somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাসর :D :D :D :D

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই বাসরঘর সাজাইছে কেডা? বান্দরের মত কাজ কারবার, লাল ফিতা দিয়া বাইন্ধা রাখছে। এইটা কি মাজার যে সে লাল ফিতা বান্ধবো !! বাসর ঘর সাজাইব গেন্দা ফুল দিয়া। গন্ধ সুন্দর, ফুলও নরম। দুনিয়ার সবচাইতে সুন্দর ফুল গেন্দা ফুল। আরেকটা জিনিস, এই ঘরে মশারি নাই। এইটা ইংল্যান্ড আমেরিকা না, এইটা বাংলাদেশ। এখানে বাসর রাতে অতি অবশ্য মশারি থাকবো। নয়া জামাই বউ কি মশা মারব না বাসররাত করবো ? কাউরে কইয়া একটা মশারি আনো ” ;) ;)


যাদের ডায়েরী লিখার শখ তারা কেউ নিশ্চয়ই আগাম কোন ঘটনা, বা স্বপ্ন লিখে রা্খে না। অহনার মেরুন রঙের কাভার দেয়া ডাইরির পাতায় পাতায় তার আগামী দিনের সপ্ন বুনন। যখন তার বিয়ে ঠিক হল, সবাই তাকে তার হবু বরের ছবি দেখাতে চাইলেও সে দেখেনি, এ ব্যাপারে সে কিছুটা প্রাচীন পন্থী , সে তার পুরো বিয়ে, বাসরঘর, সপ্ন নিয়ে, কল্পনা নিয়ে সাজালো

ডাইরির পাতায় লিখা
“ আমার বরের নাম অরুনাভ, ছিপছিপে লম্বা মেদ হীন পরিষ্কার একটা অসম্ভব স্মার্ট ছেলে। যাকে শার্ট ইন করলেও মানায়, না করলেও মানায়। দাড়ি রাখলেও ভাল লাগে, না রাখলেও ভাল লাগে। সরু নাক, একটা চশমা পরলে দারুন মানাত, কিন্তু ও চশমা পরে না।
বাসর ঘরে ঢুকে আমি চমকে গেলাম। একটা ইজি চেয়ারে সে বসা ছিল।আমাকে ঢুকতে দেখেই সে সে দাঁড়ালো , হাল্কা ভারিক্কি গলায় বলল ‘আমার এই জীবনে তোমার প্রবেশকে সম্মান জানাতে দাঁড়ালাম’ ।
আমার খুব ইচ্ছে করছিল ওর পা ছুয়ে প্রনাম করি, আড়ষ্টতায় আমি দাড়িয়ে রইলাম। সে দু পা এগিয়ে আমার দুহাত ধরে আমাকে বিছানায় বসাল । নিজে চেয়ার টেনে আমার সামনে বসলো। আমার কোলের উপর হাতে আলতো করে তার হাত রেখে বলল ‘ এই জীবনে আমার কাছ থেকে সম্মান পাবার মত অনেক কাজ তুমি করতে পারবে, যখন তুমি আমার সন্তানের মা হবে, আমি আবার তোমাকে উঠে সম্মান জানাবো ‘’ ওমা ; কি লজ্জা! কি সহজ করে সে এই লজ্জার কথা গুলো বলে যাচ্ছে । যেন আমরা কতদিনের চেনা।
ও আবার বলতে শুরু করলো “ যখন আমাদের সন্তান মানুষ হবে , আবারও তুমিই সম্মান পাবে। আমার জীবনে কোন কঠিন সময় এলে , আমার পাশে দাড়িয়ে থেকো , আমি সেদিনও তোমাকে সম্মান জানাবো ।
আমার জীবনে গোপন করার মত কিছুই আমি করতে পারি নি । তাই এই রাতে তোমাকে চমকে দেয়ার মত কোনও গোপন গল্প আমার নেই। তুমি চাইলে তোমার সবকটা গল্প করতে পার। আর না চাইলে কিছু বলতে হবে না। তবে বলব বলে অপেক্ষায় রেখ না। অপেক্ষা আমার সহ্য হয়না। আমার কোন ধরনের নেশা নেই। চা , পান , সিগারেট , মদ কোনটাই আমি নিয়মিত খাই না। তুমি চাইলে তোমার কোন নেশা ছেড়ে দিতে পারো , আর না চাইলে রাখতেও পারো । আপাতত গুছিয়ে বলার মত কথা আমার শেষ ।এবার তুমি বল ‘’’
অবাক বিস্ময়ে আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না।আমার কান্না চলে এলো । আমার মনে হল কাঁদলে সে আমাকে বুকে টেনে নেবে। না, সে তা করলো না।আমাকে ইচ্ছে মত কাদতে দিলো , একবারের জন্য বললও না কেদ না বা কাদছ কেন? আমাকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে সে বলল “ কালকে যাত্রার সময় বেশি কেঁদো না, আমি কান্না সহ্য করতে পারি না। তোমার যখন ইচ্ছে এ বাড়িতে চলে এসো , আমার তরফ থেকে কোন বাধা থাকবে না।’’ আমার মত স্বামী ভাগ্য নিয়েখুব কম মেয়ের জন্ম হয়েছে। ’’’

