somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এমটিভির বাখরা……… (আমার মেডিকেল কলেজ জীবন-৪)

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উপমহাদেশে তুলনামূলক ভাবে আমাদের দেশেই মেডিকেলে পড়াশোনার খরচ বোধহয় কম এবং একটু সহজও বটে। যে কারণে এখানে নেপাল, ভুটান এমনকি ভারত থেকেও ছেলে মেয়েরা ডাক্তারী পড়তে আসে। আমাদের ব্যাচেও তেমনি আটজন নেপালী পড়তে এসেছিলো। এরা এসে খুব দ্রুত এখানকার নিয়মনীতি, আচার-ব্যবহার সব কিছুর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে থাকে।

আমাদের ফিজিওলজী লেকচারার স্যার ছিলেন রাজীব স্যার, জে-১ ব্যাচেরই স্টুডেন্ট। খুব সহজ সরল ছিলেন। পড়ানোর সময় মেয়েদের দিকে তাকাতেন না, কখনো কোনো ছাত্র বা ছাত্রীকে ধমক দিয়েছিলেন কি না তাও মনে পড়েনা। সে তিনি প্রথম ক্লাসে নেপালীদের বাংলায় জিজ্ঞেস করলেন, “ তোমরা বাংলা বুঝতে পারো?” তারা আটজনেই মাথা দুই পাশে নাড়ালো, আমরা যেভাবে ‘না’ বলি। স্যার খুব বিপদে পড়ে গেলেন। অসহায়ভাবে বললেন, “ঠিক আছে, আমি ইংরেজীতে পড়াচ্ছি, কিন্তু আমার বলতে একটু সমস্যা হবে, তোমরা কিছু মনে করো না”। উনি কিন্তু খুব ভালোভাবেই পড়ালেন, চমৎকার ইংরেজী বললেন। লেকচার শেষে নেপালীদের আবার জিজ্ঞেস করলেন, “ Do you follow me? My lecture?” তারা আগের মতোই মাথা দুই পাশে নাড়ালো। এবার শুধু রাজীব স্যার নয়, আমরা সবাই খুব বিস্মিত হলাম।

পরে একজন নেপালী দাঁড়িয়ে যা বললো তার সারমর্ম হলো, দুই পাশে মাথা নাড়ানো মানে ‘হ্যা’-বোধক, আর সামনে পিছনে মাথা নাড়ানো মানে ‘না’-বোধক, ঠিক আমাদের বিপরীত। এরপর থেকেই কেউ যদি কখনো জিজ্ঞেস করতো কিছু বুঝতে পেরেছি কি না, মাথা দুই পাশে নাড়াতাম।


আমাদের নেপালী বন্ধুরা, যাদেরকে একসময় আর নেপালী মনে হতো না, বাঙ্গালীই ভাবতাম

নেপালী বন্ধুদের মধ্যে একজনের নাম ছিলো একরাজ লুইটেল। আমরা যখনই ওকে জিজ্ঞেস করতাম ওর বাবা কি করে, উত্তর ছিলো ‘ফার্মার’। অনেকদিন পরে জানতে পারলাম ফার্মার মানে দু’তিনটা চা বাগানের মালিক। একরাজকে নিয়ে আরেকটি মজার ঘটনা আছে। একবার একরাজ এক বাংলাদেশীর কাছে বাংলা ভাষায় সবচেয়ে খারাপ গালি কি জানতে চাইল। বলা হলো, ‘দুলাভাই’। এরপর থেকেই একরাজ যখন কারো সাথে রাগারাগি করতো, ‘তুই আমার দুলাভাই’ বলে সমানে চেচাতো। যেদিন এক সিনিয়র নেপালী ভাইয়ার কাছ থেকে জানতে পারলো ‘দুলাভাই’ মানে ‘জিজাজী’, সেদিন ওর ধারে কাছেও আমাদের কারো যাবার সাহস ছিল না।

আমার রুমমেটদের মধ্যেও একজন নেপালী ছিলেন, লোকমানি ভাইয়া। আমাকে খুব পছন্দ করতেন। একদিন লোকমানি ভাইয়াকে বললাম, মৌ্রিনকে কিভাবে মনের কথা বলা যায়। আমাকে পরামর্শ দিলেন মৌরিনের গ্রুপের (আমি ছিলাম ‘এ’ গ্রুপের, মৌ্রিন যতদূর মনে পড়ে ‘সি’ গ্রুপের ছিলো) কারো সাথে ভালো সম্পর্ক করে তাকে দিয়ে কার্যোদ্ধার করতে। আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে খুঁজে বের করলাম ববিকে। না, ববি কোনো মেয়ে নয়, ছেলেই বটে, চট্টগ্রামে বাড়ি। আমাদের ছেলেদের মধ্যে ও-ই সবচেয়ে ভালো গান গাইতে পারতো, সে সুবাদে মৌরিনের সাথেও ভালো সম্পর্ক। ববি আমাকে ভরসা দিলো।

নবীন বরণ হয়ে যাবার পর আমরা চিন্তা করলাম একমাস উপলক্ষে শুধুমাত্র আমাদের ব্যাচের আমরা সবাই মিলে ছোট খাটো একটা ঘরোয়া অনু্স্ঠান করি। যেই ভাবা, সেই কাজ। একদিন সন্ধ্যায় সবাই একত্রিত হলাম। রীতিমতো ক্যাম্পেইন করে ‘মিস জে-৮’ নির্বাচিত করেছিলাম মেরিনা মানান্ধরকে, কোনো বাংলাদেশীকে নয়, এই চিন্তা করে যে সে আকাশে উড়তে থাকবে। ‘মিষ্টার জে-৮’ হয়েছিলো বাবু, নটরডেমিয়ান। এবার আর কবিতা পড়ার দুঃসাহস দেখাইনি আমি।

প্রোগ্রামের একটা অংশ ছিলো লটারীর মাধ্যমে একজন ছেলে আর একজন মেয়ে মঞ্চে যাবে এবং একে অপরকে কিছু বলবে। আমি মনে-প্রাণে চাচ্ছিলাম আমার সাথে যেন মৌ্রিনের হয়। কোথ্থেকে কি হয়ে গিয়েছিলো বুঝতে পারছিলাম না, হঠাৎ করেই দেখলাম মৌ্রিনের সাথে নাম উঠলো ববির (অনেকদিন পর জানতে পেরেছিলাম ব্যাপারটা পূর্ব পরিকল্পিত ছিলো)। হতাশায় যখন মুষড়ে যাচ্ছিলাম, তখনই আমার সাথে নাম উঠল মেরিনার।

আমি যখন মঞ্চে্র দিকে যাচ্ছিলাম তখন একরাজ আমাকে একটা নেপালী ভাষার বাক্য বলে দিয়ে মেরিনাকে বলতে বললো।আমিও কোনো কিছু চিন্তা না করেই বলে ফেললাম। সব নেপালীরা হো হো করে হেসে উঠলো, আর মেরিনার দিকে তাকিয়ে দেখি সে লজ্জায় লাল হয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যাচ্ছে। আমি হতবুদ্ধির মতো একা দাঁড়িয়ে রইলাম।

একরাজকে পরে বাংলা মানে জিজ্ঞেস করাতে ও হাসতে হাসতে বললো, “আমি তোমাকে চুমু দিতে ইচ্ছে পোষন করছি”। বুঝতে পারলাম দুলাভাই-এর ঝাঁঝটা আমার উপর দিয়েই গেলো।

ভালোবাসার কবি থেকে হয়ে গেলাম এমটিভির বাখরা।
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×