somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জগন্নাথ কথন

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২৫/৯/২০১১ তারিখে হাইকোর্টের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবস্থান নেয়ার ঘটনায় এখন প্রায় সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২৭/৪ ধারার সাথে পরিচিত। কি আছে এই ২৭/৪ ধারায়? সোজা বাংলায় বললে এতে বলা আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ৫ বছরের মধ্যে হয়ে যাবে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। সেই ৫ বছর শেষ হয়েছে। এখন এর সমস্ত খরচ এর নিজেকেই বহন করতে হবে। নিজেকে বলতে এর শিক্ষার্থীদেরকে। এর মানে হলো শিক্ষার্থীদের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফির সমপরিমান অর্থ পরিশোধ করতে হবে, অথচ সবাইকে বলতে পারবে সে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কি অসাধারণ ব্যবস্থা। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ।
এই আইনের ফলে, এখন একজন ছাত্রকে কি পরিমান অর্থ পরিশোধ করতে হবে? খুব বেশী না, প্রতি সেমিস্টারে ২০-২২ হাজার। অন্যান্য ফি মিলিয়ে হয়তোবা ২৫ হাজার। আগে কত টাকা পরিশোধ করতে হত? প্রতি সেমিস্টারে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার। প্রত্যেক ছাত্রকে প্রতি সেমিস্টারে কি পরিমানে অতিরিক্ত টাকা এখন দিতে হবে? খুব বেশী না। মাত্র ২১-২২ হাজার।
শিক্ষামন্ত্রীকে অভিনন্দন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালইয়ের বরাদ্দের টাকা বেচে যাওয়ায় এখন নিশ্চয়ই দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইবে। জোয়ারে ভেসে যাবে সারা দেশ। আগে শুধুমাত্র বর্ষাকালে কয়েক দিনের জন্য ঢাকায় কিছু কিছু এলাকায় নৌকা চলতো, এখন হয়তো সারা বছরই দেশের মানুষকে নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতে হবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত কোন পরিবারের ছেলে মেয়েরা পড়ে? উত্তরটা সবারই জানা। নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানেরা। এদের বেশির ভাগই আসে গ্রাম থেকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালইয়ে পড়ুয়া এইসব শিক্ষার্থীরা কোথায় থাকে? উত্তর মেসে। কারন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন হল নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে ১১ টি হল আছে, তার সবগুলো বেদখল। সবচেয়ে বিচিত্র তথ্য হলো, এই দখলদারদের মধ্যে পুলিশও রয়েছে। কি বিচিত্র এই দেশ, বিচিত্র পাবলিক ভার্সিটি, কিন্তু আমাদের কাছে এসবই সচিত্র। প্রতিদিন দেখি যে!!!
এইসব ছেলে-মেয়েদের বেশির ভাগই টিউশনি করিয়ে তাদের পড়াশোনার ব্যায়ভার বহন করে। কারন তাদের পরিবারের পর্যাপ্ত আর্থিক সঙ্গতি নেই। তাই বলে কি স্বপ্ন থেমে থাকে? সারাদিন ভার্সিটিতে ক্লাস করে, রাত ৯-১০ টা পর্যন্ত টিউশনি। শুধুমাত্র বুকে সযত্নে লালিত স্বপ্ন পূরণ করার জন্য-“ পড়াশোনা শেষ করার পর একটা চাকরী জুটবে, তাতে বাবা-মার দু;খ ঘুচবে।“ এই ছোট্ট স্বপ্নটি পূরণ করার জন্য শত কষ্ট হাসিমুখে বরন করে নেয়া। এখন প্রতি সেমিস্টারে যদি ২১-২২ হাজার টাকা অতিরিক্ত ফি দিতে হয়, তাহলে এরা কি করবে? এরা কি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে? এদের স্বপ্নের কি হবে? জীবনের কত ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এত দূর আসা, সব কি ব্যর্থ হয়ে যাবে? তরুন চোখে আকা কত শত রঙ্গিন স্বপ্ন, সব কি ধুসর হয়ে যাবে? উত্তরটা আমার অজানা।
শুনেছি মন্ত্রী-এমপিদের ছেলে মেয়েরা নাকি এদেশে পড়াশোনা করে না। তারা দেশের বাইরে পড়াশোনা করে সেখানেই স্থায়ী হয়। তাই তাদের বাবা-মায়েরা যে আমাদের মতো সাধারণ পরিবারের শিক্ষার্থীদের কথা ভাববেন না এটা আর এমন কি? তাই বলে কি তারা আমাদের সাথে এভাবে প্রতারণা করবেন? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ হাজার শিক্ষার্থীর একজন ও কি ভর্তি হওয়ার সময় জানত, যে এটি অচিরেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়ে যাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়? এতে পড়তে খরচ হবে লাখ-লাখ টাকা? এটা কি প্রতারণা নয়? এখন, এসকল শিক্ষার্থীর কি হবে? তাদের অধিকাংশের পড়াশোনা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এর দায়ভার কে নেবে? এর জন্য কি রাষ্ট দায়ী নয়?
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, আমরা জবাব চাই।

***** সবশেষে একটি অনুরোধ, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, দয়া করে ২৭/৪ ধারা বাতিল করুন। এটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ হাজার শিক্ষার্থীর জীবনের প্রশ্ন, অস্তিত্বের প্রশ্ন। আর তা যদি না পারেন, এই ২১ হাজার শিক্ষার্থী সহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে গুড়িয়ে দিন। স্বপ্নের মৃত্যু কি জীবনের মৃত্যু ও নয় ?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×