somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখন যৌবন যার

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঐ দলের একজন যুবককে কথা বলতে উৎসাহী দেখে উমর বিন আব্দুল আযীয বললেন, এই যে শোনো, বড়কে কথা বলতে দাও, বড় জনকে সুযোগ দাও। ঐ যুবক এ কথা শুনে আরয করলো, হে খলীফাতুল মুসলিমীন, ব্যাপার তো বয়সের নয়, যদি ইসলামে বয়সের কারণে সব জায়গায় অগ্রগণ্য হওয়ার বিধান থাকতো তবে মুসলমানদের মধ্যে অনেক লোক আপনার চেয়ে বয়সে প্রবীণ রয়েছেন অথচ আপনি তাদের খলীফা। এমন জবাব শুনে খলীফা বললেন, হ্যা, ঠিক বলেছো। বলো, তুমি বলো

যৌবনকাল জীবন সাজিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে কার্যকর সময়। মানুষ ছোটবেলায় যেমন অসহায় থাকে তেমনি বুড়োকালেও সে দুর্বল থাকে। আর এ দু দুর্বলকালের মাঝে যৌবনের অবস্থান। সেজন্যই আল্লাহর রাসূল বলেছেন, পাঁচটি বিষয়কে অন্য পাঁচটির আগে মূল্যবান ভেবে কাজ সেরে নাও। বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকালকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতার সময়কে, দারিদ্যে পড়ার আগে প্রাচুর্যকে, ব্যস্ততার আগে অবসরকে আর মৃত্যু আসার আগে তোমার জীবনকে। (হাকেম)
ইমাম আহমদ রহ. বলতেন, যৌবনকাল হলো এমন এক বস্তু যা হাতের তালুতে রাখা ছিল কিন্ত তা পড়ে গেল।’ ইবাদতে সময় দেওয়ার উপযুক্ত কাল হচ্ছে তোমার যুবককালের দিনগুলো। তুমি কি জানো, যৌবনের দিনগুলো তোমার কাছে আগত মেহমানের মতো, খুব দ্রুত তা তোমার কাছ থেকে বিদায় নিবে। আর তাই যা করার তা যদি এখনি না করো, তবে অনুশোচনা তোমাকে দীর্ঘদিন দগ্ধ করবে।
সাধে কি আর আল্লাহ পাক কিয়ামতের মাঠে ঠায় দাঁড় করিয়ে এই নেয়ামতের কথা মনে করিয়ে জিজ্ঞেস করবেন, তোমার যৌবনে তুমি কী করেছো? কোথায় কোন কাজে তা ব্যয় করেছো? (তিরমিযী)
আল্লাহর রাসূল যে হাদীসে কিয়ামতের কঠিন মাঠে আরশের ছায়ায় অবস্থানকারীদের শ্রেণীবিভাগ করেছেন, তাতে তিনি ঐ যুবকের কথাও এনেছেন যে তার যৌবনে আল্লাহর ইবাদত করতো।
ইবনে আব্বাস রাযি. বলেছেন, আল্লাহ পাক যা কিছু ইলম ও ভালো দান করেন তা যৌবনকালেই করেন।
হাফসা বিনতে সীরীন বলেছেন, হে যুবা স¤প্রদায়! আমল যা করার তা তোমাদের এই যৌবনেই করে নাও।
আহনাফ বিন ক্বায়েস বলে গেছেন, যৌবনে যে নেতা হতে পারলো না, সে বার্ধক্যেও কিছূ করতে পারে না।
ইতিহাসের পাতা পড়ে দেখো, রাসূলের অধিকাংশ সাহাবা যারা তাকে সর্বময় সাহায্য করেছিলেন এবং আপদে বিপদে বর্মের মতো তাকে আগলে রেখে পাশে ছিলেন, তাদের সবাই ছিলেন যার যার যৌবনের শীর্ষচূড়ায়। ঐ যে দেখো, উসামাহ বিন যায়েদকে আল্লাহর নবী কাফেলার আমীর বানিয়ে পাঠাচ্ছেন অথচ তার বয়স মাত্র আঠার বছর।
আবার ওদিকে উততাব বিন উসায়েদকে আল্লাহর নবী হুনাইন যাওয়ার প্রাক্কালে মক্কায় দায়িত্বশীল বানিয়ে রেখে যাচ্ছেন যখন তার বয়স বিশের কিছু বেশী।
শুধু কি তাই? দ্বীনের জন্য নানা যন্ত্রণা সহ্য করে যারা এ মশাল জ্বালিয়ে গেছেন আমাদের জন্য তাদের সবাই ছিলেন প্রায় তরুণ।
ইমাম আহমদ বিন হাম্বলকে ইমাম শাফেয়ীর গাধার পেছন পেছন হাঁটতে দেখে ইয়াহইয়া বিন মুয়ীন তাকে বললেন, কি ব্যাপার! আপনি শায়খ সুফিয়ান এর হাদীস ও সনদ ছেড়ে এই যুবকের গাধার পেছনে ছুটছেন? ইমাম আহমদ বললেন, শায়খ সুফিয়ান এর হাদীস যদি উঁচু সনদ থেকে ছুটে যায়, তবে নীচের সনদ দিয়ে তা আমি পেতে পারি। কিন্তু এ যুবক চলে গেলে তার কোন পর্যায়ের সনদ আমি পাব না।
একবার খলীফা উমর বিন আব্দুল আযীয এর কাছে এক প্রতিনিধিদল এলো ইরাক থেকে। ঐ দলের একজন যুবককে কথা বলতে উৎসাহী দেখে উমর বিন আব্দুল আযীয বললেন, এই যে শোনো, বড়কে কথা বলতে দাও, বড় জনকে সুযোগ দাও। ঐ যুবক এ কথা শুনে আরয করলো, হে খলীফাতুল মুসলিমীন, ব্যাপার তো বয়সের নয়, যদি ইসলামে বয়সের কারণে সব জায়গায় অগ্রগণ্য হওয়ার বিধান থাকতো তবে মুসলমানদের মধ্যে অনেক লোক আপনার চেয়ে বয়সে প্রবীণ রয়েছেন অথচ আপনি তাদের খলীফা। এমন জবাব শুনে খলীফা বললেন, হ্যা, ঠিক বলেছো। বলো, তুমি বলো।
শরহে মাক্বামাত কিতাবে মাসউদী বর্ণনা করেন, খলীফা মাহদী যখন বসরায় প্রবেশ করছিলেন তখন তিনি দেখলেন ইয়াস বিন মুআবিয়ার পেছনে প্রায় চারশ উলামায়ে কেরাম এবং বসরার নেতৃবৃন্দ হাঁটছেন অথচ ইয়াস তখনো তরুণ। এ দেখে মাহদী বলে উঠলেন, কি ব্যাপার, এই কাফেলায় কি আর কোন প্রবীণ নেই যে তাদের আগে হেঁটে নেতৃত্ব দিতে পারে? তিনি ইয়াসের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এই ছেলে, তোমার বয়স কত? ইয়াস বলতে লাগলেন, আল্লাহ আপনার হায়াত দরাজ করুন, আমার এখন ঐ বয়স চলছে যে বয়সে আল্লাহর নবী উসামা বিন যায়েদকে কাফেলার আমীর বানিয়েছিলেন আর ঐ কাফেলায় হযরত আবুু বকর ও উমর এর মতো প্রবীন সাহাবাগণ শরীক ছিলেন। মাহদী বললেন, শাবাশ বেটা, যাও, এগিয়ে যাও।

