somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ কত কী রেখে যায়? আর নাজমুল ভাই রেখে গেল ছবি, পন্নী ফোল্ডার আর আমি...

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ কতজন, কত কিছু রেখে যায়! কত কিছু করে ফেলে!
দেখি আর হতাশ হই। আমার এই জীবনের কোন অর্জন নেই। এমন কিছু করতে পারিনি যে রেখে যাব। মানুষ কত কিছু করে। আমার বয়সী বন্ধু-বান্ধব দেখি দিব্যি ব্যাপক অর্জনের গর্জন দিচ্ছে আমি তখন আমার যা কিছু ছিল তাও বর্জনের দিকে। কারণ সেগুলোর মেয়াদ উর্ত্তীণের তালিকায়। মানুষের কত কিছু থাকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সহায়-সম্পত্তি। সমবয়সীদের কথা কি বলব? আমার চেয়ে ছোটরাই এখন জায়গা-সম্পত্তি করে সেটা নিয়ে অলরেডি বছর দুই ধরে মামলাই লড়ছে। আর আমি এ রকম জায়গা-জমি করা নিয়ে যে কোথাও বসে ভাবব, সে জায়গাটুকুও নেই।
সেই ছোটবেলা থেকেই আমি এসব করতে পারা না পারা কিংবা রেখে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে পিছিয়ে ছিলাম। আমার ক্লাশমেটরা যখন নিজের শখের ঘর গোছাতে তাদের সংগ্রহশালা পূর্ণ করে চলছিল ডাকটিকিট বা বইতে, আমি তখন তাদের ডাকটিকিট আর বই গুণে দিই। ২৪৫...২৪৫...২৪৭...বাব্বা...!
মানুষ বিচিত্র কিছু করে যায় তার নিজের নামে। স্কুল, কলেজ, চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান, এলাকায় ক্লাব। সমাজের ধাপে ধাপে যাকে মনে রাখে মানুষ।
যাদের এত সামর্থ নেই তারা হয়তো নিজেকে মনে রাখার জন্য কিছু রেখে যেতে পারবে না, তবে আমাদের এলাকার নাজমুল ভাই একটা বিকল্প বুদ্ধি বের করেছেন। তিনি দিনে তিনটা (এনালগ ক্যামেরার সময়ে) করে ছবি তুলতেন। এখন ডিজিটাল ক্যামেরার সময়ে এসে তেরো থেকে পনেরোটা করে ছবি তুলছেন। তার ধারণা তিনি এর চেয়ে বেশি কিছু রেখে যেতে পারবেন না।
মানুষ এসব ছবি দেখবে আর তাকে মনে রাখবে। যে কারণে এলাকায় তো বটেই, দেশের কোনায় এবং তার সামনে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রতিটি প্রোগ্রামে তার ছবি আছে। তিনি কেমন করে যেন সব প্রোগ্রামে ঢুকে যান। এলাকার ছোট্ট প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে জেলার ডিসির প্রোগ্রাম।
নাজমুল ভাই মানেই প্রেজেন্ট স্যার।
এ নিয়ে স্থানীয় পত্রিকাগুলো ভীষণ খ্যাপা। আমাদের কাছে নাজমুল ভাই হলেও পত্রিকার লোকদের কাছে তো তিনি আমজনতা। তারা তো আর তার মহৎ উদ্দেশ্যের কথা জানে না। তাই সম্প্রতি একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেছে। ভেতরের খবরে জানলাম, ওই পত্রিকার সম্পাদক সাহেব নানা জায়গায় নাজমুল ভাইয়ের ছবি দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ হয়ে শেষ ছবিতে নাজমুল ভাইয়ের ওপর কড়া কাঁচি চালিয়েছে।
যার প্রমাণ মিলেছে ছবিতে। দেখা গেছে, একটি গ্রুপছবিতে জনৈক ব্যক্তির শরীর আছে, মাথা নেই।
আমরা কাছের মানুষ শার্ট দেখে ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পেরেছি। আমাদের নাজমুল ভাই।
মাথা আলাদা করে দেয়ার এমন নির্মম ছবি দেখে আমরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
কিন্তু নাজমুল ভাই হেসেছেন। যদিও এ হাসি তার উদারতা বা বিষয়টাকে গুরুত্ব না দেয়া তাচ্ছিল্যের হাসি না। এমনি হাসি। কারণ, বিগত কয়েক বছরে ছবির সামনে হাসিমাখা পোজ দিতে দিতে তার এ অবস্থা হয়ে গেছে। কোন দুঃখের সংবাদ শুনেও তিনি প্রথম স্পেলে হেসে নেন।
পরে অন্য রিয়েকশন।
নাজমুল ভাইয়ের এ রকম ব্যতিক্রমী রেখে যাওয়া চিন্তার মতো আরও বেশকিছু মানুষ পেয়েছি, যারা অনেক কিছুই রেখে যাওয়ার সিস্টেম করে ফেলেছেন। যেমন আমার বন্ধু শাওনের ই-মেইল আইডি ২৭টা, যা মেনটেইন করতে তাকে মাসে একটা কিছু কাগজ এবং কলমের কালি খরচ করতে হয়। আমার ছোট ভাই মুন্নার ফেক অ্যাকউন্ট ১২টা। সাতটা মেয়ের নামে। তাকে মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসা করি, এই ফেক অ্যাকাউন্ট কী মানুষ বোঝে না। সে বেশ বিজ্ঞের মতো জবাব দেয়, আমার ধারণা আজ এরিস্টেটল বেঁচে থাকলে এভাবেই বলত। মুন্না বলে, একটা সুন্দর চেহারার মেয়ের ছবিই পারে একটা ফেক অ্যাকাউন্টকে লিগ্যাল করতে।
আমার ছোট ভাই-কাম কলিগ পন্নীর হিসাব আবার অন্য রকম। তার রেখে যাওয়ার ব্যতিক্রমী প্রবণতা দেখে আমি বিস্মিত। সে বোধহয় এ জগতে লাখখানেক ফোল্ডার রেখে যাবে। কারণ গত দু'দিন আমি আমাদের অফিসে কম্পিউটারগুলোর নানা ড্রাইভে একটা ফাইল সার্চ করতে গিয়ে দেখি, প্রতিটি ড্রাইভের কোনায় কোনায় তার নামে অসংখ্য ফোল্ডার আছে। এর নব্বই ভাগ ফোল্ডার খালি।
শুধু রেখে দিয়েছে। জমির বায়না করে রাখা আর কী।
এবার নিজের কথা বলি। আমার বোধহয় একটা কালো পেনড্রাইভ ছাড়া আর কিছু রেখে যাওয়া হবে না। গত কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করা এই পেনড্রাইভকে কোনভাবেই হারাতে পারছি না।
গত সপ্তাহেও একবার পেনড্রাইভটাকে না পেয়ে আনন্দে আমার চোখে জল চলে এসেছিল। এই বুঝি হারিয়েছে। কারণ কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
এর বাহাত্তুর ঘণ্টা পর অনেক দিন ধরে না পড়া এক প্যান্টের পকেট থেকে পেনড্রাইভ বের হয়ে এল।
মনে হল হাসছে।
সে চেহারা দেখেই আমার মেজাজ খারাপ। মনে হলো ভেঙে ফেলি।
কিন্তু এখন পেনের সাহায্যে লিখিনা বলে পেনড্রাইভটাকে কিছু বলতে পারলাম না।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×