somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি কড়া রোমান্টিক গল্প। সিরিয়াস পাঠকদের জন্য নয়।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link


এখনও বিকেল হয়নি। দেয়াল ঘড়িতে চারটা বেজে সতেরো মিনিট। শুভ জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। আকাশ জুড়ে মন খারাপ করা কালো কালো মেঘ ভাসছে। দল বেধে মেঘরা উড়ছে। শুভর ইচ্ছে করছে চশমার কাচে জমে থাকা ধুলো বালির মত আকাশের মেঘ গুলিকেও মুছে ফেলতে। জানালা দিয়ে অযথাই হাত বাড়ায় সে।
বিদূৎ চমকাচ্ছে। চারদিকে নীলচে ফ্যাকাসে আলো। দেখে মনে হচ্ছে এখুনি হয়ত রাত নামবে। শুভর মন খারাপ হয়ে যায়। আকাশের মেঘের সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করে। কেন ভাই মেঘ তুমি অসময়ে এলে! তোমার কি সময় জ্ঞান নেই? আপন মনে কথা গুলো বলে যায় সে।
মোবাইলে রিং বেজে উঠে হটাৎ করেই। ডিসপ্লেতে তনুর হাসি ভরা মুখ ভেসে উঠে। রিসিভ করতেই তনু আদর জড়ানো কণ্ঠে বলে উঠে, দেখেছো মেঘে কেমন হটাৎ করেই আকাশ ছেয়ে গেল। নিশ্চয় ঝড় আসবে।
শুভ বিষণœ গলায় সায় দিয়ে বলে, হুম তেমনটাই মনে হচ্ছে। ধুর! কিচ্ছু ভাল লাগছেনা।
- জানো, আজ তোমার জন্য আমি অনেক সুন্দর করে সেজে ছিলাম। তোমার পছন্দের কালো শাড়িটা পড়েছি। চুলে পড়েছি রজনীগন্ধা।
- তোমাকে পরীর মত লাগছে, না? আমার খুব খারাপ লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে এখুনি মেঘ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে তোমার কাছে ছুটে যাই।
শুভর কথা শেষ হওয়ার আগেই ঝমঝম শব্দে বৃষ্টি শুরু হল।

জানালার গ্রিল পেরিয়ে বৃষ্টির স্বচ্ছকণা পড়ার টেবিলে এসে পড়তে শুরু করলো। শুভ তারপরও জানালা বন্ধ করল না। বৃষ্টি দেখতে তার খুব ভাললাগে। কিন্তু আজ এই বৃষ্টি তার মনটা খারাপ করে দিল। কথা ছিল তনুর সাথে সারাটা বিকেল কাটাবে সে। বহুদিন পর হটাৎ করেই সুযোগটা এসেছিল আজ। পাশের মহল্লায় তনুদের বাসা কিন্তু তারপরও দু’জন দু’জনার সাথে দেখা নেই একমাস হল। সর্ম্পকটা জানাজানি হবার পর থেকেই সব আনন্দ উল্লাস থেমে গিয়েছে তাদের জীবন থেকে। কেন যে ভালবাসাকে ভালচোখে দেখেনা সমাজ? মনে মনে কথাটা বলে শুভ। ও প্রান্ত হতে তনু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, জানো আমার না ইদানিং কিচ্ছু ভালোলাগেনা। বাসার সবাই আমাকে শুধু উপদেশ দেয়। তুমি অবাক হবে আমার স্কুলে পড়া ছোট ভাইটা পযন্ত আমাকে উপদেশ দেয়। জানো ওরা কেউ তোমাকে সহ্য করতে পারে না!

