somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বানিজ্য হচ্ছে কবরের লাশ নিয়েও

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবর থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে লাশ। চুরি হওয়া এসব লাশের কঙ্কাল বিক্রি হচ্ছে দেশ-বিদেশে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের কর্মচারী, কবরস্থানের রক্ষণা-বেক্ষণকারী ও কতিপয় সাহসী চোরকে নিয়ে গড়ে উঠেছে কঙ্কাল ব্যবসার সিন্ডিকেট।
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এই সিন্ডিকেট চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অবশ্য শিক্ষার্থীরা জানে না, তারা এসব কঙ্কাল কীভাবে পাচ্ছে? চুরি করা একেকটি কঙ্কাল বিক্রি করা হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও কবরস্থান রক্ষণা-বেক্ষণাকারী কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। গবেষণার কাজে কঙ্কাল লাগলেও এর ব্যবহার ও সংরক্ষণ নিয়ে কোনো নীতিমালা নেই। প্রতিবছর কমপক্ষে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে মেডিক্যালে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী রিজওয়ান জানান, মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য মানুষের কঙ্কাল কেনা অনেকটা বাধ্যতামূলক। মেডিক্যালের ভাষায় বলা হয় ‘বোনস’। অনেক শিক্ষার্থী পুরনো ‘বোনস’ দিয়েই কাজ করেন। তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নতুন ‘বোনস’ কেনেন। অনেকে মৃত্যুর আগে মৃতদেহ হাসপাতালে দান করে যান। কিন্তু এর সংখ্যা খুবই কম। তিনি জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা কঙ্কাল বেচাকেনা করে থাকেন। তাদের মধ্যে একজনের নাম হেদায়েত। শুধু সরকারি হাসপাতালের শিক্ষার্থীরাই নন, বেসরকারি মেডিক্যালের শিক্ষার্থীরাও তাদের কাছ থেকে কঙ্কাল কেনেন। এক সেট কঙ্কাল ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বেচাকেনা হয়। এক সেটে একটি কঙ্কালের মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত সব হাড় থাকবে। তবে খোঁজ করেও হেদায়েতকে পাওয়া যায়নি। সূত্র জানায়, হেদায়েত অবসরে চলে গেলেও কঙ্কাল কেনাবেচার মূল নায়ক।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি ডিপার্টমেন্টের এক কর্মচারীর কাছে মেডিক্যালের ছাত্র পরিচয়ে কঙ্কাল কিনতে চাইলে তিনি জানান, ‘আছে, কবে নেবেন? দাম পড়বে ২০ হাজার টাকা।’ এই কঙ্কাল কোথা থেকে আসে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটি সিক্রেট ব্যাপার। কোথা থেকে কঙ্কাল আসে তা বলা যাবে না। যে কোনো বয়সী, যত পুরনো কঙ্কালই হোক জোগাড় করে দেওয়া যাবে। কিন্তু কে তাকে দিয়ে যায় বা কোথা থেকে আসে তা বলতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। পাঁচশ’ টাকার একটি নোট হাতে দিলে তিনি জানান, ‘বেশিরভাগ কঙ্কাল আসে জামালপুর, ময়মনসিংহ, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চল থেকে। অ্যাম্বুলেন্সে এসব কঙ্কাল ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা কঙ্কাল বিক্রি করে কমিশন পাই। একটি কঙ্কাল বিক্রি করলে আমাদের দু’তিন হাজার টাকা লাভ হয়।’ এসব কঙ্কাল কবর থেকে তোলা হয় কীভাবে, জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘বেশিরভাগ কঙ্কাল ২৫-৩৫ বয়সী মানুষের। কবরের বয়স এক বছর বা তার আগেই হাড়গুলো তুলে ফেলা হয়। সেগুলো কেমিক্যাল দিয়ে পরিষ্কার করে আমরা ‘বোনস’ সেট তৈরি করে বিক্রি করি।’ তিনি আরও জানান, ‘মেডিক্যালের মর্গে পড়ে থাকা অনেক বেওয়ারিশ লাশও কঙ্কাল হিসেবে বিক্রি হয়ে যায়।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে বহু লাশ চুরি হয়েছে। লাশ চুরির ভয়ে রাত জেগে কবর পাহারাও দিতে হয়েছে এলাকাবাসীকে। গত জুন মাসে বগুড়ার আদমদীঘির জিনইর গ্রামে কবর খুঁড়ে রফিকুল ইসলাম (১৩), কৈকুড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীর (২২), তাড়াশের গোলাপপাড়ার শারমিন (৮) ও শাপলার (২৫) লাশ চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। একইভাবে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার পুরুড়া নারাঙ্গিপাড়ার একটি কবর থেকে জয়নাল আবেদীন, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের ছেলদিয়া গ্রামের মোস্তফা (৩০), চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে কৃষক মাসুম ও নীলফামারীর সৈয়দপুরের সোজাউদ্দিন পাইকারসহ (৫৬) অনেক লাশ করব থেকে চুরি হয়ে গেছে।
এদিকে গত ২৪ মার্চ ময়মনসিংহের সদর উপজেলার খাগডহর ইউনিয়নের গণেশ্যামপুর গ্রামে একটি পাতিলে দুটি মাথার কঙ্কাল সেদ্ধ করার সময় দু’জনকে হাতেনাতে আটক করেছিল এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাবা আবেদ আলী ও তার ছেলে শাহজাহান দীর্ঘদিন ধরে কবর থেকে লাশ চুরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে। খাগডহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াকিল উদ্দিন আহম্মেদ স্বপন জানান, তারা সংঘবদ্ধ কঙ্কাল চোর দলের সদস্য। কোতোয়ালি থানার এসআই গোলাম কিবরিয়া জানান, এত ৫-৬ মাস আগের ঘটনা। সব মনে নেই। কেউ অভিযোগ না করায় এবং কঙ্কালগুলো শনাক্ত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব হয়নি। তবে উদ্ধার করা কঙ্কালের ব্যাপারে তিনি জানান, কঙ্কাল দুটি তারা পার্শ্ববর্তী মুক্তাগাছা উপজেলার খামার বাজারের উত্তর পাশের কবরস্থান থেকে চুরি করেছিল। চুরি করা কঙ্কাল কারা নেয়, জানতে চাইলে আবেদ আলী পুলিশকে জানান, মেডিক্যালের লোকজন এসব কঙ্কাল তার কাছ থেকে তিন-চার হাজার টাকায় কিনে নিত।

এদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র জ্যোতির্ময় সরকার জয় ও সাব্বির হোসেনের কঙ্কাল ব্যবসার ঘটনা ফাঁস হয়ে যায় গত এপ্রিল মাসে। নাটোরের আবদুলপুর বাজারে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী মাহবুব আলম রাসেল হত্যায় অভিযুক্ত এই দুই আসামি পুলিশের কাছে এসব তথ্য স্বীকার করেন। তারা পুলিশকে জানান, সুইপারদের মাধ্যমে বেওয়ারিশ লাশ সংগ্রহ ও বিক্রি করাই ছিল তাদের কাজ। এমনকি ভারতেও কঙ্কাল পাচার করতেন তারা। অ্যানাটমি বিভাগে যেসব বেওয়ারিশ লাশের কঙ্কাল রাখা হতো, সেগুলো তারা অবৈধভাবে বাইরে নিয়ে গিয়ে হাজার হাজার টাকায় বিক্রি করে দিতেন। একটি কঙ্কাল বিক্রি করে সুইপাররা পেত পাঁচ-ছয় হাজার টাকা। জয় হাতিয়ে নিতের পাঁচ-সাত হাজার টাকা।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের সভাপতি শামীম আরা জানান, শিক্ষার্থীরা সাধারণত সিনিয়রদের কাছ থেকে ‘বোনস’ কেনেন। তবে অনেকের হাতে নতুন সাদা ‘বোনস’ দেখা যায়। এগুলো ভারত থেকে আসে বলে তিনি ধারণা করেন। কিন্তু কীভাবে আসে তা তিনি জানেন না। তিনি জানান, এগুলো কেউ না কেউ তো আনে। কিন্তু কীভাবে ছাত্রদের হাতে আসে তা কখনও জানতেও চাইনি। শামীম আরা আরও জানান, এত মেডিক্যাল কলেজ। এত শিক্ষার্থী। সবাইকেই তো ‘বোনস’ কিনতে হয়। কিন্তু এত ‘বোনস’ কোথা থেকে আসে সেটি আমারও প্রশ্ন। তিনি জানান, সংগীতশিল্পী সঞ্জীব চৌধুরী ও নরেন বিশ্বাসসহ বেশ কয়েকজন তাদের মৃতদেহ মৃত্যুর আগে দান করে গিয়েছিলেন। আমরা সেগুলো দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেই। কোথা থেকে কিনতে হবে এমন নির্দেশনা থাকে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা পাঠ্যপুস্তকের তালিকা দেই। কিন্তু ‘বোনস’ কেনার পরামর্শ আমরা দিতে পারি না। কোনো মেডিক্যাল থেকেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয় না। বিভাগের কর্মচারীরা জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, হতে পারে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে একজন কর্মচারী ধরা পড়েছিল। এখন যে কেউ করে না তা তো বলা যাবে না। তবে সাদা কঙ্কালগুলো ভারত থেকে আসা-এটি নিশ্চিত। কারণ আমাদের কর্মচারীরা এত সাদা কঙ্কাল তৈরি করতে পারে না।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের সমাজকল্যাণ ও সংস্কৃতি বিষয়ক ব্যবস্থাপক সৈয়দ মিল্লাতুল হোসেন জানান, ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে যে পাঁচটি কবরস্থান রয়েছে, এখান থেকে কখনও লাশ চুরির ঘটনা ঘটেনি। সার্বক্ষণিক পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে প্রতিটি কবরস্থান।

লেখাটা শেয়ার করা।
লিখেছেন..অপূর্ব আলাউদ্দিন ::
লিনক..
Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×