somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাপ্পা ঘুড্ডির পিছনে ছুটে চলা .....

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন ক্লাস এইট বা নাইনে পড়তাম। আমাদের ঢাকায় ১ টাকা দামের কাগজের ঘুড়ি বিক্রি হত। আমি ঘুড়ি উড়াতে এত পটু ছিলাম না। ঘুড়ির সুতা ছিড়ে গেলে সেটাকে ছাপ্পা বলে তখন সে ঘুড়ি যে আগে পাবে তার হয়ে যাবে। সেই ১ টাকা দামের ঘুড়ি পাওয়ার জন্য কত দৌড়িয়েছি। এখানে দামটা বিষয় না, সেই ছাপ্পা ঘুড়ি পাবার যেই আনন্দ তা লাখ টাকায় পাওয়া যাবে না। আজকাল ঢাকা শহরে ঘুড়ি উড়ানো চোখে পরে না বললেই চলে। গ্রামেও কমে গেছে। একসময় আমি নিজে ঘুড়ি বানাতাম এখন সেটাও ভুলে গেছি। অথচ এই ঘুড়ি উড়ানো খেলা সেই মোঘল আমল থেকে এই দেশে চলে আসছে। আগে রাজা-বাদশারা তাদের বিনোদনের জন্য ঘুড়ি উড়াতো। এই প্রজন্মের শিশুদের জন্য এই পোস্টটি উৎসর্গ করলাম যাতে তারা বাড়ির ছাদে হলেও ঘুড়ি উড়ায়।

ঘুড়ি (Kite): ঘুড়ি যা আঞ্চলিক ভাষায় ঘুড্ডি নামে পরিচিত। এই ঘুড়ি আবিষ্কারের কাহিনী অনেক পুরানো। কিংবদন্তী অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে গ্রিসে ঘুড়ি উদ্ভাবন হয়। গ্রিসের বিজ্ঞানী আর্চিটাস ঘুড়ি উদ্ভাবন করেন। এর বহুযুগ পরে এশিয়া ঘুড়ি উড়ানোতে দক্ষ হয়। চীন, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়ায় ঘুড়ি ওড়ানো খেলার প্রচলন রয়েছে।

কিভাবে ঘুড়ি বানাতে হয়?
কাগজের সঙ্গে বাঁশের শলার কাঠামো লাগিয়ে সাধারণ ঘুড়ি তৈরি হয়। আমরা পলিথিন দিয়ে ঘুড়ি বানাতাম। সুতায় বেঁধে ঘুড়ি সুতার প্রান্তে রেখে আকাশে ওড়ানো হয়। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য বাতাসের প্রবাহ দরকার হয়। সাধারণত শরৎ ও হেমন্ত ঋতুতে ঘুড়ি উড়ানো বেশি হয়। ঘুড়ি ওড়ানোর কৌশল নির্ভর করে বাতাসের প্রবাহের ওপর। বাতাসের প্রবাহ যেদিক থেকে আসছে সেটি বুকের দিকে রেখে ঘুড়ি খাড়া রাখলেই তা আকাশে ভেসে থাকতে পারে। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সুতা টেনে টেনে ঘুড়ির ওপর বায়ু প্রবাহ সৃষ্টি করা হয়। ঘুড়ি যেখানে উড়ছে সেখানে বায়ু প্রবাহ কমে গেলে সুতা টেনে টেনে ঘুড়ি আরো উপরে তোলা হয়।