শুভ তনুর কথার উত্তর দেয়না। তার হৃদয়টা আজ ভরাকান্ত। নিজেকে খুব একা একা লাগছে তার। সে চুপ করে বৃষ্টি দেখতে থাকে। দুরে ইলেকট্রিক তারের উপর একটি কালো কাকা ভিজছে। কাকটাকে খুব আপন মনে হয় শুভর। মনে হয় কাকটাও তার মত নিঃসঙ্গ। শুভর ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে ভিজতে।
ফোনের ও প্রান্তে অধের্য্য কন্ঠে তনু বলে, কি হল! কোথায় হারিয়ে যাচ্ছ তুমি বারবার? আমি কিন্তু ফোন রেখে দিব। তনুর কন্ঠে অভিমান।
শুভ বলে, এখন আমাদের বাসায় কেউ নেই। সারাঘর জুড়ে ভুতড়ে পরিবেশ। খুব একা একা লাগছে। ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে। ফোনে চেচিয়ে উঠে তনু , খবরদার তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে না। তোমার না ঠান্ডায় এলার্জি? একটা আইসক্রিম খেলে যে ছেলে সর্দি বাধিয়ে ফেলে তার এত রোমান্টিক হওয়ার দরকার নেই। ঠান্ডা পানিতে ভিজলে তোমার জ্বর আসবে।
- তারের উপর একটা নিঃসঙ্গ কাক বৃষ্টিতে ভিজছে। কাকটার জন্য খারাপ লাগছে।
- ভিজুক না কাকা, তোমার কি তাতে? তুমি কি নিঃসঙ্গ? আমি যে সারাক্ষন তোমাকে ছায়ার মত জড়িয়ে ধরে আছি তা বোঝনা তুমি?
শুভ তনুর কথা শুনে হাসে। আসলে শাররীক ভাবে শুভ তেমন ফিট না। ছোট বেলা থেকেই নানান রোগে আকান্ত হয়ে শরীরটা খুব পাতলা। তার গায়ের রং তার মায়ের মত ধবধবে ফর্সা। ফর্সা ছেলেদের নাকি দেখতে বোকা বোকা লাগে। তনু তাকে তাল পাতার সেপাই ,বোকা আজব সহ নানা নামে ডেকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করে। আর চোখে ভারি গ্লাসের চশমা পড়ার কারনে বন্ধুরা তাকে কানামামা বলেও ইয়ার্কি করে।
শুভ তনুকে বলে, তুমি ফোনে এখন বলছো ছায়ার মত আমাকে জড়িয়ে ধরে আছ। অথচ কাছে গেলে শুধু হাতটা ধরতে দাও। কখনো একটু আদর করে দাওনা। একবার শুধু বাবুদের যেভাবে বড়রা কিস করে সেভাবে কপালে কিস করে দিয়েছিলে। তিন বছর ধরে তোমার অবহেলা সইছি!
- জান, তুমিতো জানোই আমি একটু অন্যরকম। অন্য মেয়েদের মত আমি হেংলা হতে পারিনা। আমি কিছুটা ব্যাকডেটেট মেয়ে। বুঝেছো?
- আমি যদি ছাতা নিয়ে তোমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় আসি তুমি কি একটু বারান্দায় এসে দাড়াবে?
- পাগল হইছো নাকি? ভাইয়া তোমাকে দেখলে বৃষ্টির ভেতর ঠাঙ্গানী দিবে। আগের বার ড্রেনে পড়ে পা মচকে যাবার কথা ভুলে গ্যাছো না? সিমুর গায়ে হলুদ এর কথা বলে মাকে ম্যানেজ করে ছিলাম। দেখো মরার বৃষ্টি কিভাবে সব উল্টে-প্লাটে দিল। ধুর.. বিকেলটাই মাটি হয়ে গেল। যেভাবে মুষুলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে মনে হচ্ছেনা সহষাই থামবে।
- তোমার বিরহে দেবদাস হয়ে যাচ্ছি।
-আমি কিন্তু পার্বতী হতে পারবো না। তোমাকে ভুলে অন্যর হতে পারবনা। আজন্ম তোমাকে কাছে পেতে চাই। তোমাকে পেলে আর কিছু চাইনা আমি। গভির আবেগে কথা গুলো বলে তনু। শুভ’র খুব ভাললাগে। তারমত ক্যাবলাকান্ত টাইপের ছেলের জন্য ক্যাম্পাসের সেরা সুন্দরী মেয়েটার ভালবাসা তাকে মুগ্ধ করে। তার মনটা ভাল হয়ে যায়।
শুভ বলে, প্রেমে বিরহ থাকা ভাল। এতে করে ভালবাসার গভিরতা বোঝা যায়।
- ভাল না ছাই! দেখ আমাকে কত সুন্দর লাগছে। অথচ তোমাকে দেখাতে পারছিনা। অসহ্য!
- আমি কিন্তু তোমাকে দেখতে পারছি। চোখ বন্ধ করে তোমাকে অনুভব করছি। তোমার মায়াবী মুখটা হৃদয়ের ভেতরে ভেসে উঠছে।
তনু কৃত্তিম আশ্চার্য হবার স্বরে বলে, তুমিতো দেখছি কবি হয়ে গিয়েছো! ভাল।
তনু হাসতে থাকে।
২.
শুভদের বাসার সবার আজ খুব মন খারাপ। তার বাবা মিজানুর রহমান গত সাত বছর ধরে একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। সরকার বদল হল দুই মাস। নতুন সরকার এরি মধ্যে তাকে বদলী করে দিয়েছে চট্রগ্রাম। মিজানুর রহমান অনেক চেষ্টা তদবির করার চেষ্টা করে ছিলেন বটে কিন্তু তাতে বিশেষ কোন কাজ হলনা। শুভর বিশ্বাস হচ্ছিল না যে তাকে এ শহর ছাড়তে হবে। এ যেন বিনা মেঘে বর্জপাত! তার বাবা বললেন এখন আর কিছুই করার নেই। নতুন গর্ভমেন্টের ধারণা আমি সাবেক সরকার পন্থি! এটাই নিয়ম। আপাতত তোমরা এখানেই থাকবে। কয়েক মাস পর তোমাদের চট্রগ্রাম নিয়ে যাব।
শুভ তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা-মা তাকে অনেক ভালবাসে। কিন্তু তনুর সাথে তার ভালবাসার সম্পর্কটাকে তারা মেনে নিতে পারেনি। শুভ’র মায়ের ধারণা তার সহজ সরল ছেলেটার মাথাটা তনুই নষ্ট করেছে। মেয়েটা ইচ্ছে করেই তার একমাত্র ছেলের পিছনে আঠার মত লেগে আছে। সে প্রায়ই মনে মনে অভিসাব দেয়। অন্যান্য ছেলের মায়ের মত তারও বদ্ধমুল ধারণা তার ছেলের কোন দোষ নেই। সব ঐ পাকনা মেয়েটার দোষ। পাশের বাসার সালমা ভাবির কথামত এক পীরবাবার কাছে থেকে ২০০০ টাকা দিয়ে তৈল পড়া নিয়ে এসেছে। পীরবাবা বলেছেন এই শাহীতৈল প্রতি সপ্তাহে দুইদিন করে ১মাস নিয়মিত ছেলের মাথায় দিতে পারলে তনু-ফনুর ভুত মাথা থেকে নেমে দৌড়ে পালাবে। তাই সে তেলের বাটি নিয়ে শুভ’র রুমে আসে। শুভ চোখ বন্ধ করে তনুর কথা ভাবতে ছিল। শুভর চোখ বন্ধ দেখে তার মা ভাবলো ছেলে ঘুমিয়ে আছে। সে পড়া তৈল শুভর মাথায় দিয়ে দিল। শুভ অবশ্য বুঝতে পারলো নিশ্চয় কোন মতলবে মা মাথায় তৈল দিয়ে দিয়েছে। শুভ ঘুমের ভান করে পড়ে রইল। শুভর মা ঘুমানো ছেলেকে ঠিক মতন শাহীতৈল মাথায় দিতে পেরে বেশ স্বস্তি পেল। শুভ কখনোই মাথায় তৈল লাগানো পছন্দ করে না। সে বাথরুমে গিয়ে মাথায় সাম্পু করে ফেললো।

