‘এক সন্ধ্যাকাল ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি ইডেনের পথে, আজিমপুর থেকে নিউ মার্কেটের কোলাহলে’...‘জীবন বাবু মা কর মোরে, এ নহে মোর কাব্যচর্চার চেষ্টা।’ খুব বেশি দিন নয়, মোটে সাতদিন আগে ইডেন কলেজের পথ ধরে আমি ও আমার কাজিন সুমাইয়াকে (বয়স মাত্র সাত বছর) নিয়ে হেঁটে আসতেছিলাম। তখন সন্ধ্যা হয় হয়। হঠাৎ সুমু বলে উঠল, ‘এ্যা মা ছিঃ লজ্জা নাই।’ ‘কার লজ্জা নাই সুমু? জানতে চাই আমি।’ এবার ও আমার কানের কাছে মুখ এসে ফিসফিস করে বলে, ‘ভাইয়া ঐ দেখ একটা ছেলে আর একটা মেয়ে হাত ধরে বসে আছে।’ সুমু আরো জানতে চেয়েছে, ওরা কেন এভাবে বসে আছে? এবার একথার কি জবাব দেই আমি ছোট্ট সুমুকে? জবাব এড়িয়ে সুমুর কাছে জানতে চাই, ‘আপু বড় হয়ে তুমিও কি এমন করবে?’ ‘ওম্ না, আমি ভালো’ সুমুর ঘাড় বাঁকানো উত্তর।
এরপর সুমুকে নিয়ে হেঁটে পুরোটা পথ পাড়ি দিয়ে বাসায় ফিরি। আবার ফিরতি পথে আজিমপুর আসি। এবার আমার নিজেরই চোখ পড়ে ইডেন কলেজের রাস্তার দু’পাশে। জোড়ায় জোড়ায় ছেলে-মেয়ে বসে আছে। গুটুর করে কথা বলছে। এমনকি ওদের দু’একটা কথা আমার কানে যে আসেনি তা কিন্তু নয়। ছোট ছোট বাক্য, কিংবা অসম্পূর্ণ বাক্য, ‘তুমি কিন্তু বেশ বাড়াবাড়ি করছ...।’ ‘এবার ফিরতে হবে।’ ‘কেন তুমি ওর সাথে কথা বললা?’ তখন একটা প্রশ্ন আমার বোকা মনে এসেছিলÑ‘ইডেন কলেজে তো শুধু মেয়েরা পড়ে। তবে ওদের সাথে ছেলেরা এল কোথা থেকে?’ আবার মনে পড়ে, ‘ওহো পাশে তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’ কি আজব কান্ড, একজন আরেকজনকে ঠিকই খুঁজে নিয়েছে! হয়তো মেয়েটা কুমিল্লার আর ছেলেটা রাজশাহীর তবুও ওরা দু’জনার পাশাপাশি এই আলো আঁধারিতে।
শুধু কি রাত দিনের বেলাটাও ইডেনের গেট, ইডেনের রাস্তায় জুটিদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে। চোখে পড়ে অসহায় কোন যুবক একাকি বসে পাশে ফুটপাতে। চোখ তার বইয়ের পাতায় নিবদ্ধ। ভাইয়া, এখানে তোমার কি কাজ? এখানে বসেই তোমাকে কেন পড়তে হবে? আর তুমি কেন মহিলা কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে থাক?
আমিও বোধকরি ছোট্ট সুমুর মত করে আচরন করে ফেলেছি? কি করব আমি যে এখন বড় হইনি।