-কি হইছে? মুখটা অমন কালো করে আছিস ক্যান?
-কিছুনা,এমনি।তোর ক্লাশ শেষ?
-হুম,শেষ।মন খারাপ?
-নাতো!
-মন খারাপ?
-না।
-২বার কিন্তু জিজ্ঞেস করা হয়ে গেছে।আরেকবার করব।
-কর
-মনটা খারাপ?
-না,না, নাআ।
-আচ্ছা,ঠিক আছে।বুঝলাম। আজকে জানিস ক্লাশ এ কি হইছে?অনেক মজার একটা কান্ড ঘটছে......একটা তেলাপোকা দেখে তো ক্লাশের মেয়েরা ভয়ে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিল।আমি অতি সাহস করে গিয়ে তেলাপোকাটারে পা দিয়ে চাপা দিয়ে মেরে ফেললাম।ব্যাস,অতি সাহসী পুরুষ খেতাব পেয়ে গেলাম।চিন্তা কর! সাহসী পুরুষ খেতাব পাওয়া কত্ত সহজ কাজ!
-হুম,সহজ।
-তারপরে কি হল,শোন।স্যার আসলো রুম এ.......
-তুই থামবি?
-তুই শুরু করলেই তো থামতে পারি!
-কি শুরু করব?!
-মুখ কালো করার কারন?
-বলছিনা কিছুনা না! সবসময় কি ক্যাচক্যাচ করতে ভাল লাগে? একটু চুপ থাকতে পারবনা?!!!
-পারবি না কেন! ২০০বার পারবি,৩০০বার পারবি।মুখের ক্ষমতা আছে চুপ করে থাকার।কিন্তু কানের নেই।তার ইচ্ছে না হলেও তাকে শুনতেই হবে। শোন,যখন ক্লাশ শুরু হল.......
-আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ কর!
-মনটা খারাপ কেন বল?
-তুই কি এই জিনিস ভুলবি না?
-হুম,ভুলে যাব।
-তাইলে ভুইলা যা।
-উত্তর দে,শুনি।পারলে কিছু করি,তারপরে ভুইলা যাই।ফ্রি টিপস দিলাম।ভেবে দ্যাখ।
-আচ্ছা, মন খারাপ।
-ক্যান?
-এমনি।
-এমনি ক্যান?
-ফালতু ক্যাচাল করবি না
-আরে! কারো এমনি মন খারাপ থাকে না! এমনিটা কেন হইলো জানতে চাই।
-একা একা লাগতেছে।
-একা একা!ক্যাম্পাসে কত্ত মানুষ! আর, তোর একা লাগছে!
-হুম।
-তারমানে নির্দিষ্ট কারো জন্যে একা লাগছে?
-হুম
-তোর চোখ থেকে পানি পরছে।চাইলে কমন মিথ্যে টা বলতে পারিস। চোখে কিছু পড়ছে?
-না।কানতেছি।
-কাকে চাচ্ছিস?
-জানিনা
-তাকে চিনিস?
-না
-ও! তাইলে স্বপ্নে পাওয়া?
-না।কল্পনায় বানানো।
-ও। কল্পনা পুরুষ! নতুন নাম।এইটার কি আকিকা হবে?
-নাম আমার কাছে পুরান হইয়া গেছে,তুই ইন্টারভিউ বোর্ডের মত করে জিজ্ঞেস করতেছিস কেন?!
-তাকে এখনই চাচ্ছিস ক্যান?কোন দরকার?
-হুম। তাঁর কাধটা খুব দরকার।
-কাধটা?
-হুম।মাথা রেখে কাঁদবো।খুব কাদতে মন চাইতেছে।
-কোন কাধটা চাস,বল? যদি মনে করিস,মাথায় হাত বুলায় দিবে তাইলে বাম কাধ ভালো।ডান হাত বুলায় দিতে সহজ হবে।তবে কল্পনা পুরুষ বাহাতি হলে...
-ইচ্ছে করতেছে তাঁর কাছে ঝাপিয়ে পরে কাধে মাথা রেখে খুব করে কাঁদি।
-ঝাপিয়েও পরবি?! কত দূর থেকে দৌড় টা শুরু হবে? এক হাত দূড়ে হলে ঝাপায় আনন্দ পাবিনা।তুই পরলি আর সে টের ই পেলনা টাইপ হলে মজা নাই।দূর থেকে আসলে সে ব্যথা পাবে বেশি।সেই ব্যাথা সহ্য করে যদি তোকে সান্তনা দিতে পারে তাহলে একসাথে ২ পরীক্ষায় পাস।
-তুই এত কথা বলস ক্যন?!
-দৌড় টা সিনেমাটিক ভাবে দিলে কেমন হবে বলত! কল্পনা পুরুউউউউউউউউষ...... চিৎকার করতে করতে তুই দৌড়ে গেলি? সিনটা সারাজীবন মনে থাকবে।হাসি,আনন্দ মিক্সড খিচুড়ী।
-আমার ভালবাসা কি সিনেমা নাকি? সিনেমাটিক হইতে হবে কেন!
-আচ্ছা,এই প্ল্যান বাদ। কতটুকু দূরে সে থাকবে,বল? এতটুকু হবে?
-এটা তে তো ঝাপায় পড়া যাবেনা।
-আরেকটু যাই,না? ৩হাত হবেনা?
-হুম,এইবার হইছে।এই টুকু তে সে ব্যাথা পাবে না?
-পাবে মানে?তবে তুই একটু জোরে ঝাপ দিবি,বুঝলি?তুই যেহেতু পরীক্ষক,প্রশ্ন এইবার একটু হার্ড করবি।যেন পাস মার্ক তুলতেই জান বেরোয় যেন যায়।
-কিহ?
-লাইট,ক্যামেরা,এয়াকশন বলব? সিনেমাটিক না হলেও সিনেমার আবহ টা থাক। আচ্ছা,বাদ।অমন করে তাকাইসনা।
এইবার কি ঝাপায় পরবি?আমি কি চুপ করে দাড়াবো,নাকি অপেক্ষার ভঙ্গিতে অন্যমনস্ক হয়ে থাকবো? এইভাবে অবাক হয়ে তাকায় থাকিস না? তোর চোখ ২টা নোনাপানিতে ধুয়ে এখন এমন রূপ নিছে,যে তাকায় থাকার মত শক্তি আর আমার নাই।
............................
এরপরের টুকু কল্পনা করা খুব কষ্টকর কিংবা আমার অক্ষমতা।
ছেলেটি খুব খুব হার্ড প্রশ্ন টাতে লেটার মার্ক পেয়ে পাস করেছিল,এটুকু শুধু আমি বলতে পারি।
থাকুক।তাদের দুজনের অনুভুতিটা এক হবার সময়টুকু তাদের একান্তই থাকুক।
দীর্ঘ চাপা কষ্টের প্রতীক্ষার পর আর গোপন করে রাখা ভালোবাসার প্রকাশের পরের মুহুর্ত টুকুর ব্যখ্যা একমাত্র বিধাতাই জেনে রাখুক।