৩.

তনু খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে। তার প্রেমে পড়ার কোন আগ্রহ বা ইচ্ছে ছিলনা। নিছক এক দুঃঘটনা থেকেই শুভ’র সাথে তার সম্পর্কটা গড়ে উঠে। শুভ চোখে কম দেখে। চশমা ছাড়া বেচারাকে অন্ধই বলা যায়। দুইহাত দুরের কিছুও সে চশমা ছাড়া দেখতে পায়না। তবে ক্লাসে সে বরাবরি প্রথম হত। ক্লাসে সবাই শুভর বোকাসোকা চেহারা আর কথা-বার্তা নিয়ে হাসাহাসি করত। ক্লাসে বদের হাড্ডি বলে পরিচিত সুব্রত। একদিন ফাজিল সুব্রত কানাবাবা বলে ছোমেরে শুভর চশমা নিয়ে দৌড়ে পালালো। অসহয় শুভ দুই ঘন্টা ক্যাম্পাসের সিমেন্টের বেঞ্চে বসে রইল। সুব্রতর দেখা পাওয়া গেলনা কোথাও। তনু সবি দেখছিল, প্রথম দিকে সে অনেক মজা পেলেও পরে কেন যেন শুভর জন্য তার খারাপ লাগল। মায়া হল। সে শুভ’র কাছে গিয়ে জ্ঞিগাসা করলো “ কি ব্যাপার তুমি এখানে একা একা বসে আছ কেন?”



পরের টুকু টাইপ করা হয়নি.... অপেক্ষায় থাকুন।

-
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×