somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাব্যতা সংকটে মহানন্দা, পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে বরেন্দ্র অঞ্চল

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পলি পড়ে নাব্যতা হারিয়েছে মহানন্দা । দীর্ঘদিন ড্রেজিং না করার ফলে নদীতে নৌ চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে । জলবায়ু পরিবর্তনের পর থেকেই শুষ্ক মৌসুমে মহানন্দায় অসংখ্য ডুবোচর জেগে ওঠায় অর্ধশতাধিক খেয়াঘাট হারিয়ে গেছে। যা আছে সেগুলোও বিলিন হওয়ার পথে । ফলে মহানন্দার উপর নির্ভরশীল দুই পাড়ের প্রায় দশ হাজার মানুষ তাদের জীবন জীবিকা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় সংগঠনগুলো নদী খননের জোর দাবি জানিয়ে আসলেও দীর্ঘদিন থেকে আটকে আছে নদী খনন প্রকল্প।

নদীতে মাছ ধরে নদীর ধারে জমি চাষসহ বিভিন্নভাবে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল চরাঞ্চলের মানুষ। নদীতে পানি কমে যাওয়ায় মাছও হারিয়ে গেছে। নদীর দুই পাড় ভাঙনের কারণে উঁচু পাহাড় সৃষ্টি ও বিশাল চর জেগে ওঠায় নদীর পাড়ে কোন ফসলই হয় না। একসময় রাজশাহীর পদ্মা নদী নৌবন্দর হিসেবে ব্যবহার হতো। তার শাখা নদী মহানন্দার পাড়ের লোকজনও এই বন্দরের উপর নির্ভরশীল ছিল। নৌকা করে পার হতো চরের হাজার হাজার মানুষ। আর এখন পায়ে হেঁটে সামান্য পানি পার হওয়ার জন্য নৌকাতে চড়তে হয় লোকজনকে। গোদাগাড়ী উপজেলার নির্মলচর, ফরাদপুর, প্রেমতলী, বিদিরপুর, পিরিজপুর, হরিশংকরপুর, ভাটোপাড়া, মাটিকাটা, মাদারপুর, বারুইপাড়া, হাটপাড়া, সারাংপুর, সুলতানগঞ্জ, বালিয়াঘাট্টা, চর আষাড়িয়াদহ, দিয়াড় মানিকচক, লুটারীপাড়া, কোদালকাটি, আলাতুলী, বগচর, হাকিমপুর, ছয়রশিয়া, দেবীনগর, হড়মা এসব এলাকায় শতাধিক খেয়াঘাট ছিল। মহানন্দা নদী শুকিয়ে মরা নদীতে পরিণত হওয়ায় খেয়াঘাটগুলো হারিয়ে গেছে।স্থানীয় লোকজন জানায়, এখন খেয়াঘাটেরও আর প্রয়োজন হয় না। ঘাট ছাড়াই লোকজন মালামাল নিয়ে এপার-ওপারের মধ্যে সহজেই যাতায়াত করতে পারে। তবে ঝড় ও প্রচন্ড রোদ্রে বিশাল বালুর চর দিয়ে লোকজনকে চলাচল করতে হয় অনেক কষ্টে।

