somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজনীতিতে প্রথম কথা, শেষ কথা এবং আসল কথা

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“মাছের পচন ধরে মাথা থেকে আর জাতির পঁচন ধরে নেতা থেকে’’-কথাটি কি আর এমনি এমনি বলা হয়! অন্তত বাংলাদেশের রাজনীতিকে সামনে রাখলে!
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই কথাটি সবাই বলেন। কোনো রকমের হীনমন্যতা বা জড়তায় না ভোগেই বলে ফেলেন, যদিও নীতির মানদন্ডে এই কথাটি কতটুকু নৈতিক, সেই সহজ ব্যাপারটি বুঝবার জন্য বিদ্যাসাগর হবার দরকার হয় না।

এদেশের রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের জন্য ঐ কথাটিরচে’ নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো বস্তু আর কিছু হতে পারে বলে অন্ত-ত আমার মনে হয় না। ঐ একটিমাত্র বাক্যকে ঠিকমত বাজারজাত করতে পারার মাঝেই রাজনীতির মাঠে জগণের সাথে প্রতারণামূলক মিথ্যাচারের কাফফারা খুঁজে পেতে চান আমাদের রাজনীতিবিদরা। কথা দিয়ে কথা রাখতে হয়না কারণ ঐ কথা শেষ কথা ছিল না। মুখে যা আসে তাই বলে ফেলা যায় যেহেতু শেষ কথা বলে কিছু নেই। ব্যাপারটি একটি গণতান্ত্রীক রাষ্ট্রের মূল কাঠামোর অস্তিত্বের জন্য কতটা ভয়ংকর, অনুমান করে নিতে কারো সমস্যা হবার কথা না। আর এমন রাজনৈতিক বসন্তবাদীদের গলায় কেমন বিশেষন ঝুলিয়ে দেয়া যায়, বিজ্ঞজনেরাই ভাল বলতে পারবেন।

(দুই)

যদিও বলা হয় শেষ কথা নেই। আর প্রথম কথা বলে কোনো কথা আমাদের স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয় না, কিন্তু রাজনীতির আসল কথাটি আমাদের অনুমান করে নিতে অসুবিধা হয় না কিছু। সেই আসল কথাটি হচ্ছে অনেকটা “তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই’’ এর মত। কথাটির ব্যাখ্যা হতে পারে এভাবে,-

জনগণের জন্য রাজনীতি করা হবে। সেই জনগণের জন্য আন্দোলন করতে যেয়ে কখনো লাশের দরকার হলে সেই জনগণকেই লাশ বানাবেন। সেই লাশের সিঁড়িতে পা রেখে ডিঙ্গাতে থাকবেন ক্ষমতায় যাবার এক একটি সিঁড়ি। সেই পিচ্ছিল সিঁড়ি ভাঙ্গতে পা যাতে ফস্কে না যায়, সেজন্য প্রয়োজন কিছু গাম জাতীয় তরল পদার্থ। এজন্য ও ভাবার দরকার নেই। অসহায় গরীব দিন মজুরের শরীরের মূল্যহীন রক্ত তো রয়েছেই।

(তিন)

একটি উন্নয়নশীল দেশের হতভাগা নাগরিক আমরা। অনেক কিছুই আমরা আশা করি না কিন্তু সেগুলো আমাদের চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়। রাজনৈতিক গলাবাজি দেখতে হয়। দল বদলের ডিগবাজি দেখতে হয়। দেখতে হয় নির্বাচন প্রাক্কলিক রাজনৈতিক চাঁদাবাজিও। আমাদেরকে অসহায়ের মত দেখতে হয় এদেশের নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা এদেশেরই সেইসব নেতা, যারা না হলে আমরা একটি চমৎকার লাল সবুজ পতাকা পেতাম কিনা সন্দেহ, তেমন মৃত নেতাদের চৌদ্দগোষ্ঠীসহ কবর থেকে তুলে আনেন। এদেশের জন্মে যাদের অবদান, তাদেরকে টেনে হেছড়ে কবর থেকে বর করে নিয়ে আসা হয় জাতীয় সংসদে আচ্ছা করে ধোলাই দেবার জন্য।

(চার)

আমরা যারা এদেশের অত্যন্ত সাধারণ এবং দুর্বল প্রজাতির লোক, যাদের কিছু কারার ক্ষমতা নেই, সেই আমাদের নিরুপায় হয়ে মাথা নিচু করে দেখতে হয়েছে এ দেশের জাতীয় রাজনীতিবিদদের সৃষ্ট সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান বের করে দেবার জন্য ৩০ লক্ষ শহীদানের রক্তের সাথে গাদ্দারী করে স্যার নিনিয়ান স্টিফেনদের দ্বারস্থ হতে। বিউটেনিসদের দরজায় গিয়ে ধরণা দিতে। বর্তমানে অবস্থা আবার সেদিকেই যাচ্ছে কি না-ভেবে আতংকিত না হয়ে পারি না।

আধুনিক গণতন্ত্রের জননী বলা হয় যে ইংল্যান্ডকে, সেই ইংল্যান্ডে কোনো সমস্যা সমাধাণের জন্য রাস্তা-ঘাট দোকান পাঠ, অফিস আদালত বা যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে দাবি আদায় করতে শুনা যায় না অথচ আমাদের এ দেশের, যেখানে গণতন্ত্র নামক শিশুটি এখনো নিজের পাঁয়ে দাঁড়াতে শেখেনি, সে দেশে দিনের পর দিন হরতাল ডেকে দেশের অর্থনীতির পাজড়ে লাথি মারা হচ্ছে সমানে।

কারা মারছেন?

