বাবা-মার প্রভাবে প্রভাবিত ছিলেন। বাবা-মা দুজনেই ইলিনয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তাদের জীবনের লক্ষ্য- সত্যকে খোঁজা এবং অথরিটিকে প্রশ্ন করা। মাইকেল সম্প্রতি বার্নার্ড শ এর উক্তির সংগে নিজ জীবনের মিল খুঁজে পেয়েছিলেন: "Reasonable people adapt themselves to the world. Unreasonable people attempt to adapt the world to themselves. All progress, therefore, depends on unreasonable people."

হ্যাঁ, মাইকেল নিজেকে আনরিজনেবল ভাবতে গর্ব বোধ করতেন। জীবনে বহ সময় বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তবে জীবনের জন্য তেষ্টায় তার কখনোই ভাটা পড়েনি।

মাইকেল হয়ত অন্যরকম মিতব্যয়ী ছিলেন। হয়ত ভুলই করেছেন। জীবনে বহু বন্ধু আর কত কিছু জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু অসুক হলে বাড়ীর দাওয়াই ছাড়া সহজে ডাক্তারের কাছে যেতেন না। নিজেই গাড়ী ঠিক করতেন। বাড়ী সারাতেন। ফেলে দেওয়া কম্পিউটার, স্টেরিও আর কত কিছু কিছু নিয়ে নিজেই আবার সেগুলোকে নতুন করে নিতেন।

পিছনে রেখে গেছেন এক মহাযজ্ঞ। মানুষ বিনে পয়সায় পড়বে বই। বাড়বে পড়ার স্বাক্ষরতা সক্ষমতা। মানুষ পাবে নতনু দিশা নানা বই পড়ে। সৃষ্টি হবে নতনু নতুন সুযোগ। ঘটবে মানবিক উন্নয়ন।

জুলাই ২০১১ এ এসে মাইকেল একটি মন্তব্য করেছিলেন: “ইবুক সম্বন্ধে একটি কথা বলা যায়। পৃথিবীতে ইবুকই প্রথম জিনিস যেটি বাতাস না চাইতেই যেমন প্রতিটি মানুষ পেয়ে থাকে তেমনি ইবুকও যত ইচ্ছা আমরা পেতে পারি এখন। এভাবে একবার ভাবুন, তাহলেই বুঝবেন আমরা সঠিক কাজটিই করছি।”

যারা সব ধরনের পাঠ্য মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে চান, তাদের জন্যই মাইকেল বলেছেন: "Learning is its own reward. Nothing I can say is better than that."

মাইকেল নিজ জীবনের ভোগবিলাস ত্যাগ করে স্বাক্ষরতার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। পাবলিক ডোমেইন রাইটসকে প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করার জন্য নিজেক সঁপে দিয়েছিলেন। এমনই এক বন্ধু আমাদের মাইকেল।

এই শোকগাথাটি পাবলিক ডোমেইনে এসেছে ড. গ্রগরি বি. নিউবির হাত থেকে।

মাইকেল এর পরিবার থেকে পাওয়া বার্তা

নীচে মাইকেল এর পরিবার থেকে পাওয়া বার্তার অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো।

এমন সময়ে আপনাদের দয়ার্দ্র ভাবনার জন্য ধন্যবাদ। মাইকেলকে তার পরিবার মরমে মরমে অনুভব করে যাবে- তার বন্ধুরাও- এবং এই জগত। দয়া করে অর্গল ভেঙে বেরিয়ে আসা চলমান রাখুন।
এলিস, ম্যাগি, লিজ এবং বেনেট

এই শোকগাথার মূল লিংকটি হলো http://www.gutenberg.org/wiki/Michael_S._Hart


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:৫৩
৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×