somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেড ইন চায়না অথবা মেড বাই চায়না

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক চীনা বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফেরার সময় কিছু কিনে নিয়ে যেতে চাইল কিন্তু তার কিছুই কেনা হল না, কারণ যেই পণ্য পছন্দ হয় তাতে লেখা 'মেড ইন চায়না'। এই হল হাল আমলে চীনের পণ্যের অবস্থা। খুব বেশি নয় বছর কুড়ি আগেও চীনের আর আমাদের ধোলাইখাল মানেই ছিল জনপ্রিয় জিনিসপত্র আর কপিক্যাট, যে কোন সেরা জিনিসের নকল তৈরি। আমাদের নাক সিটকানোর জন্য ধোলাই খাল শুধু ধোলাই খাল থেকে গেছে আর চীনা পণ্য 'মেড ইন চায়না' অথবা 'মেড বাই চায়না' সিলে গোটা পৃথিবী দাপড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
কিন্তু একটা সময় চীন নিয়ে প্রচলিত জোক ছিল:
মাও-সে-তুং (অধুনা মাও-জে-দং) টেলিগ্রাম পাঠালেন ক্রুশ্চেভকে : চীনে দুর্ভিক্ষ। দয়া করে খাদ্যদ্রব্য পাঠান।
ক্রুশ্চেভ উত্তর দিলেন : আমাদের নিজেদের অবস্থাও রীতিমতো সংকটজনক। তাই কোন খাদ্যদ্রব্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। পেটে পাথর বাঁধুন ।
মাও এর ফিরতি টেলিগ্রাম : জরুরি ভিত্তিতে পাথর পাঠান!
সেই চীন এখন কয়েক দশকের ব্যবধানে গ্রেট ওয়ালের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেট ওয়ালেটেরও মালিক।
আমাদের এ দিক থেকে চীনে সর্বপ্রথম কে গেছিল না জানা গেলে। চীন থেকে যিনি এসেছিলেন জানা যায়, তিনি হলেন হিউয়েন সাঙ বা হিউয়েন-সাং অথবা হুয়ান-সাং কিংবা জুয়ানজ্যাং (৬০২ - ৬৬৪)। তিনি ছিলেন বিখ্যাত চীনা বৌদ্ধ ভিক্ষু, পণ্ডিত, পর্যটক এবং অনুবাদক। কথিত আছে আমাদের ফেনী জেলার নাম এসেছে তার নাম থেকে। তিনি চীন এবং ভারতবর্ষের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। ধারণামতে ৬৩০ খ্রিস্টাব্দের কোন এক সময় তিনি ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিলেন। আমাদের অতীশ দীপঙ্কর (৯৮২-১০৫৪) তিব্বতের লাসা নগরী পর্যন্ত যান। ১২০৫ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী বাংলা জয়ের পর চীনের দিকে আগ্রাসী হয় কিন্তু তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। আর এখন চীনা পণ্যে আগ্রাসনে গোটা পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গে আমরা সয়লাব।
একটা জনপ্রিয় জোক চালু রয়েছে যদি আপনি আপনার চারটে ক্লোন তৈরি করান তাহলে তার মধ্যে অন্তত একটা হবে চীনের তৈরি! আসলে এ চুটকিটার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে চীনারা কী ও কতদূর যেতে পারে তার একটা নমুনা। কোন সন্দেহ নেই, চীনা পণ্য ক্রমশই আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে, এবং গোটা পৃথিবীর মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে চীনের উৎপাদিত পণ্য যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। চীনের