মারছেন তারাই, যারা সকাল দুপুর সন্ধ্যায় নিয়মিত গণতন্ত্রের তছবীহ জপ করেন।

তাদের পরিচয় তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত।
তাদের পরিচয় তারা জিয়ার সৈনিক।
তাদের পরিচয় তারা আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন চায়।
তাদের পরিচয় তারা পল্লীবন্ধুর রাজনীতির দাবার গুটি।
ছোট-খাট দলগুলোকে হিসেবের বাইরেই রাখা হল কারণ এককভাবে তারা হরতাল ডেকে সফল করে ফেলবেন, তেমন ক্ষমতা তাদের নেই বলেই আমার ধারণা।

তো যারা হরতাল ডাকেন গণতান্ত্রীক অধিকারের ক্ষমতা বলে, তারা দিব্যি ভুলে বসেন হরতাল ডাকা যেমন তাদের গণতান্ত্রীক অধিকার, তেমনি সেই হরতাল মানা- না মানার অধিকারও গণতান্ত্রীক অধিকার। যদি নিজের গণতান্ত্রীক অধিকার অন্যের ঘাড়ে জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তাকে সৈরতন্ত্র, ফ্যসিবাদ, সেচ্ছাতন্ত্র বা যাই বলা যাক অন্তত গণতন্ত্রক বলা যায় না। আর এর নামই যদি হয় প্রকৃত গণতন্ত্র, এই জোর করে মানুষকে নিজের কথা বা নিজের দলের কথা মানতে বাধ্য করার নামই যদি হয় গণতান্ত্রীক অধিকার, তাহলে এমন গণতন্ত্র থেকে মুক্তি চাই আমরা। মুক্তি চায় এদেশের সাধারণ মানুষ।

(পাঁচ)

এদেশের মানুষ বড়ই শান্তিপ্রিয়। এতটুকু শান্তির আশায় তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে ও রাজি। এ কথা বুঝেন আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ। আর তাই এদেশের সহজ সরল মানুষের আবেগ অনুভূতিকে ব্যবহার করে থাকেন তারা বারবার ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হিসেবে। নেতা-নেত্রীরা আন্দোলন ডাকেন ক্ষমতায় যাবার পথ পরিস্কার করবার জন্য। প্রয়োজনে তারা যে জনগণের জন্য রাজনীতি করেন বলে দাবি করেন, সেই জনগণকে মুখোমুখি সংঘর্ষের মাঠে ছেড়ে দিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নিরাপদ কক্ষে বসে থেকে পর্যবেক্ষণ করেন তাদের জড়োকরা বা লেলিয়ে দেয়া গরীব অসহায় মানুষগুলো কে কার গা থেকে কত রক্ত ঝরাতে পারছে!

অস্বাভাবিক ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে আড়াই বছর পরে আমাদের নেতা-নেত্রীরা আবারো এদেশের গরীবের দরজায় এসে তাদের দুঃখ কষ্টের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করবেন। কী করে এই দুঃখি চেহারাগুলো সুখের জোয়ারে ডুবিয়ে দেয়া যায়, এ নিয়ে তাদের ভয়াবহ রকম দুশ্চিন্তা দেখে যে কারো মনে হবে-ইস! এদেশের নেতা-নেত্রীদের মন কত কোমল! সাধারণ জনগণের জন্য তাদের অন্তরে কতই না দরদ!

এমন কেউ কি আছেন যিনি তখন সাহস করে দাড়িঁয়ে যাবেন ঐ সকল নেতা-নেত্রীদের মুখোমুখি। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তাদের জিজ্ঞেস করবেন ---

“আগামী পাঁচটি বছর ক্ষমতায় টিকে থাকা বা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আপনাদের মোট কতটি হরতাল প্রয়োজন হবে? মোট কতটি লাশ হলে চলবে আপনাদের? আপনারা যখন আপনাদের প্রয়োজনে লাশ হবার আন্দোলনে শরীক হওয়ার ডাক দিবেন আমাদের, তখন সেই রাজপথের আন্দোলনে আপনাদের সন্তাদেরকে ও পাব কি আমরা আমাদের পাশে? লাশের মিছিল কেবল অসহায় গরীব দিনমজুরদের বস্তির দিকেই এগুতে থাকবে কেনো? এভাবে আর কত কাল”? এমন কেউ কি আছেন যিনি সত্যিই দাঁড়িয়ে যাবেন এক বুক সাহস নিয়ে!

(ছয়)

আমরা এদেশের সাধারণ জনগণ রাজনৈতিক স্থিতি চাই, সামাজিক প্রীতি চাই এবং তারও আগে চাই দেশের মর্যাদা। আমরা দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল সমস্যার সমাধাণ চাই। তবে সেটা দেশপ্রেম আদলে, সেটা চাই দেশের ভাবমূর্ত্তির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, সেটা চাই সাধারণ মানুষের অধিকারের প্রতি যত্নশীল হয়ে।
আমরা বিশ্বাস করি আমাদের এই চাওয়া অতি স্বাভাবিক এবং ন্যায্য চাওয়া। দারিদ্র্যের অত্যাচারে জর্জরিত গরীব দেশের নাগরিক আমরা। আত্মসম্মান ছাড়া তেমন কিছুই নেই আমাদের। আমাদের এই আত্মমর্যাদা নিয়েই আমরা অহংকার করে বেঁচে থাকতে চাই। আমরা আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে কি এই সামান্য অধিকারটুকু ও আশা করতে পারি না?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×