অন্যদিকে, মহানন্দা নদীতে চর জেগে ওঠায় অবাধে বালু কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি বালু খেকো চক্র। ফলে নদীর তীর ভাঙ্গন রক্ষা বাঁধগুলো নষ্ট হচ্ছে।শুস্ক মৌসুমে মহানন্দার মোহনায় মাত্র এক হাঁটু পানি ও চর পড়ে যাওয়ায় পদ্মার পানি মহানন্দায় প্রবেশ করে না। দুই নদীর মোহনায় পানি না থাকায় দেশের একমাত্র পাঙ্গাস প্রকল্পটি ধ্বংসের পথে। মৎস্য বিভাগ প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে পাঙ্গাস প্রকল্পটি গ্রহণ করলেও লাভের মুখ দেখার আগেই পাঙ্গাস মাছগুলো হারিয়ে গেছে। জেলেরা জানায়, পানির গভীরতা না থাকায় পাঙ্গাস, ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়েই জেলেরা শুষ্ক মৌসুমে নৌকা ঘরে তুলে রেখে অন্য কোন কাজ করে বেড়ায়। দাবীর মুখে পদ্মানদীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য ফিরিয়ে আনার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল যাচাই-বাছাই করে গেলেও ড্রেজিং-এর কাজ আজও শুরু হয়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পরবেশবাদী সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময় নদী খননের দাবিতে কর্মসূচীও পালন করে এসেছে । সচেতন নাগরিক কমিটি(সনাক), প্রতিশ্রুতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাহিত্য পরিষদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা নাগিরক অধিকার রক্ষা কমিটি, প্রজন্ম জোট, ঝরা পালক, ছাত্র ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন নদী খননের দাবি জানিয়ে আসছে। প্রজন্ম জোটের সাধারন সম্পাদক সিয়াম সারোয়ার জামিল জানান, মরনবাঁধ ফারাক্কার বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় মরতে বসা এই ছোট নদীর বুকে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। অবৈধভাবে স্থাপন করা হয়েছে ইট ভাটা। খরস্রোতা এ সব নদী গুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে জেগে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য বালুচর। ভরাট হয়ে যাওয়ায় নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে নদীগুলো।

বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও পাকিস্তান আমলের বাম ছাত্রনেতা মিজানুর রহমান মিজু জানান, এখন পালতোলা নৌকায় মাঝিদের ভাটিয়ালী গান দেখা যায় না। আগেকার সময়ে নদীর ঘাটে গোসল করত পাড়ার ছেলেমেয়েরা। এখন নদীর পানি দূষিত হয়ে যাওয়ায় অনেকেই নদীর পানি ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছেন।

নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। এর ফলে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ধান উৎপাদনের উর্বর ভূমি খ্যাত বরেন্দ্র অঞ্চল। বর্ষা মৌসূমে ভারত ফারাক্কার গেটগুলো খুলে দেয়ায় পক্ষল বেগে পানির প্রবাহ বাংলাদেশে ঢোকে। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অংশে গত একদশক থেকে চলছে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন। সীমান্ত ঘেঁসা পদ্মা নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বাংলাদেশের প্রায় ১২ কিলোমিটার অভ্যান্তরে প্রবেশ করেছে। নদী ভাঙ্গনের ফলে কয়েক লাখ মানুষ ভিটে মাটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হবার পাশাপাশি সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে জেগে ওঠে অসংখ্য বালুচর। একসময়ের সেই প্রমত্তা পদ্মা এখন মৃত্যু পথযাত্রী। পদ্মা পারের মানুষেরা বলেছেন, পানিশূন্য পদ্মার এমন করুন রুপ এর আগে আর কখনো দেখেননি এই এলাকার মানুষ। ফলে এই নদীতে এখন আর আগের মত পাল তোলা নৌকা চলাচল করতে দেখা যায়না। এখন বর্ষাকালে পানি বৃদ্ধি পেলেও আগের মত স্রোত থাকেনা। নদীকে ঘিরেই সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর হাট এলাকায় ইংরেজরা গড়ে তোলা হয়েছিলো নীলকুঠি। কিন্তু ভারত নদীর প্রবেশ পথে বাঁধ নির্মান করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে স্রোতধারা। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী আকবর আলী সাংবাদিকদের জানান, চলতি শুষ্ক মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে পানির স্তর প্রায় ১০ থেকে ১২ ফুট পর্যন্তনিচে নেমে গেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান নদী গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ভূগর্ভে পানি রিচার্জ স্বাভাবিক হচ্ছেনা। ফলে কয়েক বছর আগেও মাত্র ৩০ থেকে ৪০ ফুট মাটির নীচে মধ্যে পানি পাওয়া গেলেও এখন ৬৫ থেকে ৭০ ফুটে গিয়ে পৌচেছে। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার পানি সুপারিনটেনডেন্ট নজরুল ইসলাম জানান, গত ১৫ বছরে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় পানির স্তর ২২ ফুট নেমে গেছে
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×