somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী ও শিশু নির্যাতন: শশুর বাড়ি জিন্দাবাদ

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের কোম্পানির এসফল্ট প্লান্টে (বিটুমিন তৈরির) প্রচুর বাঙালি কাজ করে। এদের অনেকের সাথে আমার হৃদ্যতাও গড়ে উঠেছে।
ডাক্তারের বারণ থাকা সত্ত্বেও গত রোজার মাসে ২/৩ দিন তাঁদের সাথে দেশীয় ইফতার (ভাজা-পোড়া) খেয়েছি।
এদের মধ্যে একজন আমায় জামাতা বলে ডাকে! তাঁর ৮ বছরের মেয়ে টুনি ফোন করলেই বলে, "মুঝছে শাদী করোগী?"
বলি, "কিউঁ নেহি"! সে হেসে গড়াগড়ি খায়। মনে মনে ভাবি, "আকাশ সংস্কৃতি তোর বদলে গাঁও গেরামের ছেলে মেয়েও আজকাল হিন্দি
ছবির ডায়লগ বলে!"
শনিবার রাত ১০টার দিকে তাঁর ফোন পেলাম।
ঘটনা শুনে অনেকক্ষণ থ হয়ে বসে রইলাম!
তাঁর বোনের বিয়ে হয়েছে ১৬ বছর। ভগ্নীপতি ঢুবাই থাকে।
৫ ননদের সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। ভায়েরা আলাদা।
এক ননদ ও তার জামাতা মিলে চাপ দিচ্ছিল, 'ভাইকে বল তোমাদের জামাইয়ের ব্যবসা খারাপ। ঈদের আগে কিছু টাকা দিতে, দোকানে মাল তুলবে"।

গৃহ বধূটির দুটি সন্তান পড়ালেখা করে জামাই যে টাকা পাঠায় তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যায়।
তবু বরকে বুঝিয়েছে,"দাও না কিছু টাকা, বেচারা বিপদে পড়েই এসেছে।"
বরটি টাকা না দিয়ে উল্টো বোনকে ফোনে ধমকেছে।
এই হল ঘটনা।
ননদের জামাই আর ননদ মিলে ভাবিকে প্রচণ্ড মার-ধর করেছে।
দুই সন্তান বাধা দিলে তাদেরও মার-ধর করা হয়েছে।

মারের চোটে গৃহ-বধূটি অজ্ঞান হয়ে পড়লে শশুড় বাড়ির লোকেরা তাকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ঢামেক এর ইমার্জেন্সীতে নিয়ে যায়।
বধূটি আত্ম-হত্যার অপ-চেষ্টা করেছে বলে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করে।
রোগিণীর ঠাঁই হয় ইমার্জেন্সী ওয়ার্ডের বারান্দায়।
অচেতন পড়ে আছে।
ডাঃ দেখেনি ।
পারলে যেন কিছু করি।


শুরু হল আমার ফোন। এই বেসরকারি চ্যানেলের অমুক, ঐ চ্যানেলের তমুক, অমুক পত্রিকার তমুক, কাউকে বাদ দিলাম না।
সেই রাতে কেউ ফোন ধরল না কিম্বা বন্ধ ছিল!
নিজেই লজ্জা পেলাম রাত ২টায় আমি কেন তাঁদের বিরক্ত করছি!
এক বন্ধু ঠিক কল ব্যাক করল। জানতে চাইল, " দোস্ত এত রাতে? সব ঠিক আছে?"
তাঁকে সব বললাম। এ-ও বললাম আগে ভিক্টিমকে বাঁচাও।
বন্ধু আমার কি করেছে জানিনা শুধু এইটুকু জানতে পেরেছিলাম, ভিক্টিম সিট পেয়েছে,
ডাঃ, নার্স সার্বক্ষণিক তৎপর, বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছে!
বন্ধু তোমায় লাল সালাম।
সকালে ক্র্যাব (ক্রাইম রিপোটার্স অব বাংলাদেশ) এর মেডিকেল রিপোর্টাররা আহতের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
রোগিণীর জ্ঞান ফিরেছে, কথা বলা বারণ।

