somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ময়না সমাচার...

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাহ,এভাবে আর পায়চারী করতে পারব না,পা ব্যাথা হয়ে যায়!কিন্তু ব্যাথা হলেও হাটতে আমার কখনোই ক্লান্তি লাগেনা।তবে এখনকার হাটাটা ভিন্ন,মাথার মধ্যে রাজ্যের চিন্তা ঘুরে বেড়াচ্ছে,আর সেগুলো নিয়ে আমি ছোট্ট এই রুমের মধ্যে হেঁটে চলছি একবার এপাশ তো আর একবার ওপাশ!আর মাথায় যেসব বিশাল চিন্তা ঘুরতেছে তা কারো সাথে শেয়ার করার ও সুযোগ নেই,ময়না পাখী এবার একটা কিনতেই হবে,পাক্কা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছি!
আসলে অনেকদিন আগেই কিনা হতো কিন্তু পাখী সত্যি সত্যি আমার কথা শিখবে কি না বা পোষ মানবে কি না এটা নিয়ে অনেক চিন্তায় ছিলাম,আর সেদিন যখন আম্মুকে বললাম,'আম্মু আমি একটা ময়না পাখী কিনব'আম্মু শুনে এমন একটা রিএক্ট করল যেন খুবই অসম্ভব ব্যাপার!বিড়াল দেখলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করি,এমনকি আমার জানালায় শালিক এসে বসলেও ভয়ে জানালায় দাড়াই না আর সেই আমি পুষবো ময়না!অবশ্য এরকম প্ল্যান আমি আগেও করেছি এমনকি একদিন বায়োলজি প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসে স্যার আমার তেলাপোকা ভীতি দেখে বলেছিলেন,''তোমার মেডিকেল পড়া হবেনা''সেই কথা শুনে আমার সেকি রাগ!এত্তবড় কথা,বাসায় এসে বুয়াকে বললাম,''খালা,আজকে থেকে সারা বাসায় যতো তেলাপোকা পাবেন সব এনে আমার রুমে রাখবেন,এখন থেকে আমি তেলাপোকার সাথেই থাকবো!!'ভাগ্যিস সে সময় সুমুর সাথে কন্ট্যাক্ট অফ ছিল না হলে ওশুনে ঠিকই আমাকে পাগল বলে বসত!তারপর চলে গেছে অনেকদিন।কিছু দিন আগে কাঁটাবন গেলাম আমি বান্ধবী ফারহানা।পাখী দেখে তো আমি একদম সহীহ নিয়ত করে ফেললাম,আজকে ময়নাকে না নিয়ে বাসায় ফিরবো না।কিন্তু হায়...!হঠাৎ করেই ফারহানা বলা শুরু করল সে কচ্ছপের বাচ্চা পালবে!আমাকে কচ্ছপের বাচ্চা দেখিয়ে বলতে লাগল,'দোস্ত দেখ,কি কিউট কিউট কচ্ছপের বাচ্চা,আমি অবশ্যই কিনব...!'বলতেই দোকানদার টা দুইটা বাচ্চা বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল,আর আমি ভয়ে লাফ দিয়ে দু'হাত পিছনে সরে আসলাম...!কোথায় আমার ময়না আমি আর কোন দোকানেই ঢুকলাম না,কোন রকমে বাসায় চলে আসলাম,আমার কান্ড দেখে ফারহানা হাসতে হাসতে শেষ।
তবে আজকে একটা ময়না পাখীর প্রয়োজনীয় তা খুবই অনুভব করছি।ময়না থাকলে তো আর মাথায় হাজার চিন্তা নিয়ে চুপ করে বসে থাকতে হতো না,ময়নার সাথেও শেয়ার করতে পারতাম। ময়না কিছু বুঝতো না কিন্তু আমার কথা ঠিকই শুনতো।অবশ্য এটাও মনে হয়েছে আমার বক বক শুনে না জানি ময়নাই মাথা ব্যাথায় মরে যায়!তবে যাইহোক এখন থেকে ময়নাই হবে আমার কথা বলার সঙ্গী।মানুষকে তো ক বললে খ টপকে গ বুঝে ফেলে আর যাই হোক ময়না তা করবেনা।কাজিন সায়মার সাথে আইডিয়াটা শেয়ার করতেই ও বলল,'হুম,আপু তুমি ছেলে হলে ভালো হতো,তাহলে ঐ চায়ের বিজ্ঞাপনের মতো তোমার ময়না ক্লাস টুতে পড়ত আর তুমি সেই ময়নাকে ছাদে বেড়াতে নিয়ে যাবার বাহানায় কারো বাসায় যেয়ে চা খেয়ে আসতে পারতে!!!!!
