কে কার নিচে চলে যেতে পারে! এই নিয়ে হিমালয়ে পাথরের নিচে অবস্থিত পাশাপাশি থাকা দু’টি ভূ-স্তরের মধ্যে প্রবল প্রতিযোগিতা। আর তারই জেরে গতকাল উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল কেঁপে উঠেছে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভূকম্প-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিমালয়ের নিচে ভারতীয় প্লেট এবং তিব্বতীয় প্লেট (ইউরেশিয়ান প্লেট ), এই দুই ভূ-স্তরে দীর্ঘদিন ধরে টক্কর চলছে কে অন্যের নিচে চলে যেতে পারে। ভূ-গর্ভে প্লেট দু’টির বিস্তার ১০ থেকে ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। রেষারেষির ফলে তাদের মধ্যে তীব্র ঘর্ষণ হয়। এবং সেই ঘর্ষণ থেকে উদ্ভূত শক্তি একটা প্লেটকে অন্য প্লেটের নিচে জোর করে ঢুকিয়ে দিয়েছে, যার পরিণতিতে এদিন সন্ধ্যায় রিখটার স্কেলে ৬ .৮ মাত্রার ওই প্রবল ভূমিকম্প অনুভূত হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা।প্রাকৃতিক কাণ্ডটিতে শক্তি নির্গত হয়েছে কতটা? জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (জিএসআই ) অবসরপ্রাপ্ত ভূতাত্ত্বিক, ভূমিকম্প-বিশেষজ্ঞ জ্ঞানরঞ্জন কয়ালের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ১০ হাজার পারমাণবিক বোমা ফাটলে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়, গতকালের ৬ .৮ মাত্রার ভূকম্পে ততটাই হয়েছে। উপরন্তু দুই ভূ-স্তরের সমান্তরাল ঘর্ষণটি হয়েছে যেখানে, তার গভীরতা খুব বেশি না থাকায় (১০-২০ কিলোমিটার) ব্যাপক এলাকাজুড়ে কম্পন টের পাওয়া গেছে। জিএসআই’র ওই অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল বলেন, ‘এদিনের ভূকম্পের কেন্দ্রস্থল যেখানে, সেই অঞ্চলটি এমনিতেই ভূমিকম্প-প্রবণ। সাধারণত দশ-বিশ বছর অন্তর ওখানে মাঝারি থেকে প্রবল ভূমিকম্প হয়। যেমন ১৯৬৫ ও ১৯৮০-তে হয়েছিল, তীব্রতা ছিল যথাক্রমে ৫ .৯ ও ৬। কিন্তু এবারের মতো এত তীব্র কম্পন আগে হয়নি।’ জিএসআই’র অবসরপ্রাপ্ত অধিকর্তা ভূমিকম্প বিজ্ঞানী দেবব্রত ঘোষ জানান, ‘ওই এলাকায় গত ৩৫ বছরে ১৮টি ভূমিকম্প হয়েছে। যাদের অধিকাংশেরই তীব্রতা রিখটার স্কেলে ৫-এর কাছাকাছি।’ভূ-তাত্ত্বিকরা জানাচ্ছেন, ভারতীয় ও তিব্বতীয় (ইউরেশিয়ান) প্লেটের রেষারেষির ফলে গোটা হিমালয়ই ভূমিকম্প প্রবণ। সেখানে সব সময়েই ১ থেকে ৩ রিখটার মাত্রার কম্পন হয়ে চলেছে, যদিও সেগুলো টের পাওয়া যায় না। তীব্রতা রিখটার স্কেলে ৪ ছাড়ালেই কম্পন মালুম হয়। প্রতিটা ছোট ভূমিকম্পেই শক্তি নির্গত হয়। তবে তার পরিমাণ তেমন বেশি না থাকায় একটা প্লেট অন্যটার নিচে ঢুকে যেতে পারে না। কিন্তু এদিন নির্গত শক্তির পরিমাণ অতিরিক্ত হওয়ার সুবাদে একটা প্লেট অন্যটার নিচে ঢুকে গেছে। বস্তুত ১৯৯৭ -এ গাড়োয়ালের চামোলিতে একই ঘটনা ঘটেছিল। নির্গত প্রভূত শক্তির প্রভাবে তিব্বতীয় প্লেটটি পিছলে ঢুকে গিয়েছিল ভারতীয় প্লেটের নিচে, যাতে সৃষ্টি হয়েছিল ৬ .৮ তীব্রতার ভূমিকম্প। রোববার তারই পুনরাবৃত্তি হল গ্যাংটকের ৫৫ কিলোমিটার দূরে, সিকিম-নেপাল সীমান্তের মঙ্গনে। ওখানে এহেন তীব্র ভূকম্পের পুনরাবৃত্তি হতে পারে কি? জ্ঞানরঞ্জন বলেন, ভূকম্প-প্রবণ এলাকায় ১০ থেকে ২০ বছর অন্তর মাঝারি থেকে প্রবল (৪ -৭ মাত্রা ) কম্পনের সম্ভাবনা থাকে। অতি প্রবল (৭ মাত্রার বেশি ) কম্পনের আশঙ্কা একশ’ বছরে একবার (সিকিম-নেপাল সীমান্তের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলটিতে এখনও তা হয়নি)। কবে, ঠিক কত মাত্রার ভূমিকম্প হবে, তার পূর্বাভাস বিজ্ঞানীরা দিতে পারেন না। প্রতিটি প্রবল ভূমিকম্পের পরবর্তী বেশ কয়েকটা কম্পন অবশ্য স্বাভাবিক ব্যাপার। এর জন্য কোন পূর্বাভাসের প্রয়োজন হয় না। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের কথায়, ‘এদিনের প্রবল ভূমিকম্পটির এক ঘণ্টার মধ্যে দু’টি পরবর্তী কম্পন অনুভূত হয়েছে সিকিমে। তীব্রতা ছিল ৫ .৩। কলকাতায় তা বুঝতেই পারা যায়নি। দক্ষিণবঙ্গ একেবারেই ভূমিকম্প প্রবণ নয়। তাই আতঙ্কের কিছু নেই।’কিন্তু সিকিম-নেপাল সীমান্তে যার উৎস, সেই কম্পন কলকাতা, এমনকি মেদিনীপুরে বসেও এতটা টের পাওয়া গেল কিভাবে?ভূ-তাত্ত্বিকদের ব্যাখ্যা, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলটি যেহেতু সাকুল্যে মাটির ১০-২০ কিলোমিটার গভীরে, তাই তার প্রভাবটা এতদূর পর্যন্ত মালুম হয়েছে। যদিও শিলিগুড়ির তুলনায় কলকাতার মাটি কেঁপেছে কম। আর ভূকম্প-পরবর্তী কম্পন তো কলকাতায় বা মেদিনীপুরে বোঝাই যায়নি। ২০০৪-এর ডিসেম্বরে সুমাত্রার সমুদ্রতলে সংঘটিত সেই ৮ .৯ মাত্রার অতি প্রবল ভূমিকম্প ও সুনামির জেরে তামিলনাড়ু-আন্দামানে সমুদ্র উঠে এসেছিল জনপদে, আর কলকাতায় পুকুরের জলে উঠেছিল আলোড়ন। সেবার কলকাতায় কিন্তু ভূ-কম্পন অনুভূত হয়নি।
হিমালয়ের নিচে দুই ভূ-স্তরের টক্করেই তীব্র কম্পন...
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !
বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।
আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব
সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন
পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!
আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!
কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন