somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

 মাদকের উৎ স ভারতের ‘তেরঘর’

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম আলো ---- ১৯/৯/১১----------


‘চাচি, একটু ওষুধপত্র খাতি আলাম। পাওয়া যাবেন না?’
‘ঘরে আইসো।’
‘শুনলাম, এখন নাকি নকল ফেনসিডিল আসতেছে?’
‘নকল না, প্লাস্টিকের বোতলে ভরে আসতেছে। তবে মাল ভালো। এর এক বোতলের দাম ১৮০ টাকা। আর কাচের বোতল ২০০ টাকা।’
ফেনসিডিলের ক্রেতা সেজে কথা হচ্ছিল যশোরের বেনাপোল ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী গাতিপাড়া গ্রামের বৃদ্ধা এক বিক্রেতার সঙ্গে। গ্রামটির পাশেই ভারতের ‘তেরঘর’।
ভারত থেকে যে পরিমাণ মাদক ও চোরাই পণ্য বাংলাদেশে ঢোকে, তার একটি অংশ আসে এই তেরঘর থেকে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশের সঙ্গে আর্থিক চুক্তিতে চোরাচালানি চক্র এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদক পাঠাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের পেটে একখণ্ড ভারত: বেনাপোল সীমান্তে ইছামতী নদীর এপারে বাংলাদেশ, ওপারে ভারত। এপারে সোয়া দুই একর ভূখণ্ডে আট ঘর ভারতীয় নাগরিকের বসতি। অতীতে এখানে ১৩ ঘর মানুষের বসবাস ছিল বলেই জায়গাটি তেরঘর নামে পরিচিত।
তেরঘরের পশ্চিমে ইছামতী নদী। উত্তর-দক্ষিণে ৬০০ থেকে ৭০০ গজ দূরত্বে বিজিবির সীমান্ত পাহারার দুটি চৌকি। পূর্ব দিকে সীমানা পিলার দিয়ে ভারতীয় অংশ চিহ্নিত করা। সেখানে কাঁটাতারের বেড়া বা পাহারার ব্যবস্থা নেই। ত্রিভুজ আকৃতির এই ভূখণ্ডের উত্তর-পূর্ব পাশে বেনাপোল ইউনিয়নের গাতিপাড়া ও বড় আঁচড়া গ্রাম। আর দক্ষিণে পুটখালী ইউনিয়নের দৌলতপুর ও পুটখালী।
তেরঘরের বাসিন্দাদের বাজারসদাই, ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, চিকিৎ সাসহ যাবতীয় প্রয়োজন মেটাতে নৌকা নিয়ে তাদের নদীর ওপারে ভারতে যেতে হয়। ফেরার সময় নৌকার পাটাতনে করে মাদকসহ চোরাই পণ্য এনে তেরঘরে মজুদ করা হয়। পরে সুবিধাজনক সময়ে তা বাংলাদেশে ঢোকানো হয়।
তেরঘরের বাসিন্দারা মাছ ধরার অজুহাতে নৌকা নিয়ে ইছামতী নদীতে ঘুরে বেড়ায়। ঘোরার সময় নদীর ওপারের তীরবর্তী কায়লানি এলাকা থেকে নৌকার পাটাতনের নিচে ফেনসিডিল সাজিয়ে ওপরে কিছু মাছ দিয়ে ঢেকে তেরঘরে আনে। গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রথম আলোর সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, তেরঘরের পাশাপাশি বেনাপোল থানা সীমান্তের অধীন পুটখালী, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, রঘুনাথপুর, গীবা ও ধান্যখোলা; শার্শা থানাধীন কায়বা, রুদ্রপুর, গোগা, অগ্রভুলট, শালকোনা, কাশিপুর ও শিকারপুর এবং চৌগাছা থানাধীন শাহজাদপুর, মাসিলা, বিজলী, বর্ণী, আন্দুলিয়া, যাদবপুর ও মাদারতলা সীমান্তের ২০টি স্থান দিয়ে মাদকসহ চোরাই পণ্য ঢোকে।
তবে তেরঘর হচ্ছে চোরাচালানিদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। এ ব্যাপারে বিজিবি দৌলতপুর ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার আজিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিকদের নৌকা তল্লাশি করার এখতিয়ার আমাদের নেই। তারা নৌকায় করে সোনা আনল নাকি মাদক আনল, তা দেখার উপায় নেই। তেরঘর থেকে ওই পণ্য বাংলাদেশের ভেতরে ঢোকানোর সময়ই শুধু আমরা দেখতে পারি।’
