somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেক্সিকোর মাদক সম্রাটদের চিড়িয়াখানা

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কল্লোল কর্মকার, নিউজরুম এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মেক্সিকোর কর্তৃপক্ষ প্রায়ই হামলা চালায় সেদেশের মাদক সম্রাটদের আস্তানায়। আর ওই অভিযান থেকে পাওয়া সিংহ, বাঘ, বানর এবং টিয়া নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছে মেক্সিকো কর্তৃপক্ষ।

মেক্সিকোতে বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিলের বিশেষজ্ঞ অ্যাদ্রিয়ান রুতার একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মেক্সিকোতে এ ধরনের ঘটনা অহরহই ঘটছে। নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্ন ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা থেকে এসব পশু উদ্ধার করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাদক সম্রাটরা ওই সকল প্রাণীই পছন্দ করেন যেগুলো মূলত ক্ষমতা, শক্তিমত্তা এবং সৌন্দর্যের প্রতীক। যেমন-সিংহ, বাঘ, জাগুয়ার, বড় সাপ, বানর এবং দেখতে সুন্দর পাখি। এরকমই এক জায়গায় ২০-৩০টি প্রাণী উদ্ধার করে নিরাপত্তা বাহিনী। সেই প্রাণীগুলোকে বেশ আরাম আয়েশেই থাকতে দেখা যায়।’

মেক্সিকো কর্তৃপক্ষ বিগত জুলাই মাসে সারা দেশব্যপী অভিযান চালিয়ে পাঁচ হাজার পাঁচশোর বেশি অবৈধভাবে রাখা প্রাণী এবং বিভিন্ন গাছ উদ্ধার করেছে।

গ্লোবাল অ্যানিমেল ম্যাগাজিনের কো-অর্ডিনেটর আর্থার জেন একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাচারকারীরা নিজেদের অনেক বড় শিকারি হিসেবে দেখতে পছন্দ করে। আর এর জন্য প্রকৃতির অন্য শিকারি প্রাণীদের নিজেদের চিড়িয়াখানায় রেখে তারা প্রমাণ করতে চায় যে তারা কতটা পৌরুষদীপ্ত।’

২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত এক রিপোর্ট মতে, ‘মেক্সিকোর মাদক চোরাচালানিরা প্রতিবছর অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার করে পনেরোশত থেকে তিন হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত আয় করে।’ আর তাই এই ধনী মাদক সম্রাটদের পক্ষে কোনো প্রকার অদ্ভুত খেয়াল পূরণ করা তেমন একটা কষ্টসাধ্য নয়।’

অবৈধ পন্থায় উপার্জিত এই অর্থের গরমে পাচারকারীরা তাদের আস্তানাকে ডিসকভারি চ্যানেলের ক্ষুদে অ্যানিমেল প্লানেট বানিয়ে ফেলে।

নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যরা যখন মাদক সম্রাটদের আস্তানাগুলোতে আকস্মিক অভিযান চালায় তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাচারকারীরা প্রাণীগুলোকে অবহেলিত অবস্থায় ফেলে যায়।

বন্যপ্রাণী নিরাপত্তা সংস্থার মুখপাত্র আলেহান্দ্রা গোয়েনসা বলেন, ‘সরকারের জন্য এটা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ। তারা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাচার করে নিয়ে আসা প্রাণীগুলোকে সরকার ধরার পর নিয়ে যায় পরিবেশ বিষয়ক কার্যকরী সংস্থার কাছে। যদি ওই প্রাণীগুলো বৈধভাবে নিবন্ধিত না থাকে তাহলে তাদের নিয়ে কি করা যায় সরকার এবিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে নির্ভর করে কি ধরনের প্রাণী তার উপর। কিছু প্রাণীকে চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয় আবার কিছু প্রাণীকে পাচারকারীরা যেখান থেকে ধরে এনেছিল সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও জানান, ‘কিন্তু এখানে একটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে যে, বেশিরভাগ প্রাণীই বাইরে থেকে আনা। এরা মেক্সিকোর প্রাণী নয়। আমরা তাদেরকে ইচ্ছে মতো জঙ্গলে গিয়ে মুক্ত করে দিতে পারছি না। স্বাভাবিকভাবেই তাদের জায়গা হচ্ছে চিড়িয়াখানাতে। কিন্তু এটা খুব ব্যয়বহুল। কারণ এর জন্য চাই স্থান এবং পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুবিধা।’

