রাত শেষ হয়েছে। দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে। একমাত্র ছেলেটি ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে মাটির বারান্দার এককোণে মাদুর পেতে বসে আছে। সামনে রাখা আছে নানান রকমের বই। ছেলেটির বাবা লেখাপড়া জানে না। ছেলেটির বাবা এখন জমিতে যাবে চাষের কাজে। নইলে যে খাওয়া জুটবে না। ছেলেটি চীৎকার করে করে একটা বাংলা কবিতা মুখস্থ করছে।সেটা শুনে ছেলেটির বাবার মনে প্রশ্ন জাগে- ছেলেটি কত কষ্ট করে জোরে জোরে চীৎকার করে কি একটা কবিতা পাঠ করছে। এই কবিতা জীবনের কোন্ কাজে লাগবে ? যে সময়টা ছেলে নষ্ট করছে কবিতা পড়ে, তার চেয়ে বাবা ছেলেতে জমিতে কাজ করে সংসারের জন্য কিছু টাকা পয়সা নিয়ে আসা যেতো। বাবার ভাবনা ঠিকই । অন্যের লেখা গল্প , কবিতা পড়ে ছেলেটি এক রাজকীয় বিলাসিতার মধ্যে সময় কাটাচ্ছে। একমাত্র মেয়েটিও সেজেগুজে স্কুলে যাবার জন্য তৈরী।বাবার ভাবনা - কোথায় মেয়েটি বাড়ীতে কাজকর্ম করবে , সেটা না করে স্কুলে চললো আড্ডা দিতে। মেয়েটিও দেখি কি যতসব অন্যের লেখা কবিতা পড়ছে , কত রকমের গল্পের বই পড়ছে। এসব পড়ে মেয়েটি জীবনে কি করবে ? এরই নাম লেখাপড়া। এই লেখাপড়া করে মেয়েটি এম.এ. পাশ করলো। বাবার সমস্যা হলো মেয়ের উপযুক্ত পাত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়েকে যে পরের ঘরে পাঠাতে হবে।লেখাপড়া জানা ছেলে যে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ লেখাপড়া না শেখালে এতদিনে মেয়ের বিয়ে হয়ে যেতো। বাবাকে আর বেশীদিন ভাবতে হয় না।একদিন দেখা গেলো মেয়েকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ খোঁজ। জানা গেলো মেয়ে কলেজে পড়া এক ছেলের সাথে ভালোবাসা করে বিয়ে করেছে।বাবার মনে দুঃখ হলো। পরে একদিন জানা গেলো পণপ্রথার বলি হয়ে মেয়েটি আগুনে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। আর একমাত্র ছেলেটি এম.এ.পাশ করে বাড়ীতে বসে আছে। এই ছেলেটি এখন আর বাবার চাষের কাজে লাগে না। গরিবের ছোঁয়া এখন বাবার জীবনে। আর তার ভাবনা -কি দরকার ছিল লেখাপড়ার। লেখাপড়া না শিখলে ছেলেটি চাষবাস করতে শিখতো আর মেয়েটিকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া যেতো। সবার কথা শুনে চলতে গিয়ে আজ আর তার কিছু নেই। লেখাপড়া সত্যই কি বিলাসিতা নাকি বাবা মায়ের কথা না শুনে চলা ?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৯