সারা ইউ,কে জুড়ে বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের লোকজন ছড়িয়ে রয়েছেন। আমার মনে হয় এমন কোন শহর পাওয়া যাবে না যেখানে দু’ একজন বাংলাদেশী নেই, কেউ আছেন রেষ্টুরেন্ট নিয়ে আবার কেউ বা আছেন ব্যবসা নিয়ে। বেশীরভাগই জড়িত রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়। এই ব্যবসাকে ব্যাপক অর্থে রেষ্টুরেন্ট ইন্ডাষ্ট্রিও বলা যায়। কেন না বিপুল পরিমাণ লোকজন এতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এবং এই একটি মাত্র ব্যবসাকে আমরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কিন্তু হালের জমানায় এই ব্যবসাটিও ধীরে ধীরে হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। মনে হয় বৃটেনের অর্থনৈতিক মন্দা ভাবের হাওয়া সামান্য হলেও আঘাত হানছে এবং বাকী হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই অনভিজ্ঞ যোগ্য কর্মীর অভাব, পরিচালনায় অপরিপক্ষতা, সর্বোপরি একে অন্যে তুমুল প্রতিযোগীতা। যেখানে প্রতি বৎসর বাজেট দব্য সামগ্রীর দাম বাড়ছে সেখানে এই ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টগুলোর মেন্যুর দাম হয়তো থমকে আছে নতুবা কমছে। এতে করে আমরা নিজেরা কতটুকু লাভবান হচ্ছি তা আল্লাহ মালুম। কিন্তু খদ্দেররা আরামে পেট পুরে খাচ্ছে, যেহেতু সস্তা অন্যদিকে মজাদার সুতরাং সুযোগ ছাড়া করবে এমন বোকা ইংরেজরা নয়। ওরা সব সময় সুযোগে সদ্ব-ব্যবহার করতে তৎপর। অন্যদিকে ব্যবসায়ী মহল ভুগছে ভেট অথবা ইংল্যান্ড রেভিনিউ নামক যন্ত্রনায়। যার দরুণ অনেকের অবস্থা এখন ’ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি। এ সব কাজে যদিও সাময়ীকভাবে কিছু লাভ দেখতে পাচ্ছি কিন্তু বাস্তবতার আলোকে ক্ষতিই প্রাধান্য পাচ্ছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে ব্যবসা করা আগামী দিনে কতটুকু সম্ভব তা শুধু বিজ্ঞজনরাই বলতে পারবেন। অখচ এই ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করে নতুনত্বে সাজিয়ে তোলা মোটেই কষ্ট সাধ্য নয়। যা ইদানিং কালে অনেকেই ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করছেন। এখানেও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের যথেষ্ট প্রয়োজন। যেখানে ঐক্যবদ্ধতাই সাফল্যের চাবি, সেখানে অনৈক্য আমাদের জন্য মূল অন্তরায়। এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা নিতে পারে বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন। কিন্তু এই এসোসিয়েশন নামে যতটুকু পরিচিত- কাজে কিন্তু শূণ্য। এত বড় একটি প্রতিষ্টান, কিন্তু আজ পর্যন্ত নেই কোন কর্মী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। না আছে মালিকদের কোন কর্মশালার ব্যবস্থা। যে সংগঠনের কর্ম তৎপরতা শুধু সংবর্ধনা ও ডিনার পার্টিতেই সীমাবদ্ধ সেখানে ব্যবসা সম্প্রসারণ এর জন্য কোন আলোচনা, আয়োজন সুদূর পরাহত নয় কি? কথার চমক সৃষ্টি করা যায় অনায়াসে, কাজে ঠিক তার ফল পাওয়া যায় না। নতুবা এত বড় সংগঠন থাকা সত্ত্বেও আজ কর্মী সংকটসহ নানা সমস্যা জর্জরিত ক্যাটারিং ব্যবসা। ঐক্যমতের পরিবর্তে বিভক্তিতে আজ বাজার করতে হয় ইন্ডিয়ান ক্যাশ এন্ড ক্যারিতে। সার্টিফিকেট নিতে হয় অন্যের কাছ থেকে। যদিও মান যাচাই করে বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন ’কমপ্লিমেন্টারী সার্টিফিকেট’ দেওয়ার ক্ষমতা ও যোগ্যতা রাখে।
বাংলাদেশী সম্প্রদায় রন্ধন শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সত্ত্বেও ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট হিসেবে পরিচিত। স্বাধীন সর্বভৌম রাষ্ট্রের পরিচিতির বদলে অন্য দেশের পরিচিতি বহন করছি এ কেমন দেশ প্রেম? সুতরাং অনুরোধ রাখবো বিজ্ঞজনের প্রতি এ ব্যাপারে এগিয়ে এসে সুচিন্তিত মতামতসহ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। যাহাতে বিশ্ব দরবারে নিজ পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি।
রচনাকাল-১৯৯৮
পুরনো লিখা
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:০৯