মাদকের ক্রেতা পরিচয়ে সরেজমিনে এক দিন: গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম দফায় মাদকের ক্রেতা সেজে তেরঘরের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে যাই। সঙ্গে ছিলেন বেনাপোল পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম ও প্রথম আলোর যশোরের আলোকচিত্রী এহসান মিথুন।
কথা প্রসঙ্গে গাতিপাড়া গ্রামের মাদক বিক্রেতা ওই বৃদ্ধা বললেন, ‘কী করব বাবা, সাত-আটজনের সংসার। তেরঘর থেকে জোনের (দিনমজুর) মাধ্যমে ফেনসিডিল আনায়। জোন, বিজিবি আর পুলিশের টাকা দিয়ে আর কিছু থাহে না। যে কয় পয়সা আয় হয়, তা দিয়েই সংসার চালাতি হয়।’
গাতিপাড়া, বড় আঁচড়া, দৌলতপুর ও পুটখালী গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গ্রামগুলোর ৮০ শতাংশ বাড়িতে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি বাড়িতে মোটরসাইকেলে করে ক্রেতা আসছে, যাচ্ছে। অনেকে জামার নিচে বোতল লুকিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
সাংবাদিক পরিচয়ে সরেজমিনে: একদিন তেরঘরের দক্ষিণ পাশে কামারবাড়ী বিজিবি পোস্টের পাশে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই জওয়ানেরা তৎ পর হয়ে ওঠেন। এক জওয়ান বললেন, ‘কেন এসেছেন? এই এলাকায় তো অবাধে আসা-যাওয়া যাবে না।’
বললাম, ‘শুনেছি, তেরঘর থেকে অবাধে মাদকের বড় চালান নেওয়া হচ্ছে।’
সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে সীমান্তের কথিত মাদকসম্রাট তবি সরদার বলে ওঠেন, ‘এসব কথা আপনাদের কারা বলে? ফালতু কথায় কান না দিয়ে এখান থেকে যান।’
বিজিবির ওই তল্লাশি চৌকিটি পড়েছে তবি সরকারের জমিতে।
তেরঘরের দক্ষিণ পাশের বিজিবি কামারবাড়ী পোস্টের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তেরঘরের বাসিন্দাদের সবার আর্থিক অবস্থা ভালো। প্রত্যেকেরই ওপারে ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। কায়লানি এলাকায়ও তাদের ঘরবাড়ি আছে। ওরা মূলত তেরঘরে থাকে মাদক ও চোরাই পণ্যের ব্যবসা করতে।
যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সুপার কামরুল আহসান বলেন, ‘তেরঘর থেকে মাদক আসছে। আর তেরঘরের দুই পাশে বিজিবির দুটি প্রহরা পোস্ট রয়েছে। সেখান থেকে মাদক এলে পুলিশের কী করার আছে? দেশের ভেতরে মাদক ঢুকিয়ে প্রতিরোধ করার চেয়ে সীমান্তে ঢোকার মুখেই তা প্রতিরোধ করতে পারলে মাদক নির্মূল হবে।’
এ ব্যাপারে ২২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিব আলম বলেন, ‘তেরঘর অরক্ষিত বিধায় দুটি তল্লাশি চৌকি দেওয়া হয়েছে। বিজিবির জওয়ানেরা ফেনসিডিলের বোতলপ্রতি পাঁচ টাকা করে নেন বলে আমিও শুনেছি, কিন্তু প্রমাণ পাইনি। কিন্তু জওয়ানদের জিজ্ঞাসা করলে তারা অস্বীকার করে।’
বিজিবির কর্মকর্তা বলেন, ভারতীয় সীমান্তে বেশ কয়েকটি ফেনসিডিলের কারখানা আছে। সেখান থেকে নারীরা শরীরের সঙ্গে বেঁধে, জেলেরা নৌকায় লুকিয়ে ফেনসিডিল নিয়ে দেশে ঢুকছে। বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠকে বিষয়টি একাধিকবার জানানো হয়েছে, কিন্তু তারা কারখানার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×