মাঞ্জা কি এবং প্রস্তুত প্রনালীঃ
মাঞ্জা' কথাটা হল মাজনা'(মাজন+আ+ মাজন মানে ঘষা) র অপভ্রংশ! মানে ঘষা মাজা করা, তার মানে একটি অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় উন্নত করা। ঘুড্ডির ধারহীন সুতাকে ধারালো করার জন্য মাঞ্জা দেয়া হয়। আমরা ছোটবেলায় ঘুড্ডি কাটাকাটি খেলা খেলতাম। কে কার ঘুড্ডি কাটতে পারি তার প্রতিযোগিতা হত। এরজন্য ঘুড্ডির সুতাকে ধারালো করতে হত। মাঞ্জা দেওয়ার জন্য লাগে কাঁচের চূর্ণ, শিরিস, আঠা, এরারুট, সাগুদানা, রঙ ইত্যাদি। এসব মিলিয়ে মাঞ্জার মসলা তৈরি করা হয়। যে সূতায় মাঞ্জা দেওয়া হবে তা আগেই একটি নাটাইয়ে পেঁচিয়ে নেওয়া হবে। মোটা কাপড়ে মাঞ্জার মসলা নিয়ে পুঁটলি পাকিয়ে ধরে থাকতে হবে। সুতা এই মাঞ্জার মসলার ভিতর দিয়ে নিয়ে আরেকটি নাটাইয়ে পেঁচাতে হবে। একাজটি করতে হবে কড়া রোদের সময়। যাতে মাঞ্জা দেওয়া সুতা নাটাইয়ে পেঁচিয়ে নিতে নিতেই তা শুকিয়ে যায়। কাজটি করতে হবে এভাবে দুই পাশে দুইজন বসবে দুইটি নাটাই নিয়ে। একটিতে সুতা থাকবে, আরেকটি খালি। সুতা নাটাইয়ে আছে তার পাশে মাঞ্জার মসলা পুটুলি পাকিয়ে হাতে নিয়ে বসবে আরেকজন। যে নাটাইয়ে সুতা আছে সে নাটাই থেকে সুতা ছাড়া হবে। সুতা মাঞ্জার মসলার ভিতর দিয়ে খালি নাটাইয়ে যাবে। খালি নাটাইয়ে মাঞ্জা দেওয়া সুতা গঁছে নিতে হবে।

মাঞ্জার আবার রকমফের আছে। যেমন: সুতামাঞ্জা, ভাতমাঞ্জা, ডিমমাঞ্জা ইত্যাদি। এসব মাঞ্জার মূল পার্থক্য উপকরণগত। ভাত মাঞ্জা দিতে দরকার হয় জাউভাত, কাঁচের চূর্ণ, রঙ, জবাফুলের পাতা, শিমুলের ছাল, চালতার কষ ইত্যাদি। ডিম মাঞ্জা দিতে লাগে ডিম, কাচের চূর্ণ, শিরিস, সাগুদানা, রঙ ইত্যাদি। সুতা মাঞ্জায় লাগে কাঁচের চূর্ণ, শিরিস, রঙ, সাগুদানা ইত্যাদি।

ঘুড়ির বিভিন্ন নাম আছে যেমন-পঙ্খিরাজ, পানদার, কাউকাদার, রুমালদার, দোভাঁজ, চক্ষুদার, বলদার, মালাদার। ছোটবেলায় একবার ঢাউশ ঘুড়ি দেখেছিলাম। সেটা অনেক বড় ঘুড়ি। এটা প্রায় ৮-১০ ফুট লম্বা হত।

আমাদের বাংলাদেশে মোঘল আমল থেকে ঘুড়ি উড়ানো শুরু হয়। পৌষ সংক্রান্তিতে পুরান ঢাকায় আজো ঘুড়ি উৎসব হয়। কিছু বছর ধরে সেন্ট মারটিনে ঘুড়ি উৎসব হচ্ছে।

ঘুড়ি উড়াতে জায়গা দরকার নেই প্রয়োজন আকাশ। তাহলে খেলার জায়গা নেই এই অভিযোগ এখানে প্রযোজ্য নয়। ঢাকা শহরের বাড়ি ছাদে খুব সহজে ঘুড়ি উড়ানো সম্ভব। অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ থাকবে আপনার সন্তানদের ঘুড়ি উড়াতে দিন এটা অনেক বুদ্ধির ও কৌশলের খেলা।

পোস্টটি লিখেছেনঃ মোহাম্মদ আলামিন, সভাপতি, লোরক সোসাইটি।
আমাদের ফেইসবুক পেইজ লিঙ্কঃ http://www.facebook.com/lorokbd
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×