হেসে ছিলাম খুব,যাই হোক আমি তো আর সে জন্য ময়না কিনবোনা।
আজকাল মানুষের সাথে কথা বলতে কেন জানি আর ইচ্ছে করেনা, এই কিছু দিন আগেও যখন বান্ধবী মাইশা এই কথাটা বলেছিল তখন ওকে একদমে একটা ছোট খাটো লেকচার শুনিয়ে দিয়েছিলাম,''মানুষের সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা এই কথাটা শুনতেও তো ভালো লাগেনা,আরে মানুষ হইল সামাজিক জীব আশরাফুল মাখলুকাত না হয় আর না ই বললাম।শোন,মানুষের সাথে যত কথা বলবি ততো মাইন্ড ফ্রেশ থাকবে,একাকিত্ব ভাব কমবে,হতাশাও কমবে...ইত্যাদি ইত্যাদি।কিন্তু এখন এই কথা টা আমি নিজেই বার বার বলছি,কোন হতাশা থেকে না মনে হয় এক ধরনের ক্লান্তি কাজ করে।আজকাল ক্লাসেও খুব একটা কথা বলিনা,পাশে বসে ওয়ার্দা বক বক করে যায় আর আমি অবিডিয়েন্ট পাঠকের মতো শুনে যাই,মাঝে মাঝে ওর ঝাড়ি খেয়ে হু হ্যা করি,বেচারী মহা ক্ষেপে আমার উপর!কিন্তু কি করব?ভালো লাগেনা যে...সেদিন অনেক দিনের পুরোনো বান্ধবী মনি ফোন করেছিল,মনি হচ্ছে আমার স্কুল জীবনের প্রথম বেস্ট ফ্রেন্ড।এক বছর আগ পর্যন্ত আমার একটা অভ্যাস ছিল,পুরো একদিনের জন্য কাউকে কিছু না বলে উধাও হয়ে যাওয়া।সারাদিন খবর নাই,ফোন বন্ধ সন্ধার সময় হাসতে হাসতে বাসায় হাজির।আমার সেই একলা দিবসে মনি থাকতো আমার সাথে,ও কোন কথা বলতো না শুধু চুপ করে আমার পাশে বসে থাকতো,আর কেউ জানতোও না আমরা কোথায় যেতাম,কিন্তু এক বছর আগে মনির বিয়ে হয়ে যায় এবং ও আমার কাছ থেকে প্রমিজ নেয় আমি আর কখনো এভাবে একা একা হারাবোনা।কারন এখন তো আর ও আমার সাথে থাকবে না...অবাক হয়ে অনেক কেঁদেছিলাম সেদিন,মানুষ গুলো কাছে থাকতে কেন তাদের ভালোবাসার গভীরতা বোঝা যায় না?...
তবে এখন সুমুর ভালোবাসা বোঝার চেস্টা করি,আর অবাক হয়ে যাই,এই মেয়েটা এত গভীর ভাবে আমাকে নিয়ে কিভাবে ভাবতে পারে?!...ক'দিন পর সেও মনির মতো চলে যাবে তখন হয়তো আরও বুঝতে পারবো বন্ধুর ভালোবাসার গভীরতা।
সেদিন দেখা হয়েছিল সাদিয়া আপুর সাথে,সিটি কলেজের সামনে অনেক দিনের পরিচিত পুরোনো মানুষ,খুব তাড়াহুরার মধ্যেও আপু জিজ্ঞেস করতে ভুললেন না,''তোমার লেখা-লেখির কি খবর?অনেক দিন পত্রিকায় লেখা দেখছিনা?''আমি একটু হেসে ব্যাপারটা এড়াতে চাইলাম,আসলে আমার এই এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা অনেকের চোখেই পড়েছে,আপুর চোখেও পড়ল খুব অল্প কথায় আপু অনেক কথাই বলে দিলেন,''আমি জানিনা আসলেই তোমার কি হয়েছে,তবে এতটুকু বলি,আর যাই কর নিজের মেধা আর যোগ্যতার অপচয় করোনা...''কথাটা মনে হয়েছিল তীরের মতো বুকে বিঁধেছিল।আমি প্রায়ই বলি,ভালোবাসা আর মমতার মাঝে দূরত্ব সৃস্টি করতে নেই,মানুষ যেখানেই যাক না কেন এই দুটো জিনিস ছাড়া বেঁচে থাকা অর্থহীন।কিন্তু আজ এতদিন পর মনে হয়েছে আমি এই নিজেই এ দুটো জায়গা থেকে নিজেকে অনেক দূরে সরিয়ে রেখেছি...শুধু মনে হয় অনেক পেয়েছি কিন্তু দেইনি কিছুই,কাউকেই না...
ঘুরে ফিরে মাথায় আবারো সেই ময়নার চিন্তা ঘুরছে!কালকেই যেতে হবে কাঁটাবন,এভাবে চলতে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো...অন্তত মরার আগে দুনিয়াতে এমন কেউতো থাকা দরকার যার কাছে ভেতরের সব কথা বলে গেছি...!
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×