তারিখে বাগদাদ নামীয় ইতিহাসের প্রশিদ্ধ গ্রন্থে রয়েছে, ইয়াহইয়া বিন আকসামকে বিশ বছর বয়সে যখন বসরা শহরের বিচারপতি হিসেবে সেখানে পাঠানো হল তখন সেখানকার অধিবাসীরা তাকে ছোট মনে করল এবং জিজ্ঞেস করে বসলো, আমাদের এই মহামান্য কাযীর বয়স কত হে!?
তিনি তাদেরকে বললেন, শুনুন, আমি উততাব বিন উসায়েদের চেয়ে বয়সে বড় আর আল্লাহর নবী আমার চেয়ে কম বয়সী থাকাকালে তাকে মক্কা বিজয়ের পর মক্কার বিচারপতি করেছিলেন, আমার চেয়ে কম বয়সে থাকতেই মুআয বিন জাবালকে আল্লাহর নবী ইয়েমেনে বিচারকাজে পাঠিয়েছিলেন, আমার বয়স তো কা’ব বিন সুআইদ এর চেয়েও বেশী, তিনি আমার চেয়ে কম বয়সে থাকতেই এই বসরায় এসেছিলেন খলীফা উমর এর বিচারপতি হিসেবে। বসরাবসী সবাই তার এ উত্তরে চমকিত হলো এবং তাকে মেনে নিলো।

সিন্ধ ও হিন্দুস্তান জয়ের সেনানী মুহাম্মদ বিন কাসেম এ বাহীনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাত্র সতের বছর বয়সে। আব্দুল্লাহ বিন যিয়াদকে খুরাসানে গভর্ণর হিসেব যখন দায়িত্ব দেয়া হচ্ছিল তখন তার বয়স মাত্র তেইশ বছর। আবু মুসলিম রাষ্ট্র এবং দাওয়াতের কাজ নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন যখন তার বয়স মাত্র একুশ। শায়খ ইবরাহীম নখয়ীর কাছে মানুষ ইলম শিখতে আসতো যখন তার বয়স মাত্র আঠার বছর। আর ইলমে নাহুর জন্য বিস্ময়কর কর্ম সাধন করে ইমাম সীবওয়াইহ এর ইন্তেকাল হলো মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে, অথচ এ সময়ে তিনি কতো কাজ করে গেলেন। (উলুওউল হিম্মাহ: শায়খ মুহাম্মদ ইসমাঈল মুকাদ্দিম
)
যুবকরা জাতির মেরুদন্ড। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌম সম্মানের প্রাণশক্তি। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও কোনো আন্দোলন সফল হতে পারেনি যেখানে যুবক তরুণরা যায়নি। হালআমলে তাকিয়ে দেখি, বিশ্বের নানা সব বিস্ময়কর কর্মযজ্ঞ কি তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে একের পর এক জয় করে চলেছেন তরুণরা। আমাদের জাতীয় কবির তারুণ্যের দিনগুলো পড়ে দেখি, যা কিছু লেখা ও গাওয়া, সবই তো ঐ বয়সে তিনি করেছেন সেসব দিয়েই এখনো আমরা শেষ করতে পারিনি। বাকী জীবনতো তার অসুস্থ হয়ে কেটে গেল। যৌবনের গান শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন তার হৃদয়ের সবটুকু মমতা ও প্রাণময়তা উজাড় করে। আমরাও এ সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগাতে ব্যস্ত হই, তাতেই আমাদের জীবনে দেখা মিলবে সফলতার হাসিমুখ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×