ভার্চুয়াল জগতের যাদেরকে আমি চিনি, যারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লম্বা চওড়া কথা বলেন, যারা এতটাই প্রভাবশালী যে ইচ্ছে
করলেই মানবিক কারণে রোগিণীর পাশে দাঁড়াতে পারতেন। আমি তাদের কাউকে ই-মেইল, কাউকে ফেসবুকে লিখেছিলাম।
তাঁরা জবাব পর্যন্ত দেননি! কেন দেননি আমি জানিনা। শুধু একজন পুলিশের কর্মকর্তা (বিশেষ শাখার) জবাব দিয়ছিলেন।
নিজেদের লোকবলের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে তাঁর পক্ষে যতখানি করা সম্ভব করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন।
তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। আপু তোমার জন্য শুভকামনা।

পরের ঘটনা অনেক সংক্ষিপ্ত; আমার এক ক্লাস-মেট পুলিশের বড়-কর্তা (বিসিএস), তাঁকে ফোন করেছিলাম।
বলে, "বন্ধু কাউকে লাগবে না, মেডিকেল সার্টিফিকেট লাগবে না। রোগীর আত্মীয় স্বজনের কাউকে থানায় যেতে বল এখুনি।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে সবাই গ্রেফতার হয়ে যাবে। এটা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা।
ভিক্টিমের জবানবন্দী ১ ঘণ্টার মধ্যে নেয়া হবে।
এমন রিমান্ডে দিমু মেয়েদের গায়ে হাত তুলতে ৫০ বার চিন্তা করবে।"

ঘাম দিয়ে জর ছাড়ল! যাক এখনও ভাল কিছু মানুষ এদেশে আছে। বন্ধু তুমি আর তোমার মত করিৎকর্মা পুলিশ অফিসারদের আমার শুভেচ্ছা।

অল্পক্ষণের মধ্যেই ফোন পেলাম। রোগিণীর ভাই বলছে, প্লীজ পুলিশকে থামান। আমরা চাইনা অঘটন ঘটে যাক।
এখন পুলিশ যদি আসামিকে ধরে আর মারধোর করে তবে দুটি সন্তান সহ বোনটির দায় আমাদের কাঁধে এসে পড়বে!
এই আক্রার বাজারে এদের ভরন পোষণ কি করে করবো?
আর সাংবাদিক ভাইদের বলেন "ঘটনা যেন মিডিয়ায় প্রকাশ না করে"।
ক্ষেপে গেলাম। বললাম, "ঐ মিঞা বোনটার জ্ঞান যদি আর না ফিরত? কি করতেন বোনের শশুর বাড়ীর আত্মীয় স্বজন দিয়ে"?
আবার ভাবি, "সত্যি-ই তো কে নেবে তাঁর দায়?"

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আমার ভগ্নীপতি বাংলাদেশে আসছে রবিবার। সে দায়িত্ব নিয়েছে। বোন ও তাই চায়।
তাছাড়া পঞ্চায়েত, ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, উপ-জেলা চেয়ারম্যান সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।

জয় হোক মানবতার!
বধূটি সুস্হ হয়ে ঘরে ফিরেছে।

মনটা তবুও অশান্ত। কত গৃহবধূ রোজ নির্যাতিত হচ্ছে, এমন কত ঘটনা সবার অগোচরে থেকে যাচ্ছে!
ক'জনের খবর সংবাদ মাধ্যমে আসে?
সবাই যদি গৃহ-বধূ রোমানার মতো সাহসী হতো তবে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন কারীরা একটু চুপসে যেত!
সবাই যদি রোমানার মত বড় পরিবারের মেয়ে হতো?

ছবিঃ দি ডেইলি স্টার ১৪, সেপ্টেম্বর,২০১১ এর সৌজন্যে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×