শাখা আজ এতটাই বিস্তৃত, গ্রিনল্যান্ড থেকে আন্টার্কটিকা এবং মধ্য এশিয়া থেকে ইউরোপ, সর্বত্রই চীনের পণ্য। তা সে সেলফোন হোক বা ল্যাপটপ, অথবা গাড়ির ইঞ্জিন হোক বা অন্য কিছু, যে কোন জিনিস একটা উল্টে দেখুন পেছনে লেখা রয়েছে 'মেড ইন চায়না'। আসল আইফোন হোক বা একই রকম দেখতে বরং তার সঙ্গে আরও অতিরিক্ত কিছু বৈশিষ্ট্য জুড়ে দেয়া আইফোন দুটোই তৈরি হয় চীনে। আপনি একবার আমেরিকার ডিজনি স্টোরে যান কিংবা আমাদের কোন অজো-পাড়াগাঁয়ের মুদির দোকানে দেখতে পাবেন চীনের তৈরি পণ্যে ঠাসা, যা পুরনো মিথকে ভেঙে দিচ্ছে, এখন আর বলা যাবে না যে চীনের জিনিস মানেই সস্তা, নকল আর ঠুনকো। সব জায়গায় সব জিনিস দেখা যাবে চীনের তৈরি বলে লেখা, অন্তত পাশ্চাত্য দেশগুলোতে একথা বলাই যায়। ব্যাপারটা এতই বড় আকারের যে শুনলে হয়ত আপনি অবাকই হবেন, ৯-১১ ঘটনার পর যখন আমেরিকা জুড়ে দেশপ্রেমের বান ডেকেছে তখন সব জায়গায় জাতীয় পতাকা ঝোলানোর হিড়িক পড়ে যায়, আর খোঁজ নিয়ে দেখা যায় আমেরিকার জাতীয় পতাকা চীনে তৈরি হয়ে আসছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ইন্ডিকেটর ২০১০ (ডাবলিউ আইপিও)-তে চীন তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। মূলত পেটেন্টের জন্য আবেদন জানানো ও তার অনুমোদনের ভিত্তিতে এ র‍্যাঙ্কিং নির্ণয় করা হয়েছে। দ্য থম্পসন রয়টার্স সায়েন্স সাইটেশন ইনডেক্স (সিএসআই) ২০০৯ সালে চীন থেকে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৯৮টি সায়েন্স পেপার প্রকাশিত হওয়ার কথা জনাচ্ছে, যা সংখ্যার বিচারে বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম। চীন এখন ইঞ্জিনিয়ারিং, জিনোমিক্স এবং ন্যানোটেকনোলজির ক্ষেত্রেও এগিয়ে চলেছে। চীন কীভাবে এগিয়ে চলেছে তার ছোট একটা উদাহরণ হল, বেইজিং অলিম্পিক-২০০৮ যারা মনোযোগ দিয়ে দেখেছেন, তারা নিশ্চয়ই প্রতিযোগিতার সূচনায় প্রারম্ভিক অনুষ্ঠানে মশাল হাতে সাবেক চীনা জিমন্যাস্ট লি নিংকে খেয়াল করেছেন। এ ৪৫ বছর বয়সী লি নিং ১৯৮৪ সালের গেমসে তিনটি সোনার পদক জয়ী হয়েছিলেন, তার আরেকটা পরিচয় তিনি চীনের অন্যতম বৃহৎ খেলার সরঞ্জাম প্রস্ততকারক সংস্থার লি নিং কম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক। লি নিং কম্পানি শুধু চীনের ভেতরে বৃহৎ সংস্থা নয় বিশ্বজুড়ে তাদের আউটলেট ছড়িয়ে রয়েছে। অলিম্পিক গেমসের সময় তার কম্পানি চীনের টিম বাদেও অনেক টিমেরই স্পন্সর হয়েছে। বর্তমানে অ্যাডিডাস ও নাইকির সব থেকে বড় প্রতিপক্ষ হচ্ছে লি নিং। ২০১০ সালে বার্ষিক ১.৩৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা করে ওই দুই পশ্চিমী দৈত্যের ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে।
চীনের ১.৩ বিলিয়নের বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে প্রচলিত চুটকি কম নয়। তার একটি হল :
প্রশ্ন: কখন পৃথিবীজুড়ে দুর্ভিক্ষ হবে?