অহনার ডাইরিতে এতটুকু লিখা ছিল


:-*:-*:-*:-*:-*:-*:-*:-*:-*:-*
অহনা তার বাসর ঘরে ঢুকবে একটু পরে, আশ্চর্য হলেও সত্য তার স্বামীকে বাসরঘরে আগে বসিয়ে রাখা হয়েছে, আর এটা করেছে তার ছোট মাসি। হিন্দু বিয়ে, বাসররাত সর্ব মোট দুটো আর সাতচক্কর তিনবার, পাশাও খেলতে হয় তিনবার। তিন মরার চিন, বিয়ের মত শুভ ব্যপারে তিন ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। অহনার খুব লজ্জা লাগসে একা একা বাসরঘরে যেতে , তার বৌদিরা তাকে বাসরঘর পর্যন্ত নিয়ে যেতে নারাজ। দরজার চৌকাঠে পা রেখে অহনা থামল ...
অবাক করার মত ব্যপার তার ডাইরিতে লিখা বাসর রাতের কল্পনার মত করে তার স্বামীকে আগেই বাসরঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তার খুব কান্না পাচ্ছে। সত্যি সত্যি যদি তার কল্পনার মত সব কিছু ঘটে যায় , তবে সে আজ রাতে খুব খুব করে কাঁদবে। ইজি চেয়ারে ছিপছিপে চেহারার এক যুবক বসে আছে। এই তার স্বামী অরুনাভ। সত্যি যদি সব কল্পনার সাথে মিলে যায় !

বাসর ঘরে ঢুকতেই অরুনাভ উঠে দাঁড়ালো । অহনার কান্না পাওয়া শুরু হয়েছে, তার স্বামী এখন কি বলবে সে তা জানে।
তাকে অবাক করে দিয়ে অরুনাভ বলল ‘ নতুন বউ তাড়াতাড়ি পাঠায়া দিবো, এই নিয়ে বৌদি গুলান কেন যে এতো বিটলামী করে !! কতক্ষন ধইরা বইসা আছি; লগে সিগারেটের প্যাকেটও নাই, কি যন্ত্রণা ! তা তুমি দরজায় দাড়ায়া আছো কেন? লম্বা ঘোমটা দিয়া বিছানার মাঝখানে বস । নয়া বউরে লম্বা ঘোমটা দিয়া দেখতে আলাদা মজা। আমার ফ্রেন্ড লিস্ট এর সবাই বিবাহিত, শুধু আমি হারামজাদা বাকি। ’:P:P

অহনার ডুকরে আসা কান্না দলা পাকিয়ে নাই হয়ে গেলো। তার সব সপ্ন কাঁচ ভাঙ্গার মত ঝন ঝন করে ভাংছে। এই লোকটা কখনই তা বুঝবে না, তার অনির্দিষ্ট অভিনয়ের জীবন আজ শুরু।

অরুনাভ দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল “ ফাইজলামি করবার লাগি কেউ বিছানার নিচে লুকাইয়া থাকবার পারে, কেউ নাই , আমি চেক করছি। তুমি নিশ্চিত থাকো । এই বাসরঘর সাজাইছে কেডা? বান্দরের মত কাজ কারবার, লাল ফিতা দিয়া বাইন্ধা রাখছে। এইটা কি মাজার যে সে লাল ফিতা বান্ধবো !! বাসর ঘর সাজাইব গেন্দা ফুল দিয়া। গন্ধ সুন্দর, ফুলও নরম। দুনিয়ার সবচাইতে সুন্দর ফুল গেন্দা ফুল। আরেকটা জিনিস, এই ঘরে মশারি নাই। এইটা ইংল্যান্ড আমেরিকা না, এইটা বাংলাদেশ। এখানে বাসর রাতে অতি অবশ্য মশারি থাকবো। নয়া জামাই বউ কি মশা মারব না বাসররাত করবো ? কাউরে কইয়া একটা মশারি আনো ”

অহনা বাধ্য হয়ে বাসর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো । তার ইচ্ছে করছে এই জীবনে এই ঘরে না ঢুকার । কিন্তু তার কোনও উপায় নেই। এই বান্দরের সাথেই রাত কাটাতে হবে, যে গেন্দা ফুলের পুজারি।

ছোটবোন অনামিকাকে গিয়ে বলল
‘এই, একটা মশারি দে’
অনামিকা আকাশ থেকে পড়লো।
“মশারি দিয়ে তুমি কি করবে?”
অহনার ইচ্ছে হল ঠাস করে ওর গালে একটা থাপ্পর দিতে। অনামিকাও ছেলে দেখতে গিয়েছিল, ফিরে এসে ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাবার বিছানা থেকে মশারি ভাজ করে অনামিকা অহনার হাতে দিতে দিতে মিটি মিটি হাসছিল...অহনার গা জ্বলে যাচ্ছে ...

চলবে ...........................।।
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×