মায়ের মর্যাদা,মায়ের প্রতি সম্মান এইসব নিয়া হাজারটা উপদেশমূলক কথা,গল্প ছুডুবেলায় শুনে নাই,এইরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া মনে হয় বিরল।এত উপদেশবাণী,গল্প শোনার পরও মায়ের মনে অল্প বিস্তর বা বড় দুঃখ দেয় নাই,এইরকম সন্তান একটাও নাই বলে আমার মনে হয়।
আমিও তার ব্যাতিক্রম না। ছোটবেলায় রাগটা মনে হয় আমার বেশিই ছিল(ভাগ নাই গরুর লাফানি টাইপের আর কি!!)।কোন কিছু আমার পছন্দ মত না হইলেই চিল্লাচিল্লি করতাম।বলাবাহুল্য সব কিছুই মায়ের সাথে।বাপের সামনে এইরকম করার বিন্দুমাত্র সাহসও ছিলোনা।
বেশ বড় হবার পরও নিজের হাতে ভাত খেতাম না।নিজে নিজে খেতে পারতাম না যে তা নয়।তারপরও বসে থাকতাম, মা কখন নিজের হাতে ভাত খাইয়ে দিবে সে অপেক্ষায়।মায়ের হাতে ভাত খাবার পরে মা’র শাড়ীর আঁচলে মুখ মুছতাম।মায়ের আঁচলের এই শান্তির পরশ এই দুনিয়াতে আর কে দিবে জানিনা!!এখন পড়ি ইউনিভার্সিটিতে।সেশনজট না থাকলে এতদিনে চাকরীর বয়স হয়ত এক বছরের মত হয়ে যেত।কিন্তু এখনো বাড়ি গেলে মায়ের হাতে ভাত খেতে মন চায়। কিন্তু পারিনা, কেমন জানি লজ্জা করে। আসলেই বড় হয়ে গেছি মনে হয়।
আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি।রোড এক্সিডেন্টে আহত হল মা।সবাই বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছে।কিন্তু তারপরও সারা দেহে ২৮টা ভাঙ্গা হাড়, আর ফুসফুসে ইনফেকশন নিয়ে হাসপাতালে পড়ে ছিলো।বাঁচার কোন কারণ ছিলোনা,খালি আমার মত বজ্জাত রে চাইরটা খাওয়ানোর জন্যই মনে হয় মৃত্যুর সাথে লড়াই করে বাড়ি ফিরে এলো।ভাঙ্গা হাড় নিয়ে বিছানায় পড়ে আছে, তারপরেও আমি কখন,কি খাইলাম না খাইলাম সেইসব নিয়া চিন্তার অন্ত নাই।এখনো বাড়ি গেলেই আমারে একটু ভাল করে খাওয়ানোর জন্য কত কি যে করে মা।আমি বিরক্ত হয়ে চরম ঝাড়ি দেই।
আরেকবার হইল আমার জন্ডিস না কি জানি ৭ দিন ধইরা জ্বর নিয়া বিছানায় পইড়া আছি।বিছানায় পইড়া ছিলাম প্রায় এক মাস। বিছানায় খাওয়া,হাগা, মুতা সবই।কিন্তু তাতেও একটা মানুষের কোন সমস্যা নাই।দিনে রাতে ক্লান্তি নাই তার।সারা দিন গাধার মত খেটে চাকরি করে এসে রাতে আমার জন্য জেগে বসে থাকত।যদি আমার কিছু খাইতে মনে চায়।যদি আমার কিছু দরকার লাগে।সে মানুষটা হইল গিয়া আমার মা।
একবার মায়ের সাথে ঝগড়া করেছিলাম।তখন পড়ি ক্লাস নাইন বা টেন এ। ঝগড়া করে রাতে আমি ভাত খাইনি।বাবা গেছেন কোন এক অনুষ্ঠানে।আমি না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। ক্ষুধার জ্বালায় পরের দিন ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঘুম গেল ভেঙ্গে।উঠে দেখি ডাইনিং টেবিলে চিড়া,দই,কলা বাটিতে নিয়ে বসে আছে মা।আমি অভিমানের বশে মার দিকে না তাকিয়ে বেসিন থেকে ব্রাশ নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম।ফিরে এসে দেখি মার চোখ থেকে অঝর ধারায় পানি পড়ছে। আমি তাকিয়ে আছি হতভম্ব হয়ে।আর মা’র চোখ থেকে ঝরছে পানি।সেই কান্না চোখে নিয়েই মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,তোর ক্ষুধা লাগছে।একটু খেয়ে নে বাবা। তারপরের দৃশ্য হল,মা’র বুকে মাথা রেখে আমি বসে আছি।মা’র চোখ দিয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে,আর মা আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে।হঠাত কি জানি মনে হল, মা’কে জিজ্ঞেস করলাম,”তুমি কালকে রাতে খাও নাই??”মা’র উত্তর, “তুই না খেলে আমি কেমনে খাই রে বাবা”।
একটা মানুষের লাইগ্যা এতটা কষ্ট মনে হয় একটা মেয়েই করতে পারে।আমি হইলেতো পোলা রে কানের নিচে দুইটা থাবা দিয়া বসায়া রাইখা দিতাম। কিন্তু এই মেয়ে জাতটা যে কেমন বুঝিনা।নিজে কষ্ট পাইয়া মুখ বুইজা সে কষ্ট সহ্য করা এরা কেমন যে পারে, আমি বুঝিনা।এরা কেন যে এমন হয়!!!!!!
এখন থাকি হল এ।কয়দিন আগে চরম জ্বর হয়ে গেল।একলা একলা রুম এ পড়ে আছি।কপালে হাতটা রাখবে এমন কেউও নাই। অসুস্থতার কথা বাসায় মা’কে জানাই নাই। জ্বরের ঘোরে কোন কিছু খেয়াল নাই।হঠাত মনে হইল কে জানি কপালে হাত রাখছে.........
হলের খাওয়া দাওয়া আমার পোষায় না।আধপেটা খেয়ে থাকতে বেশির ভাগ সময়।কিন্তু আমারে মুখে তুলে দিয়ে খাওয়ানোর কেউ এখানে নাই......
মা’র অনেক স্বপ্ন,আমি বড় হমু।বাইরে পড়াশুনা কইরা বড় ডিগ্রী লাগামু,বড় চাকরী করমু।কোনটাই আমারে দিয়া হবেনা জানি। মা’রে অনেক দিন ঝাড়ি দিছি।মা’য় কাঁদছে অনেক দিন।যতরকমভাবে কষ্ট দেয়া যায় সব ভাবেই হয়ত দিছি মা’রে।কিন্তু তারপরেও মাঝে মাঝে মা’র কথা মনে হলে গভীর রাতে কম্বলের নিচে মুখ লুকায়া কান্দি।ভাবি এখনই মা’রে ফোন কইরা বলব,মা তোমারে আমি অনেক কষ্ট দিছি।আমারে নিয়া তোমার সব আশা আমি ভাইঙ্গা দিছি।তারপরেও তোমারে অনেক ভালবাসি মা।তুমি ছাড়া জ্বর হইলে কপালে হাত রাখনের আর কেউ নাই,আমারে মুখে ভাত তুইলা খাওয়ানোর কেউ নাই। তোমারে আসলেই অনেক অনেক ভালবাসি মা।
কিন্তু কেন জানি কোনদিনই মা’রে এইকথাগুলান বলা হয় না...............
ভালো লাগছে তাই কপি + পেষ্ট করলাম ।