উত্তর: চীনের লোকেরা যখন কাঠি ছেড়ে কাঁটাচামচ দিয়ে খেতে শুরু করবে।
বিশাল জনসংখ্যার ভারে আমরা যেখানে নুইয়ে পড়েছি চীন সেটা বানিয়েছে শক্তি। একটা পুরনো জোকস বলি 'এক পোলিশ পুরনো এক প্রদীপ ঘষেমেজে পরিষ্কার করছিল। হঠাৎ আলাদীনের জিনের আবির্ভাব। জিন বলল, 'তোমার তিনটে ইচ্ছে আমি পূরণ করে দিতে পারি।'
'বেশ আমার প্রথম ইচ্ছে, চীন যেন পোল্যান্ড আক্রমণ করে। আমার দ্বিতীয় ইচ্ছে চীন যেন পোল্যান্ড আক্রমণ করে। আর আমার তৃতীয় ইচ্ছে চীন যেন পোল্যান্ড আক্রমণ করে।'
জিন অবাক হয়ে জানতে চাইল_ 'এই অদ্ভুত ইচ্ছের কারণ।' 'খুব সোজা। তাহলে চীনের সৈন্যবাহিনীকে ছ'বার রাশিয়ার ওপর দিয়ে যেতে হবে'।'
আরেকটা কৌতুক বলি :
প্রফেসর পিতাকে তার মেয়ে বাইরে থেকে ফোন করে জানাল_ 'বাবা; আমার একসঙ্গে তিনটি ছেলেসন্তান জন্মেছে। এদের জন্য ভালো নাম ঠিক করে দিন।'
: এদের নাম দিলাম শ্রাবণ,পূর্ণ আর ওয়াং চুং ।
: বাবা প্রথম দুইটা নাম তো খুবই সুন্দর কিন্তু বাবা তিন নাম্বার নামটা চীনা দিলেন কেন?
: আরে গাধা, এটাও জানিস না!! পৃথিবীর প্রতি তিনজন শিশুর একজন চীনা ।
একটা সময়ে চীনের পরিচয় দেয়া হতো প্রস্ততকারক হিসেবে, এখন কিন্তু তাদেরও আবিষ্কারক বলে মানতে সবাই বাধ্য হচ্ছে। এর জন্য চীনকে অনেক পথ পার করে আসতে হয়েছে। পেটেন্টের সাহায্য নেয়া, বিদেশী কোম্পানি অধিগ্রহণ করা, যৌথ মূলধনে কোম্পানি চালানো এবং অবশ্যই ইন্ডোজেনাস ডিজাইন ও টেকনোলজি চীনকে নিজস্ব বৃহৎ কম্পানি গড়ে তুলতে পেরেছে। এখন আর পশ্চিমী কোম্পানিগুলোর পক্ষে চীনের মূল ভূখণ্ডে গিয়ে জাঁকিয়ে বসে ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়, কারণ দেশের বাজার দেশের কোম্পানির দখলে, বরং তারা এবার এগিয়ে চলেছে বিশ্ববাজার ধরতে। তাই ২০১১ সালের ফরচুন ৫০০ কোম্পানির তালিকায় ৬১টা চীনের কোম্পানি, আমেরিকার (১৩৩) ও জাপানের (৬৮) পরেই চীনের স্থান। আমাদের? কি দরকার তালিকায় নাম খোঁজার। এ চেয়ে আশাবাদী কৌতুক শুনুন। আশাবাদী মানে বুঝতে পরেছেনে যারা অর্ধেক খালি গ্লাসকে বলে অর্ধেক তো পূর্ণ।
তো কৌতুকটা হল : কথায় বলে, এইডস হল বিংশ শতাব্দীর ব্যাধি। কিন্তু বাংলাদেশ এবং চীনের কাছে তা কোন হুমকিই নয়। কারণ চীন বাস করে একবিংশ শতাব্দীতে। আর বাংলাদেশ? উনবিংশ শতাব্দীতে।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×