মাদক সম্রাটদের জীবন যাত্রা সম্পর্কে গবেষণারত ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের অধ্যাপক হাওয়ার্ড ক্যাম্পবেল বলেন, ‘মাদক পাচারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পশুপ্রেমী ছিলেন আমাদো কারিয়ো ফুয়েন্তস। তিনি ছিলেন সুয়ারেজ ব্যবসায়িক জোট এবং একটি বাঘের মালিক। মাদক সম্রাটদের কার্যকলাপ অনেকটাই কলোনিয়াল সময়ের সামন্ত প্রভুদের মতো। তারা জমিদারদের আদলে এবং অনেক জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে প্রভু হতে চায়। কিন্তু তারা গ্রাম্য মানুষ এবং গ্রামকে কেন্দ্র করেই তারা সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা আশেপাশের প্রাণীদের মতো বেড়ে ওঠে এবং তারা তাদের জীবনযাত্রা অনুসরণ করে। কিন্তু এখন তাদের কাছে সেই ইচ্ছা পূরণ করার মতো যথেষ্ট অর্থ আছে। ১৯৯৭ সালে প্লাস্টিক সার্জারির কারণে ফুয়েন্তস মারা যায়। কিন্তু নতুন পাচারকারীরা তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করছে।’

২০০৮ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সিনোলা জোটের নেতা হেসাস সামবাদাকে (দ্য কিং) গ্রেপ্তার করে। সেসময় বানর, ময়ুর, উটসহ দুইশতেরও বেশি প্রাণী উদ্ধার করা হয় মধ্য মেক্সিকোতে অবস্থিত তার আস্তানা থেকে। এছাড়াও উদ্ধার করা হয় বেশকিছু একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল, বেরেটা এবং কোকেন।

বাইরে থেকে পাচারকৃত প্রাণীর মধ্যে বিশেষত বাঘ আনা হয় এশিয়া অথবা আফ্রিকার দেশুগুলো থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের এক হিসেব মতে, বিশ্বে ব্যক্তি মালিকানায় পাঁচ হাজার বাঘ রয়েছে। কিন্তু মেক্সিকোতে কি সংখ্যক বাঘ আছে তার কোনো হিসেব নেই।

মেক্সিকোর সাবেক সেনা কমান্ডো কর্তৃক পরিচালিত নৃশংস হিতাস গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের শত্রুদের বাঘ দিয়ে খাওয়ায়। পাচারকারীরা তাদের শত্রুদের এভাবেই তাদের পালিত হিংস্র প্রাণীর মুখে ঠেলে দেয়। এমনকি তারা মাঝে মধ্যে বাঘের লড়াইও উপভোগ করে বলে জানায় আর্থার জেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এই বাইরে থেকে আনা প্রাণীদের বিভিন্ন সময় মাদক পাচারের কাজেও ব্যবহার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে কোকেন পাচারে এই পন্থা ব্যবহার করে পাচারকারীরা। কনডমের ভেতর কোকেন ঢুকিয়ে তা প্রাণীদের পেটের মধ্যে চালান করে মাদক পাচার করে তারা।’

ক্যাম্পবেল আরও বলেন, ‘১৯৮০ সাল থেকে মূলত মাদক সম্রাটরা এই ধরণের প্রাণী রাখা শুরু করে। আর সেসময় প্রথম প্রাণী পালন শুরু করে কলম্বিয়ার পাবলো এসকোবার এবং তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। মেক্সিকোর মাদক সম্রাটরা কলম্বিয়ার মাদক সম্রাটদের কাছ থেকে এই বৈশিষ্ট্যটা রপ্ত করে। কিন্তু তাদেরও নিজেদের মতো কিছু বৈশিষ্ট্য আছে।’

পাচার করে আনা অনেক প্রাণীই তাদের মালিকদের মতো আয়েশি জীবন যাপন করে। এমনকি তারা কি খাচ্ছে এবং তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কিনা সেটাও বেশ খাতিরের সহিত দেখা হয়।

প্রাণী পাচার বিরোধী কর্মীরা বলছে, ‘বাজেয়াপ্ত প্রাণীদের নিয়ে সরকারের আরও কিছু করা উচিত। জনগণকে উন্নত শিক্ষা এবং প্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝাতে হবে।’

বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিলের রুতার বলেন, ‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রই সমান দায়ী। এই সমস্যার সমাধান করা শুধুমাত্র সরকারেরই কাজ নয়। যদি ভোক্তাই না থাকে তাহলে এবিষয়ে কোনো সমস্যাই থাকবে না।

[email protected]
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×